
নাহিদের ফেসবুক পোস্ট নিয়ে রাজনীতিবিদদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
নিরপেক্ষ সরকারের নামে আরেকটি ১/১১ সরকার চায় বিএনপি। হাসিনা সরকার পতনের পর বিএনপি জাতীয় সরকারে রাজি হয় নাই। সরকার গঠনের আগেই ৬ আগস্ট অ্যাটর্নি জেনারেল এবং পুলিশের আগের আইজির নিয়োগ হয়েছিল বিএনপির লোকে। এই সরকারের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত নানা স্তরে বিএনপিপন্থি লোকজন রয়েছে। রাষ্ট্রপতির পরিবর্তন, সংস্কার, নতুন সংবিধান, জুলাই ঘোষণা সব ইস্যুতেই বিএনপি বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এ দেশের বড় বড় লোকেরা অল্পমূল্যে বিক্রি হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে।
অন্তর্বর্তী সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের এমন বক্তব্যে রাজনীতিতে গরম হাওয়া শুরু হয়েছে। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। রাজনৈতিক ও বিশেজ্ঞরা বলছেন, পর্দার আড়ালের খবর প্রকাশ পাওয়ায় দেশে এখন নানা সমীকরণ তৈরি হবে। এটার ফলাফল কী, ভবিষ্যৎ কী হতে পারে তা বোঝার চেষ্টা করছেন সিনিয়র রাজনীতিবিদরা। ছাত্রদের বড় অংশ থেকেও ক্ষোভ প্রকাশ করা হচ্ছে এতদিন সরকারে থাকা ছাত্রদের প্রতিনিধি কী করেছেন।
এ বিষয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, নাহিদ ইসলাম রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ। এজন্য বিএনপির মতো রাষ্ট্র নেতৃত্ব দেওয়া দলকে নিয়ে এমন বক্তব্য দিচ্ছেন। দলটি অভিযোগ করে বলছে, রাজনীতিতে দেশে একটি ঐক্যের হাওয়া শুরু হয়েছে। ছাত্রদের অংশ থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সেই ঐক্য নষ্ট করা হচ্ছে।
জামায়াতে ইসলামী বলছে, বিএনপি এবং ছাত্রদের অংশ থেকে পাল্টাপাল্টি এমন বক্তব্যের রহস্য কী তারা এখনো বুঝতে পারছেন না, সেটি তারা বোঝার চেষ্টা করছেন। এমন রাজনৈতিক গরম হাওয়ায় দেশের মানুষের মধ্যে কোনো অনৈক্য তৈরি হবে না বলেও মনে করছে দলটি।
এদিকে নাগরিক ঐক্য বলছে, বাচ্চা ছেলের বক্তব্যে উত্তর দেওয়াও নিষ্প্রয়োজন। এখন এমন উত্তেজনার মধ্যে ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে কী ঘটে সেটিই তারা দেখবেন। অন্যতম রাজনৈতিক দল এলডিপি বলছে, হাসিনার পতনের পর রাজনৈতিক দলগুলো সেনাদের এবং রাষ্ট্রপতির দরবারে গিয়ে ভুল করেছেন সেই দায়িত্ব এই দলটি নেবে না। তাদের দাবি, ৪০ বছর আগের জনগণ আর বর্তমান জনগণ এক নয়। উঁচু শ্রেণির রাজনীতিবিদরা এখনো বাস্তবতা বিবর্জিত রয়েছেন।
জানা যায়, মঙ্গলবার বিবিসি বাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে না পারলে নির্বাচন করতে পারবেন না।’ তার এই সাক্ষাৎকারের পরই তথ্য উপদেষ্টার কাছ থেকে এমন বক্তব্যে আসে।
বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার দিকে তার ফেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মূলত আরেকটা ১/১১ সরকার গঠনের ইঙ্গিত। এরপর সন্ধ্যার দিকে তার এই লেখা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকেও গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক জনকণ্ঠকে বলেছেন, ‘আসলে রাজনীতিতে নাহিদ সাহেব এখনো অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেনি। রাজনীতি করতে হলে অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে বিএনপিকে নিয়ে এই ধরনের কথাবার্তা বলছেন। আমরা মনে করি, এখন এই সমস্ত অনভিজ্ঞ কথা না বলে সবাইকে নিয়ে ঐক্য প্রয়োজন। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, নাহিদ সাহেবরা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অনৈক্যের যাত্রা শুরু করছেন।’
বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ জনকণ্ঠকে বলেছেন, ‘নাহিদ সাহেব বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ্য করে অনেক গভীরভাবে একটি লেখা লিখেছেন। তিনি আসলে এটি কেন লিখেছেন সেটি আমরা বোঝার চেষ্টা করছি। আবার বিএনপিও কেন উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কিছু বক্তব্য দিয়েছেন সেটারও আমরা জানার চেষ্টা করছি।
তবে আমরা মনে করছি বিএনপি এবং ছাত্র প্রতিনিধিদের অংশ থেকে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে দেশের জনগণের মধ্যে কোনো প্রভাব ফেলবে না। আমরা মনে করি দেশের জনগণ খুবই অ্যালার্ট। জনগণের শক্তির কারণে স্বৈরাচার হাসিনা সরকার বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। জনগণ সকল কিছু গভীরভাবে চিন্তা করেন। দেশের জন্য যা ভালো তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। আমরা মনে করি এসব পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের কারণে রাজনীতির ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না।’
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না জনকণ্ঠকে বলেছেন, আসলে এ বিষয়ে কী মন্তব্য করব? বাচ্চা বাচ্চা ছেলেরা কী জন্য এমন কথা বলছেন এ বিষয়ে তেমন কিছু বলার নাই। এখন ভবিষ্যতে কী হবে শুধু এটাই দেখার বিষয়। ভবিষ্যৎ কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, সেটাই দেখব শুধু রাজনীতিক হিসেবে।
এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম জনকণ্ঠকে বলেছেন, ‘আসলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব কী উদ্দেশ্যে এমন বক্তব্য রেখেছেন, এটার পেছনে কী আছে সেটা আমার জানা নেই। ছাত্ররাও কেন এ ধরনের বক্তব্য দিচ্ছে সেটাও আমার বোধগম্য নয়। আমি মনে করি ৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনের পর সেনাপ্রধানের আহ্বানে যারা সেনাসদরে গেছেন এবং পরবর্তীতে বঙ্গভবনে গেছেন এই বিষয়গুলোর সঙ্গে এলডিপি জড়িত নয়। যারা গেছে, তাদের নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠছে।
তিনি বলেন, সবাইকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। দেশের এবং দেশের জনগণের কথা চিন্তা করতে হবে। এরশাদ এবং হাসিনার পতন কীভাবে হয়েছে মাথায় রাখতে হবে। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু দুর্নীতিগ্রস্ত বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তার কাছে কেন রাজনৈতিক ব্যক্তিরা গেছেন সেটাও তিনি প্রশ্ন রাখেন। একই সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাইকে ধৈর্যশীল হওয়ার আহ্বান জানান এ রাজনীতিবিদ।
তিনি বলেন, জনগণ কী ভাবছে দেশের সমস্যা কোথায় সেগুলো বোঝার চেষ্টা করতে হবে সবাইকে। এখন কাউকে পাগলামি করা চলবে না। মনে রাখতে হবে, ৪০ বছর আগের জনগণ এখন আর নেই। বর্তমান জেনারেশন এবং জনগণ সব ভালো-মন্দ বুঝতে পারেন। শুধু উঁচু শ্রেণির রাজনীতিবিদরা এখনো বাস্তবতা বিবর্জিত। মনে রাখা উচিত, সত্য সব সময় চাপা থাকে না।
এদিকে নাহিদ ইসলামের পোস্টে আন্দোলনে থাকা অনেককে ক্ষোভ প্রকাশও করতে দেখা গেছে। আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকা ফারজানা খাতুন দোলা লেখেন, ‘নাহিদ ভাই এত কিছু জানি না, শুধু একটাই প্রশ্ন গত ৬ মাস কী ঘুমের ওষুধ খেয়ে অচেতন ছিলেন। এখন তরী ডোবার সময় কেন সাফাই গাইছেন?’