
প্রিয় পাঠক, ঈদ মোবারক। করোনাকালে আবারও ফিরে এল ঈদ। এই ঈদে কিন্তু ইচ্ছেমতো আনন্দ করার সুযোগ নেই, তাতে নিজের ও স্বজনদের করোনাঝুঁকিই বাড়বে। লেখার শুরুতে এ সতর্কতার বিষয়টি বলে রাখলাম।
উপকারী ফোন নম্বর ৩৩৩
করোনাকালে নতুন করে দরিদ্র হচ্ছে বহু মানুষ। চাকরিজীবীদের অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন, ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় অধোগতি দেখা দিয়েছে। সব মিলিয়ে বহু মধ্যবিত্ত মানুষ সীমানা পেরিয়ে নিম্নবিত্ত শ্রেণীতে যুক্ত হচ্ছেন। আর নিম্নবিত্ত ও দুস্থ প্রায়-উপার্জনহীন বহু মানুষের ঘরে খাবার পর্যন্ত নেই। এমন একটি বাস্তবতায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নতুন করে উপকার করার উদ্যোগ প্রশংসনীয়। নির্ধারিত প্রক্রিয়ায় ফোন পাওয়ার পর স্থানীয় প্রশাসন চাল, ডালসহ বিভিন্ন উপকরণ সহায়তা হিসেবে দিচ্ছে। তবে চাহিদার তুলনায় সহায়তা কিছুটা কম। এখন সারাদেশে অসংখ্য মানুষ সরকারের জরুরী হটলাইন ‘৩৩৩’ নম্বরে ফোন করে ত্রাণসহায়তা চাইছেন। তাদের সাধ্যমতো সহায়তা দিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। এক্ষেত্রে আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর এবং এটুআই কর্মসূচী সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ এপ্রিল থেকে ৪ মে পর্যন্ত ত্রাণসহায়তার জন্য ৮ লাখ ৭ হাজার ৮১৯টি ফোনকল আসে ‘৩৩৩’ নম্বরে। এর মধ্যে ৪ মে এক দিনেই ফোন আসে ১ লাখ ১৮ হাজার ৫৪৭টি। এসব ফোনের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় ও ভুল ফোনও রয়েছে। এগুলো যাচাই-বাছাই করে ৩৯ হাজার ৭৫০ জনকে প্রাথমিকভাবে সহায়তার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে মোট সহায়তা দেয়া হয়েছে ১৮ হাজার ৫০০ জনকে। এই হটলাইন আগে থেকে চললেও খাদ্যসহায়তার বিষয়টি মাঝে বন্ধ ছিল। গত ২৫ এপ্রিল থেকে খাদ্যসহায়তা দেয়ার সেবাটি আবারও সচল করা হয়।
গণপরিবহনে নজরদারি নেই
দেশে করোনাভাইরাসের প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে গত ১৫ মাসে কয়েক দফা গণপরিবহন বন্ধ করা হয়েছে। পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে ভাড়া বাড়িয়ে গণপরিবহন চালুও করা হয়। প্রতিবারই আমরা দেখেছি গণপরিবহনে অতিরিক্ত যাত্রী তোলা হয়েছে। তাহলে অধিক ভাড়া আদায়ের যৌক্তিকতা কোথায়? এক্ষেত্রে যদি নজরদারি না থাকে, যদি প্রতিশ্রুতি ও নিয়ম ভঙ্গের জন্য দোষীদের শাস্তির আওতায় না আনা হয়, তাহলে এই অনিয়ম ও নৈরাজ্য চলতেই থাকবে। কর্তৃপক্ষ আন্তরিক ও কঠোর হলে একদিনেই এসব অনিয়ম বন্ধ করা সম্ভব। কিভাবে? স্বাস্থ্যবিধি না মানার জন্য শাস্তিস্বরূপ কোন কোম্পানির সব বাসকে সাময়িকভাবে রাস্তায় নিষিদ্ধ করলেই অন্যসব কোম্পানির প্রতিটি বাসের চালক-সহকারী সতর্ক হয়ে যাবে। যে বা যারা চালাকি করে আবারও আইন ভাঙবে, তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যস, এতে সবাই সোজা হয়ে যাবে। এতে গণমানুষেরই উপকার।
যারা কর্মস্থলে যোগ দেয়ার জন্য বাসে চড়তে বাধ্য তাদের ওপর নতুন করে ব্যয়ের বোঝা চেপেছে এই দুঃসময়ে। বাসভাড়া বেড়েছে। এই বাড়তি টাকা যোগানো স্বল্পবিত্তের মানুষের জন্য অনেক কষ্টের। ঢাকার লাখ লাখ মানুষ এই দলেই। একদিকে বাড়তি ব্যয়, আরেকদিকে উচ্চ ঝুঁকি। গণপরিবহনের যাত্রীরা পড়েছেন উভয় সঙ্কটে। করোনা সংক্রমণের সর্বোচ্চ ঝুঁকির তালিকা করতে গেলে প্রথমদিকেই আসবে গণপরিবহনের বিষয়টি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং নিজের সুরক্ষা বজায়ে করণীয় কড়াকড়িভাবে পালনের আবশ্যকতা রয়েছে। এখানে বিন্দুমাত্র শিথিলতা বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। গণপরিবহন বাস-মিনিবাসে ৫০ শতাংশ অর্থাৎ অর্ধেক যাত্রী বহন করার পরিকল্পনা স্বাস্থ্যগত সুরক্ষার স্বার্থে। তার মানে হলো একজন যাত্রীকে অপর যাত্রীর গা ঘেঁষাঘেষি করে বসতে হবে না। দুই আসনের স্থলে একজন এবং তিন আসনের জায়গায় দুজনকে বসানো হলে পাশাপাশি হয়তো তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে। কিন্তু ঠিক পেছনের সিটে যে যাত্রী বসবেন তার কি এই অত্যাবশ্যকীয় দূরত্ব বজায় থাকছে? বিষয়টি পরিষ্কার নয়। এতে ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। তার ওপর মাস্ক পরিধানও বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছে। কোন যাত্রী যদি তা পরিধান না করেন তাহলে তাকে কি গণপরিবহনে উঠতে বাধা দেয়া হবে? সেটিই স্বাভাবিক। কিন্তু সেটি সম্ভব কিনা বা মানা হচ্ছে কিনা। বাসের হ্যান্ডেল, রড এবং সিটের উর্ধভাগ হাতের স্পর্শ লাগবেই। তাই সার্বক্ষণিকভাবেই হাত জীবাণুমুক্ত করার তাগিদ থাকবে। বাস-মিনিবাসে স্যানিটাইজার সরবরাহ করা চাই। একইসঙ্গে শর্ত অনুযায়ী প্রতিটি ট্রিপের পরে বাস জীবাণুমুক্ত করার কাজটিও বাধ্যতামূলকভাবে করা চাই।
ছিনতাইকারী যখন হন্তারক
ছিনতাইকারীর কাছে কেউ প্রাণ খোয়াতে চান না। সড়কে টাকাপয়সা লুটে নিতে গিয়ে যদি ছিনতাইকারীরা মানুষের জীবনের জন্য হুমকি হয়ে ওঠে তাহলে যে কোনো মূল্যে অবশ্যই ছিনতাইকারীদের পাকড়াও করতে হবে। ঈদ সামনে রেখে ঢাকা শহরে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। গত বুধবার ছিনতাইকারীদের হাতে জীবন দিলেন সুনীতা রানী দাস নামের এক নারী। সকাল ৬টার দিকে তিনি বড় বোনের ছেলে সুজিতকে সঙ্গে নিয়ে রিকশায় মুগদা এলাকার বৌদ্ধমন্দিরে যাচ্ছিলেন। কমলাপুর বাস ডিপোর কাছে প্রাইভেট গাড়িতে থাকা ছিনতাইকারীরা চলন্ত রিকশা থেকে সুনীতার ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় রিকশা থেকে পড়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পান তিনি। সুনীতাকে আহত অবস্থায় প্রথমে মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরে তার মৃত্যু হয়।
পুলিশের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৮ সালে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ছিনতাই মামলা হয়েছে ৭৮টি। ২০১৯ সালে ১১৯টি। আর ২০২০ সালে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭৬টি। তবে ভুক্তভোগীদের মতে, ছিনতাইয়ের প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি। ঢাকার সিএমএম আদালতের জিআর খাতার তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত ১০ বছরে শাহবাগ, রমনা, মতিঝিল, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, ডেমরাসহ ১৫টি থানা এলাকায় ছিনতাই হয় অপেক্ষাকৃত বেশি।
নাগরিকদের বৃক্ষপ্রেম
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতাস্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় উন্নয়নকাজ চলছে। এরই অংশ হিসেবে উদ্যানে হাঁটাপথ, খাবারের দোকানসহ নানা স্থাপনা তৈরির সময় কোনো গাছ প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করলে, তা কেটে ফেলার কথা। পরিবেশবিদ, নগরবিদ, প্রকৃতিপ্রেমীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ উদ্যানের গাছ কাটার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
ঢাকা মহানগরীর ফুসফুস বলে খ্যাত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ কেটে নির্মাণ করা হচ্ছে সাতটি রেস্টুরেন্টসহ জনসাধারণের চলাচলের জন্য ‘ওয়াকওয়ে’। এমন খবর গণমাধ্যমে আসার পর এ নিয়ে প্রতিবাদ অব্যাহত আছে। অপরদিকে কর্তৃপক্ষও বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানাচ্ছে যে অল্প কিছু গাছ কাটার বিষয়টি সত্য হলেও এখানে নতুন করে এক হাজার গাছ লাগানো হবে। তবে সাংবাদিকরা সরেজমিনে দেখেছেন যে সম্প্রতি উদ্যানের ৩৮টি গাছ কাটা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় লাল ‘ক্রস’ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে আরও কমপক্ষে ৪০টি গাছ। কয়েক দিন ধরেই এর প্রতিবাদ জানিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, স্বাধীনতা প্রকল্পের দুটি পর্যায়ে ১৯৯৮ সাল থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গ্লাস টাওয়ার, শিখা চিরন্তন, স্বাধীনতা জাদুঘর, ফোয়ারা, জলাধার ও উন্মুক্ত মঞ্চ এরই মধ্যে তৈরি করা হয়েছে। এবার প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ে পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ জন্য শিশুপার্ক ভেঙে নতুন করে সাজানো হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ স্থান, পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ভাষণস্থলসহ ১০টি স্থাপনা হচ্ছে। পাশাপাশি নির্মাণ হচ্ছে থিম পার্ক, ৫৭০টি গাড়ি রাখার ভূগর্ভস্থ পার্কিং, লাইট এ্যান্ড সাউন্ড শো, ফোয়ারাসহ অনেক কিছু। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জায়গায় নির্মিত শাহবাগ থানা এবং শিশু একাডেমিও স্থানান্তরের কার্যক্রম চলছে। এ জন্য চলতি অর্থবছরে প্রকল্পের তৃতীয় ধাপের বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৬৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।
যাহোক, আধুনিক কোনো শহরে সাধারণত উদ্যানে যথাসম্ভব গাছ বাঁচিয়েই স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়। গাছের বহুমুখী উপকারের বিষয়টি স্মরণে রেখেই এমনটি করা হয়। ঢাকার মানুষ উদ্যানের গাছ কাটার পক্ষে নয়, এটি পরিষ্কার। এ নিয়ে উচ্চ আদালতে রিটও হয়েছে। অনেকেরই মনে পড়ে যাবে যে, দুই দশক আগে ঢাকার ওসমানি উদ্যানের গাছ কাটার বিরুদ্ধেও জনমত গড়ে উঠেছিল।
ঈদে ঢাকা ছাড়তে মরিয়া!
এক অর্থে ঢাকার বেশির ভাগ বাসিন্দাই বহিরাগত। ঢাকা শহরে কর্মসূত্রে এবং লেখাপড়ার জন্য বসবাস করে থাকে লাখ লাখ মানুষ। ঢাকার বাইরে থেকে আসা এসব মানুষ ছুটিছাঁটায় ছোটে দেশের বাড়ি, তা মফস্বল শহর হোক, কিংবা প্রত্যন্ত গ্রামই হোক। দুই ঈদে তাই বাড়ি যাওয়ার ঢল নামে। এই ঈদযাত্রা অনেক বিড়ম্বনার ও ভোগান্তির। প্রতি বছরই অনেকেই যেতে ব্যর্থ হন, অনেকে ঈদের দিনেও যাত্রা করেন। আবার অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস বা ট্রেনের ছাদে, লঞ্চ-স্টিমারে গাদাগাদি করে ঈদযাত্রায় শামিল হোন। কিন্তু এখন সময়টা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির। এ সময়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখলে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে বহুলাংশে। কিন্তু ঈদের কেনাকাটা কিংবা ঈদে দেশের বাড়ি যাওয়া, কোনোটাতেই শত চেষ্টাতেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হয় না। বহুজন আবার স্বাস্থ্যবিধিও মানেন না। ভাইরাসেরও নিজস্ব নিয়ম-রীতি-বৈশিষ্ট্য আছে। বিজ্ঞান সেটি সুন্দরভাবে ব্যাখ্যাও করে থাকে এবং মানুষকে সচেতনতার পথ দেখায়। প্রতিবেশী দেশে ভাইরাসের ভয়ঙ্কর ধরন বিপুল মানুষকে সংক্রমিত করে চলেছে। ঈদযাত্রায় মানুষের ভিড়ে যদি এক-দুজনের করোনা থেকে থাকে তবে ভিড়ের পুরো মানুষই সংক্রমিত হওয়ার উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে থাকে।
একদিকে ঈদে বাড়ি ফেরার সংস্কৃতি, অপরদিকে ভাইরাসের অদৃশ্য নিঃশব্দ হুমকি- এ দুয়ের সমন্বয় অসম্ভব। সতর্ক ও সচেতন মানুষ কোনো ঝুঁকি নেবেন না। কিন্তু বেপরোয়া ও অসচেতন ব্যক্তি সতর্কবাণী কানে নেবেন না। তিনি ছুটবেনই বাড়ির পানে। এটা তো আমরা অস্বীকার করতে পারি না যে ঢাকার বাইরে থেকে এসে যারা ঢাকায় বসবাস করেন তাদের সুখ-স্বস্তি ও আনন্দের ভা-ারই যেন পড়ে থাকে নিজ বাড়িতে। তাই যেনতেন উপায়ে সকল বাধা উপেক্ষা করে তারা সেই শান্তিময় আকর্ষণে ঢাকা ত্যাগ করেন। কেউ বাড়ি যাবেন স্বজন ও পরিবারের সব সদস্যের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে। তাকে আটকাতেও খারাপ লাগবে। কিন্তু মানুষ হিসেবে আমাদের বিশেষ বুদ্ধি ও বিবেচনা বোধ রয়েছে। আমরা কেন বুঝতে অক্ষম যে আমি যদি ঈদযাত্রায় করোনাক্রান্ত হয়ে পড়ি, তবে ঈদের সময় দেশের বাড়িতে আপনজনদেরও স্বাস্থ্যঝুঁকির ভেতর ফেলে দেয়া হবে।
করোনা কড়চা
করোনা থেকে সাবধান থাকতে হবে। এ বিষয়ে বাস্তবধর্মী আলাপচারিতার মাধমে চিকিৎসক ফারহানা নীলা তুলে ধরেছেন সমাজের সকরুণ চিত্র। পাঠকদের জন্য তারই অংশবিশেষ:
১.
কয়েকদিন একটু একটু জ্বর ৪/৫ দিন হলো। শরীরটা ভীষণ দুর্বল। বিছানা থেকে উঠতে পারি না।
-করোনা টেস্ট করুন।
নাহ্ টেস্ট করতে চাইছি না।
-কেন?
তাহলে বাসার সবার বিপদ হবে।
-টেস্ট না করলে কী বিপদ কমবে?
ওষুধ দেন। খাওয়া শুরু করি।
-১৪ দিন আইসোলেশনে থাকুন আর ওষুধ খান। স্যাচুরেশন দেখুন।
২.
কোথায় তুমি?
একটু বাইরে এসেছি। টুকিটাকি কেনাকাটা
-তুমি তো পজিটিভ। ঘরে থাকার কথা।
একটু দরকারে বের হয়েছি। জলদি ফিরে যাব ঘরে।
৩.
আপনি ওষুধ কিনতে কেন গেলেন। আপনি তো পজিটিভ।
বাসায় দোকানে যাওয়ায় মতো কেউ নেই।
-আপনার মাধ্যমে তো ছড়িয়ে গেল করোনা।
কি করব? ওষুধ তো কিনতে হবে।
৪.
আপনার স্যাচুরেশন তো ভাল। ৯৭/৯৮। একদম দুশ্চিন্তা করবেন না। ১৪ দিন পর আইসোলেশন ভাঙতে পারবেন।
জি আমার শরীর এখন বেশ ভাল। ওষুধ চলছে। একটু মার্কেটে এসেছি। ঈদ তো চলেই এলো। কোন কেনাকাটা হয়নি এখনও!
-আপনি মার্কেটে? করোনা ছড়াচ্ছেন?
৫.
বার বার পজিটিভ আসছে। ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছি। কবে নেগেটিভ হবে?
-১৪ দিন পর পজিটিভ আসলেও ভয় পাবেন না। ওগুলো ডেড আরএনএ। ওখান থেকে করোনা ছড়াবে না। আপনি স্বাভাবিক জীবন শুরু করতে পারেন।
৬.
আপনি সাত দিনের ওষুধ দিয়েছিলেন। আরও খাব কী?
- রিপোর্টগুলো করেছেন?
না এখনও করিনি। ইফতার কিনতে এসেছি। ভাবলাম আপনি বললে ওষুধ কিনে নিয়ে যাই।
-আপনি ইফতার কিনতে গেছেন? করোনা ছড়াতে?
৭.
মাস্ক ছাড়া কোথাও যাবেন না। পজিটিভ আপনি। বাসায়ও মাস্ক পরুন। নিজের ঘরে অবশ্য দরকার নেই।
আমি তো প্রথম থেকেই সবার সঙ্গে আছি। স্ত্রী খাইয়ে দেয়। সেবা শুশ্রƒষা করে। শরীরটা তো খুব দুর্বল
-আপনার বাসার সবার টেস্ট করুন।
৮.
অফিসের তো ছুটি নেই। বেসরকারী অফিস এসব শোনে না।
-আপনার স্ত্রী পজিটিভ। আপনারা আইসোলেশনও করেননি। আপনার টেস্ট করুন।
টেস্ট করে আর কি হবে? জ্বর আছে। দুটো নাপা খেয়ে অফিসে এসেছি।
-এটা তো অন্যায়!
আগে তো চাকরি ঠেকাই!
০৯ মে ২০২১
[email protected]