গ্যারেজে পার্কিং করা বাসে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছিলেন ২০ বছরের যুবক নাইম
গ্যারেজে পার্কিং করা বাসে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছিলেন ২০ বছরের যুবক নাইম। সঙ্গে তার সহকর্মী রবিউল। তারা পরিবহন শ্রমিক। সারাদিন ঘাম ঝরানো পরিশ্রমের পর পার্কিং করা বাসের সিটেই ঘুমিয়ে পড়েন। বাসে ঘুমানোর কারণে তাদের আর ঘরভাড়া দিতে হয় না। বেঁচে যায় কয়েকটি টাকা। কিছু বেশি টাকা পাঠাতে পারেন গ্রামে পরিবারের কাছে। পরদিন ভোর থেকে শুরু হয় জীবন সংগ্রাম। নাইম জানতেন না তার সেই ঘুম আর ভাঙবে না। ভোরে উঠে আর বাসের গেটে দাঁড়িয়ে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে হবে না ‘গুলিস্তান-ফার্মগেট’ বলে। বাসের সিটে রাত্রিযাপন করে কিছু বাড়তি টাকা গ্রামের বাড়িতে পাঠানোর চিন্তাও আর নেই তার। পথ চেয়ে বসে থাকবে না রবিশালের চরমোনাই গ্রামের ¯েœহময়ী মা পারভিন বেগম, বাবা আলম চৌকিদার। সন্তান আর ফিরবে না কোনোদিন।
খুব বেশি লেখাপড়া করা হয়নি নাইমের। সংসারে বাবা-মা এবং চার ভাইবোন। বাবার একার উপার্জনে সংসার চলে না। লেখাপড়া ছেড়ে তাই পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে কিশোর নাইমকে মাত্র ১৬ বছর বয়সে বাসের হেল্পারের কাজ নিতে হয়েছিল। গত চার বছর ধরে বাসের দরজায় ঝুলে খাবার জোগাচ্ছিলেন পরিবারের মুখে। নিজের সকল সুখ বিসর্জন দিয়ে অল্প খেয়ে, বাসের সিটে ঘুমিয়ে পূরণ করছিল পরিবারের স্বপ্নগুলো। সন্ত্রাসীদের দেওয়া আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে গেল তার সবকিছু। তছনছ হয়ে গেল একটি পরিবার। কি অপরাধ ছিল নাইমের। কি অপরাধ তার পরিবারের? তারা তো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল না। ক্ষমতার পালাবদলে ছিল না কোনো আগ্রহ। পরিবারের সদস্যদের মুখে দুই মুঠো ভাত, পরনের বস্ত্র এবং কিছু ছোট ছোট স্বপ্নপূরণের জন্য প্রাণান্ত পরিশ্রম করে গেছে দিনের পর দিন।
২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের নামে তা-বের পর অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় বিএনপি। রাজধানীর ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় একটি গ্যারেজে বাসের সিটে নির্বিঘেœ ঘুমিয়েছিল নাইম ও তার বন্ধু রবিউল। অবরোধ সফল করার জন্য বাসে আগুন দেয় বিএনপির সন্ত্রাসীরা। হঠাৎ আগুনের উত্তাপে ঘুম ভেঙে যায় তাদের। বাসের জানালার কাচ ভেঙে রবিউল বের হয়ে যেতে পারলেও বের হতে পারেনি নাইম। আগুনের লেলিহান শিখায় আত্মাহুতি দিতে বাধ্য হয় এক মায়ের বুকের ধন, এক বাবার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন, ছোট তিন ভাইবোনের ভরসার জায়গা।
শুধু নাইম নয়, বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধের আগুনে পুড়ে এর মধ্যে প্রাণ গেছে আরও কয়েকজনের। অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন অনেকে। ৪০ দিনের অবরোধ হরতালে বিএনপির কর্মীরা আগুন দিয়েছে ২৬৩টি গাড়িতে। ধ্বংস করেছে ১৫টি স্থাপনা। সম্পদ হারিয়ে পথে বসে গেছেন অনেক পরিবহন মালিক। ২৮ অক্টোবর প্রকাশ্য দিবালোকে বিএনপি কর্মীরা পিটিয়ে হত্যা করেছে পুলিশ সদস্য আমিরুল হককে। নির্মম সেই দৃশ্য গোটা দেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে টিভির পর্দা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। শুধু এবারই নয়, রাজনীতির নামে বিভিন্ন সময় বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ-হরতাল তা-বে মৃত্যুবরণ করেছেন অসংখ্য মানুষ। হাজার হাজার মানুষ পঙ্গু হয়ে গেছেন।
সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন লাখ লাখ মানুষ। ক্ষমতায় থাকার সময় আওয়ামী লীগ ও সংখ্যালঘু নিধনের নামে সন্ত্রাসের তাণ্ডব চালানো হয়েছে সারাদেশে। খুন, জখম, নারী ধর্ষণ, বাড়িঘরে আগুন, জমি দখলের মতো কর্মকাণ্ড চালিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা হয়েছে। ২০০৪ সালে বিরোধী দলের নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। নির্মম রক্ত বন্যায় সেদিন প্রাণ দিয়েছিলেন আইভি রহমানসহ ২৪ জন। আওয়ামী লীগের শত শত নেতাকর্মী পঙ্গু হয়ে গিয়েছিলেন। সন্ত্রাসের সেই ধারাবাহিকতা তারা অব্যাহত রেখেছে এখন পর্যন্ত।
২০০১ সালে লতিফুর রহমানের আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় বসে বিএনপি-জামায়াত জোট। ‘আওয়ামী লীগ ও সংখ্যালঘু নির্মূল’ কর্মসূচির আওতায় সারাদেশে তারা সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। হত্যা করা হয় অসংখ্য নেতাকর্মীকে। নির্যাতন চালিয়ে পঙ্গু করে দেওয়া হয় হাজার হাজার মানুষকে। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত থাকার কারণে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় বাড়ি-ঘর। জমির ফসল কেটে নেওয়া হয়। পুকুরের মাছ মেরে ফেলা হয় বিষ দিয়ে। মাসের পর মাস বাড়ি-ঘরে থাকতে পারেনি নেতাকর্মীরা। ঘর থেকে মা-বোনদের ধরে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ চেষ্টা করে সংসদের ভেতরে এবং বাইরে এসব ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে। নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াতে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা চষে বেড়ান সারাদেশ।
সাংবাদিকতা জীবনের শুরু থেকেই আওয়ামী লীগ বিট ছিল আমার দায়িত্বে। ১৯৯২ সালে জনকণ্ঠে যোগদানের পর থেকে ২০০৬ সালে প্রধান প্রতিবেদক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া পর্যন্ত ১৪ বছর টানা এই দায়িত্ব পালন করেছি। শারীরিক অসুস্থতা কিংবা বিশেষ কোনো অসুবিধা না হলে রাজধানী কিংবা ঢাকার বাইরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার এমন কোনো কর্মসূচি ছিল না যেখানে উপস্থিত থাকিনি। ১৯৯২ সাল থেকে ’৯৬ সারাদেশ চষে বেড়িয়েছি শেখ হাসিনার প্রেস টিমের সদস্য হিসেবে।
’৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর প্রায় সকল কর্মসূচি এবং আওয়ামী লীগের সকল দলীয় কর্মসূচিতে উপস্থিত থেকে সংবাদ সংগ্রহ করেছি। ২০০১ সালের পর শেখ হাসিনার সঙ্গে সারাদেশ সফরের সময় প্রত্যক্ষ করেছি বিএনপি-জামায়াতের নির্মম নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র। তুলে ধরার চেষ্টা করেছি পত্রিকার পাতায়। সেই ভয়ংকর দৃশ্য আজও ভেসে ওঠে চোখের সামনে।
সেই সময় মানবতার পাশে দাঁড়িয়েছিল জনকণ্ঠ। সারাদেশে রিপোর্টার পাঠিয়ে তুলে ধরা হয়েছিল বিএনপি-জামায়াতের নির্মমতা। ক্ষিপ্ত সরকার মরিয়া হয়ে জনকণ্ঠের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করেছিল। ভেঙে দেওয়া হয়েছিল পত্রিকার অর্থনৈতিক মেরুদ-। অনিয়মিত হয়ে যায় সাংবাদিক কর্মচারীদের বেতন-ভাতা। তবুও আপোস করেনি প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ ও তোয়াব খানের নেতৃত্বে পরিচালিত জনকণ্ঠ। প্রথমে ২০০১ থেকে ২০০৬ এবং পরে ২০১৩-১৪ সালের নির্মমতায় সারা বিশে^ বিএনপি-জামায়াতের পরিচয় হয়ে ওঠে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে। বিদেশের বিভিন্ন আদালত বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল আখ্যায়িত করে এবং সেই দলের সদস্যদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন খারিজ করে দেয়।
গত ১৮ নভেম্বর রাজধানীর গুলশানে ‘রাইজ ফর পিস’ শীর্ষক অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। এতে অংশ নিয়েছিলেন ২০১৩-১৪ সালে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকা-ে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া আহত ও পঙ্গু একদল অসহায় মানুষ। সাংবাদিকদের কাছে তারা বর্ণনা করেন গত ১০ বছর ধরে তাদের দুঃসহ জীবন যন্ত্রণার নির্মম কাহিনী। ঠাকুরগাঁওয়ের ট্রাকশ্রমিক রফিকুল ইসলাম। সেই সময় তার ট্রাকে দেওয়া আগুনে ঝলসে যায় তার শরীরের বেশিরভাগ অংশ। দীর্ঘ সময় ধরে তিনি পঙ্গু জীবনযাপন করছেন। নিজের কষ্টের কথা বলার জন্য যোগ দিয়েছিলেন এই অবস্থান কর্মসূচিতে। তিনি বলেন, ‘পোড়া দেহ নিয়ে বেঁচে থাকা খুবই কষ্টের। প্রায় দশ বছর ধরে মরার মতো বেঁচে আছি। আমরা অগ্নিসন্ত্রাস চাই না। মানুষের পোড়া দেহের আর কোনো গন্ধ শুঁকতে চাই না। এসব বন্ধ হোক। রাজনীতি ফিরে আসুক সুস্থ ধারায়।’
একই সময় যাত্রাবাড়ীতে বাসে অগ্নি সন্ত্রাসের শিকার গাজীপুরের জমির আলী ও মোহাম্মদ খোকন, মাগুরায় আহত ফারুক, ঢাকার গীতা সেন, অ্যাডভোকেট খোদেজা ইয়াসমিন তাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেন। নারায়ণগঞ্জের কোনাপাড়ায় বাসে আগুনে পুড়ে আহত মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আগুনে আমার মুখ-হাত পুড়ে গেছে। কাজ করতে সক্ষম হলেও পোড়ার কারণে ‘ভয়ংকর’ দেখা যায় বলে আমাকে কেউ কাজে নেয় না। পরিবার নিয়ে খুবই কষ্টে চলছে জীবন।’ বাসে দেওয়া আগুনে নিহত হন কুমিল্লার মোহাম্মদ ইউসুফ। তার ছেলে জাহেদুল ইসলাম রুবেল বর্ণনা করেন পিতার অবর্তমানে তাদের পরিবারের দুঃখ কষ্টের কথা।
একই ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয় গত ৩ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। ‘বিএনপি-জামায়াত কর্তৃক মানুষ পোড়ানোর প্রতিবাদ ও বিচারের দাবি’ শিরোনামে এই কর্মসূচিতেও বীভৎস অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন বিএনপি-জামায়াতের নির্মম সন্ত্রাসের। ২০১৩ সালের ২৭ অক্টোবর রাজধানীতে গাড়ির ওপর পেট্রোল বোমা মেরে হত্যা করা হয় আলমগীর হোসেন শিমুলকে। তার সন্তান জাফর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ মানবতার কথা বলে বিএনপি, আমাদের মানবতার বিচার কে করবে?’
সেই সময় আহত লিটন মিয়া বলেন, ‘সেদিন ছিল শুক্রবার। চানখারপুল থেকে লেগুনায় ওঠার পর ককটেলের বিস্ফোরণে ভেতরে থাকা ১৩ জন আহত হই। গাড়িতে আগুন ধরে যায়। আমার শরীরের অনেকটাই পুড়ে যায়। দীর্ঘদিন ভুগে আমি পরিপূর্ণ সুস্থ হতে পারিনি, পঙ্গু হয়ে জীবনযাপন করছি। আমরা তো রাজনীতি করি না, খেটে খাওয়া মানুষ। কী অপরাধ ছিল আমাদের। এখন পর্যন্ত এই ঘটনার বিচার হয়নি। তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হোক।’ পেট্রোল বোমায় চোখের সামনে স্বামী-সন্তান হারানো ভয়ংকর বর্ণনা দেন মাশরুহা বেগম। তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালে স্বামী ও কোলের শিশু মাইশা নাহিয়ানকে নিয়ে বাসে যাচ্ছিলাম। পেট্রোল বোমায় চলন্ত বাসে দাউ দাউ করে আগুন জলে ওঠে।
আমার স্বামী ধাক্কা মেরে জানালা দিয়ে ফেলে দিয়ে আমার জীবন বাঁচান। তিনি এবং আমার ছোট্ট মাইশা আর বের হতে পারেনি। চোখের সামনে স্বামী ও সন্তান আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আমার বেঁচে থাকাটা দুঃস্বপ্নের মতো।’ বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন মাশরুহা। রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এমন রাজনীতি করবেন না। মানুষের জন্য আপনারা রাজনীতি করেন আবার এই মানুষকেই জীবন্ত পুড়িয়ে মারেন। পঙ্গু করে দেন গোটা পরিবারকে। এই রাজনীতি ত্যাগ করুন। দেশের মানুষ এমন রাজনীতি চায় না।’ কর্মসূচিতে জমির আলী, জাহেদুল ইসলাম, রফিক, খাদিজা নাসরীন এমপিসহ সকল ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ রাজনীতিকদের প্রতি একই আবেদন করেন।
লেখাটি শেষ করছি কিছু নির্মম জিজ্ঞাসা দিয়ে। খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার আদর্শগ্রাম মধ্যপাড়ার ট্রাকের হেল্পার বেলাল হোসেন। গত ২৬ নভেম্বর রবিবার রাতে চট্টগ্রাম থেকে ট্রাকে করে চাল নিয়ে যাচ্ছিলেন খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা থানার তাইন্দং সরকারি খাদ্যগুদামে। পথে গুইমারা উপজেলার হাফছড়ি এলাকায় পৌঁছলে রাস্তায় গাছ ফেলে ট্রাকের গতিরোধ করে অবরোধকারীরা। সন্ত্রাসীরা পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয় ট্রাকে। কাজটি এত দ্রুত করা হয়েছিল যে কিছু বুঝে ওঠার আগেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে যান ট্রাকচালক ইসহাক মিয়া এবং হেল্পার বেলাল।
ইসহাক মিয়া প্রাথমিক চিকিৎসায় সেরে ওঠেন। বেলালকে নিয়ে যাওয়া হয় মানিকছড়ি সরকারি হাসপাতালে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে স্থানান্তর করা হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল হাসপাতালে। অবস্থা ক্রমশ খারাপের দিকে যাওয়ায় তাকে পাঠানো হয় ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। ৬ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ২ ডিসেম্বর হেরে গেলেন ৪০ বছর বয়সী বেলাল। রেখে যান প্রিয়তমা স্ত্রী বিবি ফাতেমা ও চার সন্তান।
চার সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে ফারজানাকে বিয়ে দিয়েছিলেন বেলাল। বাকি তিন ছেলের মধ্যে বড় ছেলের নাম তারেক। সংসারের টানাপোড়েনে মাত্র ১৩ বছরের তারেককে কাজ করতে হয় দোকানে। দ্বিতীয় ছেলে মারুফ মাদ্রাসায় পড়ছে। ছোট ছেলের বয়স মাত্র ৮ মাস। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলাল তার স্বজনদের বারবার বলেছেন, ‘আমি তো রাজনীতি করতাম না। কোনো দলের মিছিল-মিটিংয়ে যেতাম না। তারপরও কেন আমার গায়ে আগুন দিল। এখন আমার কিছু হলে আমার স্ত্রী-সন্তানদের কি হবে। তাদের ভরণপোষণ কে চালাবে।’ বেলালের এই আশঙ্কাই সত্যি হলো। ৬ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে পরাজিত হলেন তিনি। স্ত্রী ফাতেমা এখন তার সন্তানদের নিয়ে কিভাবে জীবন চালাবেন তা কেউ জানে না।
বেলালের ৮ মাসের সন্তান একদিন বড় হবে। কোনোদিন মনে করতে পারবে না তার বাবার মুখটা কেমন ছিল। বড় হয়ে সন্তানটি যদি কোনোদিন জিজ্ঞেস করে কেন আমি বাবার মুখটি মনে করতে পারি না, এর জবাব তাকে কে দেবে?
আজ বিশ^ মানবাধিকার দিবস। বিশে^র বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অনেক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বাংলাদেশে বিনা অপরাধে যাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে, তাদের পাশে বিশে^র কোনো শক্তি কি দাঁড়াবে না? যারা এই মানুষগুলোর মানবাধিকার হরণ করেছে এবং এখনো করছে তাদের বিরুদ্ধে কি কোনো ব্যবস্থা তারা গ্রহণ করবেন না?
লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, জনকণ্ঠ