
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতের জাতীয় সমাবেশ
সমাবেশের রাজনীতিতে নতুন চমক দেখিয়ে জামায়াতে ইসলামী স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশাল সমাবেশ করেছে। এই সমাবেশ বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে স্পষ্ট বিভাজন তৈরি করেছে বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তাদের ধারণা, জামায়াত এখন বিএনপির বাইরে নতুন একটি জোট গঠনের শক্তি প্রদর্শন করেছে।
শনিবার রাজধানীর ঢাকাবাসীর কাছে ছিল কার্যত সমাবেশের নগরী। জামায়াতে ইসলামী তাদের বিশাল লোকসমাগমের মাধ্যমে যে দাবিগুলো জানিয়েছে, তার সাথে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) বিভিন্ন সময়ে দেওয়া বক্তব্যের মিল খুঁজে পাচ্ছেন অনেকে, বিশেষ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রসঙ্গে।
দীর্ঘ ২৪ বছরের নির্বাচনী জোটসঙ্গী বিএনপিকে এই সমাবেশে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বিএনপি যেখানে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে, সেখানে জামায়াতের সমাবেশের অন্যতম দাবি ছিল পিআর পদ্ধতিতে আগামী সংসদ নির্বাচন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জামায়াত এই সমাবেশের মাধ্যমে নতুন জোট গঠনের জন্য তাদের রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শন করেছে। তাদের পুরো বক্তব্যটিই ছিল মূলত একটি নির্বাচনী বক্তব্য। তবে, এই বক্তব্যের একটি অংশে গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের অবদানের কথা বারবার উঠে এসেছে, যা স্বাভাবিক প্রেক্ষাপটে আসার কথা।
আশির দশকের পর এই প্রথম জামায়াত এত বড় একটি সমাবেশ করেছে এবং এত বিপুল সংখ্যক লোক সমাগম ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি রাজনীতিতে একটি বড় বার্তা দিচ্ছে। তারা বলছেন, জামায়াত তার রাজনৈতিক শক্তি এবং সমর্থন বেইস এখানে দেখাতে সমর্থ হয়েছে। তৃতীয়ত, জামায়াত অন্যান্য দলকে নিয়ে কোনো নতুন মোর্চা বা জোট গঠনের ইঙ্গিতও দিচ্ছে।
আগামী দিনের রাজনীতিতে জামায়াত ও বিএনপি কি স্পষ্টতই আলাদা হয়ে গেল, এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্লেষকরা জানান, বিএনপি-জামায়াতের নির্বাচনী বিভাজন স্পষ্ট হয়ে গেছে। রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে দুটি স্পষ্ট বিভাজন দেখা যাচ্ছে। একদিকে জামায়াত এনসিপির নেতৃত্বে অন্যান্য দলগুলোকে নিয়ে এগোচ্ছে, অন্যদিকে রয়েছে বিএনপি। বিশ্লেষকরা মনে করেন, যদি বিএনপি কোনো কারণে ঐক্যমতে না আসে বা তাদেরকে যদি ঐক্যমতে আনা না যায়, তাহলে এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে। তাদের মতে, জামায়াত এখনই ক্ষমতায় যেতে পারবে না, তবে তারা যদি বিরোধী দলে যায়, তাহলে বিরোধী দলের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবে।
সরকারের তরফ থেকে শনিবারও নিশ্চিত করা হয়েছে যে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। বিএনপির প্রত্যাশা, সরকার ঘোষিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন দেবে। তবে জামায়াত বলছে, বিচার সংস্কার ও জুলাই সনদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এবং বাংলার মানুষের মুক্তি অর্জন হওয়া পর্যন্ত তাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে।
তথ্যসূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=L80BWVtm72U
সাব্বির