
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সোমবার তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে বাংলাদেশ স্কাউটস কাব কার্নিভালের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্কাউটিংয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে ভবিষ্যতের পৃথিবী রচনায় এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। জুলাই বিপ্লবে বাংলাদেশের স্কাউট সদস্যদের অংশগ্রহণ গৌরব ও অহঙ্কারের উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, এটি সারাবিশ্বের স্কাউটসের জন্য বিশেষ গৌরবের। স্কাউট সদস্যরা দেশ ও দেশের মানুষের জন্য আত্মাহুতি দিয়েছে। নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টির জন্য তাদের এই আত্মাহুতি বিশ্ব স্কাউটসের ইতিহাসে এ নজির আর নেই। বাংলাদেশের স্কাউটরা ইতিহাস সৃষ্টি করেছে বলে আমরা সারা বিশ্বের পক্ষ থেকে তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি।
সোমবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে বাংলাদেশ স্কাউটসের দেশব্যাপী আয়োজিত কাব কার্নিভালের উদ্বোধন ও শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ স্কাউটসের এডহক কমিটির আহ্বায়ক মো. এহছানুল হক এবং সদস্য সচিব মীর মাহবুবুর রহমান ¯িœগ্ধ বক্তব্য রাখেন।
ড. ইউনূস বলেন, ‘আজকে স্কাউটিংয়ের ইতিহাসে একটা বিশেষ দিন। শুধু বাংলাদেশের স্কাউটিংয়ের ক্ষেত্রে না, পুরো বিশ্বের স্কাউটিংয়ের ক্ষেত্রে আজকের দিনটা বিশেষ গৌরবের। যে আটজন স্কাউট আত্মাহুতি দিল দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য, নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি করার জন্য সেটা দিয়েই এই ইতিহাসের সৃষ্টি। স্কাউটিংয়ের ইতিহাসে এ রকম নজির আর কোথাও নাই।’
পুরস্কারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যারা পুরস্কার পেলে এবং যারা আজ উপস্থিত আছো, তোমাদের সবার দায়িত্ব হলো দরজা খোলা। দরজা বন্ধ বলে আক্ষেপের দিকে থেকে গেলে হবে না। দরজা তোমাকেই খুলতে হবে। যেহেতু তুমি অনেকদূর এগিয়ে এসেছ, এগিয়ে এসেছ বলেই তুমি স্কাউট হয়েছ, তোমার স্কুলের বাকিরা হয়নি। কাজেই তোমার দায়িত্ব হলো অন্যদের জন্যও দরজা খুলে দেওয়া। তুমি যদি না খোলো এ দরজা বন্ধ থেকেই যাবে।’
তিনি নিজেও একজন স্কাউট পরিবারের গর্বিত সদস্য উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ছাত্রজীবনের স্মৃতিচারণ করেন। ১৯৫৫ সালে ১৫ বছর বয়সে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বয়স্কাউট দলের সঙ্গে কানাডায় অনুষ্ঠিত দশম বিশ্ব বয়স্কাউট জাম্বুরিতে অংশ নেন। সে সময় তিনি ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা ভ্রমণের সুযোগ পেয়েছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এ এক মস্ত বড় সুযোগ, পৃথিবীকে আবিষ্কার করার, তার চেয়ে বড় নিজেকে আবিষ্কার করার। না হলে গৎবাঁধা জীবনে নিজের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই। তোমরা যাতে স্কাউটিংয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে ভবিষ্যতের পৃথিবী রচনা করতে পারো, সে কথা মনে রাখতে হবে।’
স্কাউটিংয়ের ব্যবহারিক দিক ও সৃজনশীলতা তাঁকে খুব আকর্ষণ করতো উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এখানে নতুন কিছু করার সুযোগ থাকে। নতুন কিছু করার সুযোগের কারণে আনন্দ পেতাম। প্রতিযোগিতা করারও সুযোগ রয়েছে এখানে।’
বর্তমান স্কাউটিং কর্মসূচিতে বিশ্বভ্রমণের সুযোগ রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বর্তমান স্কাউটিংয়ে পৃথিবীকে দেখার, অন্য দেশের মানুষকে চেনার এবং তাদের ভাষা জানার সুযোগ রাখতে হবে। বিশ্ব নাগরিকের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার সুযোগ যেন থাকে। এর মাধ্যমে একজন কিশোর নিজেকে আবিষ্কার করতে পারবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে বাংলাদেশ স্কাউটস প্রোগ্রাম বিভাগের পরিচালনায় বাংলাদেশের সব উপজেলা ও বাংলাদেশ স্কাউটসের বিশেষ জেলায় একযোগে কাব কার্নিভাল বাস্তবায়ন হচ্ছে। সারাদেশে ৪৯৫টি উপজেলা, ৫টি মেট্রোপলিটন, ৫টি উপএলাকা ও ২২টি বিশেষ স্কাউট জেলা মিলিয়ে মোট ৫২৭টি স্থানে একযোগে কাব কার্নিভাল উদ্বোধন ও শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড বিতরণ অনুষ্ঠান আয়োজিত হচ্ছে।
সোমবার প্রধান উপদেষ্টা কাব স্কাউটদের সর্বোচ্চ অ্যাওয়ার্ড ‘শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড’ এবং জুলাই আন্দোলনে শহীদ আট জন স্কাউটের সাহসিকতাপূর্ণ কাজের জন্য তাদের পরিবারের সদস্যদের হাতে বাংলাদেশ স্কাউটসের ‘গ্যালান্ট্রি অ্যাওয়ার্ড’ তুলে দেন।
স্কাউটার মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ, রোভার রোহান আহমেদ খান, রোভার তাঞ্জির খান মুন্না, স্কাউট শরিফ উদ্দিন আহমেদ আহনাফ, স্কাউট মাহবুব আলম, স্কাউট গোলাম নাফিজ, স্কাউট তাহির জামান প্রিয়, স্কাউট আরিফুল ইসলাম সাদের পরিবারের সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টার হাত থেকে এ পুরস্কার গ্রহণ করেন।