ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৪ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

ইরানে মার্কিন হামলা

-

প্রকাশিত: ২০:৩৩, ২৩ জুন ২০২৫

ইরানে মার্কিন হামলা

সম্পাদকীয়

ইরানের পারমাণবিক তিনটি স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর, ইরান-ইসরাইল সংঘাত নতুন বিপজ্জনক মাত্রা পেয়েছে। ট্রাম্প এক দশক আগে ইরাক যুদ্ধের বিরোধিতা করে নিজের রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলেছিলেন। সেই অবস্থান থেকে তিনি সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে হাঁটলেন।

সে সময় তিনি প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশকে যুদ্ধের জন্য দায়ী করে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ অপচয় ও নাগরিকদের জীবন বিপন্ন করার অভিযোগ তুলেছিলেন। সবকিছু বদলে যায় গত রবিবার ইরানে হামলার কারণে। দেখা যাচ্ছে, ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাগুলো একাধিক মার্কিন প্রেসিডেন্টের মাথাব্যথার কারণ হয়ে আসছে।
ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কড়া নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া। দেশটি এসব হামলাকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন, উসকানিমূলক ও বিপজ্জনক’ বলে মন্তব্য করেছে। তারা সতর্ক করে বলেছে, এসব পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যকে একটি বড় যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে, যার পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। এমনকি পারমাণবিক বিপর্যয়ও ঘটতে পারে।
জাতিসংঘ সনদের ২(৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো রাষ্ট্র অপর রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা কিংবা রাজনৈতিক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ করতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্রের এ হামলার আগে ইরানের দিক থেকে এমন কোনো সরাসরি সামরিক হুমকি আসেনি, যা এ ধরনের আক্রমণকে আত্মরক্ষামূলক বলে আখ্যায়িত করতে পারে। অতএব, এটি একটি নির্ধারিত ‘আগ্রাসী যুদ্ধ’, যা জাতিসংঘ সনদের নির্যাসকেই অস্বীকার করে।
এ হামলা আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের রোম সংবিধি অনুযায়ী ‘আগ্রাসনের অপরাধ’ হিসেবে গণ্য করা যায়। যেখানে বলা আছে, কোনো রাষ্ট্র যদি পূর্বঘোষণাহীনভাবে আরেক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সামরিক আক্রমণ চালায়, তবে তা আন্তর্জাতিক অপরাধ। যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে ইরানের ভূগর্ভস্থ ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহানÑ এই তিন স্থানে ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের বাংকারবিধ্বংসী বোমা নিক্ষেপ করে এই অপরাধ সংঘটন করেছে। এ হামলায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনও উপেক্ষিত হয়েছে। 
মানব ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বোমা দিয়ে আদর্শিক রাজনীতি পরিবর্তন করা যায় না। এ ধরনের আগ্রাসন নতুন সংঘাতের সূচনা করে, পরিসমাপ্তি নয়। ট্রাম্পের এ হামলার পরিণতি হিসেবে ইরানের দিক থেকে আরও কঠোর সামরিক প্রতিক্রিয়া ও হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেয়ার মতো অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়া আসতে পারে, যার প্রভাব হতে পারে বিশ্বব্যাপী। তাই আন্তর্জাতিক সমাজ, বিশেষত আরব রাষ্ট্রসমূহ এবং জাতিসংঘের নীতিনির্ধারক প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত এখনই কার্যকর হস্তক্ষেপ করা। মনে রাখা দরকার, যুদ্ধের আগুন যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তবে তাতে পুড়ে ছারখার হবে কেবল একটি দেশ নয়, বরং সমগ্র মানবতা।
সবচেয়ে বড় কথা, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন বিশ্ববাসীর ভেতর নতুন শঙ্কা বিরাজ করছে। তারা ভাবছেন আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের পরিণতি বহন করতে যাচ্ছে কিনা জলবায়ু ও নানাবিধ সংকটে পর্যুদস্ত আমাদের বসবাসের একমাত্র গ্রহটি। আমেরিকা ও ইসরাইলের আগ্রাসী মনোভাব বিশ্ববাসী বারবার প্রত্যক্ষ করেছে।

এই আগ্রাসী মনোভাবের পরিবর্তন না এলে সামনে সব শান্তিপ্রিয় দেশেরই বিপদ। তাই মাত্র দুটি দেশের যুদ্ধ-তৎপরতার প্রতিবাদ জানাতে হবে বাদবাকি বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশকে। সেইসঙ্গে বিশ্ব শান্তি বজায়ের লক্ষ্যে যে কোনো যুদ্ধবাজ শক্তিকে দমানোর তৎপরতায় সক্রিয় ভূমিকা রাখা চাই।

×