
ছবি:সংগৃহীত
পতিত সরকারের পতনের পর দীর্ঘ ১৫ বছর পর নিজ জন্মভূমি উল্লাপাড়ায় ফিরেছেন নির্যাতিত-নিপীড়িত গণমানুষের নেতা, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিনেট সদস্য ও কেন্দ্রীয় জামায়াতের এ নেতা দীর্ঘদিন জেল-জুলুম সহ্য করেও রাজপথে সক্রিয় থেকেছেন। নিজ এলাকায় ফিরে তিনি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পথসভা, উঠান বৈঠক এবং হিন্দু সম্প্রদায়সহ আন্দোলন-সংগ্রামে আহতদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন। দীর্ঘ বছর পর জামায়াতের নেতাকে পেয়ে কর্মীদের মধ্যে যেন প্রাণ ফিরে এসেছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় এ নেতা সারাদেশে দলের বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের পাশাপাশি নিজ জন্মভূমি উল্লাপাড়ার প্রতিটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, পাড়া-মহল্লায় ছুটে বেড়াচ্ছেন। কেন্দ্রীয় দায়িত্বের পাশাপাশি তিনি নিজ উপজেলার মানুষকেও পর্যাপ্ত সময় দিচ্ছেন এবং নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে। দ্বন্দ্ব-বিভেদহীনভাবে তার দিকনির্দেশনায় জামায়াতের নেতাকর্মীরা কাজ করছেন। দলীয় প্রোগ্রামের বাইরে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডেও অংশ নিচ্ছেন মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান।
রাষ্ট্রীয় চিন্তাভাবনার পাশাপাশি নিজ উপজেলা উল্লাপাড়াকে উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিতে তার নানা পরিকল্পনা রয়েছে। পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর তিনি দৈনিক জনকণ্ঠের উল্লাপাড়ার নিজস্ব সংবাদদাতার সঙ্গে আলাপচারিতায় উল্লাপাড়া নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানান। তিনি এমপি নির্বাচিত হতে পারলে উল্লাপাড়াকে একটি উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন।
জনকণ্ঠ: দীর্ঘ বছর পর নিজ মাতৃভূমিতে রাজনৈতিক মিটিং-সমাবেশ ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হচ্ছে, এতে আপনার অনুভূতি কেমন?
রফিকুল ইসলাম খান: স্বৈরাচার সরকারের আমলে আমরা ব্যাপকভাবে নির্যাতিত হয়েছি। আমাদের উপর এমন নির্যাতন চালানো হয়েছে, যা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। মামলা, জেল-জুলুমসহ অসহনীয় অত্যাচার সত্ত্বেও আমরা পিছু হটিনি। রাজপথে থেকে সংগ্রাম করেছি। ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী সরকারের পতন হয়েছে এবং তারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। বর্তমানে দেশে আওয়ামী লীগের নাম নেওয়ার মতো লোক খুঁজে পাওয়া যায় না। তাদের অহংকার ও দাম্ভিকতা আল্লাহ মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন। এখন আমি নিজ জন্মভূমিতে ফিরে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছি। নেতাকর্মীরা আমাকে কাছে পেয়ে যে কতটা আনন্দিত হয়েছে, তা না দেখলে বোঝা যাবে না। আমি নিয়মিত সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। যেখানেই থাকি না কেন, উল্লাপাড়ায় কোনো প্রোগ্রাম থাকলে ছুটে আসি। আমার এলাকার মানুষ আমাকে যেমন ভালোবাসে, আমি তাদের আরও বেশি ভালোবাসি।
প্রতিবেদক: উপজেলার মানুষের কাছ থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
রফিকুল ইসলাম খান: দীর্ঘ ১৫ বছরেরও বেশি সময় পর মানুষ এখন মন খুলে কথা বলতে পারছে। কোনো আতঙ্ক ছাড়াই দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছে। আমি সাধারণ মানুষের কাছ থেকে যে সাড়া পাচ্ছি, তা উপজেলাবাসী নিজেরাই দেখছে। যেখানে যাচ্ছি, সেখানেই মানুষের ঢল নামছে। দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ আমাকে ভালোবাসে। আমি শুধু তাদের কাছে দোয়া চাই।
প্রতিবেদক: উল্লাপাড়ায় জামায়াতের অবস্থান কেমন?
রফিকুল ইসলাম খান: শুধু উল্লাপাড়ায় নয়, সারাদেশেই জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান ভালো। জামায়াতের নেতাকর্মীরা ভালো কাজের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
প্রতিবেদক: নিজ উপজেলা উল্লাপাড়া নিয়ে আপনার ভাবনা কী? আগামীতে উল্লাপাড়ার জন্য আপনি কী করতে চান?
রফিকুল ইসলাম খান: উল্লাপাড়া উপজেলার মানুষকে নিয়ে ভাবা আমার জন্য নতুন কিছু নয়। আমি ছাত্রজীবন থেকেই উল্লাপাড়ার সামগ্রিক উন্নয়নে কাজ করার চেষ্টা করেছি। অনেক অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করেছি। দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা ছাড়াও, প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সহযোগিতা করেছি। গরীব-অসহায়দের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি এবং অনেককে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছি। আমার কাছে এসে কেউ কখনো নিরাশ হয়ে ফেরেনি। দীর্ঘদিন উল্লাপাড়ায় আসতে না পারলেও, গোপনে নিরবে মানুষের জন্য কাজ করে গেছি।
ভবিষ্যতে যদি এমপি নির্বাচিত হতে পারি, তাহলে আমার মূল লক্ষ্য হবে মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। উপজেলার সার্বিক উন্নয়নের পাশাপাশি বেকারত্ব দূরীকরণে বিশেষ ভূমিকা রাখতে চাই। বর্তমানে দেশে বেকারত্বের হার অত্যন্ত বেশি। উল্লাপাড়াতেও বহু শিক্ষিত যুবক কর্ম না পেয়ে হতাশায় ভুগছে। এ কারণে বেকারত্ব দূর করতে ট্রেনিং সেন্টার স্থাপনসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
এছাড়া, কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের মতো উল্লাপাড়াও কৃষির উপর নির্ভরশীল। চলনবিল অধ্যুষিত এ উপজেলার কৃষি খাত উন্নয়নে আমার বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে। একটি কৃষি ডিপ্লোমা কলেজ প্রতিষ্ঠার চিন্তাও করছি। উল্লাপাড়ার উন্নয়নে সর্বদা সচেষ্ট থাকবো। স্বনির্ভর উল্লাপাড়া গড়ে তুলতে কাজ করবো।
প্রতিবেদক: উল্লাপাড়াবাসীর জন্য আপনার কোনো বার্তা আছে কি?
রফিকুল ইসলাম খান: উল্লাপাড়ার মানুষ শান্তিতে বসবাস করবে। কোনো ধরনের ধর্মীয় দাঙ্গাকে জামায়াতে ইসলাম সমর্থন করে না। সবাই যেন নিজ নিজ ধর্ম এবং ধর্মীয় উৎসব নির্বিঘ্নে পালন করতে পারে, সেটিই আমরা চাই। কেউ যদি এসব উৎসবে বাধা দেয়, তাহলে আমরা তার উপযুক্ত জবাব দেব।
উপজেলায় কোনো চাঁদাবাজের জায়গা হবে না। কেউ চাঁদাবাজি করতে চাইলে তাকে কঠোর হস্তে দমন করা হবে। আমরা চাই মানুষ শান্তিতে বসবাস করুক। আমি সবসময় উপজেলাবাসীর পাশে আছি। যেকোনো প্রয়োজনে মানুষ আমাকে পাশে পাবে, ইনশাআল্লাহ।
মারিয়া