ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৬ মে ২০২৫, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

তীব্র দাবদাহ

-

প্রকাশিত: ২০:৩৩, ১৮ এপ্রিল ২০২৩

তীব্র দাবদাহ

সম্পাদকীয়

দেশে দুই সপ্তাহ ধরে ভয়াবহ দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে। বিগত দুই সপ্তাহ দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে, যা সাধারণত দেখা যায় মরুভূমিতে। এ ধরনের টানা দাবদাহ বিরল। দাবদাহের প্রচণ্ড গরমে মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। এপ্রিল মাসে সাধারণত দুই থেকে পাঁচটি কালবৈশাখী আঘাত হানে। সেই সঙ্গে বৃষ্টি হয় বজ্রপাতসহ। এবার এখন পর্যন্ত কালবৈশাখীর দেখা নেই।  রাজধানীর তাপমাত্রা গত শনিবার ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল, যা ছিল ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। 
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গরম বেশি পড়ছে, এটি সত্য হলেও অন্যান্য বাস্তবতাও উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। তাপ শোষণকারী উপাদানের অভাব ঘটেছে প্রকৃতিতে। আর এ জন্যে আমরাই দায়ী। আমরা খালবিল নদীনালা ভরাট করেছি। ফলে, জলীয় বাষ্পের ঘাটতিতে বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে চলেছে। এ কারণে আরও বেশি করে গরম অনুভূত হচ্ছে। গাছ কেটে ফেলা আরও একটি আত্মঘাতী কর্মকা-। ফলে, সুশীতল ছায়ার আধার আমরা হারিয়ে ফেলেছি। বড় সড়কের পাশের গাছ কেটে ফেলায় পিচঢালা পথ আগুনের মতো তেতে উঠছে সূর্যের আলোয়। তাপমাত্রা বাড়ছে প্রকৃতিতে। রাস্তার দু’ধারে আগের মতো গাছ থাকলে মানুষ গরমে এত বেশি কষ্ট পেত না।

গরমের মধ্যে ঢাকাসহ অনেক জায়গায় লোডশেডিং বেড়েই চলেছে। মানুষ যেখানে ফ্যানের নিচে থেকেও ঘামছেন, সেখানে বিদ্যুৎ বন্ধ থাকলে কতটা কষ্ট পোহাতে হয়, সেটি ভুক্তভোগীমাত্রই জানেন। বিদ্যুতের অভাবে জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। আধুনিক জীবন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। এমনকি গ্রামাঞ্চল। বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যায় তীব্র গরমে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ায় এসির ব্যবহারও বাড়ছে। এসি কক্ষকে শীতল রাখছে, এতে সন্দেহ নেই। অন্যদিকে বায়ুম-লে সেটি উষ্ণ বাতাস ছড়িয়ে দিচ্ছে। এর ফলেও তাপমাত্রা বাড়ছে।

বিদ্যুৎ বিতরণে সংকট থাকলে পানির হাহাকারও শুরু হয়। পানি উৎপাদন ও সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটে। ঢাকার কয়েকটি এলাকায় তীব্র পানি সংকটও রয়েছে। প্রয়োজনীয় পানি না পাওয়া গেলে জীবন স্থবির ও বিপন্ন হয়ে পড়ে। 
তীব্র গরমে শিশু ও বয়স্করাই বেশি কষ্ট ভোগ করে এবং স্বাস্থ্য সমস্যায় পড়ে থাকে। এ সময়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা চাই। খাবার, পোশাক এবং চলাচল- এ তিনটি বিষয়ে সচেতনতা অবলম্বন করলে অসুস্থতা রোধ করা যাবে। সাদা রঙের হালকা ও সংক্ষিপ্ত পোশাক পরার কথা বলেন ডাক্তাররা। খাওয়ার বিষয়ে বলেন টাটকা খাবার খেতে। বাসি, কিংবা সামান্য নষ্ট হওয়া খাবার খাওয়া যাবে না। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।

প্রয়োজনে অল্প লবণমিশ্রিত পানি পান করা যেতে পারে। ডাবের পানিও উপকারী। তরমুজও পাওয়া যাচ্ছে প্রচুর। তরমুজসহ রসালো ফল খাওয়া যেতে পারে। রোদের ভেতরে বাইরে যাওয়া হতে পারে ঝুঁকিপূর্ণ। হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। এতে অনেক সময় বয়স্ক ব্যক্তির জীবন ঝুঁকিতে পড়ে যায়। রোদে যেতে বাধ্য হলে মাথায় কাপড় বা ছাতি ব্যবহার আবশ্যক। 
মনুষ্যসৃষ্ট সমস্যা ও অপরিণামদর্শী কর্মকা- এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশে মরুভূমির মতো যে গরম পড়েছে, তা থেকে আগামী দিনগুলোতে রেহাই পেতে হলে ব্যাপক বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি নিতে হবে। সেইসঙ্গে নদীনালা খালবিল সংস্কার ও পুনরুদ্ধারের জন্য  আমাদের তৎপর হতে হবে।

×