ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার

প্রকাশিত: ২২:১০, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার

.

চলতি সপ্তাহে হঠাৎ করে অস্থির হয়ে উঠেছে নিত্যপণ্যের বাজার। বিশেষ করে মুরগির মাংস-ডিম, চিনি, চাল, ডাল ভোজ্যতেলের দামে প্রায় উল্লম্ফন ঘটেছে।

সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির মাংসের দাম বেড়েছে প্রতিকেজিতে ৪০ টাকা। প্রতিডজন ডিমে ২০ টাকা। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ছোলাসহ ডালের দামও। চিনি ভোজ্যতেলও রয়েছে মূল্যবৃদ্ধির তালিকায়। ফলে, সাধারণ মানুষ তো বটেই, মধ্যবিত্ত শ্রেণিরও হাঁসফাঁস অবস্থা। নুন আনতে পান্তা ফুরায় আর কি! রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গত কয়েক মাসে আটা-ময়দার দাম ক্রমাগত বাড়তে থাকায় মুষ্টিমেয় শহুরে মানুষ বাদে সাধারণ মানুষ আবার ঝুঁকে পড়েছে পান্তা কিংবা কড়কড়া বাসি ভাতে। তবে চালের বাজারেও কোনো সুসংবাদ নেই। সপ্তাহের ব্যবধানে কিছু নিত্যপণ্যের দাম কমবেশি হতেই পারে। তাই বলে এক লাফে কোনো কোনো পণ্যের দাম কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবেÑ তা কোনো যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য নয়।

নিত্যপণ্য আমদানিকারকসহ পাইকারি খুচরা ব্যবসায়ীরা অজুহাত দিচ্ছেন ডলারের দাম বৃদ্ধি, টাকার অবমূল্যায়ন, মূল্যস্ফীতিসহ সময়মতো এলসি খুলতে না পারা ইত্যাদি। এসবের কম বেশি প্রভাব থাকলেও মুরগির মাংস ডিমের দাম এক লাফে এত বাড়বে কেন? প্রায়ই বলা হয়, আমরা মাংস-ডিম-দুধে প্রায় স্বনির্ভর। তাহলে কেন বাড়ছে দাম? সংশ্লিষ্ট খামারিরা বলছেন, পোল্ট্রি ফিড বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বলে দাম বেড়েছে। বাজারে চাহিদা অনুপাতে সরবরাহের ঘাটতির অজুহাতও দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এর কোনোটাই যুক্তিসঙ্গত গ্রহণযোগ্য নয়। কিছুদিন আগে ডিম সিন্ডিকেটের সংবাদ এসেছিল গণমাধ্যমে। ধরপাকড় জরিমানার খবরও আছে। বাস্তবে পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি একটুও। মূলত দেশের ভোগ্য নিত্যপণ্যের বাজার জিম্মি হয়ে পড়েছে ৩৬টি শক্তিশালী ক্ষমতাধর কোম্পানি প্রতিষ্ঠানের কাছে। তাদের কাছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তথা সরকারও যেন অসহায়। অথচ ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে সময় সময় সরকার সবরকম সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকে তাদের। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নিত্যপণ্যের আমদানির এলসি খুলতে যথাযথ নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পোশাক পণ্যসহ রপ্তানি আয়ও বাড়ছে। প্রবাসী আয়ের ধারাও ইতিবাচক। বর্তমানে ডলারের দামও প্রায় স্থিতিশীল।

এমতাবস্থায় আমদানিকারক ব্যবসায়ীদের যখন সহনশীল থাকার কথা, তখন হঠাৎ করে তারা নিত্যপণ্যের বাজারে কারসাজি শুরু করেছেন  কেনÑ তা বোধগম্য নয়। এমন হতে পারে যে, রমজানকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম আরও এক দফা বাড়ানোই তাদের মূল লক্ষ্য। যা কাম্য তো নয়ই, প্রত্যাশিতও নয়। সরকার তথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত নিত্যপণ্যের বাজার সহনীয় রাখতে জরুরি হস্তক্ষেপ করা।

বাংলাদেশ ব্যংক আসন্ন পবিত্র রমজান উপলক্ষে বিদেশ থেকে ভোজ্যতেল, ছোলা, ডাল, মটর, পেঁয়াজ, মসলা, চিনি খেজুরÑ এই আটটি পণ্য বাকিতে আমদানির সুযোগ করে দিয়েছে ব্যবসায়ীদের। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এসব পণ্য ৯০ দিনের সাপ্লায়ার্স বা বায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় আমদানি করা যাবে, যা বহাল থাকবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। ফলে, ব্যবসায়ী আমদানিকারকদের তাৎক্ষণিক ডলারের প্রয়োজন পড়বে না। ব্যাংকগুলো যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে ঋণপত্র (এলসি) খুললেই আমদানি করা যাবে পণ্য। তাহলে রমজানে নিত্যপণ্যের জোগান নিশ্চিত হবে বাজারে।  তবে একটা সময় পরে পরিশোধ করতে হবে আমদানির দায়। এর আগে এসব পণ্য আমদানির শর্ত সহজ করার জন্যও নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব নিত্যপণ্য আমদানির ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে অগ্রিম জমা বা মার্জিন ন্যূনতম রাখার জন্যও বলা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিয়ে নিত্যপণ্যের দাম ক্রেতাদের জন্য সহনীয় পর্যায়ে রাখবে বলেই প্রত্যাশা।

×