ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১

সীমিত পরিসরে চলে বাস-লঞ্চ, বন্ধ ছিল ট্রেন

সড়কে যানবাহনের চাপ, যানজটে ভোগান্তি

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

প্রকাশিত: ২৩:৫৭, ২৪ জুলাই ২০২৪

সড়কে যানবাহনের চাপ, যানজটে ভোগান্তি

বুধবার রাজধানীর বনানীতে তীব্র যানজট

স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে নগরজীবন। সারাদেশে কার্ফু শিথিল হওয়ায় বুধবার সীমিত পরিসরে বাস ও লঞ্চ চলাচল করলেও বন্ধ ছিল ট্রেন। কার্ফু শিথিলের স্বল্প সময়ের মধ্যে ট্রেন চালু করা সম্ভব হয়নি। তবে আজ বৃহস্পতিবার থেকে কার্ফু শিথিল সময়ে কাছাকাছি দূরত্বে লোকাল ট্রেন চলাচল শুরু হবে বলে রেল কর্মকর্তারা জানান।
এদিকে দীর্ঘ এক সপ্তাহ পর ঢাকাসহ সারাদেশে গণপরিবহন চালু হওয়ায় সড়ক-মহাসড়কে বেড়েছে যানবাহনের চাপ।

তাই অতি প্রয়োজনীয় কাজ সারতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যাত্রীর চাপও ছিল বেশি। পাশাপাশি বুধবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি অফিস চালু হওয়ায় অফিসগামী মানুষের সংখ্যাও ছিল বেশি। তবে রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট ও যানবাহনের অতিরিক্ত চাপে বিভিন্ন সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদের। যানজটের কারণে কার্ফু শিথিলের স্বল্প সময়ের মধ্যে অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ কাজ সারতে পারেনি বলে জানান তারা। তাই মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে দ্রুত সবকিছু স্বাভাবিক করার দাবি জানায় সাধারণ মানুষ।

বুধবার সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই বিভিন্ন সড়কে মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি। সকালের দিকে রিক্সা, ভ্যান, অটোরিক্সা, মোটরসাইকেল ও সিএনজি চলাচল করলে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে মানুষের উপস্থিতি। সকাল ১০টায় কার্ফু শিথিল হলেও এর আগে থেকেই মানুষকে কর্মস্থলে যেতে দেখা গেছে। সকাল ১০টার পর থেকে সড়কে বাস ও মিনিবাসসহ বিভিন্ন গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়। তবে যাত্রীদের চাহিদার বিপরীতে পরিবহন ছিল কম। পরিবহন সংকটের কারণে অনেক স্থানে যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে যাত্রীদের।
এদিকে কার্ফু শিথিলের পর বুধবার থেকে শুরু হয় দূরপাল্লার বাস চলাচল। তবে বিভিন্ন রুটের যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেন যাত্রীরা। 
কোটা সংস্কারের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা। শুক্রবারও তাদের একই কর্মসূচি ছিল। এই কর্মসূচি কেন্দ্র করে সারাদেশে জ্বালাও পোড়াও, সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ, সরকারি স্থাপনায় আগুন দেওয়াসহ সারাদেশে সহিংসতা ও নাশকতা চালায় আন্দোলনকারীরা।

এই নাশকতা ও সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে গত শুক্রবার রাত ১২টা থেকে সারাদেশে কার্ফু জারি করে সেনাবাহিনী মাঠে নামায় সরকার। এরপরেই সারাদেশে বাস, ট্রেন ও লঞ্চসহ সকল গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তিনদিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। সবমিলে  দীর্ঘ এক সপ্তাহ পর স্বাভাবিক হলো নগরজীবন।
যানজট ও বাস সংকটে ভোগান্তিতে যাত্রীরা ॥ কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কয়েকদিনের সংঘাতময় পরিস্থিতির পর বুধবার থেকে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে দেশের পরিস্থিতি। তিনদিনের সাধারণ ছুটির পর বুধবার থেকে শুরু হয়েছে অফিস আদালতের কার্যক্রমও। তাই সকাল থেকে ঢাকার বিভিন্ন সড়কে ছিল গণপরিবহনের চাপ। বেলা ১১টার পর রাজধানীর সড়কে তীব্র যানজট দেখা দেয়।

এতে ভোগান্তিতে পড়েন অফিসগামী মানুষ। বুধবার রাজধানীর কাওরানবাজার, বাড্ডা, সায়েদাবাদ, রামপুরা, নর্দা, মিরপুর, পল্টন এলাকায় এমন চিত্র দেখা গেছে। যানজটের কারণে এসব এলাকার সড়ক অনেকটা স্থবির হয়েছিল। যানজটে আটকেপড়া গাড়ির মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাই ছিল বেশি। প্রতিটি সড়কে অন্যান্য কর্মদিবসের তুলনায় গণপরিবহন কম দেখা গেছে।
মহাখালী থেকে গুলশান-১ নম্বর হয়ে বাড্ডার সড়কে ছিল তীব্র যানজট। রামপুরা থেকে নতুনবাজারের সড়কের পরিস্থিতিও একই। একদিকে গণপরিবহন সংকট, অন্যদিকে যানজটের কারণে অফিসগামী অনেক মানুষ বিপাকে পড়েন। যানবাহন সংকট ও যানজটে পড়ে অনেকে সময়মতো কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারেননি।
নতুনবাজার এলাকায় অফিসে যাওয়ার জন্য পল্টন মোড় থেকে বাসে ওঠেন মাসুদ। মালিবাগ আবুল হোটেলের কাছে আসার পর ভয়াবহ যানজটের কবলে পড়েন তিনি। কিছুক্ষণের মধ্যে গাড়ি ছাড়তে পারে এমন আশায় বসে থাকলেও দীর্ঘ যানজটে আটকে থাকে গাড়ি। উপায় না পেয়ে হেঁটেই রওনা হন তিনি। বাড্ডা এলাকায় মাসুদ বলেন, ‘ভেবেছিলাম আজ যানজট হবে না। কিন্তু আবুল হোটেলের সামনে আসার পর থেকে দেখি গাড়িই চলে না। উপায় না পেয়ে হেটেই অফিসে যাচ্ছি।’
সায়েদাবাদে হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তায় বহু রিক্সা, অটোরিক্সা, বাসকে আটকে থাকতে দেখা গেছে। যাত্রাবাড়ী থেকে সায়েদাবাদ পর্যন্ত পুরোটাই ছিল যানজটে স্থবির অবস্থা। বুধবার চার ঘণ্টার জন্য খুলে দেওয়া হয় সরকারি-বেসরকারি অফিস। এতে সকাল থেকে একসঙ্গে অনেক মানুষ বের হওয়ায় রাজধানীর কিছু কিছু সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। প্রধান প্রধান সড়ক ছিল প্রাইভেটকার ও রিক্সার দখলে। মিরপুর রোডের ধানম-ি ২৭ নম্বর, সায়েন্সল্যাব, শাহবাগ, মৎস্য ভবন, গুলিস্তান, জিরো পয়েন্টে অন্যান্য কর্মদিবসের মতোই যান চলাচল ছিল স্বাভাবিক। তবে এসব এলাকার কিছু কিছু জায়গায় যানজট দেখা গেছে।
বেলা ১১টার দিকে শাহবাগ ট্রাফিক সিগন্যালে কথা হয় অটোরিক্সা চালক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মোহাম্মদপুর থেকে গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি ১০টার দিকে। এখন শাহবাগ পার হতে পারিনি। এক পাশ ফ্রি আছে। শুধু এক পাশে গাড়ি ধীরগতিতে চলছে।’
জসিম নামে এক যাত্রী বলেন, ‘সায়েন্সল্যাব থেকে শাহবাগ যাওয়ার জন্য বের হই। কিন্তু সড়কে যানজট দেখে ফিরে যাচ্ছি। এই যানজটে শাহবাগ গেলে সময়মতো ফেরা কঠিন হয়ে যাবে, তাই ফিরে যাচ্ছি।’
এ বিষয়ে তেজগাঁও জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ¯েœœহাশিস কুমার দাস জানান, অফিস-আদালত খুলে দেওয়ায় বুধবার সকাল থেকেই সড়কে প্রচুর যানবাহনের চাপ রয়েছে। এছাড়া সেনাবাহিনীর সদস্যরা জায়গায় জায়গায় গাড়ি চেক করার কারণেও যানবাহনের ধীরগতি দেখা গেছে। সব মিলিয়ে সড়কে যানবাহনের চাপ আছে।
চালু হচ্ছে দূরপাল্লার বাস ॥ সীমিত যাত্রী নিয়ে রাজধানীর সায়েদাবাদ, গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে গেছে দূরপাল্লার বাস। ঢাকা ছেড়ে যাওয়া যাত্রীদের বেশিরভাগই বিভিন্ন কাজে এসে কার্ফুতে আটকা পড়েছিলেন। দূরপাল্লার বাসে যাত্রী ছিল তুলনামূলক কম। তবে বিভিন্ন রুটে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেন যাত্রীরা।
যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেউ চিকিৎসা নিতে ঢাকায় এসেছিলেন, কেউ আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে কেউবা ব্যক্তিগত কাজে। তারা সবাই কার্ফুতে ঢাকায় আটকা পড়েছিলেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন তারা।
সায়েদাবাদে পারভীন আক্তার নামে এক যাত্রী জানান, ঢাকায় চিকিৎসক দেখাতে এসেছিলাম। গত কয়েকদিন ঢাকার পরিস্থিতি ভালো ছিল না। কার্ফুতে আটকা পড়ছিলাম। এখন বাস চালু হয়েছে, তাই বাড়ি ফিরতে পারছি।
মহাখালী বাস টার্মিনাল এলাকায় নয়ন নামের আরেক যাত্রী বলেন, ‘আমার বাড়ি সিরাজগঞ্জে। ঢাকায় বোনের বাসায় বেড়াতে এসেছিলাম। বেড়াতে আসার পরই ঝামেলা শুরু। আজ থেকে বাস চলাচল শুরু হয়েছে। তাই বাড়ি চলে যাচ্ছি।’
এ বিষয়ে এনা পরিবহনের এক স্টাফ জানান, কয়েকদিন বন্ধ থাকার পর গাড়ি চলাচল শুরু হয়েছে। ভোর পাঁচটা থেকে বাস চলছে। যাত্রীরাও আসছেন, তবে কম। যারা ঢাকায় আটকা পড়েছিলেন তারা বাড়ি যাচ্ছেন।
গাড়ি চলাচল শুরু হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেন চালক ও সহকারীরা। তারা বলছেন, গত কয়েকদিনে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় আয়ের সুযোগ পাচ্ছেন তারা। মামুন নামের এক বাসচালক বলেন, কয়েকদিন ইনকাম পুরোপুরি বন্ধ ছিল, কষ্টেই ছিলাম। ঘর থেকে বের হতে পারিনি। দুপুরে গাড়ি সিরিয়ালে দিলাম। যাত্রী পেলে যাব।
বন্ধ ছিল ট্রেন চলাচল ॥ সীমিত পরিসরে বাস ও লঞ্চ চলাচল করলেও ট্রেন সার্ভিস চালু হয়নি। কার্ফু শিথিলের স্বল্প সময়ের মধ্যে ট্রেন সার্ভিস চালু করা সম্ভব হয়নি। তবে আজ বৃহস্পতিবার থেকে কার্ফু শিথিল সময়ের মধ্যে কাছাকাছি দূরত্বে লোকাল ও কমিউটার ট্রেন চলাচল শুরু হবে বলে রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান।
এ বিষয়ে কমলাপুর স্টেশনের মাস্টার আনোয়ার হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, ‘কার্ফু শিথিলের স্বল্প সময়ের মধ্যে ট্রেন সার্ভিস চালু করা সম্ভব হয়নি। তবে আজ থেকে কার্ফু শিথিল সময়ের মধ্যে কাছাকাছি দূরত্বে লোকাল ও কমিউটার ট্রেন চলাচল করবে। দেশে পুরোপুরি স্বাভাবিক হলেই ট্রেন সার্ভিস পুরোদমে চালু হবে।

×