ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলনে রমজান নিয়ে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করলেন প্রধানমন্ত্রী

পণ্যের অভাব হবে না

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:৩৪, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

পণ্যের অভাব হবে না

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন

আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কোনো সংকট হবে না বলে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রমজানে কোনো কিছুর (অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের) অভাব হবে না। ইতোমধ্যে সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। ছোলা, খেজুর, চিনিসহ পর্যাপ্ত পরিমাণ পণ্য আমদানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে এটি নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না, কারণ আমরা অনেক আগেই এর জন্য ব্যবস্থা করেছি। তবে মজুত করে রেখে পচিয়ে যারা বস্তা বস্তা পেঁয়াজ পানিতে ফেলে দেয়, তাদেরগণধোলাই দেওয়া উচিতবলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশে প্রকৃত রাজনৈতিক দলের অভাব রয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ১৯৪৯ সালে গঠিত হয়েছিল গণমানুষের কথা বলে। সেই সময় থেকে আন্দোলন-সংগ্রাম করেই কিন্তু আওয়ামী লীগ এগিয়ে গেছে। আমি আমার প্রতিপক্ষ কয়েকটি দল দেখি একটা যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াতে ইসলামী, যাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। অন্যদিকে মিলিটারি ডিকটেটরদের পকেটের দুটি পার্টি একটি বিএনপি, আরেকটি জাতীয় পার্টি। ক্ষমতার উচ্চ আসনে বসে যে দলগুলো তৈরি হয় সে দলগুলোর মাটি-মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক থাকে না। তাদের শেকড়টা কোথায়? তাদের চিন্তা হলো, এমন একটা পরিবেশ হোক, যা তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে।

শুক্রবার তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে সম্প্রতি জার্মানির মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে তাঁর অংশগ্রহণ নিয়ে আয়োজিত জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের একাধিক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশ সফরকালে নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন তোলেনি। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে তাদের (বিশ্ব নেতা) কোনো উদ্বেগ নেই, প্রশ্নও নেই। নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। বেশিরভাগই আলোচনা হয়েছে দ্বিপক্ষীয় এবং আমরা যে একশটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি, তাতে তাদের বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছি।

তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেনি কারণ তারা নিজেরাও জানত যে নির্বাচনে আমি জিতে আসব। আর এটা যারা চায়নি তারাই কথা ওঠায় বা প্রশ্ন তোলে। এক দেশে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণায় ১২/১৩ দিন সময় লাগলেও সে ইলেকশন ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার (অবাধ নিরপেক্ষ) আর বাংলাদেশে নির্বাচনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রেজাল্ট এসে গেল সেটা না কি ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার নয়! কাজেই এই রোগের কোনো ওষুধ আমাদের কাছে নেই।

পরাশক্তিগুলোর দ্বিমুখী নীতির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিশ্ব মোড়লরা দ্বিমুখী নীতিতে বিশ্বাস করে। ফিলিস্তিনের সব জমি দখল করে রেখেছে, সেটি ইনভেশন নয়, ইউক্রেনেরটি ইনভেশন। দ্বিমুখী নীতি কেন হবে, সেটি আমার প্রশ্ন ছিল। অনেকেই সাহস করে বলবে না, আমি বলেছি। নানাজনের নানা দুর্বলতা আছে, আমার নেই। আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই।থাকে লক্ষ্মী যায় বালাই’, বলে এক কথা আছে না, আমার কাছে ক্ষমতা হলো সেরকম। থাকলে ভালো, আমি দেশের জন্য কাজ করতে পারব। না থাকলে আমার কোনো আফসোস নেই। তবে যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্ব কষ্ট পাচ্ছে। এর ক্ষতিকর প্রভাব শুধু একটি জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকছে না। সারা বিশ্বে এর প্রভাব পড়ছে। মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। তা বন্ধ করতে দাবি জানিয়েছি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত বর্তমান সরকারের আমলে এটাই প্রধানমন্ত্রীর প্রথম সংবাদ সম্মেলন। কারণে আগামী পাঁচ বছরের সরকারের মূল পরিকল্পনা কী, দেশের অগ্রগতি গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে করণীয় ছাড়াও দেশের সবশেষ রাজনৈতিক, সামাজিক অর্থনৈতিক বিষয়ে সাংবাদিকদের অসংখ্য প্রশ্নের স্বভাবসুলভ হাসিমুখে জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, দলের সভাপতিম-লীর সদস্যগণ সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী . হাছান মাহমুদ এবং পরিবেশ, বন জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী মঞ্চে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম।

নির্বাচন না হয় সেজন্য অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে নিত্যপণ্য মজুত করে কৃত্রিমভাবে দাম বাড়ানোর সঙ্গে সরকার উৎখাতের আন্দোলনে জড়িতদের যোগসূত্র দেখছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নির্বাচনের আগে গত বছরের ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনাটিনির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের অংশ ছিলবলেই তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, এগুলো যে হঠাৎ করে করা তা তো না, এটা পরিকল্পিতভাবে।

প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, দেশে মার্চের দিকে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির একটি আন্তর্জাতিক চক্রান্ত চলছে বলে তিনি নির্বাচনের আগে মন্তব্য করেছিলেন, সেই শঙ্কা এখনো আছে কি না। আর বাজার কারসাজি কীভাবে মোকাবিলা করা যায়। উত্তর দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ষড়যন্ত্র তো ছিল, ষড়যন্ত্র তো আছে। আপনারা জানেন, আমি দেশে আসার পর থেকে বারবার আমাকে বাধা দেওয়া হয়, ক্ষমতায় যেন না যেতে পারি।৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার ঘটনাই ধরেন না কেন, রাসেলকেও তো ছাড়েনি, কেন যেন ওই রক্তের কেউ বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসতে না পারে।

তিনি বলেন, আমি আর আমার ছোট বোন বিদেশে ছিলাম, বেঁচে গেছি, ফিরে এসে দায়িত্ব নিয়েছি। আমার চেষ্টাই হচ্ছে, যে স্বপ্ন নিয়ে জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করেছে, সেটাকে পূরণ করা। ষড়যন্ত্র প্রত্যেকবারই হচ্ছে, বারবার আজকে মানুষের ভোটের অধিকার, আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে সেটা প্রতিষ্ঠিত করেছি, গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে এনেছি, তার সুফল দেশবাসী পাচ্ছে। তিনি বলেন, নির্বাচনটা যাতে না হয়, তার জন্য একটা বিরাট চক্রান্ত ছিল, আপনারা জানেন। ২৮ অক্টোবরের ঘটনাটা একবার চিন্তা করুন। ২০১৩ সালের যে অগ্নিসন্ত্রাস, ২০১৩, ১৪, ১৫, এরপর আবার গত বছর ২৮ অক্টোবর।

সেই ঘটনাপ্রবাহের প্রসঙ্গ ধরে শেখ হাসিনা বলেন, যারা এই ধরনের নির্বাচন বানচালের পক্ষে, তারা যখন দেখল যে ইলেকশন কিছুতেই আটকাতে পারবে না, কারণ মানুষের একটা স্বতঃস্ফূর্ততা আছে, তখন চক্রান্ত হলো যে জিনিসের দাম বাড়বে, সরকার জনগণের থেকে বিচ্ছিন্ন হবে, তখন আন্দোলন করে সরকারকে উৎখাত করব। এটা তাদের পরিকল্পনার অংশ। সেই ষড়যন্ত্র কাদের সেটা আপনারা ভালো বোঝেন, আমি আর কারও নাম বলতে চাই না, বলার দরকারও নেই আমার। কিন্তু এই চক্রান্তটা আছে। তবে এই কথাটা আমি বলতে পারি, এই যে কালকে বৃষ্টি হলো না? কথায় তো আছে, ‘যদি বর্ষে মাঘের শেষ, ধন্য রাজার পুণ্য দেশ

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাঘের শেষে কিন্তু বৃষ্টি হলো, আবার এই ফাল্গুনের শুরুতেও কিছু বৃষ্টি। আমের মুকুলগুলো আবার তরতাজা হয়ে উঠছে। খেতে কেবল ধানের চারা রোপণ চলছে, সেখানেও সেচের আর প্রয়োজন হবে না এই বৃষ্টি যদি ভালোভাবে হয়। মাটির আর্দ্রতা বাড়বে, ফসল ভালো হবে। ফুলের হয়তো একটু ক্ষতি হবে, কিন্তু খাদ্যপণ্য উৎপাদনের কোনো অসুবিধা হবে না।

রমজানে পণ্যের কোনো অভাব হবে না পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখার বিষয়ে সাংবাদিকদের একাধিক প্রশ্নের জবাবে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো পণ্যের অভাব হবে না। রমজান তো কৃচ্ছ্রতা সাধনের জন্য। রমজানে মানুষ কম খায়। কিন্তু আমাদের সাইকোলজি হচ্ছে, রমজান আসলে যেন খাওয়া-দাওয়ার চাহিদাটা বেড়ে যায়। রমজানে যে জিনিসগুলো বেশি দরকার যেমন ছোলা, খেজুর, চিনি- এগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে আনার ব্যবস্থা আছে।

সামনে রোজা আসছে, দুই কোটি মানুষের নগরীতে যানজট একটা বড় সমস্যা। এর প্রধান সমস্যা অনিয়ন্ত্রিত গাড়ি চলাচল। ট্রাফিক আইন মানা হলে তা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কোনো ব্যবস্থা নেবেন কি না তা জানতে চান এক সাংবাদিক। জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, মেট্রোরেল এক্সপ্রেসওয়ে হওয়াতে যানজট অনেকটা সহনশীল পর্যায়ে এসেছে। তবে কিছু কিছু এলাকায় আছে। এক্সপ্রেসওয়েটা এখন মাঝামাঝি জায়গায় ফার্মগেট পর্যন্ত করা হয়েছে। পুরোটা হয়ে গেলে সুযোগটা সবাই পাবে। তা ছাড়া আরও পাঁচটা (রুট) মেট্রোরেল সারা ঢাকা জুড়ে হবে। সেইভাবে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।

তিনি জানান, আমি গতকাল (বৃহস্পতিবার) আইজিপির সঙ্গে কথা বলেছি, আমাদের ট্রাফিক লাইটগুলোকে সচল করে দিয়ে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসার জন্য। যেহেতু আগের মতো অতিরিক্ত চাপ নেই। এখন একটা সুবিধা আছে। ট্রাফিক লাইটের পদ্ধতিতে চলে গেলে, খুব বেশি সময় লাগবে না। সেটা কম করে বারবার যদি চলে, চলমান থাকলে যতক্ষণই লাগুক তখন, বসে আছি এই অনুভূতি হবে না। সেইভাবে তার সঙ্গে কথা হয়েছে। যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলে দিয়েছি।

একটা শ্রেণি আছে তাদের কিছুই ভালো লাগে না অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু কথা বলা আমাদের বাঙালির চরিত্র, তাদের কিছুই ভালো লাগে না। একটা দলই আছে যাদের কিছু ভালো লাগে না। তারপর যখন হয়, তখন সেটা তারা উপভোগ করে।

তিনি বলেন, আমি নিজেই একটি টেলিভিশনের টকশোতে শুনেছি। হঠাৎ মাঝে মাঝে শোনা হয়। আমি জানি না, আমার কী রকম ভাগ্য আছে। মাঝে-মাঝে কিছু ক্রিটিক্যাল জায়গায় হয়তো বসে আছি, (রিমোট কন্ট্রোল) টিপে একটার পর একটা দেখতে থাকি। খেলা যখন দেখি, তখন দেখলাম তুমুল আলোচনা। এই ৩০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে মেট্রোরেল করার কী দরকার ছিল, তিন হাজার কোটি টাকায় ট্রাফিক জ্যাম বন্ধ করা যেত টাকায় বাস কিনে দিলে ট্রাফিক জ্যাম বন্ধ হয়ে যেত, কাজেই ৩০ হাজার কোটি টাকা কেন লাগবে? এটা নিয়ে তুমুল আলোচনা। যারা আলোচনা করেছিল, তারা এখন কী ভাবছে? তার মধ্যে একজন ছিল দূষণের ব্যাপারে। মেট্রোরেল তো দূষণ করে না।  এটা নিয়ে তার কিছুই বলার ছিল না, বলেনি। একজনকে পেয়েছিলাম, জিজ্ঞেস করলাম কী ব্যাপার? তখন সে বলেছিল আপা আমি কিছু বলি নাই।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বোঝে সবাই। বোঝে না তা নয়, বুঝেও না বোঝার ভান করে। কিছু লোক তো আছেই। যুগ যুগ ধরে আছে, যুগ যুগ ধরে থাকবেই। ওগুলো বেশি পাত্তা না দিলেও চলে। আমি পাত্তা দেই না।

তিনি বলেন, মানুষের যে খাদ্যগ্রহণ বেড়েছে, ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে এটা স্বীকার করলে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। কিন্তু সেটা করবে না। যেখানে প্রতিবছর দুর্ভিক্ষ লেগে থাকত। আমি ১৯৮১ সালে দেশে আসার পরে লঙ্গরখানা খুলেছি। কিন্তু এখন তো সেই অবস্থা নেই। এখন মানুষের পেটে মোটা ভাত, মোটা কাপড়ের ব্যবস্থা আছে। আগে মানুষের পায়ে রাবারের স্যান্ডেলও ছিল না। এখন তো সেই অবস্থা নেই। এগুলো এমনি হয়নি পরিকল্পনা করে কাজ করেছি বলেই উন্নতি হয়েছে।

বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? রাশিয়া-ইউক্রেন এবং ফিলিস্তিন-ইসরাইল যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে বিশ্ব নেতাদের অবস্থান সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধ বন্ধ করার কথা যাদেরই বলি- সবাই সমর্থন করে। কিন্তু উদ্যোগটা নেবে কে? এটিও একটি প্রশ্ন। যারা বিশ্ব মোড়ল, তারাই যদি যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে যায়, তাহলে আর বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? তবে আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট। আমরা যুদ্ধ চাই না। যুদ্ধের ভুক্তভোগী আমরা। মানুষ যে গণহত্যার শিকার হয়েছে সেটা আমরা জানি।

পরাশক্তিগুলোর সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বিশ্ব মোড়লরা দ্বিমুখী নীতিতে বিশ্বাস করে। ফিলিস্তিনের সব জমি দখল করে রেখেছে, সেটি ইনভেশন নয়, ইউক্রেনেরটি ইনভেশন। দ্বিমুখী নীতি কেন হবে, সেটি আমার প্রশ্ন ছিল। আমি বলেছি। যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্ব কষ্ট পাচ্ছে। এর ক্ষতিকর প্রভাব শুধু একটি জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকছে না। সারা বিশ্বে এর প্রভাব পড়ছে। মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। তা বন্ধ করতে দাবি জানিয়েছি। 

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু মিয়ানমারের সঙ্গে যুদ্ধ করতে যাইনি, ঝগড়া করতে যাইনি। আমরা ধৈর্য ধরেছি, আলোচনা করেছি। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি, তারা ফেরত নিক। এখন যে অবস্থা চলছে, আমি সবাইকে বলেছি ধৈর্য ধরতে। 

তিনি বলেন, কোনোকিছুতে আমাদের কোনোরকম উত্তেজিত হলে চলবে না। শান্ত মাথায় পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। তা করে আমরা সুফল পাচ্ছি। দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আমরাই কিন্তু সবচেয়ে সুস্থ অবস্থায় আছি। অন্য দেশগুলো কষ্ট পাচ্ছে। 

রোহিঙ্গা সমস্যা দিনে-দিনে প্রকট হচ্ছে। এটি অনেক দিন হয়ে গেছে। সেই সমস্যার সমাধান কোথায়? এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা নিয়ে আমরা আলোচনা করছি বারবার। আসলে মিয়ানমারের অবস্থা এত খারাপ! আর বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে যখন কথা বলি, সবাই রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতি দেখান। কিন্তু আসলে তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে খুব একটা কার্যকর কিছু হচ্ছে না। এই হলো বাস্তবতা।

নতুন কোনো আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরির চিন্তা কী করছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সাধারণ একজন মানুষ। ছোট একটি ভূখণ্ড বিশাল জনগোষ্ঠী। আমি তা নিয়েই ব্যস্ত। তবে কোথাও কোনো অন্যায় দেখলে আমি সোচ্চার হই, প্রতিবাদ করি। যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই- এই কথাটি বলি। কিন্তু কোনো প্ল্যাটফর্ম করার মতো দক্ষতা আমার নেই। যোগ্যতাও আমার নেই। সেই চিন্তাও আমার নেই।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি মনে করি অনেক প্ল্যাটফর্ম হয়ে গেছে। কিন্তু আসলে তো কাজের সময় কাজে লাগে না। সেটি হলো বাস্তব। না হলে আজ গাজায় যুদ্ধ বন্ধে নিরাপত্তা কাউন্সিলে প্রস্তাব আসে। সেখানে ভেটো দেওয়া হয়। বাংলাদেশের যুদ্ধ চলার সময়ও অবস্থা আমরা দেখেছি। আমার যেটুকু ক্ষমতা, আমার ক্ষমতা সম্পর্কে আমি যথেষ্ট সচেতন। এর চেয়ে বড় কিছু চিন্তা করার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। সেই দক্ষতাও আমার নেই।

পাঁচ বছরে দেশকে কোথায় নিয়ে যেতে চান প্রধানমন্ত্রী আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশকে কোন জায়গায় নিয়ে যেতে চান এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। এই ধারাবাহিকতা যেন বজায় থাকে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা এগিযে যাব। ইতোমধ্যে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১ থেকে ২০৪১ ঘোষণা দিয়েছি। সেখানে প্রত্যেকটা মানুষের জীবনমান আরও উন্নত হবে, বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হবে-এটাই আমাদের লক্ষ্য।

তিনি বলেন, আজ এটা প্রমাণিত সত্য যে, একমাত্র গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা যদি বজায় থাকে একটা দেশ উন্নত হয়। গত ১৫ বছরে আমরা দেশটাকে যে উন্নত করতে পেরেছি, আর্থসামাজিক উন্নতি হয়েছে, মানুষের মন-মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে, শিক্ষা-দীক্ষা, স্বাস্থ্য সব দিক দিয়ে বাংলাদেশ অনেক ওপরে উঠে আসতে সক্ষম হয়েছে। আমরা স্বল্প উন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। আগামী পাঁচ বছরে আমাদের কাজ হবে এই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের যেহেতু যাত্রা শুরু ২০২৬ সালে, যে সময়টুকু পাব উন্নয়নশীল দেশ এটাকে যথাযথভাবে যেন আমরা এগিয়ে যেতে পারি, সেই কাজটা করাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। সেদিকে আমরা মনোযোগ দিয়েছি। কমিটি করেছি, সবই করছি। আমরা সেভাবে কাজ করে যাচ্ছি।

প্রকৃত রাজনৈতিক দলের অভাব অপর এক প্রশ্নের জবাবে দেশে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রকৃত রাজনৈতিক দলের অভাব রয়েছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ১৯৪৯ সালে গঠিত হয়েছিল গণমানুষের কথা বলে। সেই সময় থেকে যত আন্দোলন-সংগ্রাম করেই কিন্তু আওয়ামী লীগ এগিয়ে গেছে। আমি আমার প্রতিপক্ষ কয়েকটি দল দেখি একটা যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াতে ইসলামী, যাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান তাদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিল সংবিধান সংশোধন করে। ভোটের অধিকার, এমনকি পাকিস্তানি পাসপোর্টধারীদেরও ভোটের অধিকার দিয়েছে এবং দল করার অধিকার দিয়েছে। জাতির পিতার হত্যাকারী তাদেরও পার্লামেন্টে এনে বসিয়েছিল খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, আজ আমি যদি দেখি মিলিটারি ডিকটেটরদের পকেটের দুটি পার্টি একটি বিএনপি, আরেকটি জাতীয় পার্টি। ক্ষমতার উচ্চ আসনে বসে যে দলগুলো তৈরি হয় সে দলগুলোর মাটি-মানুষের সঙ্গে সম্পর্কটা থাকে না। তাদের শেকড়টা কোথায়? তাদের চিন্তা, এমন একটা পরিবেশ হোক যা তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। সেটা করতে গিয়ে প্রথম ধরা খেল ২০০৮ এর নির্বাচনে। প্রচার-প্রচারণা সব দিক থেকে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সমান সমান এই রকম একটা ভাব ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের যে মাটি মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক, আস্থা-বিশ্বাস আওয়ামী লীগের ওপর আছে এটা কিন্তু অপপ্রচারের কারণে অনেকটা ঢেকে গিয়েছিল। ওই নির্বাচনে দেখা গেল, নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন করতে পারেনি। নির্বাচনের ফলাফলটা কী? আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৩৩টি আসন পেল ৩০০ সিটের মধ্যে। বিএনপি ২০ দলীয় ঐক্যজোট নিয়ে পেল ৩০টা আসন। এরপর থেকে এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করার একটা চেষ্টা।

বারবার সেই ষড়যন্ত্র করা হয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমরা যেভাবে পারি সেখান থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে এই গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত রাখতে পেরেছি। আমার সামনে এটাই থাকবে এই যে গণতান্ত্রিক ধারাকে যে আমরা স্থায়ী করেছি যার সুফল দেশবাসী পাচ্ছে, তাদের জীবনমান উন্নত হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা যেন বজায় থাকে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা এগিয়ে যাব।

তিনি বলেন, আমাদের প্রতিপক্ষের কী দেখি? জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ খুন, রেলে আগুন, বাসে আগুন! এটাই করে যাচ্ছে। এটা তো মানুষকে দেখতে হবে কারা মানুষের পাশে আছে। রাজনীতি জনগণের কল্যাণে কাজ করে। আর রাজনীতি যদি ক্ষমতা দখল আর ক্ষমতা উপভোগ করে তাহলে তো মানুষ কিছু পাবে না।

পণ্য লুকিয়ে রেখে যারা পচায় তাদের গণধোলাই দেওয়া উচিত দ্রব্যমূল্য নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পাল্টা প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা ডিম লুকিয়ে রেখে দাম বাড়ায়, যারা সরকার উৎখাতের আন্দোলন করে, তাদের কারসাজি আছে সেটিও মনে হয়। এর আগেও এরকম ঘটেছে। পেঁয়াজের খুব অভাব। দেখা গেল, বস্তায় বস্তায় পচা পেঁয়াজ পানিতে ফেলে দিচ্ছে। এই লোকগুলোকে কী করা উচিত? সেটি আপনারাই বলুন। গণধোলাই দেওয়া উচিত। সরকার কিছু করতে গেলে বলবে, সরকার করছে। তার থেকে প্রতিকারে পাবলিক কিছু করলে সব থেকে ভালো। কেউ কিছু বলতে পারবে না। জিনিস লুকিয়ে রেখে পচিয়ে ফেলে দেবে, আর জিনিসের দাম বাড়বে! এটা কেমন কথা?

তিনি বলেন, পেঁয়াজ আমাদের যথেষ্ট উৎপাদন হচ্ছে। সেটি আমরাই শুরু করেছি। পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন আমরা শুরু করেছি। কোন কোন এলাকায় পেঁয়াজ হয়, সেগুলো আমরা খুঁজে বের করেছি। কাজ করে যাচ্ছি। আগামীতে বাইরে থেকে আনতে হবে না। তবে আমদানির কথাটা বলতে হয় এই কারণে যে এত পেঁয়াজ আসছে, নিউজ হলে যারা লুকানো পেঁয়াজ তাড়াতাড়ি বের করে। বাজারে তার একটা প্রভাব আছে। সেজন্য দামের সামঞ্জস্য হয়। এটি বাস্তবতা, খুব খোলামেলা কথা বলছি। লুকানোর কিছু নেই। সেই মহামারির সময় থেকে দেশকে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসার কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের খাদ্য নিজেদের উৎপাদন করতে হবে। এক ইঞ্চি জমি যেন অনাবাদি না থাকে। এবং সেটা শুধু বলা না, কার্যকরও করেছি।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গত ১৫ বছরে দেশের যে উন্নয়ন হয়েছে, সে কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এক সময় তো বাংলাদেশে অভাব হলে বলত পেটে ভাত নাই। এখন কি সেই কথাটা বলে? বলে না? কী বলে? ডিমের দাম, পেঁয়াজের দাম, মুরগির দাম, গরুর মাংসের দাম, অথবা পাঙ্গাশ মাছের পেটি খেতে পারছে না, এই তো? এটা কি একটা পরিবর্তন না? ১৫ বছরে তো এই পরিবর্তনটা এসেছে, সেটা তো স্বীকার করবেন। তিনি বলেন, ১৫ বছর আগে কী ছিল? ভাতের জন্য হাহাকার ছিল। একটু নুন ভাত, ভাতের ফ্যান চাইত, এখন তো ভিক্ষা চায় না।

টানা টাঙ্গাইল শাড়ি পরার কারণ জানালেন গত ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী তাঁতের শাড়িকে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে ঘোষণা করে শিল্প মন্ত্রণালয়। এর আগে ভারত টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বীকৃতি নিয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে তোলপাড় শুরু হয়। প্রকৃতপক্ষে টাঙ্গাইল শাড়ি কার, ভারত না কি বাংলাদেশের সেই প্রশ্ন সামনে এসেছে।

টাঙ্গাইলের শাড়ির জিআই সনদ নেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যে আমরা আবেদন করেছি। কয়েকদিন আমি সমানতালে টাঙ্গাইলের শাড়ি পরলাম এইজন্য যে যাতে দেখাতে পারি এটা আমাদের। কাজেই এটা অন্য কেউ নিতে পারবে না। সময় নিজের পরনে থাকা সফিপুরের শাড়ির আঁচল দেখিয়ে এর প্রশংসা করেন তিনি।

মিউনিখ সফর প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে টানা চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবার পর এটাই ছিল তাঁর প্রথম বিদেশ সফর। তিনি গত ১৬-১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ জার্মানির মিউনিখ শহরে অনুষ্ঠিত ৬০তম মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে মূলত রাষ্ট্র-সরকার প্রধান, আন্তর্জাতিক সংস্থা এনজিও নেতৃবৃন্দ, মিডিয়া, সুশীল সমাজ, সরকারি এবং বেসরকারি খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন। এটি সমকালীন ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার স্বার্থে উচ্চপর্যায়ের নিয়মিত আলোচনার একটি শীর্ষস্থানীয় ফোরাম হিসেবে বিবেচিত। বছরের ফোরামে ৩৫ জনেরও বেশি রাষ্ট্র সরকারপ্রধান অংশগ্রহণ করেছেন।

সফরকে ফলপ্রসূ উল্লেখ করে তাঁর লিখিত বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিউনিখে আমার এই ফলপ্রসূ সফরের ফলে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের শান্তি, সার্বভৌমত্ব সর্বাঙ্গীন নিরাপত্তার প্রতি অঙ্গীকার বলিষ্ঠরূপে প্রতিফলিত হয়েছে। দেশের আকার নয় বরং নীতির শক্তিতেই যে মানবতার রাজনৈতিক আর্থসামাজিক মুক্তি, এবারের সম্মেলনে আমি এই বার্তাই বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছি। পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকসমূহের মাধ্যমে বন্ধুপ্রতিম দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের সঙ্গে সম্পর্কের ধারাবাহিকতা আরও দৃঢ় হয়েছে এবং সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র উন্মোচিত হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

×