ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২১ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

ডিএমসি থেকে নিহতের তথ্য দেওয়া বন্ধ করে দেয় সরকার

আল জুবায়ের

প্রকাশিত: ২৩:৪৪, ২০ জুলাই ২০২৫

ডিএমসি থেকে নিহতের তথ্য দেওয়া বন্ধ করে দেয় সরকার

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে ২০২৪

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে ২০২৪ সালের ২১ জুলাই চতুর্থ দিনের মতো সারাদেশ ইন্টারনেটবিহীন এবং কার্ফু চলমান ছিল। দেশজুড়ে কার্ফুর মধ্যেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া, পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এদিন সংঘর্ষে ঢাকাসহ সারাদেশে নিহত হন ১৯ জন।

তাদের মধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১০ এবং নরসিংদীতে ৪, গাজীপুরে ২, নারায়ণগঞ্জে ১, সাভারে ১ ও চট্টগ্রামে ১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হন কয়েকশ’ আন্দোলনকারী, যাদের অনেকের অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল। এছাড়া এদিন সিদ্ধিরগঞ্জে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১৯ গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।
এদিন ভোরে ঢাকার পূর্বাচল এলাকায় আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে পাওয়া যায় এবং পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগে ১৯ জুলাই রাত আড়াইটার দিকে রাজধানীর খিলগাঁও থেকে নাহিদ ইসলামকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে তীব্র ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে ছাত্রসমাজ।
শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের কারণে এদিন সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পুনর্বহাল-সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। রায়ে বলা হয়, মেধাভিত্তিক নিয়োগ হবে ৯৩ শতাংশ; মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ; ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ নির্ধারণ করা হলো। তবে নির্ধারিত কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কোটার শূন্য পদগুলো সাধারণ মেধাতালিকা থেকে পূরণ করতে হবে।

এই নির্দেশনার আলোকে সরকারের নির্বাহী বিভাগকে অনতিবিলম্বে প্রজ্ঞাপন জারি করতে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। ১৬ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে এদিন সকাল ১০টায় শুরু হওয়া সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সর্বসম্মতিতে দুপুর ১টার দিকে এ রায় দেন। রায়ে আরও বলা হয়, এই নির্দেশনা ও আদেশ সত্ত্বেও সরকার প্রয়োজনে ও সার্বিক বিবেচনায় নির্ধারিত কোটা বাতিল, সংশোধন বা সংস্কার করতে পারবে।
এদিকে কোটা ইস্যুতে আপিল বিভাগের দেওয়া রায়কে স্বাগত জানায়  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। রায়ের পর এ প্রতিক্রিয়ায় আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম জানান, আপিল বিভাগের রায়কে শিক্ষার্থীরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তবে নির্বাহী বিভাগের সিদ্ধান্তকেই চূড়ান্ত হিসেবে দেখছেন তারা।
তবে এ রায়ের পর শাটডাউন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কিন্তু চার দফা দাবি পূরণে  বৈষম্যবারোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন। চার দফা দাবির মধ্যে ছিল- কার্ফু তুলে দেওয়া, ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করা, বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক হল খুলে দেওয়া এবং আন্দোলনের সমন্বয়কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
এদিন আন্দোলনে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচারসহ আট দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে সরকারকে আহ্বান এবং ২২ জুলাই (সোমবার) গায়েবানা জানাজা কর্মসূচির ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ২২ জুলাই (সোমবার) কার্ফু বলবৎ থাকবে। দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কার্ফু  শিথিল থাকবে। ঢাকা জেলা ও মহানগর, গাজীপুর জেলা ও মহানগর এবং নারায়ণগঞ্জে কার্ফুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জেলা প্রশাসকরা পরিস্থিতি বিবেচনা করে কার্ফুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন
চলমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আন্দোলনকালীদের দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই পরিস্থিতেও এদিন রাজধানীর বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, কুড়িল ও মিরপুর এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, ২১ জুলাই সারাদেশে সাধারণ ছুটি ছিল। এ অবস্থায় সারা  দেশের পোশাক কারখানাসহ অন্য বড় শিল্প-কারখানাও বন্ধ রাখা হয়। এদিকে গত কয়েকদিনের সংঘর্ষ, গুলি, হামলা ও সহিংসতার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলা হয়। এসব মামলায় গত পাঁচদিনে ঢাকায় প্রায় ২০০ সহ সারাদেশে অন্তত ৫৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে বেশিরভাগ ছিলেন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মী।
রাজধানীর সেতু ভবন ভাঙচুর, রামপুরার বিটিভির ভবনে আগুন দেওয়া ও বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ভিন্ন ভিন্ন মামলায় বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নিপুণ রায় ও গণঅধিকার পরিষদের নেতা নুরুল হক নুরকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি পক্ষ ৯ দফা দাবি জানিয়ে শাটডাউন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।
এদিন সন্ধ্যার পর থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গণমাধ্যমকে নিহতের তথ্য দেওয়া বন্ধ করা হয়। ২১ জুলাই রাতে দেশের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে সামরিক-বেসামরিক শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে  বৈঠক করে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবনে অনুষ্ঠিত এ  বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার উপস্থিত ছিলেন। এদিন এক বিজ্ঞপ্তিতে পিএসসির পক্ষ থেকে বলা হয়, আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত পিএসসির সকল ধরনের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।

প্যানেল হু

×