ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের ফাটল!

প্রকাশিত: ১০:২৭, ৩১ অক্টোবর ২০২৪

ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের ফাটল!

বিএনপি মহাসচিব ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত। 

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত আড়াই মাসে নতুন সরকার গঠন কিংবা বিভিন্ন ইস্যুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপির ঐকমত্য থাকলেও এই প্রথম রাষ্ট্রপতি অপসারণ ইস্যুতে বিভেদ দেখা যাচ্ছে। বিএনপির সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক করেও এখনও পর্যন্ত কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের প্লাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।

তাহলে কি সরকার পতনের আড়াই মাসের মাথায় আওয়ামী লীগ বিরোধীদের মধ্যে ঐক্যে ফাটল ধরল সেই প্রশ্নও তৈরি হয়েছে।

বিএনপি বলছেন, সাংবিধানিক সংকট তৈরির হতে পারে এমন আশঙ্কার জায়গা থেকেই এই পথে হাঁটতে চাচ্ছে না তারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এটাকে দূরত্ব বা ফাটল বলা যাবে না। তারা রাষ্ট্রপতি পরিবর্তন করতে আমাদের সাথে আলোচনা করেছে। আমরা তাদের বুঝানোর চেষ্টা করেছি যে এভাবে রাষ্ট্রপতি পরিবর্তন হলে সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংকট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা আছে।’

এই প্রশ্নে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মনে করছে রাষ্ট্রপতির অপসারণ ইস্যুতে বিএনপি যে সংকটের কথা ভাবছে সেটি রাজনৈতিক। যেটি আলাপ আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান সম্ভব।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, ‘হয়তো বিএনপি ভাবছে এখন রাষ্ট্রপতি অপসারণ হলে আগামী নির্বাচন আয়োজন বিলম্বিত হতে পারে। আমরা তাদের আশ্বস্ত করবো যেনো প্রয়োজনের তুলনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একদিনও বেশি না থাকে।’

গত কয়েকদিনে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এই ইস্যুতে আলোচনা করছে ছাত্রদের পৃথক দুটি প্লাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাষ্ট্রপতির এই মুহূর্তে কোনো ক্ষমতা নেই। তাই তাকে অপসারণ বা তিনি পদে থাকলে খুব বেশি সংকটও তৈরি হবারও কথা না।

গত সপ্তাহে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ইস্যু নিয়ে একটি পত্রিকার সম্পাদকের কাছে সাক্ষাৎকার দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সেখানে বলা হয়, শেখ হাসিনা পদত্যাগের কোনো দালিলিক প্রমাণ তার কাছে নেই।

মূলত সাক্ষাৎকারে দেয়া রাষ্ট্রপতির ওই বক্তব্যকে ঘিরে দেশজুড়ে নানা বিতর্ক তৈরি হয়। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে গত মঙ্গলবার বঙ্গভবন ঘেরাও করে ছোটখাটো কয়েকটি সংগঠন। একইদিন রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে আল্টিমেটামও দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।

পরদিনই বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে দেখা করেন। সেখান থেকে বেরিয়ে তারা জানান, এই মুহূর্তে কোনো সাংবিধানিক সংকট তৈরি হোক সেটি তারা চান না। এরপর গত শনিবার বিএনপির সাথে রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে বৈঠক করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা। কিন্তু ছাত্র নেতাদের সাথে বৈঠকেও তাদের আগের অবস্থানে অনড় ছিল বিএনপি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা এই ইস্যুতে সংকট বা সাংবিধানিক শূন্যতা চাইছি না দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্রে উত্তরণের স্বার্থে।’

কারণ হিসেবে বিএনপি অবশ্য বলছে এই মুহূর্তে এই সংকট তৈরি হলে তা অন্য কোনো অসাংবিধানিক শক্তিকে সুযোগ করে দিতে পারে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন সাংবিধানিক সংকটের চেয়ে রাষ্ট্রপতির অপসারণ ইস্যুটি আরো বেশি রাজনৈতিক।

বিশ্লেষক রাশেদা রওনক খান বলেন, ‘বিএনপি খুব ভালো করে জানে এই মুহূর্তে নির্বাচন হলে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠভাবে সরকার গঠন করতে পারবে। আর রাষ্ট্রপতি অপসারণ ইস্যু সামনে আসলে তখন নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। সে কারণেই হয়তো বিএনপির আপত্তি।’

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে প্রায় আড়াই মাস হলো। এই সময়ে উপদেষ্টা পরিষদ গঠনসহ নানা ইস্যুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে বিএনপির বিভিন্ন বিষয়ে ঐকমত্য ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রপতির অপসারণ ইস্যুতে বিএনপির সাথে বৈঠক করেও ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা। এরপরই দেশের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে এ নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, একই দাবিতে আন্দোলন করা দুটি বড় শক্তির মধ্যে কি নতুন দূরত্ব তৈরি হলো কি না।

বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন বলেন, ‘তারা হয়তো একভাবে চাইছে, আমরা আরেকভাবে চিন্তা করছি। এ নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। এটাকে দূরত্ব বা ফাটল বলা যাবে না।’ তবে দূরত্ব যে একেবারে তৈরি হয়নি, সেটি কিন্তু জোরালোভাবে বলেনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, ‘যে রকম ফাটল বা দূরত্ব মনে করা হচ্ছে, বিষয়টি ঠিক তেমন না। এটাকে আমরা বিরোধী হিসেবে দেখছি না। নিশ্চয়ই দ্বিতীয় ধাপের আলোচনায় আমরা একটা পথ বের করতে পারবো।’

যেহেতু প্রথম দফার আলোচনায় রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে কোনো একক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি দলগুলো, সে কারণে আবারও দ্বিতীয় দফা আলোচনা শুরু করার কথা জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা। কিন্তু তাতেও কি বিএনপিকে রাজি করানো সম্ভব হবে? আর যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে সমাধান কী?

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এখন বিএনপির ভয়ের জায়গা হচ্ছে রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে না আবার নির্বাচন পিছিয়ে যায়, স্বাভাবিকভাবে এটা হলে নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভবনা তৈরি হবে। যে কারণে শেষ পর্যন্ত বিএনপি রাজি নাও হতে পারে।’

সূত্র: বিবিসি। 

এম হাসান

×

শীর্ষ সংবাদ:

যেই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবে তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে: আমীর খসরু
জামায়াত নেতারা রাজাকার হলে পাকিস্তানে গাড়ি বাড়ি থাকতো : শামীম সাঈদী
এনসিপির সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততা নেই- উমামা ফাতেমা
‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটকদের অধিকাংশই ভারতীয় মুসলমান
ইয়েমেনে হামলা চালিয়েই সাগরে ডুবে গেল মার্কিন সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমান
জামিন পেলেননা তারেক রহমানের খালাতো ভাই তুহিন
লন্ডনে আজ আর্সেনাল পিএসজি মহারণ
১৭ অভিনয়শিল্পীর নামে মামলা, তালিকায় আছেন নুসরাত ফারিয়া-অপু বিশ্বাস-ভাবনাসহ অনেকেই
১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ডের ১১৯তম ড্র অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল
স্বর্ণের দাম, রেকর্ড উচ্চতা থেকে পতনের পথে
কুমিল্লায় পুলিশ-সেনাবাহিনীর চাকরির নামে প্রতারণা: দালালসহ ১৩ জন গ্রেফতার
১২ বছর বয়সী ছেলে শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের অভিযোগে ৩ মাদ্রাসা শিক্ষক গ্রেফতার