ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

আপিল বিভাগের স্থিতাবস্থার মধ্যেও কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের অবরোধ

যানজটে দুর্ভোগ চরমে

প্রকাশিত: ১৮:২৮, ১০ জুলাই ২০২৪

যানজটে দুর্ভোগ চরমে

গুলিস্তানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ছবি: জনকণ্ঠ

সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটার বিষয়ে পক্ষগুলোকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। কিছু পর্যবেক্ষণ, নির্দেশনাসহ প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ বুধবার (১০ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, রাস্তায় আন্দোলন করে রায় পরিবর্তন করা যায় না।

এদিকে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে করে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ছাত্রদের উদ্দেশ্যে আমি বলব, আপনাদের আর আন্দোলন করার যৌক্তিক কারণ নেই। যেহেতু আদালত একটি অন্তবর্তী আদেশ দিয়েছেন। আপনারা সবাই রাস্তা ছেড়ে দেন। জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করবেন না, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করলে মানুষের সমস্যা হয়। মানুষের সমস্যা হলে রাষ্ট্রকে দেখতে হয়। এ কথাগুলো বিবেচনা করে অবশ্যই আপনারা আপনাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করেন।

অন্যদিকে আপিল বিভাগের আদেশের প্রতিক্রিয়ায় আন্দোলনকারীরা বলেছেন, আদালতের সঙ্গে তাদের আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা সরকারের কাছে কোটা-সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান চাইছেন। যৌক্তিক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়বেন না।

সংসদে আইন পাস করে কোটাপদ্ধতি সংস্কারের এক দফা দাবিতে সারা দেশে সড়ক অবরোধের ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির কারণে আজ রাজধানীর সড়কগুলোতে তীব্র যানজট দেখা যাচ্ছে। স্বল্প দূরত্বের পথ যেতে ঘণ্টার ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে আন্দোলনকারীরা নিজেদের দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে ঢাকার সায়েন্স ল্যাব মোড়, অ্যালিফেন্ট রোড, শাহবাগ, হাই কোর্টের কাছে মৎস্য ভবন মোড়, হানিফ ফ্লাইওভারের নিমতলী, বাংলা মোটর, ফার্মগেট, আগারগাঁও এবং মহাখালীর আমতলীতসহ বিভিন্ন স্থান অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।

মিরপুর রোড, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, এয়ারপোর্ট রোড, রামপুরা- বাড্ডা রোড শহর রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো বন্ধ থাকায় যান চলাচল একরকম বন্ধ হয়ে যায়। ফার্মগেটে এক্সপ্রেসওয়ে থেকে নামার মুখ, জিরো পয়েন্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংযোগগুলো অবরুদ্ধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করায় যান চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথ অবরোধ করেছেন। দুপুরে ঢাকার কারওয়ানবাজারেও রেলপথ আটকে দেওয়া হয়।

এই অবরোধের ঘোষণায় অনেক যানবাহন বের না হওয়ায় বুধবার সকাল থেকেই রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় কম। ব্যক্তিগত গাড়ির পাশাপাশি এয়ারপোর্ট, মহাখালী, রামপুরা, মতিঝিল, মোহাম্মদপুরসহ অন্যান্য রুটের বাসও কম দেখা গেছে। সকালে বাস না পেয়ে অফিসগামী যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

বেলা সাড়ে ১০টার পর আন্দোলনকারীরা রাস্তায় নামতে শুরু করে। এরপর শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, গুলিস্তানসহ আশপাশের এলাকার সড়কে যানজট শুরু হয়।

বাসের অপেক্ষায় থাকা হাফসা আক্তার জানান, বাড্ডার অফিসে যেতে গাড়ির জন্য হয়রানি হতে হচ্ছে তাকে। অনেকক্ষণ পর বাস এলেও এত যাত্রী, উঠতে পারি নাই। সিএনজিও অনেক টাকা চাচ্ছে। কীভাবে অফিসে যাব, বুঝতে পারছি না।

নাহিদ আলম নামে একজন ভাড়ার প্রাইভেট কার চালক বলেছেন, সকাল ৭টায় বের হয়ে তিনি দুটো মাত্র ট্রিপ দিতে পেরেছেন। সকালে মোহাম্মদপুর থেকে মতিঝিল এরপর মতিঝিল থেকে বনানী যান। বনানী থেকে ফেরার পথেই সাড়ে ১১টার দিকে যানজটে পড়েন। 

রবি ও সোমবার চার দফা দাবিতে সংক্ষপ্তি সময়ের জন্য ‘বাংলা ব্লকেড’ পালন করে আন্দোলনকারীরা। ওই দুই দিনও ঢাকার বিভিন্ন সড়কে যানজটে ভুগতে হয় মানুষকে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে এক সংবাদ সম্মেলনে চার দফা দাবিতে এক দফা দাবিতে নামিয়ে আনেন তারা। তাদের দাবি হল- ‘সকল গ্রেডে সকল প্রকার অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংশোধন করতে হবে।’

এই দাবিতে বুধবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সারাদেশে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচির ঘোষণা আসে ওই সংবাদ সম্মেলনে।

দক্ষিণাঞ্চলের সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফেণি, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও মুন্সিগঞ্জ, বরিশাল রুটের প্রবেশ দুয়ার রাজধানীর যাত্রাবাড়ি-গুলিস্তানে গণপরিবহনের চলাচল স্বাভাবিকের চেয় কম দেখা গেছে।

নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, সাইনবোর্ড, চিটাগাঙ রোড, রায়েরবাগ, শনির আখাড়া ও কেরানীগঞ্জ, পোস্তগোলা, শ্রীনগর, মুন্সিগঞ্জ থেকে চাকরি এবং ব্যাবসার কাজে প্রতিদিনি ঢাকায় আসা যাত্রী চাপ কম দেখা গেছে। সড়কে গাড়িও ছিল কম।

২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। পরে ২০২১ সালে কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হাইকোর্টে এর বিরুদ্ধে রিট করেন। গত ৫ জুন হাইকোর্টের এক রায়ের মাধ্যমে আবারো ফিরে আসে কোটা ব্যবস্থা।

এরপর গত ১ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলনে নামে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। 

 

এসআর

×