
ছবিঃ সংগৃহীত
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান সম্প্রতি এক টকশোতে বলেন, ঐক্যের কথা বললেই বিভেদের প্রসঙ্গও সামনে আসে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপি ও সরকার দলীয় রাজনীতিতে যে বিভেদ প্রকট হয়ে উঠেছে, তা এখন জনগণের সামনে স্পষ্ট। এই প্রেক্ষাপটে তিনি বলেন, আমরা আশাবাদী হতে চাই যে সামনে হয়তো কেউ নতুনভাবে ঐক্য গঠনে ভূমিকা রাখতে পারবেন। তবে, সেই সম্ভাবনার আগে আমাদের আলোচনায় আসা উচিত—যিনি ইতোমধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা রেখে গেছেন, অথচ যা তেমনভাবে আলোচিত হয়নি।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার পতন আজ বাস্তবে পরিণত হলেও তার রাজনৈতিক স্বপ্ন দীর্ঘমেয়াদি ছিল। ২০৪১ সাল পর্যন্ত তিনি যে রূপকল্পে দেশ পরিচালনা করতে চেয়েছিলেন, তা বাস্তবায়ন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না, কারণ সাধারণ আয়ু বিবেচনায় সে সময় তিনি আর ক্ষমতায় থাকতেন না। এ কারণে ধারণা করা হয়েছিল, ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে তিনি হয়তো নিজের পরিবারের কাউকে দায়িত্ব দেবেন। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।
এ প্রসঙ্গে ডা. জাহেদ ক্যাম্বোডিয়ার উদাহরণ টেনে বলেন, দেশটির প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হুন সেন ২৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ২০২৩ সালের নির্বাচনে সফলভাবে তার ছেলে হুন মানেটকে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। সেদেশে বিরোধী দলগুলোর কার্যত বিলুপ্তির কারণে এই ক্ষমতা হস্তান্তর সহজ ছিল। ২০১৩ সালের নির্বাচনে ক্যাম্বোডিয়ান ন্যাশনাল রেসকিউ পার্টি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠলেও পরবর্তীতে সেই দলকে আদালতের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে হুন সেনের সামনে আর কোনো বড় চ্যালেঞ্জ ছিল না।
বাংলাদেশে পরিস্থিতি ভিন্ন বলে উল্লেখ করে ডা. জাহেদ বলেন, শেখ হাসিনাকে সবসময়ই বিএনপির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। এই বিরোধিতা মোকাবিলায় তাকে কঠোর অবস্থান নিতে হয়েছে, যার ফলে মানবাধিকার লঙ্ঘন, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং রাজনৈতিক মামলার মতো অভিযোগ সামনে এসেছে। ক্যাম্বোডিয়াতে যেটা হয়নি, বাংলাদেশে সেটাই হয়েছে।
বেগম খালেদা জিয়ার ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন রাজনৈতিক লড়াইয়ে অনেক কিছু হারিয়েছেন, কিন্তু আপস করেননি। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে তিনি কারাগারে ছিলেন, অসুস্থ অবস্থায় ছিলেন এবং লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত ছিলেন। তখন অনেক আলোচনা হয়েছিল যে তিনি শেখ হাসিনার সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সমঝোতায় যেতে পারেন, কিন্তু তিনি তা করেননি। বিদেশে চিকিৎসা নিতে চাইলেও তা সম্ভব হয়নি।
তিনি আরও বলেন, বেগম জিয়া তার ব্যক্তিগত জীবন, সন্তান ও পরিবারের কাছ থেকে দূরে থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন। তিনি চাইলে পারতেন সরে দাঁড়িয়ে পরিবারকে সময় দিতে। কিন্তু তিনি দেশের জন্য লড়াই চালিয়ে গেছেন। এটাই তার বড় অবদান।
টকশোতে ডা. জাহেদ উর রহমান মন্তব্য করেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে তার কঠোরতা এবং "দানবীয়" রূপ নিতে বাধ্য হওয়ার পেছনে বিএনপির রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জও একটি বড় কারণ। এর বিপরীতে হুন সেন নির্বিঘ্নে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন, কারণ তার সামনে কোনো কার্যকর বিরোধী দল ছিল না।
মারিয়া