ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার দিনরাত

মারুফ রায়হান

প্রকাশিত: ২০:৩৩, ৩০ জানুয়ারি ২০২৩

ঢাকার দিনরাত

একদিকে অসম্ভব ধুলা, অন্যদিকে বায়ুদূষণ, দুই মিলিয়ে ঢাকার হাঁসফাঁস দশা

ঢাকা থেকে শীত কি বিদায় নিয়েছে? নাকি বসন্ত খানিকটা আগেই চলে এসেছে। এমন একটা মধুর দোটানায় আছেন রাজধানীবাসী।

ধুলা-দূষণে ধুঁকছে ঢাকা

একদিকে অসম্ভব ধুলা, অন্যদিকে বায়ুদূষণ, দুই মিলিয়ে ঢাকার হাঁসফাঁস দশা। মানে ঢাকাবাসীর। দুটোই স্বাস্থ্যের জন্য মহাঝুঁকিকর। বলা হচ্ছে, ঢাকায় নিঃশ্বাস নিলেও বিপদ। শহরের অধিবাসীদের জন্য নীরব ঘাতক হয়ে উঠছে বায়ুদূষণ। রাজধানীতে নিয়ন্ত্রণহীন ধুলা, ফিটনেসবিহীন গাড়ির অবাধ চলাচল, ইটভাঁটি, সড়কের নিয়ন্ত্রণহীন খোঁড়াখুঁড়ি, মেগা প্রজেক্টের নির্মাণযজ্ঞ, শিল্পকারখানার ধোঁয়া ও বর্জ্য, কঠিন বর্জ্যরে অব্যবস্থাপনা ও বর্জ্য পোড়ানো মূলত এসব মিলে ঢাকা শহরের বাতাস বিপজ্জনক করে তুলেছে।

চলতি মাসের প্রথম ২৪ দিনের ২৩ দিনই এই শহরের বাতাস এতটাই খারাপ অবস্থায় ছিল যে একে বিপজ্জনক বলা হচ্ছে। ঢাকার পাশের শহর নারায়ণগঞ্জ, সাভার ও গাজীপুরের বাতাস অবশ্য ঢাকার চেয়েও দূষিত থাকছে। এই মারাত্মক দূষিত বায়ু নিয়মিতভাবে রাজধানীসহ প্রধান শহরগুলোর অধিবাসীদের শরীরে প্রবেশ করছে। এতে তাদের আয়ু সাত থেকে আট বছর কমে যাচ্ছে।

বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নমূলক কাজের জন্য রাজধানীর ১৫টি এলাকা এখন ধুলার হটস্পটে পরিণত হয়েছে। এই ধুলায় ঢেকে যাচ্ছে ঢাকা। বারিধারা এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের সামনের অংশ থেকে বালু নদ পর্যন্ত ৬.৭১ কিলোমিটার ইন্টারসেকশন সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। মাদানী এভিনিউ থেকে বালু নদ পর্যন্ত সড়ক ও সেতুগুলো প্রশস্তকরণের কাজ চলছে।

মাটি ও বালু দিয়ে ভরাট করার কাজ চলমান থাকায় সড়কে তৈরি হচ্ছে ধুলা। বুড়িগঙ্গা নদীর তীর ঘেঁষে নির্মিত হওয়া গাবতলী বেড়িবাঁধ সড়কটি ঢাকা উদ্যান, মোহাম্মদপুর, বসিলা, রায়েরবাজার, হাজারীবাগ, কোম্পানি ঘাট, শহীদনগর, কামরাঙ্গীর চর, লালবাগ, সোয়ারী ঘাট ও বাবুবাজারের মতো বড় বড় ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মধ্য দিয়ে গেছে। সড়কের প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়েই ধুলার মাত্রা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

যাদের বাসা বেড়িবাঁধের কাছাকাছি, তাদের জীবন ধুলায় অতিষ্ঠ। রাস্তায় না হয় চোখ-মুখ বন্ধ করে চলা যায়। কিন্তু ঘরে তো আর চোখ-মুখ বন্ধ করে থাকা সম্ভব নয়। ধুলায় ঘরের আসবাব, খাবারদাবার, কাগজপত্র সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ঢাকার চারপাশে পরিকল্পনামাফিক সবুজ এলাকা ও সবুজবেষ্টনী তৈরি করা হলে ঢাকাবাসী কিছুটা রক্ষা পাবে।

একুশের বইমেলা আগামীকাল উদ্বোধন

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আগামীকাল বুধবার শুরু হচ্ছে একুশের বইমেলা। এবার নতুন ১৮টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান যুক্ত হচ্ছে। কাগজের দামসহ প্রকাশনার বিবিধ খরচ বাড়ার বাস্তবতায় এটিকে সুসংবাদই বলব। তবে অনেক প্রকাশকই নতুন বই প্রকাশের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন। আবার অনেক প্রকাশক বই প্রকাশের সংখ্যা না কমালেও বইয়ের কপির সংখ্যা কমিয়ে আনছেন ব্যয় সমন্বয়ের জন্য। পাঠকদের আরেকটি সুখবর দেওয়া দরকার। এবার উদ্যানের একেবারে পূর্ব প্রান্তে অর্থাৎ একেবারে শেষ মাথায় কোনো স্টল থাকছে না। প্রকাশকদের অভিযোগ ছিল মেলার মাঠ পেরিয়ে খুব কমসংখ্যক ক্রেতাই ওই এলাকায় যেতেন।
প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ যান বইমেলায়, একুশে ফেব্রুয়ারিতে লাখো মানুষ। শুক্রবারগুলোয়ও লাখ ছাড়িয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। এদের সবাই অবশ্য বই কেনেন না। পড়েন কি? বইয়ের ক্রেতা ও পাঠক লক্ষ্যযোগ্যভাবে বাড়ছে না। অথচ প্রতি বছরই নতুন প্রকাশক আসছেন, নতুন লেখকেরও জন্ম হচ্ছে। বই নিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় মেলা একুশের বইমেলায় বইয়ের বিক্রয়লব্ধ অর্থ আগের বছরের হিসাবকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

ফলে নানা সীমাবদ্ধতা, আক্ষেপ ও অভিযোগ সত্ত্বেও বইমেলা বাণিজ্য-বিচারে তার সাফল্য বজায় রেখেছে। আগে বাংলা একাডেমির মাঠে মেলাটি হতো। প্রকাশনা সংস্থার সংখ্যা বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে গেল যে গাদাগাদি- ঠাসাঠাসি একটা পরিবেশ সৃষ্টি হলো। পরবর্তীকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শে বইমেলাটি চলে এলো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। তবে লেখক-পাঠক-প্রকাশকদের দীর্ঘদিনের চাওয়া ছিল বইমেলাটি বড় কোনো জায়গায় অনুষ্ঠিত হোক। অবশ্য এখনও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ বইমেলার অংশ বটে।

সেখানে মহান একুশে স্মরণে বক্তৃতামালা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানÑ এ দুটি ভেন্যুর মাঝখানে কিছুটা হাঁটাপথ, এবং দুদিকে চলা একটি প্রশস্ত সড়ক। উদ্যানে মেলা আয়োজনের পর দেখতে দেখতে কয়েক বছর চলেও গেল। তাই বলা যায় বইমেলা মোটামুটি একটা গ্রহণযোগ্য অবয়ব পেয়েছে। 
পাঠকরা জানেন মাসব্যাপী বইমেলার যাবতীয় সংবাদ প্রকাশের জন্য সব সংবাদপত্র বিশেষভাবে স্থান বরাদ্দ দিয়ে থাকে। টিভি চ্যানেলগুলোও প্রতিদিন প্রতিবেদন প্রচার করে। ছাড়কৃত মূল্যে বিজ্ঞাপন প্রচারের ব্যবস্থা নেওয়া হয় মিডিয়ায়। সব কিছুর উদ্দেশ্যই হচ্ছেÑ পাঠকের কাছে নতুন বইয়ের তথ্য তুলে ধরে তাকে বই পড়ায় উদ্বুদ্ধ করা। একুশের বইমেলা নিয়ে শিক্ষিত-শিক্ষাবঞ্চিত সবার ভেতরেই বিশেষ আবেগ কাজ করে। ভালোলাগা কাজ করে। বই হলো জ্ঞান ও আনন্দের ভাণ্ডার, তাই বইমেলার আয়োজন সর্বাঙ্গীণ সুন্দর হোক, তার প্রচেষ্টা থাকে সব পক্ষেরই।

এ কথা আমাদের বার বার বলতে হবে যে, বই হলো অনন্য পণ্য, যা নিবেদিত হয় মহাকালের উদ্দেশে। তাই কালের মহার্ঘ্য হতে হলে তাকে হতে হয় যোগ্য, সম্পূর্ণ বা পূর্ণাঙ্গ এবং সুচাররূপে প্রকাশিত। সে কারণেই পাণ্ডুলিপি উত্তমরূপে সম্পাদনা ও গ্রন্থ মুদ্রণপ্রমাদমুক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। কিন্তু কয়জন গ্রন্থ উৎপাদক বা প্রকাশক এই শর্তগুলো পূরণ করেন? সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সফল বইমেলা করতে হলে মুক্ত মত গ্রহণের বিকল্প নেই। পানি-বিদ্যুৎ, হাঁটাপথ, পর্যাপ্ত টয়লেট ব্যবস্থা, প্যাভিলিয়ন, খাবারদাবার, আড্ডাস্থলÑ সব কিছুর সুব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

সবচেয়ে বড় বিড়ম্বনা ধুলা থেকে বাঁচার সুবন্দোবস্ত থাকা চাই। মেলায় রেকর্ডসংখ্যক কিংবা রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার মতো সংখ্যায় বই আসে নিত্য ছাপাখানার টাটকা গন্ধ নিয়ে। একুশের বইমেলার জন্য আমরা অনেকখানি ত্যাগ স্বীকারেও যেন রাজি থাকি। মিডিয়া শতভাগ সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত থাকে। এতে ব্যবসায়িক বুদ্ধি ছাপিয়ে প্রাণের টানটাই বড় হয়ে ওঠে। আমরা বরং আত্মশাঘা নিয়ে বলতেই পারি ‘বইপ্রিয় বাঙালির অনন্য এক মেলা’ আমাদের একুশের চেতনাকে প্রতিবছর সমুন্নত করছে। এটা সত্যি যে নানা দিক দিয়ে একুশের বইমেলাটি অনন্যই বটে।

ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা, বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসা এ সবই কোনো না কোনোভাবে প্রকাশিত হয়ে চলে পুরোটা মাস। লেখক-পাঠক-প্রকাশকদের মিলন মেলাই বটে এই বইমেলা। মেলায় কয়েক হাজার করে বই প্রকাশিত হচ্ছে, কিন্তু ভালো বই বা গুরত্বপূর্ণ গ্রন্থ নির্বাচন করতে গেলে হতাশা এসে ভর করে। তার পরও মানসম্পন্ন না হলেও লেখকদের, বিশেষ করে নবীন-তরুণ লেখকদের বই প্রকাশ বা লেখালেখির সঙ্গে সংযুক্ত থাকা ইতিবাচক একটি কাজ। সাহিত্য বা সংস্কৃতিচর্চায় যতক্ষণ নিয়োজিত থাকেন তরুণরা ততক্ষণ মাদকের মতো নেশার হাতছানি বা অন্যান্য অপকর্ম থেকে তারা মুক্ত থাকেন- এই সামাজিক বাস্তবতাকে আমরা উপেক্ষা করতে পারি না।

তাই যার যা খুশি লিখুন, বই বার করুন, বন্ধুদের বই উপহার দিন। এই কর্মকাণ্ড থেকেই আগামীতে বেরিয়ে আসবে নতুন পথরেখা। তাই নিয়ন্ত্রণ নয়। তবে এটা ভুললে চলবে না যে কোনো লেখকের পাণ্ডুলিপি অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ সম্পাদক দ্বারা সম্পাদিত হওয়ার পর প্রকাশ করাই বাঞ্ছনীয়; আন্তর্জাতিক মানদণ্ডও সেটা। শত শত প্রকাশকের মধ্যে কজন এটা জানেন? জানলেও মানেন?

পঁচাশিতেও সক্রিয় হাসনাত আবদুল হাই

আগামীকালই বইমেলায় আসছে প্রথিতযশা লেখক হাসনাত আবদুল হাইয়ের নতুন গ্রন্থ ‘নদীপথে, সঙ্গে ইউলিসিস’। জেমস জয়েসের কালজয়ী উপন্যাস ‘ইউলিসিস’ নিয়ে এই ধরনের বই লেখা হয়নি এর আগে, দেশে কিংবা বিদেশে। বইটিকে বলা যায় ভ্রমণকাহিনী ও সাহিত্যালোচনার সেতুবন্ধন।
নদীপথে লেখকের ঢাকা থেকে খুলনা যাত্রা দিয়ে এই বই শুরু ও শেষ, মাঝখানে রয়েছে জয়েসের কালজয়ী উপন্যাস ‘ইউলিসিস’ পাঠের মাধ্যমে লিওপোল্ড ব্লুম এবং অন্যান্য চরিত্রের ডাবলিন শহরে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পরিভ্রমণের বর্ণনা।

বর্তমান কালের এই সব ভ্রমণকে ধারণ করে আছে হোমারের এপিক, ওডিসির নায়ক ওডিসিউস (ইউলিসিস)-এর ঘরে ফেরার রোমাঞ্চকর দশ বছরের কাহিনী, আকারে এবং ইঙ্গিতে। বইটি প্রেস থেকে আসার পরপরই বইসহ সস্ত্রীক অন্যপ্রকাশের দুই কর্ণধার লেখকের বাসায় যান রান্না করা খাবারদাবার নিয়ে। এমন সৌজন্য বিরল। লেখক হিসাবে এমন আনন্দময় অভিজ্ঞতা তার এর আগে হয়নি বলেই জানালেন বর্ষীয়ান লেখক। 

আরণ্যকের সুবর্ণজয়ন্তী

সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে গত শুক্রবার থেকে আরণ্যক নাট্যদল আট দিনে নতুন-পুরনো মিলিয়ে নয়টি নাটক প্রদর্শনের ব্যবস্থা নিয়েছে। স্বাধীন দেশে একটি সংগঠন সক্রিয় থেকে ৫০ বছর পার করছে, এটি রীতিমতো বিস্ময়। আরণ্যক নাট্যদলের বেলায় এমন ঘটল। টুপি খুলে অভিনন্দন জানাই দলের প্রধান প্রতিষ্ঠাতা নাট্যকার মামুনুর রশীদকে। এক সাক্ষাৎকারে তিনি সত্যি কথাই বলেছেন, ‘যাঁরা শুরু করেছিলাম তাঁদের মধ্যে আমিই আছি’। তিনি জীবিত থাকা প্রসঙ্গে কথাটি বলেছেন। তবে এইসঙ্গে যোগ করা যায়, জীবিত আছেন কিন্তু আরণ্যকের সঙ্গে নেই এমন মেধাবী নাট্যকর্মীর সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়।

কেউ কেউ ভিন্ন দল গঠন করেছেন বা অন্য দলে যোগ দিয়েছেন; কেউ কেউ দেশত্যাগ করেছেন, আবার কেউ কেউ নাটকই ছেড়ে দিয়েছেন। আরণ্যকের নাট্যকর্মী হিসেবে দুই বছর আমি নাট্যজগতে ছিলাম। সৌভাগ্যক্রমে পথনাটক ও মুক্তনাটক আন্দোলনের সূচনাকাল ছিল সেটি; সেইসঙ্গে অভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইন বাতিলের দাবি নিয়ে সোচ্চার হওয়ারও সুবর্ণ সময়। মে দিবসে ব্যতিক্রমী নাটক ও কবিতাপাঠের রেওয়াজেরও শুরু সময়টা। 
১৯৮১ সালে বন্ধু ফয়েজ জহিরের সঙ্গে টিএসসিতে দলের ‘ইবলিশ’ নাটকের মহড়ায় যাই এবং কয়েক দিনের মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করি ওই নাটকেরই একটি ছোট চরিত্রে। নাট্যমঞ্চে যাঁর সহশিল্পী ছিলাম তিনি দেশের একজন শক্তিময়ী অভিনয়শিল্পী নাজমা আনোয়ার। সে সময়ে ‘নাটক বিনোদন নয়, শ্রেণি সংগ্রামের সুতিক্ষè হাতিয়ার’- এমন স্লোগান ছিল একটি নাট্য সংগঠনের জন্য সমীহজাগানিয়া। আঠেরোর তরুণ এই আমাকে স্লোগানটি বিপুলভাবে আকৃষ্ট করেছিল। আরণ্যকের তিনটি নাটকে আমার অভিনয় করার সুযোগ হয়। এগুলো হলো- ইবলিশ, ওরা কদম আলী ও গিনিপিগ। তিনটিই মামুন ভাইয়ের লেখা। প্রথম দুটির নির্দেশনা তারই, শেষেরটি সৈয়দ জামিল আহমেদের। 
শ্রদ্ধেয় নাজমা আনোয়ারের কথা আগেই উল্লেখ করেছি। সার্বিক নাট্যমননের বিচারে গেলে আমি আমার সময়ের সবচেয়ে মেধাবী তিনজন আরণ্যক-কর্মীর কথা বলব, আর এর বাইরে আছেন আরও তিনজনÑ আজিজুল হাকিম, ইশরাত নিশাত ও সাইফুল হক খোকন। এদের মধ্যে প্রথমজন এখনও অভিনয়ে সক্রিয়। নিশাত স্বল্পকাল আরণ্যকে ছিলেন। পরে দেশের নাট্যজগতে তার নানামুখী অবদান এতটাই গভীর ছিল যে তার প্রয়াণের পর তার নামে নাট্য পুরস্কার চালু হয়েছে। খোকন বিশ^বিদ্যালয়ের ডিগ্রি নিয়ে মার্কিন মুল্লুকে পাড়ি জমান এবং দুবছর আগে সেখানে মারা যান। 
সে যাক, বলছিলাম সার্বিক নাট্যমননের কথা। আমার বিবেচনায় আশির দশকে মামুনুর রশীদের বাইরে দলে এমন মেধাবী ছিলেন মাত্র তিনজন- আবদুল্লাহেল মাহমুদ, মান্নান হীরা ও সালাহউদ্দিন লাভলু। নানকার পালা-র নাট্যকার আবদুল্লাহেল মাহমুদ আর দেশে থাকেন না। তার সম্পাদনায় নাটক নামে একটি নাট্যপত্রিকা সে-সময়ে বেশ সাড়া ফেলেছিল; নাট্যকার মান্নান হীরা অকালপ্রয়াত। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন নিয়ে লেখা তার পথনাটক ‘খুদিরামের দেশে’-র প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম আমি ও আজিজুল হাকিম।

বিভিন্ন বিশ্বদ্যিালয়ের হলে হলে বহুবার প্রদর্শিত হওয়ার সুবাদে আমি হয়ে উঠেছিলাম ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ। আর সালাহউদ্দিন লাভলু এখন দেশের টিভিনাটকের একজন গুরুত্বপূর্ণ নির্মাতা-পরিচালক ও অভিনেতা। আমাদের বন্ধু তুষার খান, ফজলুর রহমান বাবু ও মোজাফফর হোসেন শুরুর দিকে না হলেও পরে তুখোড় অভিনেতা হিসেবে আলোচিত ও খ্যাতিমান হয়ে ওঠেন। 
মামুনুর রশীদ কত বড় মাপের নাট্যকার সেটি এখন অনেকেই হয়তো বুঝে উঠতে পারবেন না।

নির্দেশক ও অভিনেতা হিসেবেও তিনি উঁচু মানের। মঞ্চ ও টেলিভিশনে তাকে যথার্থই চিনেছিলেন আলী যাকের ও আবদুল্লাহ আল মামুন। এ তো আমার কাছ থেকেই দেখা, জানা এবং শোনা। একটি সংগঠনকে ৫০ বছর সচল সক্রিয়ভাবে টিকিয়ে রাখার মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হয় যে মামুনুর রশীদ একজন উত্তম সংগঠকও। তাকে অভিবাদন।
২৯ জানুয়ারি, ২০২৩

[email protected]

×