ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ মে ২০২৩, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০

ইতিহাসের মহানায়ক

নাজনীন বেগম

প্রকাশিত: ২০:৪৭, ১৯ মার্চ ২০২৩

ইতিহাসের মহানায়ক

.

ইতিহাসের ক্ষণজন্মা মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টুঙ্গিপাড়ার এক অভিজাত পরিবারে পৃথিবীর আলো দেখেন। অবিভক্ত ভারত তখন ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের কঠিন শৃঙ্খলে আবদ্ধ। শুধু তাই নয়, বিশ শতকীয় হরেক ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ ঘটনাক্রমে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিও ছিল ঝড়-ঝাপটাময়। বিশেষ করে ১৯০৫ সালে বঙ্গ ব্যবচ্ছেদ, ১৯০৬ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা। পরবর্তীতে স্বদেশী আন্দোলনের অস্থিরতা সব মিলিয়ে যেন প্রতিকূল আবহ। বেড়ে ওঠার সামাজিক পারিপার্শ্বিক বলয়ে যিনি সার্বক্ষণিক বঙ্গবন্ধুকে সাহচর্য দিয়ে পরিস্থিতি অনুধাবনে পাশে থাকতেন তিনি আর কেউ নন- পিতা শেখ লুৎফর রহমান।

অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বারবার পিতার উপস্থিতি স্মরণ করে অনমনীয় শ্রদ্ধা হৃদয় নিঃসৃত অর্ঘ্য নিবেদনে নিজেকে ভরিয়ে তোলেন। স্নেহময় পিতা কিভাবে বটবৃক্ষের মতো ছায়া দিতেন জীবনভর তেমন মুগ্ধতাও জাতির জনককে আপ্লুত করে রাখত। ব্যক্তিগত জীবনের আনন্দ, বেদনা, টানাপোড়েন শারীরিক প্রতিকূলতা ছাড়াও রাজনৈতিক চেতনাকে লালন করেছেন তেমন কাহিনী বঙ্গবন্ধুর লেখায় পাঠকদের আকর্ষণ বাড়ায়। পিতার নিরন্তর স্নেহাতিশয্যে বঙ্গবন্ধুর এগিয়ে চলাও এক লড়াকু বাঙালির জীবনতরী পার হওয়ার মহিমান্বিত পর্ব। স্মরণে-বরণে বারবার উচ্চারিত হয়েছে পরম শ্রদ্ধাভাজন পিতার নামটি। স্পষ্টতই মনে হওয়া স্বাভাবিক বিশাল হৃদয়ের অধিকারী এক অকুতোভয় বাঙালি জন্মদাতা পিতাকে কি মাত্রায় সম্মান আর মর্যাদায় অভিষিক্ত করতেন সেটাও যেন জাতির জনককে মহীয়ান করে তোলে। এমন পিতৃভক্তের নজির আমরা পাই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মধ্যে। পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ তার কনিষ্ঠ সন্তান রবীন্দ্রনাথের চিন্তায়, মননেও সার্বিক সৃজন দ্যোতনায় এক আরাধ্য ব্যক্তিত্বের পর্যায়ে নিবিষ্ট হয়ে থাকতেন। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শেও সার্বক্ষণিক উদ্দীপকের ভূমিকায় পাশে থেকেছেন তিনি। সময়টা ছিল বিংশ শতাব্দীর রাজনৈতিক, সামাজিক, প্রশাসনিক ধর্মীয় ভেদবুদ্ধির এক অসহনীয় দুঃসময়। নানামাত্রিক রাজনৈতিক প্রশাসনিক টানাপোড়েন অবিভক্ত বাংলায় যে চরম উত্তেজনা ছড়ায় তাও বঙ্গবন্ধুর চমৎকার লেখন শক্তিতে উজ্জ্বল হয়ে আছে। ১৯১৪ সালের প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে ওঠাও বিশ্ব পরিস্থিতির এক উন্মত্ত আস্ফালন।

যা বঙ্গবন্ধুর আত্মকথনে অত্যন্ত সাবলীলভাবে উঠে আসে। অনলবর্ষী বক্তাই শুধু নন তিনি শৈল্পিক মাহাত্ম্যের নান্দনিক লেখনি সত্তাও জাতির জনককে এক অনন্য আসনে বসিয়েও দেয়। সুচিন্তিত মননে ঠান্ডা মাথায় লিখতে বসার সময় সুযোগ কি ছিল তাঁর? সেখানে আবার শৈশব, কৈশোরের স্মৃতিমন্থন, অবিভক্ত ভারতের উত্তাল দুঃসময়ের সামগ্রিক অবয়ব কি মাত্রায় লেখনি শক্তিতে উদ্ভাসিত হয়েছে মনে হয় এক নন্দনযোদ্ধা যেন সংগ্রামী লেখন ক্ষমতাকে নিঃশেষে উজাড় করে দিচ্ছেন। তেমন মহাসঙ্কটকালে বঙ্গবন্ধুর জন্ম, বেড়ে ওঠা তাও যেন এক ঐতিহাসিক পরম্পরা। তৈরি হয়েছেন শ্যামল বাংলার প্রাকৃতিক পরিবেশের মাধুর্য নিয়ে আর চারপাশের কঠিন, কঠোর সামাজিক রাজনৈতিক বিপন্নতাকে সামাল দিতে দিতে। বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার এমন কণ্টকাকীর্ণ যাত্রাপথ সহজ আর নির্বিঘ্ন ছিল না। অন্যায়, অবিচার জবরদখলি মনোভাবে সামাজিক আঙিনায় যে বিষবাষ্প তারই মাঝে এক উদীয়মান কিশোরের আপন তরী বয়ে নেওয়া সমস্যাশঙ্কুল এক যাত্রা পথ তো বটেই। শুধু ইতিহাসই নয়, এক জীবন্ত দুরন্ত কর্মবীরের শৌর্য বীর্যের অভাবনীয় কাহিনীসম্ভারের দুর্দমনীয় পালাক্রম। শুধু কি তাই? পরাধীন দেশে স্বাধীন মনোবৃত্তি নিয়ে বেড়ে ওঠা সেও যেন অসম সাহসিকতার পরম নিদর্শন। এক উদীয়মান কিশোরের দেশপ্রেমের চেতনাই শুধু নয়, জনগোষ্ঠীর প্রতিও এক সচেতন দায়বদ্ধতার বহির্প্রকাশ। তার মধ্যেই অনুভব করলেন দ্বিজাতিতত্ত্বের বীজ কি মাত্রায় দুই বৃহৎ ধর্মীয় সম্প্রদায়কে বিভাজন আর তিক্ততার সর্বশেষ পর্যায়ে দাঁড় করাচ্ছে। আবার সারা বাংলায় দানা বাঁধতে থাকে স্বদেশী আন্দোলনের সাংঘর্ষিক ঘটনাক্রম। ব্রিটিশবিরোধী এমন তৎপরতার দামও গুণতে হয়েছে আপামর বাঙালিকে। কত সম্ভাবনাময় তরুণ এমন কণ্টকাকীর্ণ পথকে বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে।

আবার অনেক স্বদেশীকে ব্রিটিশ উপনিবেশের অবিচারের শিকারও হতে হয়েছে। বিভিন্ন টানাপোড়নের মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় সময়ের প্রজন্ম দিশেহারা, দ্বিধান্বিত। তেমন সাহসিক কর্মযোগে নিজেকে সম্পৃক্ত করার চেতনাও বঙ্গবন্ধুর লেখনিতে  পাঠকের সামনে হাজির হয়। এক বিস্ময়কর কিশোর ক্রমান্বয়ে তাঁর যৌবনের স্বর্ণদ্বারে উপনীত হন। শুধু স্বদেশী আন্দোলন নয়, সুভাষ বসুর ভক্ত বনে গিয়ে নানা সুচিন্তিত মতামতও তাঁর লেখনি সত্তাকে উজ্জীবিত করে। পাশাপাশি বংশানুক্রমিকভাবে শেখ বংশের সঙ্গে ব্রিটিশ শাসনের বিরোধ আর মামলা সবই জেনেছেন বঙ্গবন্ধু। সঙ্গত কারণে উপনিবেশবিরোধী মনোবৃত্তিও ভেতরের বোধে জিইয়ে থাকে। সাধারণ জনগোষ্ঠী আর দেশের প্রতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনুভব-অনুভূতি এক সময় বৃহৎ আকারে  চিরস্থায়ী চেতনায় গেঁথেও যায়। নিয়তই সামাজিক আন্দোলন আর রাজনৈতিক চেতনায় বড় হওয়া বঙ্গবন্ধুর জীবনতরী এগিয়ে নেওয়াও ছিল উপস্থিত ঘটনাবলির নিরলস যোগসাজশ, যা অসমাপ্ত আত্মজীবনীর কলেবরকে সমৃদ্ধ করেছে। শৈশব আর কৈশোরের ঘটনাক্রমকে নানা মাত্রিকে উজ্জীবিতও করেছে। মানুষের সঙ্গে সহজগামিতায় গুণগ্রাহী সুহৃদ তৈরি হতে সময় লাগেনি। বিচিত্র ঘটনাক্রমের সঙ্গে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্বের পরিচয়ে নিজেকে উন্মোচন করা সবই যেন সে সময়ের বলিষ্ঠ সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত এক সাহসী যুবকের দৃঢ়চেতা আত্মপ্রত্যয়। ব্রিটিশ সরকারের শুরু থেকেই মুসলমানদের প্রতি বিজাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি বঙ্গবন্ধুর মানা সম্ভব হয়নি কখনো। বিক্ষুব্ধ আর বেদনাহত চিত্তে ভাবতে লাগলেন মুসলমানদের জন্যও একটি আলাদা রাষ্ট্র আবশ্যক। তবে নিজ অঞ্চলের সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধিকে সর্বান্তকরণে ঘৃণাও করতেন। জীবনের হরেকরকম ঘটনাক্রমের সঙ্গে আরও একটি স্মৃতি বঙ্গবন্ধুকে উদ্বেলিত করত, যা অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বিধৃত হয়ে আছে।

রেণুর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর বিবাহ। একজন শিশুকন্যা আর তিনি নিজেই এক অবোধ বালক। তেমন স্মৃতিও পাঠকদের নজর কাড়ে। শুভ বিবাহের মাহেন্দ্রক্ষণে ১৩ বছরের এক বালককে খুব বেশি ভাবায়ওনি। তবে সারা জীবনের গ্রন্থি অটুট হয়ে যাওয়া সেটাও স্মৃতিকাতর এক বিষয়। বঙ্গবন্ধুর লেখনি হতে উল্লেখ করা যায়- আমি শুনলাম আমার বিবাহ হয়েছে। তখন কিছুই বুঝতাম না। আর রেণু মাত্র তিন বছরের শিশু।

১৯৩৮ সালের ঘটনাবহুল পরিক্রমা সারা জীবনের রাজনৈতিক মতাদর্শের শুভ সূচনার পাশাপাশি জীবনভর চলার পথকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রায় এগিয়েও নিয়েছে। রাজনৈতিক আদর্শিক চেতনাকে পরিপুষ্ট করেছে। শেরেবাংলা একে ফজলুল হক আর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর টুঙ্গিপাড়ায় শুভাগমন। ততদিনে কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের ভিন্ন মতাদর্শে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত তৈরি হওয়ার আগ মুহূর্ত। ১৮ বছরের তরুণ বঙ্গবন্ধু নজরে পড়ে যান বাংলার এই অবিস্মরণীয় নেতৃদ্বয়ের। বিশেষ করে হোসেন সোহরাওয়ার্দীর। যার প্রেরণা আর উদ্দীপনায় বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শ বিকশিত হয়। তিনি রাজনৈতিক গুরুও বটে। পাকিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়াও সে সময়ের বিক্ষুব্ধ প্রেক্ষাপটের নিয়ামক চাহিদা ছিল। অন্য কিছু ভাবার উপায়ও ছিল না। তেমন ধারাবাহিকতায় ১৯৪০ সালে লাহোরে দুই বৃহৎ সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনের উদ্যোগ শুরু হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুর বয়স তখন মাত্র ২০।  তাঁরও মনে  হয়েছিল মুসলমানদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র অপরিহার্য। অন্য অনেকের মতো সক্রিয়ভাবে জড়িয়েও পড়েন তিনি। তবে সাম্প্রদায়িক কোন্দল, বিবাদ কখনও মানতে পারতেন না। তেমন উদ্দীপ্তবোধ বারবার প্রকাশও করেছেন।

এরই মধ্যে অসাধারণ সাংগঠনিক সক্ষমতায় প্রথম সারিতে চলে আসতেও বেশি সময় লাগেনি। সঙ্গে ছিল উপস্থিত বক্তৃতা দেওয়ার অভাবনীয় স্ফুরণ। ১৯৪৩ সালের অবিভক্ত বাংলার মহামন্বন্তর দেখার দুর্ভাগ্য হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর। তেমন অসহনীয় চিত্রও তাঁকে ব্যাকুল করেছে। অসংখ্য লোকক্ষয়ের কথা আত্মজীবনীতে বিধৃত করতে গিয়ে দুঃসহ স্মৃতিও তাঁকে তাড়িত করেছে। সাড়া জাগানো এমন দুর্ভিক্ষকে আলোকপাত করতে গিয়ে শুধু গণমানুষের মৃত্যু নয়, বরং ব্যবসায়ী কুচক্রী মহলের অসততা, চক্রান্ত উল্লেখ করতেও ভোলেননি। অর্থাৎ মনের নিভৃতে গেঁথে ছিল ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের জঘন্য কারসাজি। একজন যথার্থ গণমানুষের নেতার অভাবনীয় উপলব্ধি তো বটেই। এমন ঘটনা প্রমাণ করে হঠাৎ করেই কোনো নেতৃত্বের আসনজুড়ে বসা নয়, বরং তিল তিল করে বাংলার মাটি ভেদ করে উঠে আসা এক কিংবদন্তির অনমনীয় আদর্শিকবোধ কত দৃঢ় স্বচ্ছ ছিল। বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘যা কিছু আছে ব্যবসায়ীরা গুদামজাত করছে। ফলে এক ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা দশ টাকা মণের চাল চল্লিশ টাকায় বিক্রি করছে। এমন দিন নাই রাস্তায় মরে পড়ে থাকতে লোক দেখা যায় না। তেমন দুঃসময়ে নিজের শিক্ষাজীবনকে পর্যন্ত তোয়াক্কা করেননি। দাঁড়িয়েছিলেন অসহায়, ক্ষুধার্ত, নিপীড়িত মানুষদের পাশে। খাবার থেকে অন্নজল দিতে দরিদ্র মানুষের কাছে চলে যেতেও দ্বিধা করেননি। সেই কিশোর বয়স থেকেই দেশ মানুষের কথা ভেবে এসেছেন।

তখন দেশনায়ক হওয়ার কোনো মনোবৃত্তিই মাথাচাড়া দেয়নি। ভেতরের অকৃত্রিম বোধ থেকে মানুষের জন্য যা করার কথা সবটাই যেন উজাড় করে দিলেন তিনি। শ্যামল বাংলার কোমল পলিমাটি থেকে উঠে আসা এক দুর্বিনীত তরুণ জীবনের শেষদিন অবধি সেটাই করে যেতে নিজের কথা মোটেও ভাবেননি। এমন যার ঐশ^র্যিক অভ্যুত্থান তাঁকে দাবিয়ে রাখার সাহস আসলে কারোরই ছিল না। কিন্তু ভর্ৎসনা করতে অপশক্তি পিছু ছাড়েনি। সে সময় ঢাল হয়ে, রক্ষাকবচ হয়ে দাঁড়িয়েছেন পিতা শেখ লুৎফর রহমান। বিভিন্ন সময় বলতেনদেশের কাজ করছে, অন্যায় তো করছে না। যদি জেল খাটতে হয় খাটবে, তাতে আমি দুঃখ পাব না।

প্রতিদিনের লড়াই-সংগ্রাম দেশ বিভাগের উন্মাদনা সব মিলিয়ে জীবনের গতি বহমান হচ্ছে এক স্বাধীন সার্বভৌম মাতৃভূমির আকাক্সিক্ষত স্বপ্নে। তেমন স্বপ্ন পূরণের পরপরই আশাহতের বেদনায় ম্লান হয়ে যাওয়া, চূড়া থেকে ছিটকে পড়া। এক অপ্রত্যাশিত আঘাতে আবহমান বাংলা বাঙালির কৃষ্টি সংস্কৃতির ওপর মারাত্মক ব্যবচ্ছেদ। সমৃদ্ধ বাংলা ভাষাকে নিয়ে নব্য ঔপনিবেশিক শক্তি পাকিস্তান যে অযাচিত হস্তক্ষেপে বাঙালিদের বিব্রত বিড়ম্বিত করতে থাকে সেখান থেকেই শুরু হয় আরও এক অনন্য সংগ্রামী যাত্রা। রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে বাংলাকে স্থান দিতে বঙ্গবন্ধুই প্রথম জিন্নাহর সামনে তাঁর বক্তব্য তুলে ধরতে বিন্দুমাত্র ভাবেনওনি। শুধু কি তাই? পাকিস্তান সৃষ্টির স্বপ্নটাই ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। বিখ্যাত চিন্তাবিদ বদরুদ্দিন ওমরের উক্তি উল্লেখ করা ন্যায়সঙ্গত। তিনি বলেছিলেন- ‘ভাষা, আন্দোলন বাঙালি মুসলমানদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সংগ্রাম। সেখান থেকেই স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল সারবত্তা বাঙালিদের এক অদম্য চেতনায় নতুন যাত্রাপথে এগিয়ে যাওয়া সময়ের অপরিহার্য দাবি। আর লাগাতার পরবর্তী সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ঐতিহ্যিক লড়াই বাঙালি জাতিকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রায় এগিয়ে নেয়। বহু কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা তারই চিরস্থায়ী উপহার। যেখানে এক অবিচ্ছিন্ন সুতোয় গেঁথে আছেন বঙ্গবন্ধু নিজেই।

লেখক : সাংবাদিক