ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৪ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

রোডম্যাপ নিয়ে প্রশাসনের দীর্ঘসূত্রতা

দ্রুত তফসিল ঘোষণা ও রাকসু নির্বাচন দাবি শিক্ষার্থীদের

রাবি সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ০০:৩৩, ২৪ জুন ২০২৫

দ্রুত তফসিল ঘোষণা ও রাকসু নির্বাচন দাবি শিক্ষার্থীদের

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন।

জুন মাসেই হচ্ছে না রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন। জুনের তৃতীয় বা চতুর্থ সপ্তাহে ভোটগ্রহণের কথা থাকলেও চূড়ান্ত সময়সূচি, আচরণবিধি কিংবা ভোটার তালিকা কোনোটিই প্রকাশ হয়নি। এতে শিক্ষার্থীরা হতাশা প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, রোডম্যাপ অনুযায়ী সময়সীমা পেরোলেও যেন তফসিল ঘোষণার তারিখ আর পেছানো না হয়। তফসিল ঘোষণার একমাসের মধ্যে নির্বাচনের দাবিও করেছেন তারা। 
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক রাকসুর লক্ষ্যে ২২ জুন সিনেটের মতবিনিময় সভায় সক্রিয় ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা পরামর্শ দেন। এর আগে ১৮ জুন নির্বাচন কমিশন ৩০ জুনের মধ্যে তফসিল ঘোষণার কথা জানিয়েছিল। তবে রোডম্যাপ অনুযায়ী বিধিমালা ও আচরণবিধি প্রকাশ না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে। রোডম্যাপ অনুযায়ী অনলাইনে বিধিমালার খসড়ায় মতামতের সময়সীমা ছিল ২৮ মার্চ পর্যন্ত।

বিধিমালা ও চূড়ান্ত আচরণবিধি ১৩ এপ্রিল, খসড়া ভোটার তালিকা ২৮ এপ্রিল ও চূড়ান্ত তালিকা ১৩ মে প্রকাশের কথা ছিল। মনোনয়নপত্র বিতরণ ১৫ থেকে ১৯ মে, ভোট গ্রহণ জুনের তৃতীয় বা চতুর্থ সপ্তাহে হওয়ার কথা। ১৫ এপ্রিল গঠনতন্ত্র সংশোধন ও ৭ সদস্যের ইসি গঠন হলেও কার্যকর কোনো ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, যেহেতু জুনে নির্বাচন সম্ভব নয়, আমরা চাই ৩০ জুন তফসিল দিয়ে জুলাইয়ের মধ্যেই নির্বাচন হোক। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলে এক মাসেই নির্বাচন সম্ভব। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো সহায়ক হবে বলেও আশা করি।
গত কয়েক মাস যাবত পূর্ণাঙ্গ সময়সূচি, আচরণবিধি, ভোটার তালিকা ও শতভাগ আবাসনের দাবিতে রাবি সংস্কার আন্দোলন করে আসছেন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার । তিনি বলেন, ‘বিপ্লবের পরে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আকাক্সক্ষার জায়গায় বিপ্লবী প্রশাসন ব্যর্থ। ৯ দফা দাবি নিয়ে আমরা রাবি সংস্কার আন্দোলন করছি। রাকসু ৯ দফার নবম দাবি। প্রতিটি হল ও বিভাগে শিক্ষার্থীদের কাছে ৯ দফা তুলে ধরছি। আমরা চাই, গণতান্ত্রিকভাবে ছাত্র সংসদ চালু হোক।’
জুলাইয়ে নির্বাচন দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রোডম্যাপের আলোকে কোনো কার্যক্রমই করতে পারে নাই। এ সপ্তাহের মধ্যেই তফসিল দিতে হবে। জুনের শেষ সপ্তাহের মধ্যে তফসিল ঘোষণা করা গেলে জুলাইয়ের তৃতীয় বা শেষ সপ্তাহে নির্বাচন সম্ভব। আশা করি প্রশাসনের সদিচ্ছা আছে। এতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সমর্থন থাকবে।
দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, প্রশাসন রাকসু নির্বাচনের নামে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। প্রশাসনের বিভিন্ন পদে ফ্যাসিবাদের দোসরদের এখনো বহাল তবিয়তে রেখেছে। ফলে তারা গোপনে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। রাকসু আয়োজনে প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলে নিরপেক্ষতা প্রমাণ করত। আমরা চাই, তারা নিরপেক্ষভাবে অনিয়ম ও বৈষম্য দূর করে দ্রুত রাকসু নির্বাচন আয়োজন করুক।’ 
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল বলেন, রাকসু গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠনগুলোর দীর্ঘদিনের দাবি। প্রশাসনের উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তবে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি হিসেবে আমাদের সিনেট কার্যকর, রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট নির্বাচন, পরিবেশ পরিষদ গঠন ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পুনর্বাসনের দাবিগুলো বাস্তবায়িত হয়নি। গঠনতন্ত্র সংস্কার, সভাপতির ক্ষমতা হ্রাস ও রাকসুকে শিক্ষার্থী অধিকারভিত্তিক সংগঠন হিসেবে রূপান্তরের প্রস্তাবও উপেক্ষিত।

২৭ মে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের ওপর হামলা, মেয়েদের হলে মব সন্ত্রাস, কুরআন পোড়ানো ইত্যাদিতে শিক্ষার্থীদের মাঝে অনাস্থা তৈরি হয়েছে। প্রচারণায় অর্থনৈতিক আধিপত্য কমানো, সন্ত্রাসীদের অংশগ্রহণ রোধ ও সাইবার বুলিং বন্ধে পদক্ষেপ নিলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব। ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আল শাহরিয়ার শুভ জানান, শিক্ষার্থীরা আগের মতোই হতাশায় ভুগছে। রাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পরিবেশ গড়ে উঠুক- এটাই আমাদের চাওয়া। আশা করি, ৩১ জুনের আগেই তফসিল ঘোষণা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন জানিয়েছেন, রোডম্যাপ অনুযায়ী পিছিয়ে গেছে, তবে রাকসু নির্বাচন হবেই। প্রস্তুতি চলছে। প্রস্তুতির জন্যই একটু পিছিয়েছে। আমরা ইলেকশন করার ব্যপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।  নির্বাচন কমিশনের কোনো নিয়ম ছিল না, তাই গঠনতন্ত্র অনুসারে তা আপডেট করেছি। বয়সসীমা বাড়ানো ও ডোপ টেস্টের বিষয়ে প্রস্তাব থাকলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা এসব বিষয়ে ফর্মালি বসে আলোচনা করব।’

সামগ্রিক বিষয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও রাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মুস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, আমরা রাকসু নিয়ে কাজ করছি। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে পরামর্শ করছি এবং সেগুলো রাখার চেষ্টা করছি। আমাদের আলোচনা ২৫ তারিখ পর্যন্ত চলবে। এরপর নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হবে।

×