ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

দক্ষ কর্মী ও কর্মসংস্থান তৈরির উদ্যোগ

ড. মোঃ সাজ্জাদ হোসেন

প্রকাশিত: ২০:৪১, ২৪ জানুয়ারি ২০২৪

দক্ষ কর্মী ও কর্মসংস্থান তৈরির উদ্যোগ

দক্ষ কর্মী ও কর্মসংস্থান তৈরির উদ্যোগ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইশতেহার ঘোষণা করেন। ইশতেহার ঘোষণার সময় প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ দফাগুলোর ব্যাখ্যা দেন। ইশতেহারে ১১টি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়েছে। ১১টি বিষয়ের মধ্যে দুই নম্বরে রয়েছে ‘কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা’।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য প্রযুক্তি সক্ষমতা একান্ত প্রয়োজন। এ জন্য ‘স্মার্ট নাগরিক’, ‘স্মার্ট সরকার’, ‘স্মার্ট অর্থনীতি’ ও ‘স্মার্ট সমাজ’- এ চারটি স্তম্ভের সমন্বয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়া হবে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত স্মার্ট সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলা হবে।’ আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছে। এখন নতুন সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ অর্থনীতি। সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে হবে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ঠেকাতে হবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন। ঠিক করতে হবে ডলারের আসল দাম। স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করে বাস্তবায়ন করতে হবে সংস্কার। এজন্য দেশে-বিদেশে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করার কোনো বিকল্প সরকারের কাছে নেই। আর দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।
নতুন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল গত ১৩ জানুয়ারি বলেন, ‘কর্মসংস্থান সংশ্লিষ্ট সব দক্ষতা আমরা শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে চাই। এতে করে শিক্ষার্থীরা কর্মসংস্থানের বিষয়টি মাথায় রেখে নিজেদের শিক্ষা বিষয়ে পরিকল্পনা সাজাতে পারবে। তাদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার বিষয়ে আমরা বেশি জোর দিচ্ছি। কর্মমুখী শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা সাজাতে চাই।’ কারিগরি শিক্ষা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কারিগরি শিক্ষা শূন্য (০০) থেকে ১৮ শতাংশে এসেছে।

কারিগরি শিক্ষার সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যারও পরিবর্তনের সময় এসেছে।’ তিনি বলেন, ‘কারিগরি শিক্ষাকে শুধু হার্ডওয়ারের মধ্যে রাখা যাবে না। মাঠে-ঘাটের কাজ, কৃষি কাজ তো কারিগরির মধ্যে আছেই। আইসিটি ও মেডিক্যালও তার অন্তর্ভুক্ত। কারিগরি বলতে ট্র্যাডিশনাল ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কারিগরিকে সাধারণ শিক্ষার বাইরে রাখার অবকাশ নেই। এটাকে আলাদা ডিভিশন করা হয়েছে বেশি সুযোগ সুবিধা দেওয়ার জন্য।’ 
তিনি আরও বলেন, শিক্ষা খাতে সুশাসন আনাটা জরুরি এবং সরকার সেই কাজ চালিয়ে যাবে। এজন্য শিক্ষা খাত থেকে সবার আগে দুর্নীতি দূর করতে হবে। শিক্ষার যে কোনো পর্যায়ে কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়ে তিনি অগ্রাধিকার দেবেন। প্রায় ২ কোটি মানুষ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায় (বাংলাদেশের ৯৮% শিক্ষার্থী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়)। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ২০২১ সালের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে দেশে মোট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৯১।

প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ২ কোটি ১ লাখ ৯৭২ জন। শুধু প্রাথমিকে ১ কোটি ৬৯ লাখ ৬৪ হাজার ৯৬৭ জন। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণিতে ৩২ লাখ ৫০ হাজার ২৫১, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৩১৯, তৃতীয় শ্রেণিতে ৩৩ লাখ ৫৭ হাজার ৫২, চতুর্থ শ্রেণিতে ৩১ লাখ ৫৪ হাজার ৯১৮ এবং পঞ্চম শ্রেণিতে ৩৬ লাখ ৪ হাজার ৪২৭ জন। কিন্তু এসএসসি বা তারও আগে ১ কোটি ৮০ লক্ষ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে।

সে কারণেই দেখা যায়, আমরা অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে বিদেশে যাই বা অদক্ষভাবেই বাংলাদেশের নানা সেক্টরে কাজে থাকি। তাদের যদি ১৫ বছর পর্যন্ত শিক্ষা দেওয়া যেত, তাহলে তাদের পক্ষে দেশেই অনেক বিনিয়োগ করা সম্ভব হতো বা বিদেশ থেকে বিনিয়োগ আনা সম্ভব হতো। তাদের সুযোগ তৈরি হতো।  শিক্ষা থেকে ১ কোটি ৮০ লক্ষ শিক্ষার্থী হারিয়ে যাবে, তা কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। 
প্রধানমন্ত্রীকে রেফারেন্স দিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার বিনিয়োগ শুধু অবকাঠামো বা সুন্দর বিল্ডিং, সুন্দর ক্যাম্পাস  তৈরি করা নয়, শিক্ষকদের বেতন নিয়ে কোনো কম্প্রোমাইজ করা চলবে না। শিক্ষার্থীরা যেন নি¤œমাধ্যমিক পর্যন্ত অন্তত অবৈতনিক শিক্ষাকার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। বৃত্তির সঙ্গে শিক্ষার দূরত্ব কমানোর কাজ শুরু হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের সংবিধানের ১৭ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সব শিশু বিনামূল্যে এবং বাধ্যতামূলক শিক্ষা পাবে।

বাংলাদেশ জাতিসংঘের সকলের জন্য শিক্ষা (ইএফএ) লক্ষ্যের সঙ্গে পুরোপুরি একমত। মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলের (এমডিজি) পাশাপাশি অন্যান্য শিক্ষাসম্পর্কিত আন্তর্জাতিক ঘোষণাগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ একমত, যা  ‘এসডিজি -৪’  অর্থাৎ  ‘গুণগত শিক্ষা’-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা  ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য-৪’-এর সনদে চিহ্নিত করা হয়েছে।’ 
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে দেশে এখন বেকারের সংখ্যা ২৫ লাখ। এই বেকারদের মধ্যে ১৬ লাখ ৭০ হাজার পুরুষ আর ৮ লাখ ৩০ হাজার নারী। অথচ চাকরিদাতা যোগ্য ও দক্ষ জনশক্তি খুঁজে পান না। অনেক সময় দেখা যায়, সার্টিফিকেট আছে, কিন্তু যে বিষয়ের লোক দরকার, সে বিষয়ে প্রকৃতপক্ষে দক্ষতা নেই।

ফলে, বেকার থেকে যাচ্ছে বহু শিক্ষার্থী। এজন্য শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাথমিক থেকে বিশ^বিদ্যালয় পর্যন্ত কর্মমুখী শিক্ষাকে গুরুত্ব দিচ্ছে বর্তমান সরকার। যা তারা আগের মেয়াদে শুরু করেছিল। এই মেয়াদে তার বাস্তবায়ন করতে চায়। নতুন শিক্ষাক্রমে এজন্য যোজন-বিয়োজন যা প্রয়োজন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
কিছু বিষয় দেখলে অবাক হয়ে যেতে হয়। মাস্টার্স পাস কোনো কোনো বেকার অষ্টম শ্রেণি পাসের চাকরির জন্য আবেদন করেন। এসব ঘটনা বেশি ঘটে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে। বিশেষ করে সরকারের যে যে দপ্তরে দুর্নীতির সুযোগ বেশি, সেই সেই সেক্টরে এই প্রবণতাও বেশি। বেসরকারি খাতে সমস্যা হলো দক্ষতার অভাব। দক্ষ শ্রমিকের অভাব রয়েছে দেশের প্রধান প্রধান শিল্প খাতগুলোতে।

দেশের মোট আটটি খাতে চাহিদার তুলনায় বর্তমানে শ্রমিক কম রয়েছে ১৭ লাখ ২৭ হাজার। সঙ্গে রয়েছে মধ্যম সারির কর্মকর্তার সংকটও। ফলে, অনেক বেশি বেতন দিয়ে বিদেশ থেকে দক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে আনতে হয়। দেশে দক্ষ জনবলের অভাবে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, চীনসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ১০ লাখ মানুষ বাংলাদেশে বিভিন্ন এনজিও, তৈরি পোশাক, বস্ত্র খাতসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশীরা উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বাড়ালে বিদেশীদের ওপর শিল্প মালিকদের নির্ভরতা থাকবে না। চাহিদা ও যোগ্যতার এই ফারাকের কারণ ব্যাখ্যা করে দেখা যায়, উচ্চশিক্ষায় সনদ পাওয়া শিক্ষার্থীরা শিল্পের উৎপাদন, বিপণন পর্যায়ে চাকরি করতে আগ্রহী নয়। তাদের আগ্রহ সরকারি চাকরি, ব্যাংক, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ার-টেবিলের কাজ। কিন্তু চাকরির বাজারের পরিস্থিতি ভিন্ন।

দেশে একটি শিল্প স্থাপিত হলে, সেখানে কর্মকর্তা পর্যায়ে যদি ১০ জন লোক নিয়োগের দরকার হয়, দক্ষ-আধাদক্ষ-অদক্ষ শ্রমিকের দরকার হয় শতাধিক। উচ্চশিক্ষায় অতি ঝোঁকের ফলে উচ্চ শিক্ষিতরা কর্মকর্তা পদে চাকরি না পেয়ে বেকার থাকছে। অন্যদিকে শিল্প-কারখানাগুলো শ্রমিক সংকটে ভুগছে।
২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, অনেক কর্মী পাঠানো হচ্ছে, কিন্তু মাথাপিছু প্রবাসী আয় অনেক কম। অনেক দেশ কম লোক পাঠিয়ে বাড়তি প্রবাসী আয় নিয়ে আসে। কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে। বৈধপথে প্রবাসী আয় পাঠাতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

শুধু আর্থিক অবদান নয়, প্রবাসীদের সামাজিক অবদানেরও স্বীকৃতি থাকা দরকার। দেশে ফিরে এসেও প্রবাসীরা যাতে অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারে, সে জন্য প্রকল্পের মাধ্যমে সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে।
মানুষের জীবনধারণের জন্য রিসোর্স কমে আসছে। যে হারে মানুষ বৃদ্ধি পাচ্ছে, সে হারে নতুন কোনো সম্পদ পৃথিবীতে তৈরি করার সুযোগ নেই। কেবল পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ ও প্রাকৃতিক শক্তি মানুষের একমাত্র ভরসা। যুগে যুগে মানুষ বাস্তুচক্রে টিকে থাকার জন্য সীমিত সম্পদকে সর্বোচ্চ উপযোগ পেতে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার প্রয়োগ করে আসছে।

এখনকার সময়ে মানুষের এই বসতিতে টিকে থাকার প্রথম শর্ত অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, বৈজ্ঞানিক উৎকর্ষ। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর দিকে দৃষ্টি ঘোরালে দেখা যাবে, তারা প্রত্যেকে নিজেদের উন্নতির দিকে ধাবিত করেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে। জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নতি করার সঙ্গে সঙ্গে দেশের জনসংখ্যাকে মানবসম্পদে রূপান্তর করার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন ও উন্নত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা সম্ভব। বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম পরাশক্তি চীনের বর্তমান অবস্থানের পেছনে অন্যতম ভূমিকা ছিল শিল্পায়নের।

চীনকে বলা হয় ‘ফ্যাক্টরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড।’ এক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা রেখেছে বিশেষ বিশেষ কাজে পারদর্শী দক্ষ কর্মীরা। জনসংখ্যার ঘনত্বের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের ৫ম অবস্থানে এবং ১ কোটির বেশি জনসংখ্যার বসবাস যে সকল দেশে, তাদের মধ্যে সর্বাধিক ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। বাংলাদেশে মানুষের মাথাপিছু ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সাধারণত অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় নগণ্য পরিমাণ। সুতরাং বাংলাদেশেকে উন্নত দেশে রূপান্তরিত হতে গেলে একমাত্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠীকে মানব সম্পদে রূপান্তরিত করতে হবে।

দেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি ছাড়িয়েছে। অল্প ভূখণ্ডের একটি দেশে এই বিপুল পরিমাণের জনসংখ্যার উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে কর্মক্ষম প্রতিটি মানুষকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলে কাজে লাগানো ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। সুতরাং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ অর্জনের জন্য লিঙ্গ বৈষম্য ছাড়া নারী-পুরুষ সবাইকে দক্ষ মানব সম্পদে রূপান্তর করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণের প্রধান উপায় কর্মমুখী শিক্ষা। শিক্ষাকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে সরকার নতুন শিক্ষানীতি কার্যকর করেছে। এই শিক্ষানীতি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষার্থী হয়ে উঠবে দক্ষ। এখন আর বইয়ের মধ্যে জ্ঞান সীমাবদ্ধ থাকার কোনো সুযোগ থাকবে না। সরকারকে আরেকটি বিষয়ে নজর দিতে হবে। শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে যারা সরাসরি জড়িত, সেই শিক্ষকদের জীবনমান যদি পরিবর্তন না হয়, তাহলে কোনোভাবেই কোনো কার্যক্রমই সফল হওয়া সম্ভব নয়।

এজন্য শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতনকাঠামো প্রয়োজন। যদি কোনো কারণে সেটি সম্ভব নাও হয়, তাহলেও আগামী বেতনকাঠামোতে শিক্ষকদের জন্য আলাদা বরাদ্দ রাখা সময়ের দাবি। শিক্ষকের জীবনমান শিক্ষাকে সরাসরি প্রভাবিত করে। এছাড়াও শিক্ষকদের জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। শিক্ষকদের নতুন নতুন বিষয় ও প্রযুক্তির ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। মাল্টিডিসিপ্লিনারি এডুকেশন সেন্টার স্থাপন করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাধ্যতামূলক কোর্স হিসেবে প্রোগ্রামিং, ডিজিটাল সিকিউরিটি, নেটওয়ার্কিং, আইওটি, এআই, এমএল, ট্রেড কোর্স চালু করতে হবে। ভাষা শিক্ষার জন্য ইংরেজি, জাপানিজ, চাইনিজ, কোরিয়ান, আরবিসহ বিভিন্ন ভাষা শিক্ষার শর্ট কোর্স অথবা সাবজেক্ট খুলতে হবে। ইনকিউবেশন সেন্টার খুলতে হবে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল এটাচমেন্ট আছে, এমন প্রজেক্ট বাধ্যতামূলক করতে হবে। 
বাংলাদেশ যেমন সম্ভাবনার দেশ, ঠিক তেমনি সম্ভাবনাময় এদেশের তরুণ-তরুণীরা। আমরা আশাবাদী, নতুন শিক্ষামন্ত্রীর বিচক্ষণ  নেতৃত্বে আমাদের আগামী প্রজন্ম শিক্ষা, গবেষণা ও উদ্ভাবনে উৎকর্ষ সাধনের পাশাপাশি দক্ষ জনশক্তি হিসেবে পৃথিবীর বুকে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে। নতুন প্রজন্মের উন্নতি মানেই দেশের সার্বিক উন্নতি।  এদেশের তরুণরা যত প্রযুক্তিতে উন্নত হবে, বাংলাদেশও তত উন্নতি সাধন করবে। সেদিন খুব বেশি দূরে থাকবে না, যখন আমরাও পৃথিবীর উন্নত দেশের সমকক্ষ হতে পারব। এর জন্য প্রয়োজন চেষ্টা এবং সুপরিকল্পিত শিক্ষা ব্যবস্থা।

লেখক : অধ্যাপক, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিবিদ; সদস্য, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি); পরিচালক, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড

×