ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সভায় প্রধানমন্ত্রী

নতুন নতুন অপরাধ দমনে প্রস্তুত থাকতে হবে

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:৫১, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

নতুন নতুন অপরাধ দমনে প্রস্তুত থাকতে হবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে নতুন নতুন অপরাধ দেখা যাচ্ছে উল্লেখ করে যথাযথভাবে অপরাধ দমনে পুলিশকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রযুক্তির উৎকর্ষতা যত বৃদ্ধি পাচ্ছে, অপরাধও কিন্তু ভিন্ন ভিন্নভাবে হচ্ছে। নতুন নতুন ধরনের অপরাধ দেখা যাচ্ছে। সেগুলো মোকাবিলা করার জন্য আমাদের পুলিশ বাহিনী যেন প্রস্তুত থাকে। এ বিষয়ে আমরা যথেষ্ট যতœবান এবং নজর দিচ্ছি। কারণ ক্রাইমের সঙ্গে সঙ্গে সেটাকে মোকাবিলা করার সিস্টেমটা যদি না চলে, তাহলে যথাযথভাবে সেটা মোকাবিলা করা যায় না।
বৃহস্পতিবার তার কার্যালয়ের (পিএমও) শাপলা হলে ‘পুলিশ সপ্তাহ-২০২৪’ উপলক্ষে বাংলাদেশ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভায়  প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যেকোনো কর্মস্থলে নারী, পুরুষ, শিশু যারাই থাকুক, তাদের আপনজন বিবেচনা করে তাদের প্রতি দায়িত্ব পালন করবেন, এটাই সকলে চায়। 
‘স্মার্ট পুলিশ, স্মার্ট দেশ, শান্তি প্রগতির বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে গত মঙ্গলবার রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে ছয় দিনব্যাপী ‘পুলিশ সপ্তাহ-২০২৪’ শুরু হয়েছে। যার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
‘আমাদের পুলিশ বাহিনী এখন মানুষের বন্ধু হিসেবে কাজ করছে’ উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, আজকাল মানুষ আর আগের মতো ভয় পায় না, এখন তারা আস্থা ফিরে পেয়েছে। পুলিশকে নিজের বন্ধু এবং আস্থার জায়গা হিসেবে সাধারণ মানুষ বিবেচনা করে। মানুষের এই বিশ্বাস এবং আস্থাটা অর্জন করতে হবে।
তিনি বলেন, মানুষের জন্য কাজ করে আপনারা মানুষের হৃদয়ে একটা স্থান করে নিয়েছেন। মানুষের সেই আস্থা ও বিশ^াসটাই সব থেকে বড় কথা। যেকোনো কর্মস্থলে সেখানে নারী, পুরুষ, শিশু যেই থাকুক, তাদেরকে আপনজন হিসেবে বিবেচনা করেই তাদের প্রতি দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের সেবা করবেন, এটাই সকলে চায়। তিনি নিজ নিজ কর্মস্থলে অধস্তনদের তার এই নির্দেশনা জানানো এবং দেশের মানুষের পাশে থেকে তাদের সেবা করে যাওয়ার জন্য পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকায় আজকে বাংলাদেশকে কেউ আর তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের চোখে দেখতে পারে না। বাংলাদেশ এখন সারাবিশে^ নিজের একটা স্থান করে নিতে পেরেছে। এখন বাংলাদেশকে উন্নয়নের মডেল হিসেবে দেখা হয়।

কিন্তু সেই ভাবমূর্তিটা ধরে রেখে আমাদের সামনের দিকে এগোতে হবে। সে জন্য আমাদের যেকোনো কাজ প্রকল্প বাস্তবায়ন থেকে শুরু করে, জানমালের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে যেকোনো ক্রাইমÑ সেটা মোকাবিলা এবং সাজার ব্যবস্থা করতে যথাযথ দায়িত্ব পালনÑ এটা সকলের কর্তব্য। সেভাবেই আপনারা কাজ করে যাবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে  গেছেন। আমরা বাংলাদেশকে আরও উন্নত, সমৃদ্ধ করতে চাই, যেন বিশ^ দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে পারে। 
আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, পুলিশকে মারা, পুলিশ হত্যাসহ সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের যে মামলাগুলো রয়েছে, এর দীর্ঘসূত্রতা থাকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই মামলাগুলো কিন্তু যথাযথভাবে চলে না। আমি মনে করি, যারা এ ধরনের ক্রাইম করে, তাদের মামলাগুলো যদি যথাযথভাবে চলে এবং সাজাটা যতি দ্রুত হয়ে যায়, তাহলে অপরাধীরা আর সাহস পাবে না। আর সেই লক্ষ্যে আগামীতে যেন আর কেউ এইভাবে আক্রমণ করতে না পারে, পুলিশের ওপর আক্রমণ করতে না পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, রাজনীতির নামে হোক আর সন্ত্রাসের নামে হোক, আইনকে নিজের হাতে তুলে নিতে না পারে এবং আইনশৃঙ্খলা ও মানুষের জানমাল এবং জাতীয় সম্পদের ক্ষতি করতে না পারে। এ বিষয়ে পুলিশকে অবিচল থাকতে হবে এবং যখনই যেটা দরকার, যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে, সেটাই আমি আপনাদের কাছে চাই। কেউ যেন আইনকে নিজের হাতে তুলে নিতে এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে না পারে।

আওয়ামী লীগ সরকারে এসে জনগণের ক্ষমতা আবার জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজেই জনগণের শান্তি-শৃঙ্খলা, জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করাটাই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাই এবং প্রতি মেয়াদে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা দেই এবং তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করি।

২০০৯ সাল থেকে টানা ক্ষমতায় থাকার ফলে দেশে গণতান্ত্রিক ধারা বিরাজমান থাকার পাশাপাশি স্থিতিশীল অবস্থা রয়েছে। কাজেই আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। আমরা এখন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।
ফিলিস্তিনে ইসরাইলের আগ্রাসনের প্রসঙ্গ টেনে টানা চতুর্থবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফিলিস্তিনের ওপর যে হামলা এবং গণহত্যা চলছে, বাংলাদেশ কিন্তু এর প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং আমি প্রতিটি জায়গায় এর প্রতিবাদ করেছি। ফিলিস্তিনে নিরীহ নারী ও শিশুদের ওপর অকথ্য অত্যাচার-নির্যাতন ও গণহত্যা চলছে, শুধু তাই নয় তাদের খাদ্য, চিকিৎসা-হাসপাতাল সবকিছুতে এমনকি যেখানে রিলিফ বিতরণ হয়, সেখানেও আক্রমণ করা হচ্ছে। এর থেকে জঘন্য এবং মানবতাবিরোধী কাজ আর হতে পারে না। আর এর প্রভাবটা বিশ^ অর্থনীতিতে পড়ছে এবং আমাদের ওপরও কিন্তু সেই ধাক্কাটা আসছে। যদিও আমাদের প্রচেষ্টা রয়েছে এটা মোকাবিলা করার।

×