ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৪ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

গুমকাণ্ডে ভারতীয় গোয়েন্দা সম্পৃক্তির অভিযোগ

খালিদ ইবনে আমিন

প্রকাশিত: ২০:৫০, ২৩ জুন ২০২৫

গুমকাণ্ডে ভারতীয় গোয়েন্দা সম্পৃক্তির অভিযোগ

গুমকাণ্ডে ভারতীয় গোয়েন্দা সম্পৃক্তির অভিযোগ

বাংলাদেশে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনকালে (২০০৯-২৪) রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হয়ে, রাজনৈতিক ভিন্ন মতাদর্শিক কারণে কয়েক হাজার নিরীহ মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন। গুমের ঘটনাগুলো মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই ঘটানো হতো, প্রতিপক্ষরা এর শিকার হতেন। গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিটি প্রদত্ত তথ্যমতে, গুমের শিকার ব্যক্তিদের চার ধরনের পরিণতি হতো।

অনেককেই হত্যা করা হয়েছে; কাউকে কাউকে জঙ্গি তকমা দিয়ে ক্রসফায়ার দেওয়া হয়েছে। কাউকে আবার, সীমান্ত পার করে ভারতে পাঠিয়ে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে গ্রেপ্তার করানো হয়েছিল। যাদের ভাগ্য খুব সুপ্রসন্ন ছিল, অল্প সংখ্যক ক্ষেত্রে তাদের মামলা না দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিটিতে জমা পড়া ১ হাজার ৮৫০টি অভিযোগ বিশ্লেষণ করে এখন পর্যন্ত ২৫৩ জন গুমের শিকার ব্যক্তির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। অভিযোগগুলোর মধ্যে ৮১ শতাংশই জীবিত ভিকটিমদের নিয়ে, যারা গুম থেকে ফিরে এসেছেন। বাকি ১৯ শতাংশ অভিযোগ এমন ভিকটিমদের নিয়ে যারা এখনো ফিরে আসেননি।

গুম হয়ে ফিরে না আসা ১২ জনের বিষয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধান, তাদের গুমের পেছনে কারা জড়িত তা প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করতেও সক্ষম হয়েছে কমিশন। ফিরে না আসা ভিকটিমদের আরও অনেকের বিষয়েই কমিশনের কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক। তাদের বিষয়ে অপরাধী এবং গুমের অপরাধ সংঘটনের স্থানসহ নানাবিধ বিষয়ে তথ্যের ঘাটতি বা পুরনো কললিস্ট না পাওয়াসহ নানারকম বিলম্ব ঘটিত প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হলেও কমিশন আন্তরিকতার সঙ্গে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে।
একেকজন ভিকটিমের বিষয়ে অনুসন্ধান সম্পন্ন করার আগে তথ্য প্রকাশের কোনো সুযোগ নেই। গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সভাপতি বলেন, গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা প্রজ্ঞাপনে গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি গঠনের পর বলপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান, তাদের শনাক্ত এবং কোন পরিস্থিতিতে গুম হয়েছিলেন তা নির্ধারণের জন্য কাজ শুরু করে। গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর কথিত ‘আয়নাঘর’ নামের বন্দিশালার স্থান-স্থাপনা পরিদর্শন করা হয়।

ওইদিনই অনুসন্ধান শেষ না হওয়া পর্যন্ত এসব স্থান-স্থাপনার কোনো পরিবর্তন, পরিমার্জন, সংযোজন বা বিয়োজন না ঘটানোর জন্য চিঠি দেওয়া হয়। গুমের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে এখন পর্যন্ত যাদের শনাক্ত করা গেছে, সবার নাম কমিশন এখনই প্রকাশ করছে না। এর অন্যতম কারণ ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের নিরাপত্তা। ভুক্তভোগী ও তাঁদের পরিবারগুলো এখনো মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে। অনেকে এখনো হুমকি পাচ্ছেন। কমিশনের কাছে হুমকি দেওয়ার অডিও রেকর্ডও রয়েছে। ভুক্তভোগী ও তাঁদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের। 
এমন বাস্তবতায় এখন আর, গোপন আটক কেন্দ্রের অস্তিত্ব অস্বীকার করা যায় না। প্রধান উপদেষ্টা কিছু আটক কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন এবং সেখানে ভুক্তভোগীদের বক্তব্য শুনেছেন, যা মিডিয়ার মাধ্যমে সারা দুনিয়ার মানুষ দেখেছে। এখন পর্যন্ত শুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে সারাদেশে মোট ১৬টি গোপন বন্দিশালা পরিদর্শন করা হয়েছে।
এছাড়াও বিভিন্ন সময় তথ্য প্রাপ্তির পরপরই তাৎক্ষণিক অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। কমিশন অব ইনকোয়ারি অ্যাক্টের ধারা ১০ এ (১) ও (২) অনুযায়ী কমিশনে দাখিল করা গুমসংক্রান্ত অভিযোগগুলোর মধ্য থেকে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর ও চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি এবং ২৫ মার্চ ৩টি পত্রমূলে মোট ১৩১ অভিযোগের বিষয়ে, আইন মোতাবেক এফআইআর বা জিডি রেকর্ডের পর ভুক্তভোগীদের সন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পুলিশের আইজিপি বরাবরপত্র পাঠানো হয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন এই প্রতিবেদনে গুম হওয়া ব্যক্তিদের ৩টি বৈশিষ্ট্য উঠে এসেছে। প্রথমত, নিখোঁজ হওয়ার সময় তাদের নিকটাত্মীয়ের দায়ের করা সাধারণ ডায়েরি, ফৌজদারি মামলা, গুম থাকাকালীন সংবাদপত্রের প্রতিবেদন, সমসাময়িক প্রমাণ রয়েছে। শুধু এই ২৫৩ জন সমসাময়িক প্রমাণ দাখিল সক্ষম হয়েছেন, বাকিরা হননি, কারণ তখন এসব ক্ষেত্রে জিডি করতে গেলে থানায় জিডি নেওয়া হতো না।
দ্বিতীয়ত, গুম অবস্থা থেকে ফেরতের সময় তাদের সন্ত্রাসবিরোধী মামলাসহ বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় কোনো একটি সংস্থা স্বীকার করে নেয় গুম ব্যক্তিটি তাদের হেফাজতে আছে খুব কম সংখ্যক এমন হয়েছে। তৃতীয়ত, এই ভুক্তভোগীরা জীবিত আছেন, তাই তারা কমিশনকে জানাতে পেরেছেন যে, তারা রাষ্ট্রীয় হেফাজতে গোপন আটক কেন্দ্রে বন্দি ছিলেন, যেখানে তাদের অনেকের একে অপরের সঙ্গে দেখাও হয়েছে এবং একই ধরনের নির্যাতনের মুখোমুখি হয়েছেন তারা। 
২৫৩ ব্যক্তির গুমকালীন এবং গুম থেকে ফেরত আসার সময় তিন পর্যায়ই অকাট্য প্রমাণাদি পাওয়া যাচ্ছে। কমিশনের কাছে ২৫৩ জনের একটি তথ্যভিত্তিক দলিল রয়েছে, যারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এবং এক দশকেরও বেশি সময় ধরে একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন থেকেও অত্যন্ত সাদৃশ্যপূর্ণ অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। এমন ঘটনা কাকতালীয় হওয়া সম্ভব নয়।
এমন কথা বলেছেন, গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। এ জাতিয় কথা রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিদের তরফে বলাটা ন্যায্যত নয়। দেশের মানুষ হতাস হয়, নাগরিকদের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার হাজার প্রাণের বিনিময়ে মাফিয়ামুক্ত নতুন বাংলাদেশের জনগণ গুম-খুনের সকল ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত সব অপরাধীর দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিচারঙ্গনে দাঁড় করাতে হবে, বিশ্ববাসীর সামনে অপরাধীদের মুখোশ উন্মুক্ত করতে হবে, যেন আর কোনো স্বৈরাচার নতুন মোড়কে, নতুন আঙ্গিকে দেশের জনগণকে তথাকথিত উন্নয়নের গোলকধাঁধায় ধোঁকা দিতে না পারে।

কথিত চেতনার নামে, আর কোনো বিভাজনের রাজনীতি দেখতে চায় না বাংলাদেশ। দূরদেশ কিংবা প্রতিবেশী কোনো দেশের আধিপত্য এ দেশের তরুণ সমাজ মেনে নেয়নি কোনোকালে। ১৯৭১ সালে মাত্র ৯ মাসে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এ দেশের দামাল ছেলেরা পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করেছে ভারতীয় প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়, এজন্য দেশের জনগণ ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞ। ভারতীয় আগ্রাসন বাংলাদেশের জনগণ কখনো মেনে নেবে না।

সাহায্যের বিনিময়ে, সদ্যস্বাধীন দেশে ভারতীয় বাহিনী পাকবাহিনীর ফেলে যাওয়া সামরিক সরঞ্জামাদিসহ বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ লুটে নিয়ে যায়, যা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে তৎকালীন সময়ে। ভারত গত ৫৪ বছরে সীমান্তে কয়েক হাজার নিরীহ শ্রমজীবী মানুষকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করেছে। ফারাক্কার পানি আগ্রাসন, বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় অসম চুক্তি, সব কিছুতেই ভারতীয় আধিপত্যবাদের নগ্ন ছাপ দেশবাসীর কাছে দৃশ্যমান। ৫৪ বছরের ক্ষোভ, বঞ্চনা, লাঞ্ছনা ও গঞ্জনার অবসান ঘটেছে গত বছর ৫ আগস্ট।

এদেশের আওয়ামী মাফিয়াতন্ত্রের দুষ্টচক্রের লোকেরা ব্যতীত, আপামর জনসাধারণ মনে করে, ৫ আগস্ট মূলত আওয়ামী লীগের পতন হয়নি, বরং ভারতীয় আধিপত্যবাদের কবর রচিত হয়েছে। দেশের ছাত্রজনতা ৭১-এ পাকিস্তানকে এবং ২৪-এ ভারতকে পরাজিত করেছে। পৃথিবীর আর কোনো পরাশক্তির চোখ রাঙানো এ দেশের ছাত্রজনতা আগামী দিনে মেনে নেবে না। এই সহজ কথাটি ভারত যত তাড়াতাড়ি অনুভব করবে, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ততটা সহজ হবে।
ভুলে গেলে চলবে না, একটি দেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রতিবেশী দেশ প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করতে না পারলেও বিরোধিতা কিংবা স্বাগতিক দেশের রাষ্ট্রীয় নির্যাতনে তথ্য-উপাত্ত ও গোয়েন্দা কারিগরি সহযোগিতা দেওয়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। আগামী দিনে বাংলাদেশের মানবাধিকার সুরক্ষায় রাষ্টের নীতি-নির্ধারকদের আন্তর্জাতিক আইন খতিয়ে দেখতে হবে, ভারতীয় আধিপত্যবাদী খবরদারি মোকাবিলায়, প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে হবে।। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে এর চেয়ে বিকল্প বাংলাদেশের সামনে আর কিছু নেই।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গুমের সঙ্গে জড়িত না থাকলেও সেনাবাহিনীর যেসব অফিসার র‌্যাব, ডিজিএফআই এবং এনএসআইতে ডেপুটেশনে ছিলেন তাদের গুমের সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তরা সবাই সামরিক অফিসার। 
সামরিক বাহিনী কোনো কিছু জানত না, এটা বলার সুযোগ নেই। তাদের সাবেক একজন সেনাপ্রধান পাবলিক স্টেটমেন্ট দিয়েছেন সেখানে বলা হয়েছে, দুজন সেনাসদস্য এ ধরনের কাজে যুক্ত হতে চান না বলে তার কাছে আশ্রয় চেয়েছেন। ফলে তারা জানত না এটা বলার সুযোগ নেই। তারা অফিসিয়ালি ইনভলভ ছিল না, কিন্তু জানত না এটা বলার সুযোগ নেই।
সম্প্রতি, ভারত থেকে বাংলাদেশে শত শত নাগরিককে পুশ ইন করা হচ্ছে, ভারতে বন্দি থাকা বাংলাদেশীদের তথ্য চাওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে গুমের কেউ আছে কি না খতিয়ে দেখবে কমিশন।
বিগত সরকারের শাসনামলে গুম একটি সুশৃঙ্খল ও প্রাতিষ্ঠানিকরূপে ‘জঙ্গিবাদবিরোধী’ অভিযানের ছায়াতলে ইসলামি উগ্রবাদের হুমকিকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করা, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন এবং শাসন দীর্ঘায়িত করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়েছে। চলতি শতকের একদম শুরুর দিকে ২০০১-এর ১১ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের টুইনটাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার পর বিশ্ব ব্যাপী ইসলামো ফোবিয়া পশ্চিমাদের হৃৎপিণ্ডে চরমভাবে জেঁকে বসে।

সব কিছুতেই আধুনিক দুনিয়া কথিত ইসলামী জঙ্গিবাদের জুঁজুতে ভুগতে থাকে। সেই জঙ্গিবাদের ট্রামকার্ডই শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসন-শোষণ পাকাপোক্ত করতে মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে ভূমিকা রেখেছে। ভিন্ন মতের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন ও দলনে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবিরোধী প্রচারণা কাজে লাগায় শেখ হাসিনা।
জঙ্গিবাদবিরোধী অভিযানের ছায়াতলে কথিত ইসলামী উগ্রবাদের হুমকিকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত,শাসন দীর্ঘায়িত করে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন। এ প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ সরকার ফৌজদারি বিচারব্যবস্থাকে অস্ত্র বানিয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও নিরাপত্তা বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবাধীন করেছে। নির্যাতন ও গোপন আটকের সংস্কৃতি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চালু করেছে। এমনকি সাধারণ নাগরিকদের বেআইনি পন্থায় বারবার ভারতীয় বাহিনীর হাতেও তুলে দিয়েছে।

উল্লেখ্য, বিশ্ব বিখ্যাত মুফাসসিরে কোরআন আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষের স্বাক্ষী সুখরঞ্জন বালিকে হাইকোর্টের সামনে থেকে গুম করা হয়। কয়েক বছর পর তিনি ভারতের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বাংলাদেশে আসেন। গুমের শিকার ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতার সামঞ্জস্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সুস্পষ্ট। বিষয়টি মোটেও এমন নয় যে একটি জঙ্গিবাদ দমন অভিযানে দু-একজন অসতর্ক কর্মকর্তা বা সদস্য কর্তৃক কিছু মানবাধিকার লঙ্ঘনের ছোটখাটো ঘটনা ঘটেছে।

বরং এটি ছিল একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দমনযন্ত্র, যা জঙ্গিবাদবিরোধী প্রচারণাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। মাঝখানে কিছু সময় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর কাড়তে সক্ষমও হয়। এই জুলুম-অত্যাচারে ভুক্তভোগী ছিলেন মেধাবী শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক কর্মী, আইনজীবী, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আলেমসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি পেশাজীবী এবং সাধারণ জনগণ। জাতিসংঘের স্থানীয় দপ্তর ইতোমধ্যে গুম কমিশনকে কিছু কারিগরি সহায়তা প্রদান করেছে। তারা ইতোমধ্যে চারজন তথ্য-সংগ্রাহক নিযুক্ত করেছে। যারা এই কমিশনের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।
আমরা জানি পৃথিবীর অন্যতম দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ, এফবিআই এবং ইজরাইলের মোশাদ অন্যতম। মোশাদের আদলে ভারতের বহিঃদেশীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড এনালাইসিস উইং সংক্ষেপে ‘র’ বাংলাদেশে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ কায়েমে অন্যতম সহযোগীর ভূমিকা রেখেছে, যা একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের জন্য প্রচ- হুমকিস্বরূপ।

বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষ দৃঢ়চিত্তে, মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসন-শোষণ দীর্ঘায়িত করতে, বাংলাদেশের র‌্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার জঘন্য ভূমিকা ছিল। এই সাহসী বয়ান গুম কমিশন তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করায় দেশের গণমানুষের আস্থা অর্জন করেছে। গুম কমিশনের প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ ফ্যাসিবাদের সকল দোসরদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করতে সাহায্য করবে। শহীদ পরিবারের বেঁচে থাকতে প্রেরণা যোগাবে।

লেখক : সাংবাদিক

×