ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

আল বিদা মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক

প্রকাশিত: ২৩:৩৬, ২ এপ্রিল ২০২৪

আল বিদা মাহে রমজান

পবিত্র মাহে রমজানের আজ ২৩তম দিবস

পবিত্র মাহে রমজানের আজ ২৩তম দিবস। মানুষ শহর ছেড়ে গাঁও-গ্রামের দিকে ছুটছে। আল্লাহ সকলের মনের আশা পূরণ করুন। সফর আসান ও বরকতময় করুন। এ মৌসুমে সফরকালে যাত্রীরা অস্থির থাকে, নানা ঝামেলায় পড়ে, হারায় অনেক মূল্যবান জিনিস। আজ ইসলামে হারানো দ্রব্যের বিধান সম্পর্কে আলোচনা করব।
পথে-ঘাটে, হাটে-বাজারে অনেকেই অনেক কিছু পেয়ে থাকেন। কুড়িয়ে পাওয়া বস্তুটি অনেকে আগের জায়গাতেই রেখে দেন। কেউবা ফকির মিসকিনদের দিয়ে দেন। কেউবা নিজেই ভোগ করেন। তবে ইসলামে এ বিষয়ে কী দিক-নির্দেশনা রয়েছে জেনে নেওয়া উচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমাদের কেউ যখন কোনো কুড়িয়ে পাওয়া বস্তু তুলে নেয়, সে যেন তার ওপর দুজন ন্যায়পরায়ণ সাক্ষী রাখে, তার পর সে যেন তা গোপন না করে, পরিবর্তন-পরিবর্ধন না করে, তার পর যদি তার মালিক আসে, তবে সে সেটার অধিকারী। আর যদি মালিক না আসে, তবে সেটা আল্লাহর সম্পদ, তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন।’ (ইবনে হিব্বান : ৪৮৯৪)। অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘ যে কেউ কোনো পথহারা প্রাণীকে আশ্রয় দেবে, সে নিজেই ভ্রষ্ট লোক বলে বিবেচিত হবে, যতক্ষণ না সে তা প্রচারের ব্যবস্থা করে।’ (মুসলিম : ১৭২৫)।
ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায়- ‘কুড়ানো বস্তু বলতে বোঝায়, এমন সম্পত্তি যা তার মালিক থেকে পড়ে গেছে, আর অন্য কেউ তা কুড়িয়ে নিয়েছে। অথবা এমন বস্তু যা কোনো ব্যক্তি পড়ে থাকতে দেখে কুড়িয়ে নিয়েছে এবং আমানত হিসেবে গ্রহণ করেছে।- (ফাতহুল কাদির)।

মৌলিকভাবে কুড়িয়ে পাওয়া বস্তু চার ধরনের হয়ে থাকে- ১. মালিকানাবিহীন অবস্থায় প্রাপ্ত কোনো বস্তু, স্বর্ণ, রৌপ্য ও এমন সামগ্রী। ২ . কুড়িয়ে পাওয়া মানবসন্তান, যাকে সাধারণত কেউ খাওয়া-পরা দেওয়ার ভয়ে কিংবা সন্দেহযুক্ত সন্তান হওয়ায় অপমানের ভয়ে কোথাও ফেলে গেছে, সেটা যে পাবে সে তাকে লালন-পালন করবে ৩. চতুষ্পদ জন্তু যেমন- উট, গরু, ছাগল ইত্যাদি। ৪. খাদ্যজনিত বস্তু, যা রাস্তায় পাওয়া যাবে।
যে ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির মাল কুড়িয়ে পায় এবং মালিককে ফেরত দানের উদ্দেশ্যে নিজের তত্ত্বাবধানে রাখে তা হলে উদ্ধারকারীর ওপর নিচের দায়িত্বগুলো আরোপিত হবে- ১. উদ্ধারকারীর দায়িত্ব হচ্ছে প্রকৃত মালিকের কাছে কুড়ানো বস্তু পৌঁছে দেওয়ার জন্য যথোপযুক্ত সময় পর্যন্ত ঘোষণা দিতে থাকা। ২. প্রাপ্তদ্রব্য সম্পর্কে যথোপযুক্ত যত্ন গ্রহণ করা উদ্ধারকারীর কর্তব্য। অবশ্য যুক্তিসঙ্গত যত্ন নেওয়ার পরও দ্রব্যের কোনো ক্ষতি হলে এজন্য তাকে দায়ী করা যাবে না। ৩.  প্রাপ্ত বস্তু আমানত হিসেবে থাকবে যখন উদ্ধারকারী এ মর্মে সাক্ষী রাখবে যে, সে হেফাজত করা এবং মালিককে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তা উঠিয়ে নিচ্ছে। ৪. যদি বস্তুটির মূল্য কম হয়, তা হলে কিছুদিন ঘোষণা দেবে।

পক্ষান্তরে বেশি হলে এক বছর ঘোষণা দেবে। আর মালিককে খুঁজে পাওয়া না গেলে তা সদকা করে দেবে। ৫.  উদ্ধারকারীর কখনোই উচিত নয় প্রাপ্ত দ্রব্য নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করা। তবে যদি নিরুপায় হয় তা হলে সে শরিয়ত নির্ধারিত পন্থায় ব্যবহার করতে পারবে। ৬. নিজের অনুরূপ দ্রব্যের সঙ্গে কখনোই কুড়িয়ে পাওয়া বস্তুর মিশ্রণ করা উদ্ধারকারীর উচিত নয়। ৭. উদ্ধারকারী যদি আদালতের নির্দেশ ছাড়া তার রক্ষণাবেক্ষণে অর্থ ব্যয় করে তা হলে সে স্বেচ্ছাদানকারী হবে।

৮. প্রকৃত মালিককে পাওয়ার পর যুক্তিসঙ্গত পারিশ্রমিক প্রাপ্তি সাপেক্ষে ওই দ্রব্য প্রত্যর্পণ করাও উদ্ধারকারীর দায়িত্ব। ৯. কুড়িয়ে পাওয়া জিনিসের যদি কোনো বৃদ্ধি বা লাভ হয় তবে তাও প্রকৃত মালিককে প্রদান করতে হবে। ১০. কুড়ানো বস্তু বিক্রি করা হলে নিজ পাওনা বাদে অবশিষ্ট অর্থ প্রকৃত মালিককে দিতে হবে। (হেদায়া)।
যদি বস্তুটির মূল্য ১০ দিরহামের কম হয়, তা হলে কয়েকদিন ঘোষণা দেবে (এখানে কয়েক দিন অর্থ আদালত যে ক’দিন সমীচীন মনে করেন) অথবা ব্যক্তি তার বিবেক অনুসারে তা যথেষ্ট মনে করে। (দ্র. মারগিনানী, হিদায়া : ২/৪১৭।) পক্ষান্তরে ১০ দিরহাম বা তার বেশি হলে এক বছর ঘোষণা দেবে। তবে কুড়ানো বস্তু সংক্রান্ত ঘোষণাটি এমন স্থানে হতে হবে, যেখানে ঘোষণা দিলে তা মালিকের কাছে পৌঁছবে বলে সমূহ ধারণা হয়।

বিশেষ করে যেখানে বস্তুটি কুড়িয়ে পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে ঘোষণা দেওয়া উত্তম। কারণ সাধারণত সম্পদ হারানোর পর সম্পদের মালিক সেখানেই খুঁজে থাকে, যেখানে সে তা হারায়। তারপর মানুষের সম্মিলনস্থলে। যেমন- বাজার, মসজিদের দরজা; যখন মুসল্লিরা মসজিদ থেকে বের হন। তবে মসজিদের ভেতরে ঘোষণা করা  বৈধ নয়। কেননা, মসজিদ ইবাদতের জন্য  তৈরি হয়েছে; কুড়ানো বিষয়ের ঘোষণার জন্য নয়। আর যদি মরুভূমি বা বিস্তীর্ণ মাঠে কোনো বস্তু পাওয়া যায় তবে তা নিকটস্থ লোকালয়ে প্রচার ও ঘোষণা করতে হবে। (ইবনে কুদামা : আল মুগনি)।
যদি কুড়ানো বস্তু এমন প্রকৃতির হয় যে, মালিক তা খোঁজ করবে না, যেমন দানা বা ডালিমের খোসা, তা হলে তা ফেলে রেখে যাওয়া মুবাহ ( যে কাজ ফরজ, হারাম, মানদুব এবং মাকরূহ নয়, তাকে মুবাহ বা  বৈধ বলে)। এমনকি ঘোষণা করা ছাড়াই তা দ্বারা উপকৃত হওয়া বৈধ হবে।
পথেঘাটে গাড়ি-ঘোড়ায় বা কোনো দুর্ঘটনাস্থলে কুড়িয়ে পাওয়া দ্রব্যাদি বিষয়ে সবিস্তার আলোচনা করা হলো। একজন রোজাদার ঈমানদারের কাছে আল্লাহ ও তার বান্দারা এমনটি কল্যাণ চিন্তায় আশা করে।

×