ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নিত্যপণ্যে স্বস্তি

-

প্রকাশিত: ২০:৪৫, ২৯ মার্চ ২০২৩

নিত্যপণ্যে স্বস্তি

সম্পাদকীয়

প্রতি বছর রমজানের আগেই নিত্যপণ্যের বাজারে এক ধরনের অস্থিরতা পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। এবারেও এর ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়নি। রোজার আগেই বিশেষ করে ব্রয়লার মুরগি, গরু-খাসির মাংস, ডিম, ভোজ্যতেল, চিনি, ফলমূল, আটা ও ডালের বাজারে দামের উল্লম্ফন ঘটেছে। ফলে সাধারণ ভোক্তা শ্রেণি তো বটেই, মধ্যবিত্তদেরও নাভিশ্বাস উঠেছে। পরিস্থিতি সামলাতে সরকার তথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ অধিদপ্তর দফায় দফায় বৈঠক করেছে নিত্যপণ্য আমদানিকারক, প্রস্তুতকারক, পরিবেশক, পাইকারি-খুচরা ব্যবসায়ীসহ এফবিসিসিআই নেতৃবৃন্দের সঙ্গে।

কিছু পণ্যের আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করা হয়েছে পবিত্র রমজানে ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে অতি মুনাফার প্রবণতা পরিত্যাগ করার জন্য। এর পাশাপাশি নিত্যপণ্যের বাজারে নিয়মিত তদারকিসহ অভিযান পরিচালনা শুরু করা হয়েছে। 
টিসিবির মাধ্যমে সারাদেশে ওএমএস কার্ড দিয়ে মাসে দুবার ভর্তুকি মূল্যে কয়েকটি নিত্যপণ্য বিক্রি শুরু করা হয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় কম দামে দুধ, ডিম, মাংস বিক্রি শুরু করেছে। কয়েকটি বেসরকারি কোম্পানিও ট্রাকসেলে কিছু কম মূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রি করছে। ব্রয়লার মুরগির মাংসের দাম ইতোমধ্যে কমতে শুরু করেছে। ইফতারির আইটেমের দামও কমেছে কিছুটা। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের লক্ষ্য রাখতে হবে যে, পবিত্র ঈদুল ফিতর পর্যন্ত যেন বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকে। এর পাশাপাশি পাইকারি ও খুচরা বাজারে নিত্যপণ্যের নিয়মিত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
মূলত দেশের ভোগ্য ও নিত্যপণ্যের বাজার জিম্মি হয়ে পড়েছে ৩৬টি শক্তিশালী ও ক্ষমতাধর কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে। তাদের কাছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তথা সরকারও যেন অসহায়। অথচ ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে সময় সময় সরকার সবরকম সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকে তাদের। যেমনÑ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নিত্যপণ্যের আমদানির এলসি খুলতে যথাযথ নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। 
কেন্দ্রীয় ব্যংক পবিত্র রমজান উপলক্ষে বিদেশ থেকে ভোজ্যতেল, ছোলা, ডাল, মটর, পেঁয়াজ, মসলা, চিনি ও খেজুরÑ এই আটটি পণ্য বাকিতে আমদানির সুযোগ করে দিয়েছে ব্যবসায়ীদের। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এসব পণ্য ৯০ দিনের সাপ্লায়ার্স বা বায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় আমদানি করা যাবে, যা বহাল থাকবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। ফলে, ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকদের তাৎক্ষণিক ডলারের প্রয়োজন পড়বে না। ব্যাংকগুলো যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে ঋণপত্র (এলসি) খুললেই আমদানি করা যাবে পণ্য।

তাহলে রমজানে নিত্যপণ্যের জোগান নিশ্চিত হবে বাজারে।  তবে একটা সময় পরে পরিশোধ করতে হবে আমদানির দায়। এর আগে এসব পণ্য আমদানির শর্ত সহজ করার জন্যও নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব নিত্যপণ্য আমদানির ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে অগ্রিম জমা বা মার্জিন ন্যূনতম রাখার জন্যও বলা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা এ সুযোগ নিয়ে নিত্যপণ্যের দাম ক্রেতাদের জন্য সহনীয় পর্যায়ে রাখবে বলেই প্রত্যাশা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসব ইতিবাচক পদক্ষেপের ফলেও নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তির প্রভাব পড়েছে, সার্বিকভাবে সর্বস্তরের মানুষের জীবনে যা বয়ে এনেছে স্বস্তি।

×