ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

আবারও এক হতে যাচ্ছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ!

প্রকাশিত: ০৯:০৬, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

আবারও এক হতে যাচ্ছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ!

১৩ বছর পর ঢাকার সিটি কর্পোরেশন কাঠামোতে আসতে পারে বড় পরিবর্তন। স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সুপারিশে উঠে এসেছে একটি একক ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের প্রস্তাব।


১৩ বছর আগে উত্তর ও দক্ষিণে দুটি সিটিতে বিভক্ত হয়েছিল ঢাকা সিটি কর্পোরেশন। এখনই বিভাজন তুলে দেওয়ার সুপারিশ করেছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। তারা সমগ্র ঢাকা মহানগর এলাকার জন্য একক ঢাকা সিটি কর্পোরেশন করার পরামর্শ দিয়েছে। কাজের পরিধি, কাঠামো ও নির্বাচনের ধরণেও বড় রকমের পরিবর্তন করতে বলছে কমিশন।

অঞ্চলভিত্তিক সিটি কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব
এক্ষেত্রে বর্তমানে উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতায় যে ২০টি অঞ্চল রয়েছে, সেগুলোর প্রতিটিকে ওই এলাকার ওয়ার্ডগুলো নিয়ে একটি করে স্বতন্ত্র সিটি কাউন্সিল, যেমন 'মিরপুর একটি সিটি কাউন্সিল হতে পারে', এমন সুপারিশ করেছে তারা। এই সিটি কাউন্সিলে এলাকাভিত্তিক মূল কাজগুলো করবে। আর সিটি কর্পোরেশন মূলত সমন্বয়কারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে। এখানে ওয়ার্ড কাউন্সিলররা নির্বাচিত হবেন সরাসরি ভোটে। আর সিটি কাউন্সিল ও সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হবেন কাউন্সিলরদের ভোটে।"

প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুপারিশ জমা 
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনূসের কাছে রোববার জমা দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এমন সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। গত বছরের ১৮ নভেম্বর স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফাল আহমেদকে প্রধান করে আট সদস্যের স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়।

ঢাকার সিটি কর্পোরেশন বিভাজনের পেছনের প্রেক্ষাপট
বুড়িগঙ্গা নদীতীরে অবস্থিত প্রাচীন নগরী ঢাকাকে পৌরসভা করা হয় ১৮৬৪ সালে। এরপর নানা পরিক্রমায় ১৯৯০ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নামকরণ হয়। ২০১১ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় এবং ২০১২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ দুটি সিটি কর্পোরেশন যাত্রা শুরু করে।

লন্ডনের মডেলে ঢাকার জন্য দুই স্তরের মহানগর সরকার
এখানে লন্ডনের নগর কাঠামোর আদলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরের জন্য দুই স্তর বিশিষ্ট মহানগর সরকার গঠনের সুপারিশ করেছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। কমিশন বলছে, ঢাকা মহানগরের ক্ষেত্রে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পরিবর্তে একক মহানগর সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

স্বায়ত্বশাসিত সিটি কাউন্সিল, সেবা হবে এলাকাভিত্তিক
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একেকটি সিটি কাউন্সিল তার নিজস্ব ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে কাজ করবে, যা কতগুলো ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হবে। স্বায়ত্বশাসন থাকলেও এই সিটি কাউন্সিলগুলো কাজের দিক থেকে বৃহত্তর ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের আওতায় একটি স্যাটেলাইট আকারে যুক্ত থাকবে এবং পরিচালিত হবে।

সিটি কাউন্সিল কীভাবে কাজ করবে?
প্রতিটি সিটি কাউন্সিলে একজন মেয়র থাকবেন। সিটি কাউন্সিল, জননিরাপত্তা এবং অগ্নিনিরাপন পরিসেবা, মশক নিধন, প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা, স্থানীয় পর্যায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ফুটপাথ, রাস্তা, কালভার্ট নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, ব্যবসা বা পেশার নিবন্ধন বা অনুমোদনসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের সরাসরি প্রয়োজনীয় পরিষেবা দেওয়ার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হবে। স্থানীয় কর সিটি কর্পোরেশন নয়, শুধু সিটি কাউন্সিল গ্রহণ করবে।

অঞ্চলভিত্তিক সিটি কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাবিত কাঠামো
ঢাকা মহানগর সরকারে অঞ্চল ভিত্তিক ২০টি সিটি কাউন্সিল গঠন করা যেতে পারে। এর একটি সম্ভাব্য তালিকাও করে দিয়েছে কমিশন। কাউন্সিলগুলোতে নির্ধারিত সংখ্যক ওয়ার্ড থাকবে। জনসংখ্যার ভিত্তিতে একটি সিটি কাউন্সিলে কমপক্ষে নয় থেকে সর্বোচ্চ ১৫টি ওয়ার্ড থাকবে। এই ওয়ার্ডগুলোর ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটে কাউন্সিলর নির্বাচিত হবেন। এক তৃতীয়াংশ ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর নির্বাচিত হবেন।

মেয়র নির্বাচন হবে দুটি ধাপে
প্রতিটি সিটি কাউন্সিলে নির্বাচিত কাউন্সিলররা নিজেদের ভোটে কাউন্সিলের মেয়র নির্বাচিত করবেন। আর সব সিটি কাউন্সিলের কাউন্সিলররা মহানগর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচনে ভোটার হিসেবে বিবেচিত হবেন। সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদের নির্বাচন উন্মুক্ত থাকবে। সেখানে নির্বাচিত কাউন্সিলর ও বাইরের অনির্বাচিত ব্যক্তিও নির্বাচনের শর্ত পূরণ করে মেয়র পদে প্রার্থী হতে পারবেন।

 

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/yck8xz2p

আফরোজা

×