ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৪ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

ভাঙা ঘরের কোণে রুটি বিক্রি করেন মা, সন্তানরা কেউ দেখেন না

ইব্রাহিম ওয়াহিদ, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, কুয়াকাটা, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ০১:৩৫, ২৪ জুন ২০২৫

ভাঙা ঘরের কোণে রুটি বিক্রি করেন মা, সন্তানরা কেউ দেখেন না

ছবি: জনকন্ঠ

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পৌরসভার পশ্চিম কুয়াকাটার ১নং ওয়ার্ডের অরকা পল্লীতে বসবাস করেন সেতারা বেগম। বয়স প্রায় ৯০ বছর। জীবনের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে দিতে আজ তিনি ক্লান্ত, নুয়ে পড়ছেন বয়সের ভারে। কিন্তু তারপরও থেমে নেই তার সংগ্রাম। প্রতিদিন নিজের ভাঙা ঘরের এককোণে ছোট্ট একটি রুটির দোকান চালান তিনি। অভাব-অনটন আর নিঃসঙ্গতা এখন তার একমাত্র সাথী।

ভাঙা ঘর, চোখে পানি আর মুখে একরাশ ক্লান্তি নিয়ে কথা বলেন সেতারা বেগম। জন্মের তিন মাসের মাথায় মাকে হারান তিনি। তারপর সৎ মায়ের অবহেলায় বেড়ে ওঠা। ছোটবেলাতেই দুঃখ-দুর্দশার সাথে তার পরিচয় ঘটে। জীবনে সুখ বলে কিছুই ছিল না, এখনো নেই।

বিয়ের কয়েক বছরের মাথায় স্বামী পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে বিছানায় পড়ে যান। তখন পাঁচটি ছোট সন্তান আর অসুস্থ স্বামীর দায়িত্ব এসে পড়ে সেতারার কাঁধে। সংসার চালাতে তাকে কাজ করতে হয়েছে মানুষের বাসায়, হোটেলে থালা-বাসন ধুয়েছেন, এমনকি মাঠে গরু চরিয়েছেন। কঠোর পরিশ্রম আর সীমাহীন কষ্টে একে একে সন্তানদের বড় করেছেন এবং বিয়ে দিয়েছেন।

সেতারা জানান,"স্বামী মারা যাওয়ার পরে ছোট ছোট পাঁচটা সন্তান নিয়ে একটা ঝুপড়ি ঘরে আশ্রয় নিয়েছিলাম। কারো বাসায় কাজ করে, হোটেলে থালা-বাসুন ধুয়ে,জেলেদের মাছ বেছে, মানুষের কাছ থেকে যা পেতাম, তা দিয়ে কোনোরকমে বাচ্চাগুলোকে মানুষ করেছি।"

কিন্তু দুর্ভাগ্য এখানেই শেষ নয়। সন্তানরা বিয়ে করে যে যার মতো আলাদা হয়ে গেলে আবারও একা হয়ে যান সেতারা। কেউ আর তার খোঁজ রাখে না। চোখের জল লুকিয়ে তিনি বলেন, "জীবনভর খেটেছি, কাউকে কষ্ট দেইনি। এখন এই বয়সে কেউ খোঁজ নেয় না। অনেক কষ্ট হয়। ভাত জোটে না ঠিকমতো, কিন্তু কারো কাছে হাত পাতি না, আল্লাহ একভাবে চালিয়ে নিবেন।"

এখন নিজের ঘরের সামান্য একটি কোণে ছোট্ট একটি দোকানের মত করে রুটি বিক্রি করেন তিনি। পাশাপাশি স্থানীয় জেলেদের মাছ বেছে দিনে যা আয় হয়, তা দিয়ে ঠিকমতো খাওয়া হয় না, ওষুধ কেনার তো প্রশ্নই ওঠে না। তবু নিজের আত্মসম্মান ধরে রাখতে কারো কাছে হাত পাতেন না।

নির্জন ভাঙা ঘরের ভেতর দিন কাটে তার। কেউ কথা বলতে আসে না, কেউ পাশে বসে না। সেতারা এখন একা। তার জীবনের প্রতিটি দিন কাটে প্রতীক্ষায় একটু সহানুভূতির, একটু ভালোবাসার, একটু সহযোগিতার।

একটি প্রশ্ন এভাবেই কি বাঁচতে হয় একজন মায়ের??

যে মা তার সন্তানদের মুখে ভাত তুলে দিতে জীবনের সব সুখ বিসর্জন দিয়েছেন, সেই মা আজ জীবনের শেষ সময়ে সবার কাছে অবহেলিত। তার জীবন যেন সমাজের এক নির্মম বাস্তবতার চিত্রপট, যেখানে হাজারো ‘সেতারা’ হারিয়ে যাচ্ছেন নিঃসঙ্গতার অন্ধকারে।

এই প্রবীণ নারীর জীবনের শেষ ভাগে একটু শান্তি,একটু সম্মানের জীবন উপহার দিতে সমাজের সামর্থ্যবানদের এগিয়ে আসা দরকার। স্থানীয় প্রশাসন কিংবা সমাজসেবামূলক কোনো সংস্থা চাইলে তার পাশে দাঁড়াতে পারে। সেতারা বেগম কারো দয়া চান না, চান শুধু মানুষ হিসেবেই যেন মরতে পারি।

 

সংযোজনযোগ্য তথ্য :
নাম: সেতারা বেগম।
বয়স: আনুমানিক ৯০ বছর।
ঠিকানা: অরকাপল্লী,পশ্চিম কুয়াকাটা, কুয়াকাটা পৌরসভা,পটুয়াখালী।
বর্তমান পেশা: রুটি বিক্রয় এবং জেলেদের মাছ বাছাই করা। 
প্রয়োজন: খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থান এবং মানবিক সহযোগিতা।
যোগাযোগের নম্বর: ০১৩২৪-৩১০৮৮৩ (নগদ) সেতারা বেগম।

Mily

×