
আবু সাঈদ খান
ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে যে সব সংগ্রামী মানুষেরা লড়াই করেছেন, আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের সবার ইতিহাসে যার যতটুকু প্রাপ্য সে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। বাংলাদেশের ভিত্তি হচ্ছে একাত্তর। লাখো শহীদের রক্তের মধ্যে দিয়ে যে পতাকা আমরা উড়িয়ে দিচ্ছি সেই পতাকাকে অসম্মান করার অধিকার কারও নেই।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতায় দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সাঈদ খান এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, শেরে বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হকের কর্মকাণ্ডের মধ্যে দিয়েও সেখানে একটা স্বাধীন রাষ্ট্র ভাবনা ছিল। মওলানা ভাসানী আরও স্পষ্ট করে বলেছেন। শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা দিয়েছেন, বিরাট ঐতিহাসিক অবদান। তার এই অবদানকে কোনও ক্রমে ছোট করে দেখার অবকাশ নাই। শেখ মুজিবের অনুপস্থিতিতে তাজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়েছিল এবং সরকার দ্বারা স্বাধীনতাকে তাদের মতো করে স্বাধীন দেশের পতাকা উড়িয়েছে, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। অতএব এই যে আরও কিছু রণাঙ্গনের লোক এবং বিভিন্ন লোক তাদের অবদান রয়েছে। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করলাম। যে কেবলমাত্র একক ব্যক্তিকে মহিমান্বিত করতে গিয়ে তাকে ‘ফাদার অব দ্য ন্যাশন’ ঘোষণা করা হয়। এটা হল পাকিস্তানি কনসেপ্ট।
আবু সাঈদ খান বলেন, মহাত্মা গান্ধি কিন্তু সাংবিধানিকভাবে ‘ফাদার অব দ্য ন্যাশন’ না। শেখ মুজিবুর রহমানকে সংসদের মাধ্যমে ‘ফাদার অব দ্য ন্যাশন’ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু আমরা কী দেখি? আমরা যদি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস দেখি, সেখানে ওয়াশিংটন প্রধান নেতা কিন্তু ওয়াশিংটনকে ‘ফাদার অফ দ্য নেশন’ বলা হয় না। একই সঙ্গে ফাউন্ডিং ফাদার বলা হয় সেখানে ওয়াশিংটন, জেফারসন, হ্যামিল্টন ফ্রাঙ্কলিন, অ্যাডামস সবাই কিন্তু প্রধান ফান্ডিং ফাদার্স। আমার মনে হয় বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন করে ভাবনার সুযোগ এসেছে, যে নতুন করে আমরা শেরে বাংলা মওলানা ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দীন আহমেদ, শাহ আজম খান এবং আরও কয়েকজন যুক্ত হতে পারেন; তাদেরকে স্বাধীনতার স্থপতি পিতা ফাউন্ডিং ফাদার্স হিসেবে আমরা বিবেচনা করতে পারি।
তিনি আরো বলেন, ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে যে সব সংগ্রামী মানুষেরা লড়াই করেছেন, আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের সবার ইতিহাসে যার যতটুকু প্রাপ্য সে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। ছাত্ররা অগ্রণী ছিলেন। ছাত্র সামনের কাতারে ছিল, এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এখানে শ্রমিক, কৃষক, ফেরিওয়ালা, দোকানী, কেরানী সমস্ত মানুষ তাদের ক্ষোভ যন্ত্রণা থেকে তারা রাজপথে সংগ্রামের শরিক হয়েছিল এবং এ লড়াইতে তারা এগিয়ে ছিল। অথচ, এটি একটি স্বতঃস্ফূর্ত উত্থান। কিন্তু এই অভ্যুত্থানকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার কোনো সুযোগ নেই।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সাঈদ খান বলেন, যদি আমি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় বলি, এটা বিপ্লব নয়, কেই বিপ্লব বলুন, আপত্তি নেই। এটা হচ্ছে একটি জনতার অভ্যুত্থান এবং এটি আমাদেরকে বুঝতে হবে এবং এই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সবকিছু পাল্টে গেছে। ৭১ পাল্টে গেছে। এটা মেনে নিতে পারিনা। বাংলাদেশের ভিত্তি হচ্ছে একাত্তর। লাখো শহীদের রক্তের মধ্যে দিয়ে যে পতাকা আমরা উড়িয়ে দিচ্ছি সেই পতাকাকে অসম্মান করার অধিকার কারও নেই।
সূত্র: সমকাল। https://www.youtube.com/watch?v=trKCBM_WYOk
এম হাসান