
সম্পাদকীয়
জনসংখ্যার ভারে ন্যুব্জ, বহু সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশের যে প্রতিষ্ঠান সম্ভাবনাময় আলোর স্ফুরণ ছড়াচ্ছে, সেটি হলো বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)। প্রতিষ্ঠানটি লবণাক্ততা সহনশীল, উচ্চফলনশীল বোরো ও ব্লাস্ট রোগপ্রতিরোধী তিনটি নতুন ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে।
নতুন তিনটি জাত হচ্ছে, লবণাক্ততা সহনশীল ব্রি-১১২, উচ্চফলনশীল বোরো ব্রি-১১৩ ও ব্লাস্ট রোগপ্রতিরোধী ব্রি-১১৪। সর্বশেষ তিনটি জাতসহ এখন পর্যন্ত ব্রি ১২১টি জাত উদ্ভাবন করেছে, যার মধ্যে ৮টি হাইব্রিড বা উচ্চফলনশীল ধান। নিঃসন্দেহে বৈরী প্রাকৃতিক আবহাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ মোকাবিলায় নতুন উদ্ভাবিত ধানের জাতগুলো চালের মতো প্রধান খাদ্যের অযুত জোগান দেবে।
দেশের নাগরিকদের খাদ্য জোগানে বিদেশ নির্ভরতা কমাবে। চাষযোগ্য প্রতি ইঞ্চি জমি চাষের আওতায় আনা দরকার। স্বাধীনতার পর গত ৫৪ বছরে দেশে যে খাতগুলো সম্ভাবনার আলো জ্বালিয়েছে, কৃষি খাত তার মধ্যে অন্যতম। দেশ স্বাধীনের সময় জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি, অর্ধশতাব্দী পর জনসংখ্যা তিনগুণ বেড়েছে। মানুষের জীবনের প্রয়োজনে একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে অণু পরিবার তৈরি হচ্ছে প্রতিনিয়ত, ফলে নগরায়ণ ও শিল্পায়নের জাঁতাকলে গাণিতিক হারে কমেছে চাষযোগ্য জমি। সম্প্রতি জাতীয় বীজ বোর্ড তিনটি নতুন জাতের অনুমোদন দিয়েছে।
এ জাতের ধানগাছের সবচেয়ে ওপরের পাতা, প্রচলিত ব্রি ধান ৭৩-এর চেয়ে খাড়া। ব্রি ধান-১১২ লবণাক্ততার মাত্রাভেদে হেক্টরপ্রতি ৪ দশমিক ১৪ থেকে ৬ দশমিক ১২ টন ফলন দিতে সক্ষম। এ জাতের ধানের জীবনকাল ১২০-১২৫ দিন এবং গাছের উচ্চতা ১০৩-১০৫ সেন্টিমিটার। গাছের কা- মজবুত এবং ঢলে পড়া প্রতিরোধী। চাল মাঝারি চিকন, সাদা এবং ভাত ঝরঝরে, বিধায় ভোক্তা মহলে চাহিদাও বেশ। এটি লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। দানা মাঝারি চিকন ও শীষ থেকে ধান সহজে ঝরে পড়ে না।
জনপ্রিয় ধানের জাত-২৯ এর বিকল্প হিসেবে ব্রি-১১৩ জাতটি মাঝারি উচ্চফলনশীল জাত। গাছ শক্ত এবং মজবুত বিধায় সহজে হেলে পড়ে না। এ গাছের চূড়ার পাতাগুলো খাড়া, প্রশস্ত ও লম্বা। ধান পাকলেও সবুজ থাকে। চালের আকৃতি মাঝারি চিকন এবং রং সাদা, দেখতে অনেকটা নাজির শাইলের মতো। এ ধানের চালে অ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৮ ভাগ এবং ভাত ঝরঝরে। এ ছাড়া প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৮ দশমিক ৪ ভাগ।
প্রস্তাবিত জাতের ফলন পরীক্ষায় এ জাতটি ব্রি ধান ৮৮-এর চেয়ে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি ফলন দিয়েছে। এ জাতের গড় ফলন হেক্টরে ৮ দশমিক ১৫ টন। উপযুক্ত পরিবেশে সঠিক ব্যবস্থাপনা করলে এ জাতটি হেক্টরে ১০ দশমিক ১ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। জাতটির গড় জীবনকাল ১৪৩ দিন। ব্লাস্ট রোগপ্রতিরোধী ও দীর্ঘ জীবনকালীন জাত ব্রি ধান-১১৪। এ জাতের ডিগপাতা খাড়া, প্রশস্ত ও লম্বা, গাছ মজবুত এবং হেলে পড়ে না। পাতার রং গাঢ় সবুজ। এর গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ৭ দশমিক ৭৬ টন। বোরো মৌসুমের ফসল। দানা মাঝারি মোটা এবং সোনালি বর্ণের। জাতটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো ব্লাস্ট রোগপ্রতিরোধী।
নতুন জাতগুলোর মধ্যে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য থাকলেও সব জাতই অধিক ফলন দেবে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। আমরা আশা করছি, জাত তিনটি চাষাবাদ করে আমাদের কৃষককুল লাভবান হতে পারবেন।