ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৬ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

তুরস্কের যে মারণাস্ত্র ভারতকে ঘিরে আছে!

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ১৫ মে ২০২৫

তুরস্কের যে মারণাস্ত্র ভারতকে ঘিরে আছে!

ছ‌বি: সংগৃহীত

আধুনিক যুদ্ধের চরিত্র বদলে গেছে। এখন যুদ্ধ মানেই প্রযুক্তিনির্ভরতা, যেখানে মানুষের সরাসরি অংশগ্রহণ কম, নজরদারি এড়ানো সহজ এবং দূর থেকে আঘাত হানার কৌশলই প্রধান। এই যুদ্ধে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে ড্রোন। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ড্রোন প্রযুক্তির বাজারে বিপ্লব এনেছে, দেখিয়েছে ড্রোন কীভাবে যুদ্ধের নিয়ম বদলে দিতে পারে।

সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে ড্রোন ব্যবহারের প্রবণতা এতটাই বেড়েছে যে অনেকে একে "ড্রোন যুদ্ধ" বলেই অভিহিত করছেন। পাকিস্তানের অধিকাংশ ড্রোনই তুরস্ক থেকে আমদানি করা, আর ভারতের ড্রোনের উৎস মূলত ইসরায়েল। এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তান ২০২৩ সাল থেকেই কৌশলগত এলাকায় তুর্কি ড্রোন মোতায়েন শুরু করে, যা নিয়ে ভারত উদ্বেগ প্রকাশ করে।

এখানেই থেমে নেই। ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর বরাতে দেশটির গণমাধ্যমগুলো দাবি করেছে, বাংলাদেশও সীমান্তে তুর্কি ড্রোন মোতায়েন করেছে। গত ডিসেম্বর থেকে এই গুঞ্জন আরও জোরালো হয়। বলা হয়, বাংলাদেশি ড্রোন ২০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে নজরদারি মিশনে ব্যবহৃত হয়েছে। যদি এ দাবি সত্য হয়, তবে দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তানের পর বাংলাদেশই দ্বিতীয় দেশ, যার হাতে রয়েছে তুরস্কের অত্যাধুনিক ড্রোন প্রযুক্তি।

২০২২ সালে বাংলাদেশ তুরস্কের জনপ্রিয় ড্রোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একটি চুক্তি করে। এই চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর হাতে আসে 'বায়রাকতার টিবি-২' নামের ড্রোন। ড্রোনটি বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী এবং কার্যকর যুদ্ধ ড্রোন হিসেবে পরিচিত। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে এই ড্রোন রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের বড় সুবিধা এনে দিয়েছিল।

বায়রাকতার টিবি-২ ড্রোনে যুক্ত করা যায় চারটি লেজার-গাইডেড স্মার্ট রকেট, যা নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। এটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২২২ কিলোমিটার গতিতে উড়তে পারে এবং বেজ স্টেশন থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। এতে রয়েছে উন্নত সেন্সর, যা জিপিএস ছাড়াও নেভিগেশন নিশ্চিত করতে সক্ষম।

এই ড্রোন ৭০০ কেজি পর্যন্ত ওজন নিয়ে উড়তে পারে এবং একবারে ৩০০ লিটার জ্বালানি বহন করতে পারে। সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে টেকঅফ এবং ল্যান্ডিং করতে পারে এই ড্রোন। এর ট্রিপল অটোপাইলট সিস্টেম, ২৫,০০০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় উড়ার ক্ষমতা এবং একটানা ২৭ ঘণ্টা তিন মিনিট উড়ে থাকার রেকর্ড রয়েছে।

রিয়েল-টাইম ইমেজ ট্রান্সমিশন প্রযুক্তির কারণে একাধিক ব্যবহারকারী একই সঙ্গে ড্রোন থেকে লাইভ ভিডিও দেখতে পারে। এটি ওয়েবভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ট্যাবলেট বা মোবাইল থেকেও নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি সম্ভব করে তোলে।

তবে সব সুবিধার পাশাপাশি একটি বড় দুর্বলতাও রয়েছে—ড্রোনটি আকারে বড় এবং তুলনামূলকভাবে ধীরগতির, ফলে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে এগুলো গুলি করে নামানো সহজ।

সব মিলিয়ে ভারত কেন উদ্বিগ্ন, তা সহজেই বোঝা যায়। তুরস্কের এই মারণাস্ত্র এখন শুধু পাকিস্তান নয়, বাংলাদেশেও মোতায়েন হয়েছে—যা ভারতের চারপাশে একটি নতুন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

ভিডিও দেখুন: https://www.youtube.com/watch?v=t38Zrl0Nz7w

এম.কে.

×