
ছবি: জনকণ্ঠ
আমরা দেখি কীভাবে?
আলো কোন বস্তুর উপর পড়ে এবং তা রিফ্লেক্ট করে আমাদের চোখে পড়ে। যেমন সূর্যের আলো চাঁদের উপর পড়ে এবং তা ফিরে এসে পৃথিবীতে আমাদের চোখে পড়ে। আমাদের চোখের ভেতর অসংখ্য সেল আছে যা সেই আলো ব্রেনে পাঠায় এবং আসলে ব্রেইন এটিকে প্রসেস করে এবং তার ফলে আমরা দেখতে পাই। কোন কারণে যদি ব্রেইন কাজ না করে তাহলে চোখ যত ভালই হোক আমরা দেখতে পাবো না। এটা হল প্রসেস।
আরেক ধরনের দেখা আছে যা সবাই দেখতে পায় না, কেউ কেউ পায়। সেটাও মন এবং ব্রেনেরই খেলা। একটি উদাহরণ দেই। আলেকজান্ডার ফ্লেমিং ব্যাকটেরিয়া নিয়ে গবেষণা করছিলেন। ল্যাবরেটরীতে ব্যাকটেরিয়া গ্রো করানো যায় আমি নিজেও করেছি। আলেকজান্ডার ফ্লেমিং এর টেকনিশিয়ান অনেকেই কাজ করেছেন। তো একদিন দেখতে পেলেন যে একটি প্লেটে ব্ল্যাকটেরিয়া গ্রো করেছে তবে মাঝখানে একটা রিং যেখানে কোন ব্যাকটেরিয়া নেই। মানে ওই জায়গাটাতে ব্যাকটেরিয়া গ্রো করেনি। টেকনিশিয়ানরা ভাবল এই প্লেটটা খারাপ সুতরাং এটা ফেলে দেয়া হোক। কিন্তু আলেকজান্ডার ফ্লেমিং বললেন, দাঁড়াও এটা ফেলবে না। তার প্রশ্ন, এই জায়গাটাতে ব্যাকটেরিয়া গ্রো করল না কেন? তখন টেকনিশিয়ানদের বললেন এই যে খালি জায়গাটায় খাবার আছে ব্যাকটেরিয়ার জন্য অথচ ব্যাকটেরিয়া নেই এই জায়গাটা থেকে বাহির কর কী কেমিক্যাল আছে। তার কথামতো কাজ করে ওই জায়গাতে যে কেমিক্যাল পাওয়া গেল, তা হলো পেনিসিলিন। তারমানে যদি পেনিসিলিন থাকে সেখানে ব্যাকটেরিয়া গ্রো করতে পারে না। অর্থাৎ, মরে যায়। এইভাবে আলেকজান্ডার ফ্লেমিং পেনিসিলিন এন্টিবায়োটিক আবিষ্কার করলেন যার ফলে লক্ষ লক্ষ লোক ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা আক্রান্ত হলে পেনিসিলিন ইনজেকশন দিলেই ভালো হয়ে যেত। এই এন্টিবায়োটিক এর আবিষ্কারের আগে যখনই সৈন্যরা যুদ্ধ করতে যেয়ে একটু আক্রান্ত হয়েছে তারা সবাই ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মরে গেছে। এখানে আলেকজান্ডার ফ্লেমিং এর দেখা আর টেকনিশিয়ান দের দেখা এক জিনিস নয় যদিও তাদের সবারই দুটি চোখ।
আরেক ধরনের দেখা আছে।,এক ভদ্রলোক সারাদিন অফিস করে ঘরে ফিরলেন। দেখলেন তার স্ত্রী খাবার টেবিলে খাবার-দাবার সব সাজিয়ে বসে আছেন। কিন্তু সেই সাথে ভদ্রলোক দেখলেন তার স্ত্রীর মনটা একটু ভারী। তিনি হাত-মুখ ধুয়ে খেতে বসে গেলেন স্ত্রীকে কিছুই জিজ্ঞেস না করে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ক্লাবে চলে গেলেন তাস খেলতে। চোখ দিয়ে তিনি দেখেছেন ঠিকই হার্ট দিয়ে তিনি কিছুই দেখতে পেলেন না। এইভাবে না দেখতে পারাটাকে বলে ইন সেন্সিটিভিটি।
একবার একটু অভিজ্ঞতা হয়েছিল যা আমি কোনদিন ভুলবো না। ভালোম আতাউর রহমান খান হাই স্কুলে ক্লাস এইটে পড়ি। একদিন আমাদের হেডমাস্টার জনাব রবিউল করিমের ক্লাস। তিনি ক্লাসে এসেই জিজ্ঞেস করলেন তোমরা আজকে ক্লাসে কতজন? একজনে গুণে বলল ৫০ জন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন তাহলে কয়টা চোখ। সে বলল ১০০টি। ১০০টি চোখ দেখতে পেল না যে এর ভেতরে একটি ভাঙ্গা বেঞ্চ পড়ে রয়েছে। এই বলে তিনি নিজেই এত বড় একটি ভাঙ্গা বেঞ্চ কাঁধে তুললেন। আমরা লজ্জায় সবাই কাঁপছিলাম। তিনি বাইরে নিয়ে মাঠে ছুড়ে দিলেন। ওই দৃশ্য আমি জীবনেও ভুলবো না।
তিনি আমাকে একটি জিনিস দেখতে শিখিয়েছিলেন। যে কারণে আমি প্রতি বছর দেশে গিয়ে আমাদের মাঠে সুলতানের ঘরটি দেখতে পাই, খড়ের পালা দেখতে পাই, আজমতের বাড়ি থেকে নোংরা মাঠে পড়ে থাকা কিছু দেখতে পাই। বড়ো অসহায় বোধ করি, কেননা আমি দেখেও কিছুই করতে পারি না। অন্ধের দেশে যেন এক জন
চোখ ওয়ালা অন্ধ। নিজেকেও তাই মনে হয়।
আবির