
কপোতাক্ষ হোক আমাদের জাতীয় সাংস্কৃতিক নদ
কপোতাক্ষ হোক আমাদের জাতীয় সাংস্কৃতিক নদ, এর তীর হোক উচ্চশিক্ষা, কৃষি, সংস্কৃতি ও পর্যটনের পীঠস্থান। হাজার বছর ধরে আমাদের তৃষ্ণা মিটুক এর জলে, কালের সাক্ষী এ নদ আবারও সুফলা করুক কপোতাক্ষ অববাহিকাকে এমনটিই প্রত্যাশা এ অববাহিকার আপামর মানুষের
তিন বা চার দশক আগেও যারা কপোতাক্ষ নদকে দেখেছেন তারা যদি এখন এ নদের অবস্থা প্রত্যক্ষ করেন তবে চমকে উঠবেন, বিস্মিত হবেন। প্রথমে বিশ্বাস করতে খুবই কষ্ট হবে। চোখ পড়লেই মনে যে প্রশ্ন জাগবে তা হলো- এই কি সেই কপোতাক্ষ নদ? মাইকেল মধুসূদন দত্তের কপোতাক্ষ? অমর দেশপ্রেমের কবিতার সেই কপোতাক্ষ, যাকে সতত তিনি তুলনা করেছেন দুগ্ধ-স্রোতরূপী মাতৃভূমি স্তনের সঙ্গে? তখন মনের অজান্তেই মাইকেল মধুসূদন দত্তের অমিত্রাক্ষর ছন্দের সেই কালজয়ী কবিতাটির কয়েকটি চরণ উচ্চারণ হবে :
‘সতত হে নদ তুমি পড় মোর মনে/সতত তোমারই কথা ভাবি এ বিরলে।’ ‘...বহুদেশ দেখিয়াছি বহু নদ দলে/
কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মেটে কার জলে/ দুগ্ধ-স্রোতরূপী তুমি জন্মভূমি স্তনে। ’
কপোতাক্ষ নদের এ শীর্ণকায় অবস্থা দেখামাত্রই আত্মবিলাপ না করে পারা যায় না। কপোতাক্ষ নদ নিয়ে মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ অনুশোচনামূলক দেশপ্রেমের কবিতায় কবির যে মনোবেদনা ও আক্ষেপ ফুটে উঠেছে তা কেবল সাহিত্য বিচারে কালোত্তীর্ণই নয়, এটা আমাদের নানাভাবে, নানাক্ষেত্রে বোধের জায়গায় আঘাত করে। বাঙালির মানসপটে যে নদ স্থায়ীভাবে আসন করে নিয়েছে সে নদকে হারিয়ে যেতে দেওয়া যায় না। এ নদকে জড়িয়ে রূপকথার ছলে কবি চেতনার বদ্ধমূলে যে আঘাত করেছেন সে আঘাত ও উপলব্ধির বারতা আবহমানকালের জন্য বহমান থাকবে।
কিন্তু কপোতাক্ষ নদ বহমান না থাকলে আমাদের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে জীবন্ত সাক্ষী থাকবে কে? কপোতাক্ষ নিয়ে আরও কথা আছে। আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্যে এ নদ যতটা সমাদৃত তার চেয়েও এর ঢের গুরুত্ব অববাহিকার পরিবেশ ও প্রতিবেশ, কৃষি, আর্থ-সামাজিক, যোগাযোগ ও মানুষের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে। ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় কপোতাক্ষ নদ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পশ্চাৎপদ বিশাল এক অববাহিকার নিয়ামক, প্রভাবকস্বরূপ। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গাসহ সংলগ্ন বিস্তীর্ণ জনপদের অন্তত এক কোটি মানুষের ভাগ্য।
প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অববাহিকার দশ লাখ একর জমির ফসল, আবহাওয়া ও জলবায়ু তথা প্রতিবেশ ও পরিবেশগত প্রভাব এর ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। তাই কপোতাক্ষ নদ কেবল সাহিত্য বিচারে নয়, এর রয়েছে বহুমুখী গুরুত্বপূর্ণ দিক। ইতিহাস থেকে এ নদের গত তিন শতাব্দীর তথ্য জানা গেলেও মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখার পরই মূলত এ নদ বহুল পরিচিতি লাভ করে। ঊনবিংশ এবং বিংশ শতকে এ নদের সঙ্গে যশোর-কলকাতা নদীপথের উল্লেখযোগ্য যোগাযোগের তথ্য পাওয়া যায়। তবে এখন থেকে ৫০-৬০ বছর আগেও কপোতাক্ষ অববাহিকার নারকেল, ধান, চাল, আখ, খেজুরের গুড়, আম, কাঁঠালসহ বিভিন্ন প্রকার ফল, সবজি ও ছাগল, হাঁস-মুরগি, ডিম, মাছ যেত কলকাতার বাজারে।
কপোতাক্ষ তীরবর্তী এলাকার এসব পণ্যের চাহিদা এতটাই বেশি ছিল যে, ফড়িয়া, ব্যাপারীরা লঞ্চ, স্টিমার, গয়নার নৌকা ভিড়লেই ঘাটে ছুটে আসত এসব পণ্য কিনতে। মিষ্টি পানি প্রবাহিত কপোতাক্ষ অববাহিকায় উৎপাদিত পণ্যের গয়নার নৌকা নিয়ে কলকাতায় গেছেন এমন বয়স্ক জীবিত মানুষের মুখে এখনো শোনা যায়। সেই কপোতাক্ষ নদ ভরাটের কারণে তীরবর্তী মানুষের দুঃখগাঁথা নিয়ে লেখা জড়ো করলে তাও হবে বেদনার মহাকাব্য। কপোতাক্ষ নদের করুণ অবস্থা ও এর অববাহিকার সমস্যা নিয়ে অগণিত লেখা হয়েছে, মানুষ দুর্ভোগ লাঘবে আন্দোলন করেছে। এখনো সে দুর্ভোগ একেবারে শেষ হয়নি। তাই কপোতাক্ষ নদকে ঘিরেই রয়েছে অববাহিকার কোটি মানুষের স্বপ্ন। কিন্তু দিনে দিনে কপোতাক্ষের শোচনীয় অবস্থা দেখে জনমনে অনুশোচনা যেন বেড়েই চলেছে।
প্রসঙ্গত যে, কপোতাক্ষ নদের দুই তীরে পলি ভরাটের কারণে এর নাব্য হারায়। ২৫-৩০ বছর আগেও এ নদের প্রশস্ততা ছিল চার থেকে পাঁচশ’ মিটার। কিন্তু উভয় তীরে যে চর পড়ে তা দখল হতে থাকে। অনেকে কায়দা করে নামে-বেনামে বরাদ্দ নেন। অথচ জলাবদ্ধতার কারণে ভরাট কপোতাক্ষ নদ খননের দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। অনেক দাবি, আন্দোলনের পর সম্প্রতি কপোতাক্ষ নদের খনন কাজ শেষ হয়েছে। তথ্যমতে কপোতাক্ষ নদের বুকে গড় মাত্র ৫০ মিটার প্রশস্ত করে খনন করা হয়েছে। ফলে বর্তমান পর্যায়ে কপোতাক্ষের বুক খননের পর এ নদ এখন শাসিত একটি খালে পরিণত হয়েছে এবং এর দুই তীরের যে জায়গায় খননকৃত মাটি ফেলা হয়েছে তাসহ ভরাট অংশ এখন চিরতরে দখল হয়ে যাওয়ার উপক্রম।
পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যচিত্রে দেখা যায় ভরাট উভয় তীরে এখন দখলের প্রতিযোগিতা এবং কোনো কোনো স্থানে স্থায়ী অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। তাছাড়া খননকৃত অংশের পাশেই যে মাটি রাখা হয়েছে সেখানে সারিবদ্ধভাবে নারকেল চারা রোপণ করা হচ্ছে। এর ফলে রোপিত এ গাছ নদের স্থায়ী সীমানায় রূপ নেবে এবং এ নদ চিরতরে শীর্ণকায় আবদ্ধ হয়ে যেতে পারে। বর্তমান খননের পর কপোতাক্ষ নদ যে খালরূপ ধারণ করেছে তাও হয়তো দশ-বিশ বছর টিকিয়ে রাখা যাবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। তখন এককালের প্রমত্তা কপোতাক্ষ নদ খননকৃত খাল আকৃতি থেকে বড় পরিসরের একটি নর্দমায় রূপলাভ করবে এবং এরও কিছুকাল পর কপোতাক্ষ কেবল স্মৃতিতেই থাকবে- এমন আশঙ্কা অমূলক নয়।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অনেক নদ-নদীই এমন পরিণতি লাভ করেছে। এ প্রেক্ষাপটে কপোতাক্ষ নদকে বাঁচাতে একটি মহাপরিকল্পনা করা যেত বা এখনো তা করার সম্ভাবনা একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। তবে তা করতে হলে এখনই শুরু করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে এমন একটি মহাপরিকল্পনার কথা ভাবা যেতে পারে। প্রথমত : ১) কপোতাক্ষ নদকে একটি জাতীয় সাংস্কৃতিক নদ ঘোষণা করে এ নদকে ৬২ সালের সিএস-এর আলোকে পূর্বাবস্থায় পুনরুজ্জীবিত করা। ২) কপোতাক্ষ এলাকার সেচ ও পানি নিষ্কাশনের পরিকল্পিত ব্যবস্থা করা। ৩) কপোতাক্ষ অববাহিকার কৃষি জমিতে ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি করা। ৪)
অববাহিকার নদী, খাল, বিল ও হাওড়ে মৎস্য চাষ বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ এলাকায় গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগিসহ ফসল বহির্ভূত কৃষি কার্যক্রম বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধি করা। ৫) কপোতাক্ষকে একটি মিষ্টি পানির রিজার্ভার হিসেবে গড়ে তোলা এবং একই সঙ্গে স্থানীয় প্রজাতির মাছের ব্রুড হাব তৈরি করা। ৬) জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় অববাহিকায় অন্তত এক কোটি ফলদ ও বনজ বৃক্ষের চারা রোপণ করা। ৭) মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতিবিজড়িত জন্মভূমি সাগরদাঁড়িতে একটি জাতীয় সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা। ৮) কপোতাক্ষ-মাথাভাঙ্গা এবং গড়াই-ভৈরব-কপোতাক্ষের উভয় তীরের দীর্ঘ প্রায় ৫০০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পশ্চাৎপদ এ মধ্যভাগে নতুন যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা। ৯) কপোতাক্ষ অববাহিকায় পর্যটন সুবিধা গড়ে তোলা।
বর্তমানে কপোতাক্ষ নদের যে অংশটুকু খনন করা হয়েছে তাতে আপাতত জলাবদ্ধতার সমস্যার কিছুটা হলেও সমাধান হতে পারে। তবে এতটুকু খনন বেশিদিন কপোতাক্ষকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবে না বলেই বেশিরভাগ মানুষের মত প্রকাশিত হচ্ছে। তাই বৃহত্তর খনন চিন্তা করা আবশ্যক। এক্ষেত্রে : ১) মাথাভাঙ্গা এবং অপরদিকে গড়াইয়ের সঙ্গে সংযোগ সাধনে এই দীর্ঘ নদী ব্যাপকভাবে খননের মাধ্যমে কপোতাক্ষ নদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা দরকার।
উক্ত খননের মাধ্যমে মাথাভাঙ্গা ও গড়াই থেকে বর্ষা মৌসুমের ৫ মাস (জুন-অক্টোবর) মিষ্টি পানির একমুখী প্রবাহ কপোতাক্ষের মাধ্যমে সুন্দরবনের দিকে প্রবাহিত করা গেলে নদীর নাব্য অনেকটা ফিরে আসবে। সুন্দরবনের ভেতর মিষ্টি পানি প্রবাহিত হলে বনের এক বড় অংশ পুষ্টি পাবে। ২) মিষ্টি পানির প্রবাহ নভেম্বরেই আটকে রাখার মতো কৌশল বা প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও বাস্তবায়ন করতে হবে, যাতে সেচ কাজে ব্যবহার এবং পার্শ্ববর্তী ভূস্তরে পানির অস্তিত্ব থাকে। ৩) উত্তর-পশ্চিমাংশে এসব নদীর উৎসমূল মাথাভাঙ্গা থেকে পাইকগাছা-কয়রা-আশাশুনির নিচে পর্যন্ত প্রায় ৩০০ কিলোমিটার নদীর পূর্বতনসীমানা ডিমার্কেশন করে ভূমি পুনরুদ্ধার, প্রয়োজনে ভূমি পুনরায় অধিগ্রহণ করা।
৪) দুই তীরে ৩০ মিটার করে নদী খননের মাটি দ্বারা সড়কের মতো উঁচু ও প্রশস্তকরণ। এর মধ্যে মধ্যভাগের দশ মিটার সড়কের জন্য রেখে কান্ট্রি সাইডে ১০ মিটারে পরিকল্পিত বনায়ন ও বসতি গড়ে তোলা (ভূমিহীনসহ), রিভার সাইডের ১০ মিটার সংরক্ষিত বন সৃজন (আম, জাম, কাঁঠাল, লিচুসহ দেশীয় ফলদ বৃক্ষ)। ৫) কপোতাক্ষ নদের অংশে ও অন্য উল্লিখিত নদীর খননকৃত অংশে মাছের অভয়াশ্রম করে দেশীয় প্রজাতিসহ নানা প্রজাতির মাছের পরিকল্পিত চাষ করা। হালদার মতো এখানকার ব্রুড ফিশের ওপর ভিত্তি করে আশপাশের গ্রাম এলাকায় হ্যাচারি স্থাপন ও পোনা উৎপাদন। ৬) নদীর দুই তীরেই দীর্ঘ মহাসড়ক নির্মাণ এবং উভয় তীরের যোগাযোগ স্থাপনে একাধিক ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ।
প্রস্তাবিত এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবয়নের ফলে যে সমস্ত দিকে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে তা হলো : ১) কপোতাক্ষ অববাহিকার জলাবদ্ধতা নিরসন ও বর্তমান এক ফসলের স্থলে কমপক্ষে দুটি ফসল উৎপাদন এবং ফসলের নিবিড়তা, শাক-সবজি, ফলমূলের উৎপাদন, গবাদিপশু বিশেষ করে গরু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস-মুরগি পালন ও দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধি ২) দেশীয় প্রজাতির মাছের অভয়াশ্রম গড়ে সকল প্রকার মাছের উৎপাদন কয়েকগুণ বৃদ্ধি ৩) যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গার পকেট এলাকা হিসেবে এ প্রত্যন্ত এলাকার যোগাযোগে বৈপ্লবিক অগ্রগতি ৪) উৎপাদিত পণ্য রাজধানীসহ সারাদেশে, এমনকি ভারতে রপ্তানি সহজ ৫) অববাহিকার মানুষের উচ্চশিক্ষাসহ সামগ্রিক শিক্ষার সুযোগ এবং বিশেষ করে নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি ৬) কৃষিভিত্তিক ক্ষুদ্র শিল্পের প্রসার ৭) জাতীয় সাংস্কৃতিক নদ হিসেবে মর্যাদা প্রদানের মাধ্যমে এ এলাকায় দেশী-বিদেশী পর্যটকের আগমনে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি ৮) কয়েক লাখ মানুষের নানামুখী কর্মসংস্থানের মাধ্যমে ও অন্যান্য ইতিবাচক প্রভাবে অববাহিকার প্রায় কোটি মানুষের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি সাধন ৯) সুন্দরবনের একাংশের প্রভূত উপকার ১০) যশোর শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের পাশাপাশি ভবদহ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনেও ভূমিকা রাখবে।
কপোতাক্ষ মহাপরিকল্পনা গ্রহণ একদিকে যেমন সম্ভাবনার তেমনি বাস্তবায়ন একটি চ্যালেঞ্জের বিষয়। তবে তা অসম্ভব নয়। যা করা যেতে পারে : ১) অনেক কম্পোনেন্টের মাধ্যমে কাজ সম্পন্ন করা, ২) কপোতাক্ষ কর্তৃপক্ষ গঠন করে ৫-১০ বছরের মধ্যে এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, ৩) ক্ষতিগ্রস্ত ভূমিহীনদের প্রস্তাবিত পরিকল্পিত আবাসিক স্থানে পুনর্বাসন, ৪) চরের মধ্যে অবস্থিত অপরিকল্পিত হাটবাজার বা অন্যান্য অবকাঠামো অপসারণ করে পরিকল্পিতভাবে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে স্থাপন, ৫) মাথাভাঙ্গা, গড়াই নন্দীর সংযোগ স্থাপনসহ কপোতাক্ষ নদকে সচল রাখতে পৃথক ড্রেজার ইউনিট দিয়ে সারা বছর কার্যক্রম পরিচালনা, ৬) কপোতাক্ষ অথরিটি গঠনের মাধ্যমে সব দিকে ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।
এ ধরনের প্রস্তাবিত একটি মহাপরকিল্পনা বাস্তবায়নে যত টাকাই ব্যয় হোক তা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের সক্ষমতা বর্তমান সরকারের রয়েছে। আর প্রধানমন্ত্রী সমীপে এমন সুদূরপ্রসারী একটি সমন্বিত মহাপরিকল্পনা উত্থাপন করা গেলে তা এ নদের ঐতিহ্য ও বিশাল কপোতাক্ষ অববাহিকার কোটি মানুষের বহুমাত্রিক উপকারিতা, পরিবেশ ও প্রতিবেশ এবং দীর্ঘমেয়াদি সুফল বিবেচনায় তিনি তা অনুমোদন দিতে পারেন এমনটি খুবই আগ্রহের সঙ্গে প্রত্যাশা করা যায়। কপোতাক্ষ অববাহিকার জন্য এমন একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হোক এটাই এখন সময়ের দাবি। কপোতাক্ষের অস্তিত্ব থাকতেই সে উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে ভবিষ্যতে অনুশোচনা করা ছাড়া আর কোনো পথ থাকবে না।
কপোতাক্ষ হারিয়ে গেলে একদিন হয়তো অনুশোচনা করে বলতে হবে হায় কপোতাক্ষ! হায় কপোতাক্ষ! তাই কপোতাক্ষ থাকতেই তার গুরুত্ব যেন আমরা উপলদ্ধি করি। কপোতাক্ষ হোক আমাদের জাতীয় সাংস্কৃতিক নদ, এর তীর হোক উচ্চশিক্ষা, কৃষি, সংস্কৃতি ও পর্যটনের পীঠস্থান। হাজার বছর ধরে আমাদের তৃষ্ণা মিটুক এর জলে, কালের সাক্ষী এ নদ আবারও সুফলা করুক কপোতাক্ষ অববাহিকাকে এমনটিই প্রত্যাশা এ অববাহিকার আপামর মানুষের।
লেখক : গবেষক