ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ৫ মাঘ ১৪৩১

আলোচনা সভায় ড. মোশাররফ

অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করার চেষ্টা চলছে

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৩৫, ৬ ডিসেম্বর ২০২৪

অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করার চেষ্টা চলছে

.

অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করার চেষ্টা চলছে জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, বিদেশী প্রভুদের নিয়ে পতিত স্বৈরাচার দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচার এরশাদ পতন ও গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে ‘৯০’র ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ড. মোশাররফ বলেন, আমরা যারা জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দেশাত্মবোধে বিশ্বাসী, আমরা যারা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করি, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, আমরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে উন্নতির দিকে যেতে চাই তাদের আজকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে ড. মোশাররফ বলেন, দ্রুত সংস্কার করে নির্বাচন হতে হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের ছাত্র-জনতার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মিলিত আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে এবং দেশ থেকে পলায়ন করতে বাধ্য হয়েছে। তারা আজকে একটি দেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছে এবং সেটা বৈধভাবে আশ্রয় গ্রহণ নয়। তারা অবৈধভাবে একটি দেশে আছে। সেখান থেকে তারা ষড়যন্ত্র করছে, আমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির সেই চেষ্টাগুলো যে তারা করছে আপনারা সকলে তা টের পাচ্ছেন। অন্তর্বর্তী  সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সকল ক্ষেত্রে সংস্কার করা তাদের ওয়াদা। আমরা আশা করছি যত দ্রুত সম্ভব এই সকল ক্ষেত্রে সংস্কার করে বিশেষ করে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ এবং অগ্রাধিকার হওয়া উচিত নির্বাচনের ক্ষেত্রে, নির্বাচনের পদ্ধতির ক্ষেত্রে যথাসম্ভব দ্রুত সংস্কার সাধন করা এবং নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ দেওয়া।
ড. মোশাররফ বলেন, সেদিন আমাদেরকে প্রধান উপদেষ্টা সংলাপে ডেকেছিল, সেখানেও আমরা ভালোভাবে দ্রুত নির্বাচনের বিষয়টা উপস্থাপন করেছি। আজকে যে ছোটখাটো সমস্যা আমরা দেখছি নানা রকমের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আগের যে স্বৈরাচারী সরকার তারা এই ষড়যন্ত্র করছে। 
ড. মোশাররফ বলেন, যারা আমাদের স্বাধিকার আন্দোলন থেকে এখন পর্যন্ত অত্যন্ত সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে বাস করেছে। আজকে ভারত থেকে শুরু করে আমাদের এখানের কিছু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক সমস্যা সৃষ্টি করছে। তারা সারা বিশ্বে বাংলাদেশের বদনাম করছে, আমাদের মানহানি করছে। এর একটাই উদ্দেশ্য এখানে একটি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা।  অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যাতে করে ব্যর্থ হয় সেজন্য যত রকমের সমস্যা তারা করছে, তারা তা করবে। এ অবস্থার অবসানে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দিয়ে এসেছি যে, আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে।
ড. মোশাররফ বলেন, দেশের মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে লাভ হবে না। এদেশের মানুষের পরিচয় বাংলাদেশী, অতএব সকলে আমরা বাংলাদেশী। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সেই জাতিসত্তার পরিচয় দিয়ে গেছেন। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি এখানে ১৮ কোটি মানুষ কেউ বলে ২০ কোটি মানুষ যেটাই হোক তাহলে আমাদের দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে কেউ সফল হতে পারবে না। ইনশাআল্লাহ আমরা সফল হব।
ড. মোশাররফ বলেন, স্বৈরাচার এরশাদ পতনের দিনে আমরা দেশের জনগণকে আহ্বান জানাতে চাই, দল-মত-বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের দেশকে রক্ষা করা ও দেশকে আমরা উন্নতির পথে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা এক থাকব। যারা যত চেষ্টা করুক কেউ আমাদের ক্ষতি করতে পারবে না। যারা আমাদের বিরুদ্ধে, ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর ষড়যন্ত্র করছে, অনেক দুঃসাহস দেখাচ্ছে, আমরা বলছি, এটা আপনাদের দুঃসাহস।
ড. মোশাররফ বলেন, দেশের মানুষ প্রমাণ করেছে তারা সরকারের পতন ঘটাতে পারে, সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে। ভোটের মাধ্যমে পারে, আর ভোটের মাধ্যমে না পারলে ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে পারে, ’৯০ সালের ৬ ডিসেম্বরের মাধ্যমেও পেরেছিল। অতএব বাংলাদেশের মানুষ এটা বারবার প্রমাণ করেছে।
ডাকসুর সাবেক ভিপি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সাবেক ছাত্র নেতা নাজিম উদ্দিন আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন নব্বইয়ের ছাত্র নেতা ও বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, জহির উদ্দিন স্বপন, ডাকসুর সাবেক জিএস ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাবেক ছাত্র নেতা কামরুজ্জামান রতন, খন্দকার লুৎফর রহমান, আসাদুর রহমান খান, সুরঞ্জন ঘোষ প্রমুখ। 
ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে- রিজভী ॥ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মুখপাত্র ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শুক্রবার রাজধানীর গুলশানে ভারতীয় পণ্য বর্জনের দাবিতে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। শুক্রবার রাজধানীর গুলশানে ঢাকা মহানগর উত্তর কৃষকদল আয়োজিত ‘দেশীয় পণ্য কিনে হও ধন্য’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ভারতকে উদ্দেশ করে রিজভী বলেন, যারা আধিপত্যবাদী মানসিকতা পোষণ করে তাদের সঙ্গে আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য করতে চাই না। ভারত যদি তাদের আচরণ পরিবর্তন না করে তাহলে তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষ আগামীতে ব্যবসা করবে কি না, সেটা ভাবা হবে।
রিজভী বলেন, বাংলাদেশের জনগণ যে সরকার চায়, ভারত তাদের পছন্দ করে না। তারা মনে করে পেঁয়াজ, রসুন, আদা রপ্তানি বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশের মানুষ না খেয়ে মরবে। তারা মনে করে এসব পণ্য উৎপাদন আমাদের দেশ করতে পারবে না। তিনি বলেন, ভারত হয়তো মনে করেছে পণ্য রপ্তানি বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশের মানুষ আর কোনো দেশ থেকে আমদানি করতে পারবে না। কিন্তু আমরা অন্য দেশ থেকেও পণ্য আমদানি করতে পারব। 
রিজভী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ডলার খরচ করে ভারতে চিকিৎসা নিতে যায়। তাই বাংলাদেশের মানুষ না যাওয়ায় কলকাতার হোটেলগুলোতে হাহাকার শুরু হয়ে গেছে। যারা এত ঘৃণা পোষণ করে তাদের দেশে মানুষ যেতে চায়ও না।
রিজভী বলেন, ভারতের রিপাবলিক বাংলা টিভি বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা ভারতের বলে দাবি করছে। তারা যদি এই দাবি করে বাংলাদেশের মানুষও বিহার-উড়িষ্যা নিজেদের দাবি করবে। সাম্প্রদায়িকতার ধুয়া তুলে বাংলাদেশে আধিপত্য কায়েম করতে চায় ভারত। এজন্য তাদের কোনো প্রতিবেশী তাদের সঙ্গে নেই।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা জাহিদ হোসেন, গুলশান থানা কৃষকদলের আহ্বায়ক মিরাজুর রহমান সোহাগ, যুগ্ম আহ্বায়ক ইমরান খান ও সদস্য সচিব রাহুল বিশ্বাস। 
 

×