ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৬ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কাশ্মীরসহ বিতর্কিত ইস্যু নিয়ে আলোচনা

ভারতকে আমন্ত্রণ পাকিস্তানের

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:১৯, ১৬ মে ২০২৫

ভারতকে আমন্ত্রণ পাকিস্তানের

ভারতকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ কাশ্মীর, পানি বণ্টনসহ সব বিতর্কিত ইস্যু নিয়ে ‘সামগ্রিকভাবে’ দ্বিপক্ষীয় আলোচনার জন্য ভারতকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। বুধবার শিয়ালকোটের পাসরুর ক্যান্টনমেন্ট পরিদর্শনের সময় শাহবাজ  চিরবৈরী প্রতিবেশীর প্রতি এ আলোচনার প্রস্তাব দেন। 
পাক-ভারত সাম্প্রতিক সংঘাত চলাকালে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী ‘বুনইয়ান-উন-মারসুস’ নামে যে অভিযান চালায় তার প্রশংসা করে শাহবাজ বলেন, এর মধ্য দিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে ‘দৃষ্টান্তমূলক জবাব’ দিয়েছে পাকিস্তান। খবর আলজাজিরা, বিবিসি ও সিনহুয়া। 
শাহবাজ শরিফ তার দেশের সেনাদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে বলেন, ৬ থেকে ৭ মে ভারতীয় হামলার জবাবে পাকিস্তান পাল্টা যে অভিযান চালিয়েছে, তাতে প্রতিবেশী দেশের বিরাট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পাকিস্তান বিমানবাহিনী একাধিক ভারতীয় রাফাল জঙ্গিবিমান ভূপাতিত করেছে। 
২৬টি ভারতীয় স্থাপনায় হামলার প্রসঙ্গ টেনে শাহবাজ শরিফ পাকিস্তানি সেনাদের বলেন, ‘১৯৭১ সালের যুদ্ধের প্রতিশোধ নিয়েছি আমরা। আর এখন গোটা জাতি আপনাদের পাশে আছে। ভবিষ্যতে  হামলার বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সতর্ক করেন শাহবাজ। তিনি বলেন, ‘যদি আবার আমাদের ওপর হামলা চালান, তবে সবকিছু হারাবেন। আমরা যুদ্ধের জন্যও প্রস্তুত, আবার সংলাপের জন্যও। এখন সিদ্ধান্ত আপনার।
জাতির উদ্দেশে মোদির দেওয়া ভাষণের প্রসঙ্গ টেনে শাহবাজ বলেন, ‘আমাদের শর্ত দেবেন না। পানি আমাদের রেডলাইন। আমাদের পানির প্রবাহ থামানোর কথা কল্পনাও করবেন না। হু্যাঁ, পানি ও রক্ত একসঙ্গে বইতে পারে না। আমাদের নীলম-ঝিলম পানি প্রকল্পেও আপনারা হামলা চালিয়েছেন। যদি সেখানে বড় আকারের ক্ষতি হতো, তবে বাগলিহারসহ আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ বাঁধগুলো আমরা ধ্বংস করে দিতাম। 
এ সময় আবারও মোদিকে বিরোধ ভুলে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান শাহবাজ। তিনি বলেন, ‘আসুন, এ আগুন নিভিয়ে ফেলি। আসুন, কাশ্মীর ও পানির বিষয়ে বসে আলোচনা করি। কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীর হামলা হওয়ার পর পাকিস্তানের সঙ্গে সই হওয়া সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত করে ভারত। পাকিস্তানও পাল্টা পদক্ষেপ নেয়। পাল্টাপাল্টি উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে দুই দেশ একে অপরের বিরুদ্ধে হামলা চালায়।
এদিকে পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত জম্মু ও কাশ্মীরের গ্রামগুলোয় নতুন বাংকার তৈরির ঘোষণা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ। বুধবার ও তার আগের দিন মঙ্গলবার কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখার (এলওসি) কাছাকাছি গ্রামগুলো পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এ তথ্য জানান। বুধবার উত্তর কাশ্মীরের বারামুলা জেলার উরির সালামাবাদ, লাগামা, বান্দি ও গিংগাল এলাকা পরিদর্শন করেন ওমর আবদুল্লাহ। 
এ সময় সাংবাদিকরা তার কাছে ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতির বিষয়ে প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চান। এ বিষয়ে ওমর আবদুল্লাহ বলেন, গোলাবর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ‘ব্যক্তিগত’ বাংকার নির্মাণে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি জানানো হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জম্মু বা কাশ্মীরের যেখানেই আমি গেছি, সবখানে আরও বাঙ্কার নির্মাণের দাবি উঠেছে।

মানুষের আশঙ্কা, পরিস্থিতি যে কোনো সময় খারাপ হতে পারে। তাই তারা ব্যক্তিগত বাঙ্কারের দাবি জানিয়েছেন। ওমর আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা প্রথমে তাৎক্ষণিকভাবে জনগণকে ত্রাণ দেব। তারপর যেসব এলাকা গোলাবর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেসব এলাকায় বাঙ্কার তৈরির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করব। ইনডিভিজুয়্যাল বা ব্যক্তিগত বাঙ্কার বলতে এমন আশ্রয়স্থল বোঝায়, যেখানে একজন বা একটি ছোট পরিবার আশ্রয় নিতে পারে।

বোমা হামলা, পারমাণবিক বিস্ফোরণ, যুদ্ধ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মানুষ এসব বাঙ্কারে আশ্রয় নেন। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম পরিদর্শনকালে ওমর আবদুল্লাহর সঙ্গে উপদেষ্টা নাসির আসলাম ওয়ানি, উরির বিধায়ক সাজাদ উরি এবং জেলার ঊর্ধ্বতন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলেন। 
এর আগে গত মঙ্গলবার গোলাবর্ষণে ক্ষতিগ্রস্তদের দেখতে কুপওয়ারা জেলায় যান ওমর আবদুল্লাহ। জেলার কার্নাহ সীমান্ত উপবিভাগের টাংধার, হাজিনার্ড, নাচিয়ান, শামসপোরা, বাঘবেলা, বাটপোরা ও তারবনি এলাকা পরিদর্শন করেন তিনি। সেখানে তিনি সর্বশেষ পরিস্থিতির খোঁজখবর নেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন।

টাংধারের কমিউনিটি বাঙ্কার পরিদর্শনকালে মুখ্যমন্ত্রী সংকটকালে জীবন রক্ষায় এসব বাঙ্কারের ভূমিকার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে এসব বাঙ্কার জীবন রক্ষাকারী আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে। আমরা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী মানুষের জন্য অতিরিক্ত বাঙ্কার নির্মাণ করব। গত মাসে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের  পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এ হামলার পর পাক-ভারত সংঘর্ষ শুরু হয়।

×