ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

দুর্যোগে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি

প্রকাশিত: ১৯:৩৭, ১৫ মে ২০২৫

দুর্যোগে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি

প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা প্রায় ২৪ লাখ। টানা চার বছর ধরে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির সংখ্যা বেড়েই চলেছে, যা খুবই উদ্বেগের বিষয়। বাস্তুচ্যুতির বৈশ্বিক তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। আদতে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ঘটে মানুষের বাস্তুচ্যুতি। ২০২৪ সালে গোটা পৃথিবীতে ৮ কোটি ৩৪ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত হয়, যা জার্মানির জনসংখ্যার সমান। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ অর্থাৎ ৭ কোটি ৩৫ লাখ মানুষ সংঘাত ও সহিংসতার কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টার (আইডিএমসি) এবং নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল (এনআরসি) প্রকাশিত যৌথ প্রতিবেদনে এমন চিত্র ফুটে উঠেছে। বিশ্বজুড়ে অভ্যন্তরীণ স্থানান্তর কিংবা বাস্তুচ্যুতি জাতিগত সংঘাত এবং বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও জলবায়ুজনিত কারণ অন্যতম। ২০২৪ সালে বর্ষা মৌসুমে সৃষ্ট বন্যায় ১৩ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয় দেশের কয়েকটি জেলায়। এছাড়াও  সংঘাত ও সহিংসতার কারণে ২ হাজার ৮০০ জন বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। বিশেষ করে অপরিকল্পিত নগরায়ণ, ভূমির ওপরের অংশের পানি শোষণ ক্ষমতা কম এবং নালা ও খালে পানিপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতা বন্যার তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছিল।
২০২৪ সালের শেষ দিকে বিশ্বের ১০টি দেশের প্রতিটিতে সংঘাত ও সহিংসতার কারণে ৩০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত সুদানে এক কোটি ১৬ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। গত বছরের শেষ নাগাদ গাজা উপত্যকার ২০ লাখ অধিবাসীর প্রায় পুরো জনগোষ্ঠী বাস্তুচ্যুতির শিকার হন। দুই কোটি ১০ লাখ মানুষের বাস্তুচ্যুতির জন্য দায়ী ইসরাইলের হামলা। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, গত বছরের শেষ নাগাদ বিশ্বব্যাপী প্রায় এক কোটি মানুষ নিজ দেশ থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ২০২৪ সালে ৬ কোটি ৫৮ লাখ মানুষ নতুন করে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকে একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোর মধ্যে কক্সবাজার জেলা অন্যতম। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে সর্বস্ব হারিয়ে এক কুতুবদিয়া উপজেলা থেকেই প্রায় ৪০ হাজার মানুষ এসে আশ্রয় নেন কক্সবাজারের সদর উপজেলার সমুদ্র উপকূলের ঝিলংজা ইউনিয়নে, যা এখন কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। অন্তত ৫২ হাজার মানুষের বসবাস এখানে। গত তিন দশকে এখানে তৈরি হয়েছে ১৯টি পাড়া-মহল্লা। সেখানকার বিশাল আয়তনের খাসজমিতে তারা মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছেন।
অন্যদিকে চকরিয়ার হারবাং, কৈয়ারবিল, ডুলাহাজারা চা-বাগান, মালুমঘাট, হাঁসের দিঘি, খুটাখালী বাজারের পশ্চিম পাশে, টেকনাফের হ্নীলার মিনাবাজার এলাকাতেও সরকারি জমিতে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছেন আরও অন্তত ৩০ হাজার জলবায়ু-উদ্বাস্তু। এসব এলাকায় অন্তত তিন হাজার শিশু পড়ালেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। বিশ্বব্যাপী বাস্তুচ্যুতির নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব নেতাদের এগিয়ে আসতে হবে মানবিকতার হস্ত সম্প্রসারিত করে। ধনী দেশগুলো যত এগিয়ে আসবে, নিরন্ন ভুখা মানুষগুলো ততটাই বেঁচে থাকায় স্বপ্নচারি হবে। যতবার তারা মানবিক তহবিল বরাদ্দ নেবে, ততবারই একজন বাস্তুচ্যুত মানুষ খাদ্য, ওষুধ, নিরাপত্তা পাবেন।

প্যানেল

×