ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২

মেহেরপুরে ভৈরব নদে বাঁশের সাঁকোই একমাত্র ভরসা

তৌহিদুল ইসলাম তুহিন, মেহেরপুর

প্রকাশিত: ১৬:৩৮, ২৪ জুন ২০২৫

মেহেরপুরে ভৈরব নদে বাঁশের সাঁকোই একমাত্র ভরসা

মেহেরপুর সদর উপজেলার রাধাকান্তপুরে ভৈরব নদের ওপর ব্রিজ না থাকায় বুড়িপোতা ইউনিয়নের অন্তত তিনটি গ্রামের মানুষদের বাঁশের সাঁকো দিয়েই পারাপার হতে হয়। মেহেরপুর শহরসহ অন্যান্য এলাকায় যাতায়াতের জন্য এই বাঁশের সাঁকোই তাদের একমাত্র ভরসা। ভোটের সময় জনপ্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতি দিলেও বারবার মাপজোক করে শেষ পর্যন্ত ব্রিজ নির্মাণ কাজ আজও আলোর মুখ দেখেনি।

আশপাশে নেই কোনো ব্রিজ। চলাচলের জন্য প্রতি বছর চাঁদা তুলে তৈরি করা হয় বাঁশের সাঁকো। বছর না ঘুরতেই বাঁশ পচে নষ্ট হয়ে যায়। প্রতি বছরই সাঁকো নির্মাণে লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়। সাঁকো পার হয়ে শহরে যেতে সময় ও অর্থ দুটোই বেশি ব্যয় হয়। ভারী যানবাহন চলাচল করতে না পারায় রোগী বহনে স্বজনদের পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। বিকল্প হিসেবে অনেক দূরের রাস্তা ঘুরে শহরে যেতে হয়।

কৃষিপণ্য আনা-নেওয়াতেও কৃষকদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সময়মতো কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে না পারায় তারা বাজারমূল্য থেকে বঞ্চিত হন। পাশাপাশি পরিবহন খরচ বেড়ে যায় দ্বিগুণ।

স্থানীয় রিকশাচালক সিদ্দিকুর রহমান জানান, “প্রতিদিন ভৈরব নদীর ওপর তৈরি বাঁশের সাঁকো দিয়ে যাত্রী নিয়ে পারাপার হতে হয়। মনে সব সময় ভয় কাজ করে—কখন যেন সাঁকো ভেঙে পানিতে পড়ে যাই। তবুও উপায় না থাকায় এই পথেই যাতায়াত করি।”

স্থানীয় প্রবীণ আকবর আলী বলেন, “বাঁশের সাঁকো ভেঙে মাঝে মধ্যেই মানুষ আহত হন। কিছুদিন আগে নিফাজ উদ্দীন নামের এক বৃদ্ধ সাইকেল নিয়ে পার হতে গিয়ে পানিতে পড়ে যান। স্থানীয়রা দ্রুত গিয়ে তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করেন। দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছি।”

রাধাকান্তপুর গ্রামের আমেনা খাতুন বলেন, “বর্ষার সময় নৌকায় পার হতে হয়, পানি কমে গেলে বাঁশের সাঁকো। জরুরি চিকিৎসার জন্য শহরে গেলে এখানে অনেক সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আমাদের দুর্দশা ঘোচাতে সরকারি সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন।”

স্থানীয় স্কুলশিক্ষক মজিবর রহমান বলেন, “জনপ্রতিনিধিরা বহুবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কিন্তু তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। রাধাকান্তপুর ভৈরব নদে একটি ব্রিজ নির্মাণ হলে দুপারের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে।”

বুড়িপোতা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ মুকুল বলেন, “বেশ কয়েকবার জমি জরিপের কাজ করেছে এলজিইডি। ঢাকা থেকে টিম এসে জায়গাও পরিদর্শন করেছে বহুবার। কিন্তু তারপর আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। আমাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য এই ব্রিজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী সাব্বির উল ইসলাম বলেন, “আমরাও চাই ব্রিজটি নির্মাণ করতে। কিন্তু নদের এপারের বন্দর গ্রামের কিছু মানুষের আপত্তির কারণে কাজটি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যন্ত্রপাতি ভেড়ানোর কথা শুনলেই তারা নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে থাকেন।”

সজিব

×