
ছবি: সংগৃহিত
সন্তানের স্বপ্নপোড়া ছাই উড়লো ঢাকার বাতাসে। ঢাকার ঘনবসতি স্থানে বিমান বিধ্বস্তে। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভেতরে। পুড়লো কলিজার টুকরো সন্তান। আর কয়লা হলো বাবা মায়ের কলিজা। এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্যে থমকে গেছে পুরো দেশ। দেশদুনিয়ায় এখনও ভেসে আসছে শোকার্ত মানুষের বিলাপ। বিমানঘ্রাসে যত্নের দেহ অঙ্গার হয়ে বরফ হয়ে গলছে। কারো হাত, কারো পা, কারো মাথার খুলি উড়ে গেছে। সন্তানের খোঁজে কিউবা স্বজনদের খোঁজে ছুটছেন হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে। বৃষ্টি হয়ে ঝরছে চোখের পানি, মানুষের আর্তনাদে স্তব্ধ হাসপাতালের বারান্দা। সাহায্য নিয়ে ছুটছেন সবাই। শোকে মুহ্যমান পুরো দেশ। দগদগে ক্ষতে অস্থির লাখো কোটি পিতামাতা! তাকিয়ে আছেন টিভি স্ক্রিনে। রাষ্ট্র থেকে মানুষ সবাই উদ্বিগ্ন। বিস্ময়ে দেখছে করুণ দৃশ্য। টেলিভিশনের পর্দায় দেখছে মায়ের আহাজারি। কেউ বলছে,আহারে আমার ছেলেটা কত কষ্টে পুড়ে মরে গেছে। আবার কেউ বলছে বাবারে ভাত নিয়ে বসে আছি ভাত খাবি না। সন্তানের পোড়া দেহের অংশবিশেষ ও অর্ধপোড়া বইখাতা হাতে নিয়ে বাবার বোবা কান্নায় থমকে গেছে দেশ। সচেতন মহল থেকে তোলা হচ্ছে প্রশ্ন। কেন ঘনবসিতে বিমান প্রশিক্ষণ। আবার কেউ দেখছে ইস্যুর পেছনে ইস্যু। আবার কারও চোখে ষড়যন্ত্র। নানা মতামত উঠে আসছে নেট দুনিয়ায়। তবে সমস্বরে একই শব্দ আমরা লাশ দেখে কাদি বার বার। সেই জুলাইয়ে গণহত্যায় হারিয়েছি দুই হাজার প্রাণ এই জুলাইয়ে এখনও হয়নি পোড়া দেহের হিসাব।
কবি হিসেবে পরিচিত রায়হান আহমেদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেন- জলজ্যান্ত সন্তানকে স্কুলে নিয়ে এসে, এক টুকরো কয়লা নিয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার মতন দুঃখ বোধহয় পৃথিবীতে আর কোন কিছুতে নাই। আরিফ হোসেন জানালেন, এখন উচিৎ হচ্ছে অবশিষ্ট সব বিমানগুলো পরীক্ষা করা। এই সব নষ্ট জিনিসের জন্য আবারও কি এমন অবস্থা দেখবে নাকি মানুষ, কত বাবা মায়ের বুক খালি হয়ে গেল আজকে একটি দুর্ঘটনায়। পোড়া বই পোড়া জামাগুলো দেখে কলিজা পেটে যাচ্ছে।
রাফিদ হাসান একজন গণমাধ্যম কর্মী। তিনি লিখেন, যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখছি ছোট ছোট বাচ্চারা পুড়ে চিৎকার করে করে অঙ্গার দেহ নিয়ে বের হচ্ছে নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারিনি। বার বার আমার সন্তানের কথা চিন্তা করছি। এই দৃশ্য আমরা নিতে পারছি না, যার সন্তান পুড়ছে তিনি কিভাবে নিচ্ছেন আসমানের মালিকই ভালো জানেন।
কবির মজুমদার লিখেন-অবিলম্বে রাজধানীর বুক থেকে বিমানঘাটি অন্যত্র স্থানান্তরের কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হউক। যত তাড়াতাড়ি করবে ততই দেশবাসীর জন্য মঙ্গল। পৃথিবীর কোথাও রাজধানীর বুকে বিমানঘাঁটি নেই। একমাত্র বাংলাদেশ ছাড়া।
রাজধানীর একটি স্কুলের শিক্ষক আবির মাহমুদ তার মন্তব্য বলেন, ওখানে শুধু শিশু পোড়েনি, পুড়েছে প্রতিটা বাবা মায়ের কলিজা, আত্মা,শিশুকাল থেকে বড় করা ভালবাসা স্বপ্ন সন্তান নয় পুড়েছে বাবা মায়ের কলিজা
ফ্যাশন ডিজাইনার অবন্তিকা অধরা বলেন, ঢাকা থেকে সকল সামরিক বিমানবন্দর উপকূলের চরাঞ্চলে সরিয়ে নেওয়া হোক! সবকিছু ঢাকাতেই হতে হবে এই ধারণা থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। হাসিনার আমলে নিয়োগ প্রাপ্ত সকল ফ্লাইট অফিসারের যোগ্যতা পুনঃনিরীক্ষণ করা হোক!
নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চিন্তক কথা জানান যায়িদ আল হাসান। তিনি বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে লিখেন, নব্বই দশকের এক পরিত্যক্ত যুদ্ধবিমান, যা শেষবার চীন বিক্রি করেছিল ২০১৩ সালে। হাসিনা সরকারই ছিল সেই ‘শেষ কাস্টমার’।একটা সার্ভিস থেকে অবসরে যাওয়া লোহা কেনার মধ্যেই ফুটে ওঠে একটি রাষ্ট্রের দুর্নীতির ঘনত্ব। দুর্ঘটনাটি কি কেবল যান্ত্রিক ত্রুটি, না কি পরিকল্পিত? প্রশ্নটা গুরুত্বপূর্ণ- কারণ এদেশে ইস্যু তৈরির জন্য প্রাণ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা নতুন কিছু নয়।
আরেকটু গভীরে তাকান বাংলাদেশ এখনো কেন চতুর্থ প্রজন্মের স্টিলথ ফাইটার কিংবা আধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা কিনতে পারেনি? কারা আটকে রেখেছে সেই পথ?
ভারতীয় প্রভাব বলয়, আর তাদের দেশীয় দোসররাই এই অচলাবস্থা রচনা করেছে। বিমানবাহিনীকে পঙ্গু করে রেখে তারা এই ভূখণ্ডকে করে তুলেছে উন্মুক্ত নিশানা।
আপনারা শোক করবেন, কিন্তু প্রশ্ন করবেন না-এই লজ্জাই আমাদের জাতীয় চরিত্র। প্রতিবারই আমরা লাশ দেখে কাঁদি, কিন্তু লাশ তৈরির কারিগরদের নাম মুখে আনি না।ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনা পালিয়েছে, কিন্তু সামনে যারা তারাও কি একই পথে হাঁটবে!!
শিহাব