
ছবি: সংগৃহীত
সাম্প্রতিক মার্কিন হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস হয়েছে—এমনটাই দাবি করছে হোয়াইট হাউস। তবে এই দাবির পেছনে বাস্তবতা কতটুকু, তা ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক।
মার্কিন প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট জানিয়েছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে হামলা চালিয়েছে, তাতে দেশটির পরমাণু কার্যক্রম কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তার ভাষায়, “উচ্চমাত্রার আত্মবিশ্বাস” নিয়ে এ দাবি করছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এ দাবির বিরোধিতা করেছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, বেশ কয়েকজন সামরিক বিশ্লেষক এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু পর্যবেক্ষকরা।
কতটুকু ইউরেনিয়াম ছিল ইরানের হাতে?
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA)-এর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি জানান, ইরানের কাছে প্রায় ৪০০ কেজি ইউরেনিয়াম ছিল যা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করা—অর্থাৎ অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশের কাছাকাছি। তবে সাম্প্রতিক সংঘাত শুরুর আগের কদিনেই শেষবার এই মজুত যাচাই করা হয়েছিল। এখনো এতটা ইউরেনিয়াম রয়ে গেছে কিনা, সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
ইরান কি আবার পারমাণবিক কর্মসূচি শুরু করতে পারবে?
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলা ইরানের পারমাণবিক পরিকল্পনায় ধাক্কা দিলেও, তা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ’ বলছে, ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা অনুসারে ইরান তার কর্মসূচি আবার শুরু করতে পারবে।
আর ‘ডিফেন্স প্রায়োরিটিজ’-এর পরিচালক রোজমেরি কেলানিক নিউ ইয়র্ক টাইমসকে জানান, এই হামলা ইরানকে হয়তো পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের প্রতি আরও বেশি আগ্রহী করে তুলবে।
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন: ইউরেনিয়াম কোথায়?
ইরান কি হামলার আগেই ইউরেনিয়াম সরিয়ে ফেলেছিল?
IAEA-এর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি জানান, ১৩ জুন—যেদিন ইসরায়েল ইরানে হামলা চালায়—সেদিন ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি তাঁকে জানান, ইরান তার পারমাণবিক সরঞ্জাম ও উপাদান রক্ষায় ‘বিশেষ ব্যবস্থা’ নিচ্ছে। যদিও ইরান আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি যে ইউরেনিয়াম অন্য কোথাও সরানো হয়েছে কিনা।
IAEA ইতোমধ্যে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় তাদের পর্যবেক্ষক পাঠানোর আবেদন করেছে—উদ্দেশ্য, ইউরেনিয়াম মজুতের হিসাব মিলিয়ে দেখা।
‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’: এক ঝটিকা অভিযান
ডোনাল্ড ট্রাম্প শনিবার ঘোষণা করেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ফোর্দো, নাতাঞ্জ এবং ইসফাহানের পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে।
এই অভিযানের নাম—“অপারেশন মিডনাইট হ্যামার”। এটি ছিল অত্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে পরিচালিত একটি সামরিক অপারেশন। এর লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতাকে পঙ্গু করে দেওয়া।
এর পরই ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “এই হামলার পর দুটি পথ খোলা—হয় শান্তি, না হয় ইরানের জন্য ভয়াবহ পরিণতি।”
ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স বলেন, “আমরা ইরানের বিরুদ্ধে নয়, যুদ্ধ করছি তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির বিরুদ্ধে।”
অন্যদিকে ইরান এই হামলাকে জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করে বলেছে, “যুক্তরাষ্ট্র কূটনীতিকে ছলনা হিসেবে ব্যবহার করছে এবং আন্তর্জাতিক আইনকে উপেক্ষা করছে।”
Mily