
.
ঢাকা শহর কংক্রিটের শহর হয়ে গেছে। এখানে গরিবের আবাসনের ব্যবস্থা নেই। ঢাকা শহরে গাছপালা প্রায় নেই। সব গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। শহরটা নোংরা হয়ে গেছে। তাই শহরটাকে বদলে দেওয়াকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে ঘোষণা করেছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
তিনি বলেন, ‘যেদিকে তাকাবেন, দেখবেন শহরটা নোংরা। শহরটাকে আমরা বদলে দিতে পারব কিনাÑ এটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। আমরা এই শহরটাকে বদলে দিতে চাই। নগর উন্নয়নের ক্ষেত্রে তরুণদের সম্পৃক্ত করতে হবে। প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে কোনো কোটা প্রথা থাকবে না।’ তাই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সব কোটা উঠিয়ে লটারির মাধ্যমে প্লট জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
সোমবার রাজউক অডিটরিয়ামে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় আয়োজিত বিশ্ব বসতি দিবসের আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হামিদুর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ইউএন রেসিডেন্ট কো-অর্ডিনেটর ইন বাংলাদেশ মিজ গোয়েন লুইস ও রাজউক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সিদ্দিকুর রহমান সরকার বক্তব্য রাখেন। জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত অনুসারে প্রতি বছর অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার দিবসটি পালন করা হয়। ১৯৮৫ সালে এ দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত নেয় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। এরপর ১৯৮৬ সাল থেকে দিবসটি পালন করছে সারাবিশ^। এ বছর বিশ^ বসতি দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল, ‘তরুণদের সম্পৃক্ত করি, উন্নত নগর গড়ি’।
অনুষ্ঠানে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, ‘রাজউকের সব কোটা উঠিয়ে লটারির মাধ্যমে প্লট জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক। আবার ঢাকার জমি কেনার ক্ষেত্রেও লটারি করা হোক। যারা বাংলাদেশ বদলে দেওয়ার কাজ করছেন, আমরা তাদের পাশে থাকব। যেটুকু সময় পাব, সংস্কার শুরু করে যাব। তরুণদের এগিয়ে নিয়ে আসার পথ করে দিতে হবে। আমরা তো দরজাটা বন্ধ করে রাখি, যেন তারা আসতে না পারে। এই দরজাগুলো খুলে দিতে হবে বাংলাদেশের মানুষের জন্য, তরুণদের জন্য।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা দরকার। ঢাকার জন্য একটি নগর দর্শন তৈরি করা জরুরি। শুধু মেগা প্রজেক্ট করলেই হবে না, সবুজায়ন বাড়াতে হবে। উন্মুক্ত জায়গা, বসার স্থান এবং তরুণদের খেলাধুলার সুযোগ থাকতে হবে।
ইউএন রেসিডেন্ট কো-অর্ডিনেটর ইন বাংলাদেশ মিজ গোয়েন লুইস বলেন, টেকসই ও নিরাপদ নগরের জন্য তরুণদের সম্পৃক্ততা জরুরি। এবারের বিশ্ব বসতি দিবসের প্রতিপাদ্য বাংলাদেশের জন্য খুবই মানানসই।
সভাপতির বক্তব্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হামিদুর রহমান খান বলেন, ঢাকাকে বাসযোগ্য করার জন্য মন্ত্রণালয় ও রাজউক কাজ করছে। পুরান ঢাকা নিয়ে অনেক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। হাজারীবাগের রিলোকেশন ও রিজেনারশনের জন্য প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। পুরান ঢাকায় ক্লাস্টারভিত্তিক ডেভেলপমেন্টের জন্য কাজ শুরু করেছি। এগুলো বাস্তবায়িত হলে ঢাকার পরিবেশের অনেক পরিবর্তন হবে।
এদিকে বিশ^ বসতি দিবস উপলক্ষে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)’র পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের নগর এলাকার পরিকল্পনা ও উন্নয়নকে টেকসই এবং সব শ্রেণিপেশার মানুষের জন্য নগরকে বাসযোগ্য করতে আমাদের তরুণদের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন ভাবনায় আরও ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিশ্ব বসতি দিবস এর এই বছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘তরুণদের সম্পৃক্ত করি, উন্নত নগর গড়ি’। জুলাই গণঅভ্যুত্থান এর পর বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার চেতনার বাস্তবায়নে এই প্রতিপাদ্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। তরুণদের নির্মোহ ভাবনা ও সমাজের বৃহত্তর কল্যাণের আকাক্সক্ষাকে ধারণ করতে পারলে নতুন বাংলাদেশের সকল নগর এলাকায় নাগরিক সুবিধাদি সুষমভাবে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কৌশল নির্ধারণের বিভিন্ন পর্যায়ে তরুণদের যথাযথ সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র ও সরকারকে প্রয়োজনীয় নীতি ও কাঠামো ঠিক করবার দাবি জানায় সংগঠনের পরিচালক ও নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান।