ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৬ মে ২০২৫, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

অটোরিকশা, সিএনজি, হ্যান্ডট্রলির আধিপত্য: ব্যাহত হচ্ছে মহাসড়কের শৃঙ্খলা

শামীম রায়হান, নিজস্ব সংবাদদাতা, দাউদকান্দি

প্রকাশিত: ১১:০৭, ১৬ মে ২০২৫

অটোরিকশা, সিএনজি, হ্যান্ডট্রলির আধিপত্য: ব্যাহত হচ্ছে মহাসড়কের শৃঙ্খলা

ছবি : জনকণ্ঠ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার অংশে সড়কজুড়েই দেখা যায় অটোরিকশা, সিএনজি, হ্যান্ডট্রলি ও ট্রাক্টরের আধিপত্য এবং এক রকম নৈরাজ্য। নিয়মনীতি মানার ক্ষেত্রে উদাসীন চালক, যাত্রী ও পথচারী। এ ক্ষেত্রে সবাইকে হতে হবে সচেতন।

অনিয়ম প্রতিরোধে হাইওয়ে পুলিশ সক্রিয় থাকলেও শুধু আইন দিয়ে বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ সম্ভব নয়—বলছেন সচেতনরা। এ নিয়ে জনমনে আছে গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা।

সরেজমিনে মহাসড়ক ঘুরে দেখা যায়, ফিটনেসবিহীন গাড়ির দৌরাত্ম্য। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং। ফুটফ্লাইওভার ব্যবহারে অনীহা। এতে ব্যাহত হচ্ছে মহাসড়কের শৃঙ্খলা। ফলে মহাসড়কে তৈরি হচ্ছে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর ঝুঁকি। বাড়ছে যানজট। নিয়ম না থাকলেও সড়কে বেড়েছে অটোরিকশা, সিএনজি, হ্যান্ডট্রলির আধিপত্য। অথচ এসব যানবাহনের মহাসড়কে চলাচলে নেই অনুমোদন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন গাড়ির চালক জানান, মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলে হাইওয়ে পুলিশকে মাসোয়ারা দিয়ে। যার ফলে অনেক সময় সড়কেই বিকল হয়ে পড়ে এসব যান। এতে তৈরি হয় তীব্র যানজট। সৃষ্ট যানজট ছড়িয়ে পড়ে ৩০/৩৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে। যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভোগান্তি পোহাতে হয় মহাসড়কে।

স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতের জন্য যাত্রীদের নির্ভর করতে হয় লেগুনা অথবা ভাঙাচোরা মাইক্রোবাসের উপর। ফলে মৃত্যুকে সঙ্গী করেই তাদের চলাফেরা। নির্দিষ্ট স্থান থাকলেও দেখা যায় যাত্রীবাহী বাস মহাসড়কে যত্রতত্র যাত্রী ওঠায় ও নামায়। নিয়মনীতির তোয়াক্কা করে না তারা। পণ্যবাহী যানবাহনও মহাসড়কের ব্যস্ততম এলাকায় ফেলে রাখতে দেখা যায় যত্রতত্র।

অপরদিকে দাউদকান্দি মহাসড়ক অংশে রয়েছে ৪টি ফুটফ্লাইওভার। এগুলো নির্মাণ করা হয়েছে পথচারীদের নিরাপদে পারাপারের সুবিধার্থে। জীবন নিরাপত্তায় নির্মিত এসব ফ্লাইওভার ব্যবহারে নেই খুব একটা আগ্রহ। সম্প্রতি উপজেলার গৌরীপুর অংশে ফ্লাইওভারের নিচে সড়ক বিভাজনে তৈরি করা হয়েছে বেষ্টনী। ফলে ফুটফ্লাইওভার ব্যবহারে বাধ্য হচ্ছে পথচারীরা। সচেতনরা মনে করেন, অন্য ফ্লাইওভারগুলোতেও বিভাজনে বেষ্টনী নির্মাণ করা জরুরি।

‘নিরাপদ সড়ক চাই’ দাউদকান্দি উপজেলা শাখার সভাপতি সাংবাদিক লিটন সরকার বাদল বলেন, মহাসড়কে বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। এর আগে সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরি হওয়া জরুরি বলে তিনি মনে করেন। তিনি স্বীকার করেন, শুধু আইন দিয়ে অনিয়ম প্রতিরোধ সম্ভব নয়, প্রয়োজন নাগরিক সচেতনতা।

পরিবেশবিদ অধ্যাপক মতিন সৈকত বলেন, সড়ক কীভাবে অনিরাপদ হয়ে উঠছে, সে বিষয়ে আমাদের ধারণা যৎসামান্য। আমরা প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়েই চলাফেরা করি। ফিটনেসবিহীন গাড়ি, ছোট গাড়ির মহাসড়ক দখল, ফুটফ্লাইওভার ব্যবহার না করায় আমরা নিজেরাই নিজেদের বিপদ ডেকে আনছি। বিশেষ দিনে সচেতনতা প্রচারণা শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ বলে তিনি দাবি করেন।

দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার সদ্য যোগদানকৃত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাশেদ খান চৌধুরী বলেন, আমি এখানে যোগদান করেছি গত মাসের ২৯ এপ্রিল, মাত্র ১৭ দিন হয়েছে। ইতিমধ্যে আমি যোগদানের পর অটোরিকশা, সিএনজি, হ্যান্ডট্রলি ও ট্রাক্টরসহ ফিটনেসবিহীন প্রায় ১৫০টি যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি। সড়কে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। মহাসড়কে যান চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে সব ধরনের অনিয়ম প্রতিরোধ করা হবে বলে তিনি জানান।

সা/ই

×