ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংকটে সংযত বাজেট

-

প্রকাশিত: ২০:৫০, ৩ জুন ২০২৩

সংকটে সংযত বাজেট

সম্পাদকীয়

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী  আ হ ম মুস্তফা কামাল। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের চেয়ে ১২ শতাংশ ও সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১৫ শতাংশ বড় আয়তনের বাজেটের শিরোনাম ‘উন্নয়নের অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় যা বলেছেন, সেটি উদ্ধৃতিযোগ্য। তিনি বলেন, ‘উচ্চপ্রবৃদ্ধি অর্জন আমাদের লক্ষ্য হলেও আমরা একই সঙ্গে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষার ওপর অধিকতর গুরুত্বারোপ করতে চাই। এরই মধ্যে আমাদের সরকারের সময়োপযোগী কৌশলের প্রভাবে লেনদেন ভারসাম্যের অস্থিতিশীলতা কমে এসেছে।’ 
নির্বাচনপূর্ব এটিই সরকারের শেষ বাজেট। কিন্তু এ বাজেটকে কোনোভাবেই নির্বাচনমুখী কৌশলগত বাজেট বলা যাবে না। এখানেই আগের অর্থমন্ত্রীদের তুলনায় ব্যতিক্রম লক্ষণীয়। সাধারণত নির্বাচনী বছরের বাজেটে জনতুষ্টকারী অনেক কর্মসূচি নেওয়া হয়। কম গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় নানা ধরনের প্রকল্পে ব্যয় বরাদ্দ থাকে, নানাভাবে মানুষের হাতে টাকা দেওয়ার পথ খুঁজে বের করা হয়, ব্যবসায়ীদের খুশি রাখার দৃশ্যমান প্রস্তাব রাখা হয়, দেওয়া হয় নানা করছাড়। কিন্তু এবারের বাজেটে এসব কম। বরং এই বাজেট সংকটকালে সংযত বলা চলে। আমদানি পণ্যে ব্যাপকভাবে সম্পূরক শুল্ক আরোপ, দুই হাজার টাকা ন্যূনতম কর দেওয়ার বিধান, জমি-ফ্ল্যাটের নিবন্ধন ব্যয়ের বিরাট বৃদ্ধি, দ্বিতীয় গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে কর আরোপের বিষয়টি সমালোচিত হওয়ার মতো।

তাই বাজেটকে অন্তত ভোটের বাজেট বলা যাবে না। আইএমএফের ঋণের বিষয়টি মাথায় রেখেই প্রণীত হয়েছে বাজেট। সরকারি দল প্রতিক্রিয়ায় বাজেটকে সংকটের মধ্যে স্বস্তির বাজেট বলেছে। সংসদের প্রধান বিরোধী দল এবং সংসদের বাইরের বড় রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের প্রতিক্রিয়ায় বাজেট সম্পর্কে ভালো কথা নেই। যথারীতি সমালোচনা বা প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই এবং সিপিডি। আমদানিযোগ্য ২৩৪টি পণ্যের সম্পূরক শুল্ক এবং ১৫১টি পণ্যের নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করা হলে স্থানীয় শিল্প সংকটে পড়বে বলে মনে করে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই)। আর সিপিডি বলছে, চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার ক্ষেত্রে ঘোষিত বাজেটে সমাধানের উদ্যোগ অপ্রতুল। অর্থনৈতিক সংস্কারের বিষয়গুলোও বাজেটে পরিষ্কার করা হয়নি।
বাজেট পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ব্যাংকের ওপর ঋণের চাপ বাড়বে। সাধারণ মানুষের নাভিশ^াস উঠে যাওয়া মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য কোনো কৌশল নেওয়া হয়নি। সবকিছুর ওপরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা আদৌ কি পূরণ হবে? 
মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় আরেক দফা বাড়ার ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে বাজেটে। তবে সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমকে কিছুটা গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি ইতিবাচক। দেশের গরিব মানুষকে বাঁচাতে হবে। তাই ভাতার পরিমাণ ও পরিধি বৃদ্ধিকে ইতিবাচক বলতে হবে। আছে দেশীয় শিল্পকে নানাভাবে সুরক্ষা দেওয়ার প্রচেষ্টাও। সবকিছু ছাপিয়ে বাজেটে উচ্চ প্রবৃদ্ধিতে ফেরার আশাবাদ রয়েছে। এই আশা পূরণ হোক, সেটাই প্রত্যাশা।

×