ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৪ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

একনেক বৈঠক আজ

সার মজুতের দুই বছরের প্রকল্প শেষ হয়নি ৯ বছরেও

জাহিদুল ইসলাম

প্রকাশিত: ০০:১৯, ২৪ জুন ২০২৫

সার মজুতের দুই বছরের প্রকল্প শেষ হয়নি ৯ বছরেও

কৃষকদের সবচেয়ে বেশি যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তা হলো সার

কৃষি প্রধান বাংলাদেশের কৃষিজ পণ্য উৎপাদনে কৃষকদের সবচেয়ে বেশি যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তা হলো সার। চাহিদার তুলনায় পর্যন্ত মজুত না থাকার অজুহাতে বিভিন্ন সময়ে সার ডিলারদের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েন সাধারণ কৃষকরা। যার প্রভাব পড়ে সামগ্রিক অর্থনীতিতে। এমন পরিস্থিতিতে সারের পর্যাপ্ত মজুদ গড়তে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ২০১৭ সালে দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৩টি বাফার গোডাউন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

২০১৯ সালে প্রকল্পটির সমাপ্তকাল নির্ধারণ হলেও এখন পর্যন্ত প্রকল্পটি শেষ করা যায়নি। উপরন্তু ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করে ৩য় সংশোধনীর জন্য আজ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হচ্ছে। এমনটাই জানা গেছে সংশ্লিষ্ট সূত্রে। 
সূত্র জানায়, শিল্প মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ  কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) অধীনে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ৫৪৩ কোটি ৯৬ লাখ ৯৬ হাজার টাকা ব্যয়ে ধান উৎপাদনে শীর্ষে থাকা ১৩টি জেলায় সার মজুতে বাফার গোডাউন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এগুলো হলো- পঞ্চগড়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, শেরপুর, যশোর, গাইবান্ধা, নীলফামারি, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, পাবনা, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, বরিশাল ও সুনামগঞ্জ। 
সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে এই গোডাউনের নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল ভরা মৌসুমে সারের মজুত বৃদ্ধি করে সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণ ও বিতরণ এবং ডিলারের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের কাছে সার পৌঁছানো। এ ছাড়া প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমগুলো মধ্যে ছিল- গোডাউন নির্মাণে আউটসোর্সিং ও ভূমি অধিগ্রহণ, যানবাহন ভাড়া, বিশেষজ্ঞ সেবা ও সুপারভিশন, ১৩টি বাফার গোডাউন নির্মাণ, সাইট অফিস নির্মাণ ও লিয়াজোঁ অফিস ডেকোরেশন, কম্পিউটার ও যন্ত্রাংশ ক্রয় (সাইট অফিস ও লিয়াজোঁ অফিস) এবং সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল নির্মাণ।  
প্রকল্পটি সম্পর্কে জানা যায়, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে প্রথমবারের মতো একনেক সভায় অনুমোদন হয়। এরপর প্রকল্প শেষ হওয়ার নির্ধারিত সময়ের চেয়ে আরও ৬ মাস বাড়িয়ে ১ম বারের মতো সংশোধনী আনা হয় এবং তা অনুমোদন হয়। এরপর দ্বিতীয় সংশোধনীতে মেয়াদ আরও একবছর বাড়িয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করার প্রস্তাব ও অনুমোদন করা হয়। ৩য় বার মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয় চলতি বছরের জুন পর্যন্ত।

কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রকল্পটি শেষ করতে না পারায় চতুর্থ দফায় আগামী বছরের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি বছরের আরএডিপিতেও প্রকল্পটির অনুকূলে ৫৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল, যার মধ্যে সরকারের তরফে ৪৫ কোটি টাকা এবং আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের ৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা অর্থায়ন ছিল। 
৪র্থ বার মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাবের বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষকদের দোরগোড়ায় দ্রুততার সঙ্গে স্বল্প খরচে সার পৌঁছানো সম্ভব হবে। কৃষকের অধিক ফসল উৎপাদনে সক্ষম হবে এবং দেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবে। উপরন্তু এই গোডাউনগুলোতে পর্যাপ্ত সার নিরাপদে সংরক্ষণ করা যাবে, যার মাধ্যমে সংকটকালে কৃষকের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। 
এমন প্রেক্ষাপটে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতায় বিসিআইসি’র মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন ‘সার সংরক্ষণ ও বিতরণ সুবিধার জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৩টি নতুন বাফার গোডাউন নির্মাণ (৩য় সংশোধিত)’ প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় অপরিবর্তিত রেখে আইএমইডি’র শর্তগুলো প্রতিপালন সাপেক্ষে বাস্তবায়ন মেয়াদ ১ বছর বৃদ্ধি অর্থাৎ জানুয়ারি ২০১৭ থেকে জুন ২০২৫ এর পরিবর্তে জানুয়ারি ২০১৭ থেকে জুন ২০২৬ পর্যন্ত মেয়াদ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একনেকের অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হলো। 
এই প্রকল্পসহ মোট ১৫টি প্রকল্প উপস্থাপন করা হচ্ছে আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠেয় একনেক বৈঠকে। এতে প্রধান উপদেষ্টা ও একনেক চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্ব করবেন। সভায় মোট ৬ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫টি প্রকল্প অনুমোদন হওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৩ হাজার ৭৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, প্রকল্প ঋণ ৩ হাজার ৫৬২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ২৩০ কোটি ৫১ লাখ টাকা। 
প্রকল্পগুলো হলো- স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ‘উপজেলা কমপ্লেক্স সম্প্রসারণ প্রকল্প (২য় পর্যায়) (২য় সংশোধিত) এবং ‘বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং স্থানীয় জনসমাজের সমন্বিত সেবা ও জীবন-জীবিকা উন্নয়ন’ প্রকল্প; স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘৭টি বিভাগীয় শহরে ২০০ শয্যবিশিষ্ট মাদকাশক্তি নিরাময় ও পূনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণ’; নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প ‘নবনির্মিত ৪টি মেরিন একাডেমিতে সিমুলেটর ও সংশ্লিষ্ট সুবিধাদি স্থাপনের মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধি’; আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প ‘একসেস টু জাস্টিস ফর ওমেন: স্ট্রেনদেনিং কমিউনিটি ডিসপুট রেজুলেশন অ্যান্ড ইমপ্রুভিং কেস ম্যানেজমেন্ট’; ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প ‘বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন (প্রস্তাবিত ২য় সংশোধিত)’; মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প এবং ‘নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিকার ও প্রতিরোধে সমন্বিত সেবা জোরদারকরণ এবং কুইক রেসপন্স টিমের কার্যক্রম’; সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প ‘দেশব্যাপী ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি (৩য় সংশোধিত) প্রকল্প’; শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘টিভিইটি টিচার্স ফর দ্যা ফিউচার (টিটিএফ) প্রোগ্রাম’; পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ‘কার্যক্রম বিভাগে একটি নতুন ডিজিটাল ডাটাবেজ সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে উন্নয়ন বাজেট ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি শক্তিশালীকরণ (৩য় সংশোধিত), ‘ইমপ্রুভমেন্ট অফ পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (আইপিআইএমএস)’ এবং ‘প্রকিউরমেন্ট মডার্নাইজেশন টু ইমপ্রুভ পাবলিক সার্ভিস ডেলিভারি (পিএমআইপিএসডি) প্রকল্প’; অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘স্ট্রেনদেনিং পাবলিক অডিট থ্রু ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন অ্যান্ড ক্যাপাসিটি ইনহ্যান্সমেন্ট প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। 
এ ছাড়াও সভায় পরিকল্পনা উপদেষ্টার মাধ্যমে ইতোমধ্যে অনুমোদিত ১৫টি প্রকল্প সম্পর্কে একনেক সদস্যদের অবহিত করা হবে। এসব প্রকল্প হলো- বিশুদ্ধ জাতের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল ও দেশীয় ভেড়া সম্প্রসারণ পাইলট প্রকল্প, কমিউনিটি বেইজড ক্লাইমেট রেজিলেন্ট ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াকালচার ডেভলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ (২য় সংশোধিত), তিনটি পার্বত্য জেলায় সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন, দুগ্ধ ঘাটতি উপজেলায় দুগ্ধ সমবায়ের কার্যক্রম সম্প্রসারণ (১ম সংশোধিত), ফ্লাড রিকনস্ট্রাকশন ইমারজেন্সি অ্যাসিসটেন্ট প্রজেক্ট (১ম সংশোধিত), নেত্রকোনা জেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জীবনমান উন্নতিকরণে পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন, রাজশাহী বিভাগ (সিরাজগঞ্জ ব্যতীত) পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন (২য় সংশোধিত), খুলনা-বাগেরহাট-সাতক্ষীরা জেলার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন (২য় সংশোধিত), বিএএফ ঘাঁটি জহুরুল হক (চট্টগ্রাম) বিমানসেনা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন (২য় সংশোধিত), রংপুর বিভাগ বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন ও উপকেন্দ্রের সম্প্রসারণ এবং পুনর্বাসন (২য় সংশোধিত), রাজশাহী বিভাগ বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন ও উপকেন্দ্রের সম্প্রসারণ একং পুনর্বাসন (২য় সংশোধিত), রংপুর-নীলফামারী-পীরগঞ্জ শহর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় গ্যাস বিতরণ পাইপলাইন নেটওয়ার্ক নির্মাণ (২য় সংশোধিত), ঢাকা-চট্টগ্রাম মেইন পাওয়ার গ্রিড স্ট্রেনদেনিং (২য় সংশোধিত), ফরমুলেশন অব দ্য মহেশখালী মাতারবাড়ী ইন্টিগ্রেটেড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ মাস্টার প্ল্যান এবং বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (২য় পর্যায়) (১ম সংশোধিত) প্রকল্প।

×