![এমপি আনারকে হত্যার সেই স্থান ঘুরে দেখালেন আসামিরা এমপি আনারকে হত্যার সেই স্থান ঘুরে দেখালেন আসামিরা](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/29-2405271206.jpg)
হত্যাকাণ্ডের সেই ফ্লাটে আসামিদের সঙ্গে ডিবি হারুন।
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যাকাণ্ডের সেই স্থান ঘুরে দেখালেন দুই দেশে গ্রেপ্তার চারজন আসামি। সঞ্জীবা গার্ডেনের ওই ফ্ল্যাটে এসময় ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদসহ প্রতিনিধি দলের সামনে ঢাকা থেকে ভিডিও কলে যুক্ত করা হয় আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুলসহ গ্রেপ্তার তিনজনকে। ফ্ল্যাটের কোথায়, কীভাবে হত্যা করা হয়, মরদেহ কীভাবে খণ্ড খণ্ড করা হয়, কীভাবে বাইরে নেওয়া হয় তারা সবই বর্ণনা করেন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার তিন আসামি আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, তানভীর ও সিলিস্তি রহমান। তদন্তের স্বার্থে এই তিন আসামির সঙ্গে কলকাতায় গ্রেপ্তার কসাই জিহাদের ভিডিও কলে এ কথোপকথন হয়। মূলত শিমুল ভূঁইয়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যেসব তথ্য দিয়েছেন সেগুলো যাচাই-বাছাইয়ের জন্য কসাই জিহাদকে ভিডিও কলে নেওয়া হয়। মরদেহের খণ্ডাংশ ফেলার স্থান কসাই জিহাদ যেখানে দেখিয়েছেন আদৌ ঘটনাস্থল এক কি না সে বিষয়েও কথা হয়।
ভিডিও কলে তাদের কথোপকথনের সময় উপস্থিত ছিলেন ভারতে অবস্থানরত ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তিন সদস্যের দল ও কলকাতা পুলিশের কর্মকতারা। সোমবার (২৭ মে) ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানায়।
তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, কলকাতা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার জিহাদ হত্যাকাণ্ডের শুরু থেকে দেহাংশ ফেলা পর্যন্ত সবকিছু জানে। এজন্য তার সঙ্গে ভিডিও কলে কথোপকথন হয়েছে ঢাকায় গ্রেফতার তিন আসামির। উভয়েই নতুন চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য দিয়েছেন। সেগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। ভিডিও কলে ফ্ল্যাটের হত্যাকাণ্ডের স্থান, মাংস থেকে হাড় আলাদা করার জায়গা ও বেরিয়ে যাওয়ার স্থানসহ প্রত্যেকটি স্থানের বর্ণনা দেন আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া। প্রায় একই কথা জানান কসাই জিহাদও।
ডিবির কর্মকর্তারা জানান, ভারতীয় পুলিশের উপস্থিতিতে কসাই জিহাদকে নিয়ে কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনের ওই ফ্ল্যাটে যান ডিবির প্রতিনিধি দল। আনোয়ারুল আজীম আনারের দেহ কীভাবে খণ্ড খণ্ড করা হয় তার রোমহর্ষক বর্ণনা দেন কসাই জিহাদ। এসময় ডিবির প্রতিনিধি দল কসাই জিহাদকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন। জিহাদকে ওই ফ্ল্যাটে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখালে তিনি সবকিছু স্বীকার করেন।
অপহরণ মামলার তদন্ত ও মরদেহ উদ্ধারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত দল রোববার (২৬ মে) সকালে কলকাতায় যায়। প্রতিনিধি দলে আরও রয়েছেন ওয়ারী বিভাগের ডিসি মো. আব্দুল আহাদ ও এডিসি শাহীদুর রহমান।
সোমবার (২৭ মে) দুপুর ২টা পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের ১৪ দিন পার হলেও এমপি আনারের টুকরো টুকরো করা দেহের কোনো অংশই উদ্ধার হয়নি। খুনে ব্যবহার করা চাপাতিসহ অন্য ধারালো অস্ত্রও উদ্ধার করা যায়নি। আলামত উদ্ধারে কলকাতা পুলিশ ময়লার ভাগাড়, খাল ও ডোবায় গত কয়েকদিন ধরেই তল্লাশি চালাচ্ছে।
জানতে চাইলে ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘সঞ্জীবা গার্ডেন থেকে ঢাকায় রিমান্ডে থাকা কিলার শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ আমানকে ভিডিও কলে যুক্ত করা হয়। কীভাবে খুন করা হয়েছে, মরদেহ কোথায় টুকরো টুকরো করা হয়েছে তা ভিডিও কলে বিস্তারিত দেখান শিমুল ভূঁইয়া। খুনের ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে আমরা পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তদন্তে কী পেয়েছি তারা কী পেয়েছে, সেই তথ্য আদান-প্রদান করা হয়। এছাড়া কসাই জিহাদ হাওলাদারের সঙ্গে কথা বলেছি।’
গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান এমপি আনার। ওঠেন পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ আনোয়ারুল। নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এরপরও খোঁজ মেলে না তিনবারের এই সংসদ সদস্যের। বুধবার (২২ মে) হঠাৎ খবর আসে কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউটাউন এলাকায় বহুতল সঞ্জীবা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে আনোয়ারুল আজীম খুন হয়েছেন। ঘরের ভেতর পাওয়া যায় রক্তের ছাপ। তবে ঘরে মেলেনি মরদেহ।
এম হাসান