ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২

আর কত সড়ক দুর্ঘটনার সাক্ষী হব আমরা

ফাহমিদা জামান

প্রকাশিত: ২০:৫০, ২২ জুন ২০২৫

আর কত সড়ক দুর্ঘটনার সাক্ষী হব আমরা

দুর্ঘটনা একটি অদৃষ্টপূর্ব, অকল্পনীয় এবং আকস্মিক ঘটনা বা বিষয়কে বুঝায়। চালক, মালিক, ট্রাফিক পুলিশ এবং রাস্তার ত্রুটি ও দুর্বল ব্যবস্থাজনিত সড়ককেন্দ্রিক যে দুর্ঘটনা তাই সড়ক দুর্ঘটনা। বাংলাদেশে রাস্তাঘাট ও যানবাহন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দুর্ঘটনার হার অপ্রতিরোধ্য গতিতে বেড়ে চলেছে। সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতের সংখ্যা। যানবাহন চালকের অতিমাত্রায় গতি গাড়িকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যায় যা দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ। ড্রাইভার অমনোযোগিতা বা অন্যমনস্কতাও সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ড্রাইভার অন্যমনস্ক হয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন। ফলে আশপাশে কী হচ্ছে সেটা তার মধ্যে কোনো অনুভূতি তৈরি করে না সে কী মানুষের ওপর গাড়ির চাকা তুলে দিচ্ছে নাকি অন্য কোনো বাহনের ওপর।
লোকাল বাসগুলোর কথা যদি বলি, অনেক ড্রাইভারকে দেখা যায় কোনো হেলপার রাখেন না। দেখা যায় চালক বাস চালাচ্ছেন আবার নিজেই যাত্রী থেকে টাকা নিচ্ছেন, টাকা ভাঙতি করে দিচ্ছেন, পাশাপাশি ফোনেও কথা বলছেন। তখন তার বাসের নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণরূপে তার হাতে থাকে না। কারণ তার দুটো হাতই টাকা ভাঙ্গানোর কাজে কিংবা নেওয়ার কাজে ব্যস্ত। গত কয়েকদিন আগে ঠিক এমনই দৃশ্য আমরা দেখতে পাই, যেখানে বাস চালক রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটা দুজন স্কুল শিক্ষার্থীকে পিষে দেন। যার ফল দুই নবীন প্রাণ ঝরে যাওয়া। একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে নারী ৮৯৩ জন। আর শিশু ১ হাজার ১৫২ জন ছিল। তবে ২০২৪ সালে ২ হাজার ৭৬১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ২ হাজার ৬০৯ জন। এটি মোট নিহতের প্রায় ৩৬ শতাংশ। আর মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার প্রায় ৪০ শতাংশ। এছাড়াও যানবাহন দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৫৩৫ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২১ শতাংশের বেশি। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৯৮৪ জন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলো সবচেয়ে বেশি হয়েছে আঞ্চলিক সড়কে, এর সংখ্যা ২ হাজার ৭৩৬টি। এটি মোট দুর্ঘটনার ৩৯ শতাংশের বেশি। আর ২ হাজার ৩৫৭টি হয়েছে জাতীয় মহাসড়কে, ৯৭২টি গ্রামীণ সড়কে, ৭৮৪টি শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৭৮টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনার মধ্যে সবেচয়ে বেশি হয়েছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ২ হাজার ৯০৮টি। এ ছাড়া ১ হাজার ৫২৭টি মুখোমুখি সংঘর্ষ এবং ১ হাজার ৫৬২টি পথচারীকে চাপা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তাছাড়াও ৭৮২টি যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১৪৮টি অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
২০২৪ সালে দুর্ঘটনাকবলতি যানবাহনের সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ৭৯৬টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হলো পণ্যবাহী যানবাহন, ৩ হাজার ১৪৫টি। মোটরসাইকেলের সংখ্যা ২ হাজার ৯৭৮টি। এমন হাজারো দৃশ্যের সাক্ষী হচ্ছি আমরা প্রতিনিয়ত। সাধারণ মানুষ নিয়ম না মেনেই রাস্তা পার হচ্ছে। আবার যাত্রী পারাপারের সময় গাড়িও থামছে না যাত্রীরাও না। উদাহরণস্বরূপ বলছি চট্টগ্রামের সানমার একটা স্বনামধন্য শপিংমল। কিন্তু এর আশপাশে কোনো ওভারব্রিজ নেই, ছোটখাটো দুর্ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে। এছাড়া ও ড্রাইভারের প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব, লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানো, ট্রাফিক সিগন্যাল না মানা এসবের জন্য প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে সড়ক দুর্ঘটনা। আমাদের সকলে সচেতন হতে হবে যাতে সড়ক দুর্ঘটনা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি।

লেখক : শিক্ষার্থী, সরকারি মহিলা কলেজ, চট্টগ্রাম

প্যানেল

×