
বাজারে বিক্রির অপেক্ষায় গফরগাঁওয়ের কচুরলতি
আমাদের সবার কাছেই একটি অতি পরিচিত সবজির নাম কচু। সেই সঙ্গে আমাদের প্রিয় কচুর লতিও। কচুর লতিতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, যা মানব দেহের জন্য খুবই দরকারি। বাংলাদেশে প্রায় সব এলাকাতেই কচু জন্মাতে দেখা যায়। গ্রামের বাড়ির আনাচে-কানাচে ও রাস্তার পাশে অনেক জায়গায় কচু জন্মে। বিখ্যাত গফরগাঁও ও ত্রিশালের কচু ও লতি। দেশের গ-ি ছাড়িয়ে এই কচু আর লতি এখন ঠাঁই করে নিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিদেশের ভোজনরসিকদের খাবার প্লেটেও।
কচুর লতিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রণ। লতি মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। গর্ভবতী, খেলোয়াড়, বাড়ন্ত শিশু, কেমোথেরাপি পাচ্ছে এমন রোগীদের জন্য কচুর লতি ভীষণ উপকারী। এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম হাড় শক্ত করে।
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের উপ-পরিচালক (প্রশাসক) ডা. মইনুদ্দিন খান জনকণ্ঠকে বলেন, কচুর লতি এবং কচু এই সবজিতে ডায়াটারি ফাইবার বা আঁশের পরিমাণ খুব বেশি। এই আঁশ খাবার হজমে সাহায্য করে দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
ভিটামিন সিও রয়েছে কচুর লতিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে যা সংক্রামক রোগ থেকে আমাদের দূরে রাখে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দ্বিগুণ করে। কচুতে রয়েছে আয়রণ যা রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। যাদের রক্তশূন্যতা আছে, তারা নিয়মিত কচু খেলে উপকার পাবেন। এতে রয়েছে ফাইবার, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই।
কোলেস্টেরল বা চর্বি কিছু পরিমাণ ভিটামিন বি হাত পা মাথার উপরিভাগে গরম হয়ে যাওয়া, হাত পায়ে ঝি ঝি ধরা বা অবশ ভাবÑ এ সমস্যাগুলো দূর করে।
মস্তিষ্কে সুষ্ঠভাবে রক্ত চলাচলের জন্য ভিটামিন বি ভীষণ জরুরি। আয়োডিন খাবার হজমের পর বর্জ্য দেহ থেকে সঠিকভাবে বের হতে সাহায্য করে। তাই কচুর লতি খেলে অ্যাসিডিটি ও গ্যাস্টিকের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে খুব কম।
কচুর লতি রক্তে চিনির মাত্রা বাড়ায় না, তাই ডায়াবেটিস রোগীরা নিঃসংকোচে খেতে পারেন কচুর লতি।
গফরগাঁও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাকুরা না¤œী জনকণ্ঠকে জানান, ময়মনসিংহের বিখ্যাত গফরগাঁও উপজেলার পুখুরিয়া, রসুলপুর ও রৌহা গ্রামে কচু এবং লতি তা ছাড়া ত্রিশালের কচু ও লতি। দেশের গ-ি ছাড়িয়ে এই কচু আর লতি এখন ঠাঁই করে নিয়েছে বিদেশের ভোজনরসিকদের খাবার প্লেটেও। এক সময়ের গরিবের খাবার হিসেবে পরিচিত কচু ও লতি এখন বিক্রি করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন ত্রিশালের অনেক কৃষক। তবে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় দাম নিয়ে এখন হতাশ কৃষকরা।
জানা যায়, ত্রিশাল উপজেলার প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই চাষ হচ্ছে কচু ও লতি। তবে রামপুর ইউনিয়নের গফাকুঁড়ি ও ঠাকুরবাড়ি গ্রামে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয় এই সবজির। লতির গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে এই দুটি গ্রাম। ঢাকা, গাজীপুর, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যাপারীরা আসেন এখানে। ব্যাপারীরা এখান থেকে লতি ও কচু কিনে ট্রাকে ভরে ঢাকার কাওরানবাজার, মিরপুর, মহাখালী কাঁচা বাজার, গাজীপুর টঙ্গীসহ সারা দেশে নিয়ে যায়।
দেশ ছাড়াও বিদেশে এখানকার লতির ব্যাপক চাহিদা থাকায় বিক্রি হয় প্রচুর। অন্যান্য ফসলের তুলনায় অল্প পরিচর্যায় ফলন ভালো হওয়ায় কচু লতি চাষের দিকে ঝুঁকছেন এখানকার কৃষকরা। তবে সার, বীজের দাম, শ্রমিকের মুজুরিসহ উৎপাদন খরচ বাড়ায় বাজারে কচু ও লতি ন্যায্য দাম না পাওয়ায় হতাশ কৃষকরা।
কৃষক হেলাল মিয়া বলেন, কচু ও লতি প্রতি বছরই চাষ করি উৎপাদন বেশি হলেও দাম কম, আমরা সঠিক দাম পাই না। আমাদের কাছ থেকে পাইকাররা কম দামে কিনে তারা ঢাকাসহ দেশে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বেশি দামে বিক্রি করে।
কৃষক ইউনুস আলী বলেন, ৭ কাঠা জমিতে কচু ও লতি চাষ করেছি, ৩ মাস লতি বিক্রি করি। প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৮ থেকে ৯ হাজার টাকার লতি বিক্রি করতে পারি।
কচু ও লতি কিনতে আসা ব্যবসায়ী আফাজ উদ্দিন বলেন, ত্রিশাল থেকে কচুর লতি কিনে ঢাকার কাওরান বাজার, মিরপুর, মাওনা চৌরাস্তায় নিয়ে বিক্রি করি। এখানের কচু ও লতি ভালো চাহিদা রয়েছে। ঢাকার কাঁচামাল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে শুনেছি, এখানের কচু ও লতি বিদেশে পাঠানো হয়। তবে সংরক্ষণ ও পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে অনেক।
ত্রিশাল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া রহমান, জনকণ্ঠকে বলেন, এ বছর ত্রিশালে প্রায় তিনশ’ হেক্টর জমিতে কচু ও লতি আবাদ করা হয়েছে। কচু ও লতি আমাদের দেশ ছাড়িয়ে বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। কচু ও লতি চাষ সম্প্রসারণে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগিতা।