ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৬ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ঘটিভাঙ্গায় প্যারাবন দখলের হিড়িক; আগুনে ঝলসে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য

নিজস্ব সংবাদদাতা, মহেশখালী

প্রকাশিত: ২২:২৭, ১৫ মে ২০২৫

ঘটিভাঙ্গায় প্যারাবন দখলের হিড়িক; আগুনে ঝলসে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য

ছবি: সংগৃহীত

উপকূলীয় অঞ্চল কক্সবাজারের মহেশখালীর ঘটিভাঙ্গায় ক্রমেই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে হাজারো ম্যানগ্রোভ গাছ। চিংড়ি ঘের তৈরির জন্য পরিকল্পিতভাবে প্যারাবনে লাগানো হচ্ছে আগুন। গভীর রাত কিংবা দিনদুপুরে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বিশাল বনভূমি। প্রতিদিনই নতুন করে কালো ছাইয়ে পরিণত হচ্ছে শত শত গাছ। ঘটিভাঙ্গা, সোনাদিয়া, তাজিয়াকাটা ও হামিদার দিয়া এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই ম্যানগ্রোভ বন একসময় ছিল উপকূলের জন্য প্রাকৃতিক রক্ষাকবচ। তবে এখন তা দখলদারদের আগ্রাসনের শিকার। বনবিভাগ ও প্রশাসনের নীরবতা এই ধ্বংসযজ্ঞকে যেন আরও উৎসাহিত করছে।

স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিনই কোনো না কোনো জায়গায় প্যারাবনে আগুন লাগানো হচ্ছে। সকালে দেখা যায় ধোঁয়ার কুণ্ডলি, পোড়া মাটি আর মরে যাওয়া গাছের কঙ্কাল। এসব গাছ শুধু গাছ নয়—উপকূলের ঢাল। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে এই বন রক্ষা করে মানুষ ও প্রকৃতিকে। এছাড়া মাছ, কাঁকড়াসহ বহু জলজ প্রাণীর আবাসস্থল এই বন। পরিবেশবিদদের মতে, এই বন ধ্বংস হয়ে গেলে শুধু জীববৈচিত্র্যই নয়, পুরো উপকূলীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ বাংলাদেশের উপকূল এখন আরও অরক্ষিত হয়ে পড়ছে।

জানা গেছে, অতীতে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা প্রায় ৩ হাজার একর বনভূমি দখল করে ৩৭টি চিংড়িঘের নির্মাণ করেন। এসব ঘের উচ্ছেদের জন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও তা কার্যকর হয়নি। এখন বিএনপির নেতাকর্মীরা এসে নতুন করে ঘের নির্মাণ শুরু করেছেন। বর্তমানে চিংড়িঘেরের সংখ্যা ৪৪-এর বেশি বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এসব কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় প্রশাসনও কার্যত নিশ্চুপ। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, প্রশাসনের অজ্ঞাতে এত বড় দখল ও আগুন লাগানো সম্ভব নয়। ২০২৩ সালের ২৩ অক্টোবর উচ্চ আদালত সোনাদিয়া ও আশপাশের ম্যানগ্রোভ বন ধ্বংসের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়ে অবৈধ চিংড়িঘের উচ্ছেদের নির্দেশ দেন। কিন্তু ছয় মাস পার হলেও বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)-এর আইনজীবী জাকিয়া সুলতানা বলেন, আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনার পরও বন ধ্বংস আদালত অবমাননার শামিল। মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হেদায়েত উল্যাহ সাংবাদিকদের জানান, গত ১৭ জানুয়ারি দুটি অবৈধ ঘের উচ্ছেদ করা হয়েছে। অবশিষ্ট ঘের উচ্ছেদের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ও জনবল নিরূপণে তিনজন সরকারি কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দখলদারদের খসড়া তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

তবে স্থানীয়রা বলছেন, এসব পদক্ষেপ খুবই ধীরগতির এবং দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। বরং দিনে দিনে বনভূমি আরও সংকুচিত হচ্ছে। স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো একাধিকবার মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও স্মারকলিপি দিয়েছে। ‘আমরা-ধরা কক্সবাজার’ নামের একটি সংগঠনের সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, ‘অবৈধ ঘের থেকে বছরে প্রায় ২০০ কোটি টাকার চিংড়ি ও লবণ উৎপাদিত হয়। এই টাকার ভাগ বিভিন্ন মহলে চলে যায় বলেই কেউ ব্যবস্থা নেয় না।’   

আসিফ

×