ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২

ভাঙ্গায় ১৭ বছর পরে প্রকাশ্য বিএনপির সম্মেলন ঘিরে উচ্ছ্বাসিত নেতাকর্মীরা 

মাসুম অর রশিদ, ভাঙ্গা, ফরিদপুর 

প্রকাশিত: ১৬:১২, ২৩ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৬:১৫, ২৩ জুন ২০২৫

ভাঙ্গায় ১৭ বছর পরে প্রকাশ্য বিএনপির সম্মেলন ঘিরে উচ্ছ্বাসিত নেতাকর্মীরা 

আওয়ামী দুঃশাসনকাল পেরিয়ে নতুন নেতৃত্বের আশায় দলীয় বিবিধ কোন্দলের মধ্যে দিয়ে দীর্ঘ ১৭ বছর পর প্রকাশ্য অনুষ্ঠিত হচ্ছে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলা বিএনপি ও পৌর বিএনপির সম্মেলন। আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টায় উপজেলা পরিষদ সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হচ্ছে উপজেলা ও পৌর বিএনপির সম্মেলন। তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীদের দৃষ্টিতে দলের ত্যাগী ও ভোগীদের মধ্যে লড়াইর সম্মেলন হলেও ১২টি ইউনিয়ন বিএনপির নেতা কর্মীরা উচ্চাস ও আনন্দে মেতে উঠেছে। উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে সম্মেলন প্রস্তুতির সকল আয়োজনও সম্পন্ন করেছে। 


চলতি মাসের ২য় সপ্তাহে ভাঙ্গা উপজেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করার পর  জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক সৈয়দ জুলফিকার হোসেন জুয়েলকে ভাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সম্মেলনের টিম লিডার ঘোষণা করা হয়। এদিন জেলা বিএনপির নেতৃত্ব ধারার অনেকেই ভাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন। সম্মেলন  টিম লিডার ও জেলা বিএনপির নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভাঙ্গা উপজেলার পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটি গঠন করা হবে বলে অভিমত  বিএনপি নেতাকর্মীদের। 


এদিকে দীর্ঘদিন পর ভাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে খবরে উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও পৌর বিএনপি নেতা কর্মীদের মধ্যে সম্মেলন ঘিরে বইছে উচ্ছাস আনন্দ। একই সাথে  দলের ত্যাগী নেতাদের ও ভোগী নেতাদের বিবদমান সৃষ্ট গ্রুপের কারণে শীতল উত্তেজনা বইছে সম্মেলন ঘিরে।বিশেষ করে  গত ১৭ বছর আওয়ামী লীগের ঘরের রাজনীতি চাঙা করা সিংহভাগ নেতা কর্মীরাও  বিএনপির সম্মেলন ঘিরে গুরুত্বপূর্ণ মুখ হয়ে ওঠায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী পন্থীদের বিপরীতে অবস্থানে অনঢ় থেকেও বিবাদ গ্রুপের নেতা কর্মীরা শান্তি পূর্ণতায় উত্সবমুখোর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হোক প্রত্যাশা করে। যেখানে দলের দুঃসময়ের নেতা কর্মীরা মূল্যায়ন পাবে বলে মনে করছেন বিএনপির রাজনীতির অভিজ্ঞ মহল।


মূলত ৫ আগষ্ট গণ-অভ্যুত্থানে হাসিনার পতনের পর ভাঙ্গা উপজেলা  বিএনপির রাজনীতিতে মূলধারার বিএনপি ও আওয়ামী দোসরকারী বিএনপির বিভাজনে বিভক্ত হয়ে ওঠে। দলীয় শৃঙ্খলা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিকনির্দেশনা মোতাবেক দুসঃময়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজনৈতিক পথ অতিক্রম করে আসছে বিএনপি ও পৌর বিএনপির একাংশে।


অপরদিকে বিএনপি পরিবারের হয়েও সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দিয়ে হালুয়া রুটি খাওয়া বৃহত্তর  অংশকে স্থানীয় বিএনপির নেতৃত্বধারীদের কেউ কেউ মঞ্চে জায়গা করে দেওয়ায় উপজেলা বিএনপির রাজনীতি ঘিরে বিতর্কিত চলছে হাসিনা সরকারের পতনের পর পরই। ত্যাগী নেতাদের মতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিকনির্দেশনা উপেক্ষা করে আওয়ামী ভোগীরথদের বিএনপিতে জায়গা দেওয়ার মূলধারার বিএনপি নেতা ও কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ত্যাগী নেতা কর্মীদের সমন্বয়ে আলাদা অংশে বিভক্ত হয়ে মাঠে কাজ করছে।


তৃণমূল কর্মীদের ভাষ্যমতে, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের ভয়ে বিএনপির রাজনীতি ঠান্ডা হিমশীতল তুষারিত তন্দ্রায় ছিল। যে আওয়ামী পন্থী নেতাকর্মীর ভয়ে মিছিল সমাবেশ বেড় করার সাহস হয়ে ওঠেনি তাদের অনেকেই বিএনপি নেতা কর্মীদের ঘরে। এতে বিতর্কের সৃষ্টি ও শৃঙ্খলা বিনষ্ট হলেও দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও ঝামেলার বোঝা মাথায় রেখেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ভাঙ্গা উপজেলা ও পৌর বিএনপির সম্মেলন। এতে উচ্ছ্বাস আনন্দ থাকলেও দ্বন্দ্বতায় দোদুল্যমান পরিস্থিতি বিরাজ করছে উপজেলা ও পৌর বিএনপির সম্মেলন ঘিরে।


বিএনপির সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব খন্দকার ইকবাল হোসেন সেলিম দীর্ঘদিন দলের হাল ধরে ছিলেন যেমন সত্যি বিপরীতে বিএনপির রাজনীতিকে পারিবারিক পুষ্টি বাগান কমিটি গঠনে দলীয় কর্মকান্ড পরিচালনা করার পরিপেক্ষিতে তার বিপক্ষে শক্তিশালী অপর একটি গ্রুপ বিএনপির সম্মেলনে অবস্থানে রয়েছে। যারা দলের ত্যাগী নেতৃত্ব ধারার এবং আওয়ামী লীগের শত অত্যাচার জুলুম নির্যাতন সহ্য করে  বিএনপির রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি।


গত ৫ আগষ্ট পরবর্তী সময়ে ফরিদপুর- ৪ আসনে ধানের শীষ প্রতীকের নির্বাচন করার অঙিকার নিয়ে মাঠে কাজ করছেন কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল খান। 
তাকে নিয়ে সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব খন্দকার ইকবাল হোসেন সেলিম ও তার বিএনপির টিম সদস্য মুন্সী হাবিবুর রহমান, ফজলে সোবহান শামীম, আলমগীর কবিরাজ, আয়ুব মোল্লাসহ বিএনপির অংশের নেতৃত্ব ধারার লোকজন শহিদুল ইসলাম বাবুল খানকে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে কাজ করছেন। সেলিম খন্দকারকে আহবায়ক করে উপজেলা বিএনপি নতুন করে জাগ্রত করা হবে বলে মনে করছেন তার পক্ষের বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা।


বিপরীতে ভাঙ্গা উপজেলা বিএনপির প্রতিপক্ষ হিসেবে নেতৃত্বে রয়েছেন বিএনপির চেয়ার পার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া। জেলার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আলী আশরাফ নাননু। জাসাস নেত্রী শাহরিয়ার ইসলাম শায়লা, সাবেক সংসদ সদস্য প্রার্থী শাহআলমসহ ভাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মনজুর আহসান খান, মুন্সী মিজানুর রহমান, কাজী বিল্লাল ও পৌর মুন্সী মনিরুজ্জামান মনি। দলীয় সিদ্ধান্তের পাশাপাশি একই রাজনৈতিক মঞ্চের নির্বাচনী ট্রেনে উঠে  একযোগে কাজ করছেন। 


বিশেষ করে জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ভাঙ্গা উপজেলার সন্তান হিসেবে এডভোকেট আলী আশরাফ নাননুকে ভাঙ্গা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক করার দাবীতে জোড় লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন তার মনোপূর্ণ নেতাকর্মীরা। দিন ক্ষনশ্বর প্রস্তুত অপেক্ষার পালা রাত পোহালে সম্মেলন। ভাঙ্গা উপজেলার বিএনপির আগামী দিনের নেতা হিসেবে কে হচ্ছেন আহবায়ক এবং কারা হচ্ছেন আহবায়ক কমিটির সদস্য।
ভাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি খন্দকার ইকবাল হোসেন সেলিম বলেন, ২০০৪ সাল থেকে ভাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে নিজেকে সচেষ্ট রেখে আজও  বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে থেকে কাজ করছি। দল তাকে মূল্যায়ন করবে বলে অভিমত প্রকাশ করেন। 


ভাঙ্গা পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুন্সী মনিরুজ্জামান বিএনপি ও পৌর বিএনপির কমিটি বাতিল করায় জেলা নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার হামলা মামলার শিকার হয়েছেন এমন ত্যাগী নেতাদের আমরা কমিটি পেতে চাই। হামলা মামলার ভয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে চলেছে কেউ আহবায়ক কমিটিতে জায়গা না পায় এটাই তৃণমূল বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিমত। 


জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আলী আশরাফ নাননু দৈনিক জনকণ্ঠ প্রতিনিধিকে বলেন, উপজেলা বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়নের যথাযথ সময় হচ্ছে সম্মেলন। ভাঙ্গা উপজেলা বিএনপিকে সুসংগঠিত করার লক্ষে গত ৩০ বছর মাঠে কাজ করার কথা ব্যক্ত করে তিনি আরও বলেন দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের দোসরদের আস্থাভরেরা বিএনপির কমিটি ঘিরে রাখার যে অপচেষ্টার অভিযোগ রয়েছে বিষয়টি দৃষ্টি রেখে জেলা বিএনপির অভিজ্ঞত নেতৃত্বরা সাহসী একটি আহবায়ক কমিটি ভাঙ্গায়  উপহার দিবেন বলে অভিমত প্রকাশ করেন।

আঁখি

×