![লিড নেওয়ার আশায় বাংলাদেশ লিড নেওয়ার আশায় বাংলাদেশ](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2023May/sp-1-2311291802.jpg)
নিউজিল্যান্ডের ডেভন কনওয়েকে আউট করে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের উল্লাস
মহাভাগ্যবান কেন উইলিয়ামসন অর্ধশতকের পর একাধিক সহজ সুযোগ দিয়েও বেঁচে গেছেন। তাই শেষ পর্যন্ত টেস্ট ক্যারিয়ারে রেকর্ড গড়া ২৯তম সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। কিন্তু যেই তাইজুল ইসলাম তাকে ৬৩ রানে সহজ একটি ক্যাচ ফেলে সুযোগ করে দিয়েছেন, তিনিই দ্বিতীয় দিনের শেষভাগে বোল্ড করে দেন তাকে। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিনে সব আলোচনার কেন্দ্রে এ দুজনই। তবে শেষ পর্যন্ত তাইজুল তার বাঁহাতি ঘূর্ণিতে ৪ উইকেট নিয়ে ছাপিয়ে গেছেন কিংবদন্তি স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের কীর্তি ছোঁয়া উইলিয়ামসনের সেঞ্চুরিকে।
তাই দ্বিতীয় দিনশেষে ৪৪ রানে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। ২৬৬ রান করতে ৮ উইকেট হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড। স্বীকৃত কোনো ব্যাটার অবশিষ্ট নেই, তাই লিড নেওয়ার আশায় প্রথম ইনিংসে ৩১০ রানে গুটিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ। সেই আশাবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশের স্পিন কোচ রঙ্গনা হেরাথ নিজেই। উইলিয়ামসনও অবশ্য আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাকি দুই উইকেটে যথাসম্ভব রান করে ভালো অবস্থানে যাওয়ার। তবে বাংলাদেশী স্পিনারদের কাছে পাওয়া শিক্ষা কাজে লাগানোর প্রত্যয়ও জানিয়েছেন তিনি।
৯ উইকেটে ৩১০ রান নিয়ে শুরু করে বাংলাদেশ দ্বিতীয় দিন। শেষ উইকেটে আরও কিছু রান যোগ করার প্রত্যাশা থাকলেও তাতে গুড়েবালি দিয়েছেন টিম সাউদি। কিউই অধিনায়ক আগের দিন ছিলেন উইকেটশূন্য। এদিন প্রথম বলেই শরিফুল ইসলামকে (১৩) এলবিডব্লিউ করে দিয়েছেন তিনি। ফলে ৩১০ রানেই থেমেছে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে বেশ সুস্থিরভাবে শুরু করেছেন টম লাথাম ও ডেভন কনওয়ে। তারা ১২ ওভার পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন থেকে ৩৬ রান যোগ করেন। বাঁহাতি পেসার শরিফুল ও অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ কোনো সমস্যা তৈরি করতে পারেননি। ১৩তম ওভারে আক্রমণে আসেন তাইজুল।
পঞ্চম বলেই তিনি ফিরিয়ে দেন ৪৪ বলে ৩ চারে ২১ রান করা লাথামকে। এরপর কনওয়েকে (৪০ বলে ১২) সাজঘরে ফেরান মিরাজও। ৪৪ রানে ২ উইকেট হারানোর পর উইলিয়ামসন ও হেনরি নিকোলস জুটি বাঁধেন। তাদের দৃঢ়তায় ২ উইকেটে ৭৮ রানে লাঞ্চ বিরতিতে যায় নিউজিল্যান্ড। বিরতির পরেও তারা দেখেশুনে এগিয়ে যেতে থাকেন। কিন্তু দুজনের জুটি ৫৪ রানের হতেই ব্রেক থ্রু এনে দেন শরিফুল। নিকোলস ৪২ বলে ১ চার, ১ ছক্কায় ১৯ রানে কট বিহাইন্ড হন। কিন্তু উইলিয়ামসন ও ড্যারিল মিচেল এরপর দারুণ জুটি গড়ে তোলেন।
বিশেষ করে মিচেল বেশ আগ্রাসী মনোভাবে ব্যাট চালিয়েছেন। ফলে তাদের ১৬ ওভারের জুটিতে আসে ৬৬ রান। চা বিরতির কিছু আগে ৫৪ বলে ৩ চার, ১ ছয়ে ৪১ করা মিচেলকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন তাইজুল। ফলে গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্রেক থ্রু পায় বাংলাদেশ। কারণ এই জুটিতে বড় সংগ্রহের ভিত গড়ার পথে এগিয়ে যেতে থাকে নিউজিল্যান্ড।
চা বিরতির পর দ্রুতই সাজঘরে ফেরেন টম ব্লান্ডেল (৬)। নাঈম হাসানের শিকার হন তিনি। পরবর্তীতে তাইজুল তার আসল ঘূর্ণি শুরু করেছেন। যদিও সেজন্য বেশ অপেক্ষা করতে হয়েছে। কারণ ১৮.৫ ওভার জুটিবদ্ধ থেকেছেন উইলিয়ামসন ও গ্লেন ফিলিপস। তারা ৭৮ রানের জুটি গড়েন। সেই জুটি অবশ্য ভেঙেছেন অনিয়মিত স্পিনার মুমিনুল হক সৌরভ বোলিংয়ে এসেই। তিনি ৬২ বলে ৫ চার, ১ ছয়ে ৪২ রান করা ফিলিপসকে সাজঘরে ফিরিয়েছেন। উইলিয়ামসন ব্যক্তিগত ৬৩ রানে তাইজুলকে ও ৭০ রানে শরিফুলকে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান।
উভয় ক্ষেত্রে দুর্ভাগা বোলার ছিলেন নাঈম। এ ছাড়া শরিফুলের বলে কট বিহাইন্ড হয়েছিলেন তিনি, কিন্তু নুরুল হাসান সোহান বুঝতে পারেননি সেটি ব্যাট ছুঁয়ে গেছে। আর এত সুযোগ পেয়ে ক্যারিয়ারের ২৯তম সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন উইলিয়ামসন। টেস্ট সেঞ্চুরির সংখ্যায় তিনি ছাড়িয়ে গেছেন হাশিম আমলা ও মাইকেল ক্লার্ককে। আর স্পর্শ করেছেন কিংবদন্তি ব্র্যাডম্যান ও বিরাট কোহলিকে। তাকে শেষ পর্যন্ত তাইজুলই ফিরিয়েছেন। ২০৫ বলে ১১ চারে ১০৪ রান করা উইলিয়ামসনকে বোল্ড করে দেন তাইজুল। আর এতেই বাংলাদেশ দল উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। কারণ তিনিই দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন লিডের দিকে। কিন্তু উইলিয়ামসন সাজঘরে ফেরার পর ধস নামে।
তাইজুলের ঘূর্ণিতে বিপাকে পড়ে কিউইরা। পরে ইশ সোধিকেও শূন্য রানে ফিরিয়েছেন তাইজুল। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে কিউইদের বিপক্ষে একটাই টেস্ট খেলেছেন তাইজুল ওয়েলিংটনে। এক ইনিংস বোলিং করার সুযোগ পেয়ে ২ উইকেট নিয়েছিলেন। এবার তিনি ৮৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে সেরা পারফর্মার বাংলাদেশের। আর এতেই এখন প্রথম ইনিংস লিড নেওয়াটা অনেক উজ্জ্বল হয়েছে। কারণ ৮ উইকেটে ২৬৬ করা কিউইরা এখনো ৪৪ রানে পিছিয়ে। ব্যাট করছেন দুই টেলএন্ডার কাইল জেমিসন ২৪ বলে ৭ ও অধিনায়ক সাউদি ১ রানে।
তারা বাংলাদেশকে পেছনে ফেলতে পারবেন? এ বিষয়ে দিনশেষে উইলিয়ামসন বলেছেন, ‘দিনটা আমাদের জন্য কঠিন ছিল। আমার মনে হয় ব্যাটাররা তাদের মেলে ধরার চেষ্টা করেছে। একসঙ্গে গড়েছে ভালো কিছু জুটিও। আমাদের দুটি উইকেট আছে হাতে। আরও কিছু রান করতে পারলে ভালো হয়, আর এরপর আমরা সুযোগ পাব বল করার। পিচে পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। মনে হচ্ছে আগামী কয়েকদিনে আরও ভাঙবে।’
বাংলাদেশের স্পিনাররা যেভাবে বোলিং করেছে সেটিই বিপাকে ফেলেছে নিউজিল্যান্ডকে। আর এতেই বরং এই ম্যাচে পরবর্তী সুযোগ কাজে লাগানোর উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখছেন উইলিয়ামসন। তিনি আরও বলেছেন, ‘উইকেট যে কোনোভাবে হোক বদলেছে। আমাদের কাছে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। আমাদের ব্যাট ও বল হাতে মানিয়ে নিতে হবে। আগামীকাল (আজ) সকালে কাজটা ঠিকঠাক করতে হবে, এরপর আমাদের হাতে বল আসবে।’
বাংলাদেশ আপাতত সিলেট টেস্টে দুদিন শেষে ভালো অবস্থানেই আছে। আজ তৃতীয় দিনের শুরুতে দ্রুত ২ উইকেট তুলে নিতে পারলে দারুণ কিছুই হবে। সবাই তাইজুলের দিকে তাকিয়ে আছে তার টেস্ট ক্যারিয়ারে ১২তম ৫ উইকেট শিকার দেখার আশায়। সেটি যদি তিনি দ্রুতই করে ফেলেন তা দলকেও ভালো কিছুর দিকে এগিয়ে নেবে। স্পিন কোচ হেরাথও সেটাই বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা আরও চাপ সৃষ্টি করতে পারতাম। আমরা ৮ উইকেট শিকার করেছি সেই হিসেবে দিনটা ভালোই।’ চাপটা ফিল্ডিংয়ে কিছু ক্যাচ মিসের কারণেই বাড়াতে পারেনি বাংলাদেশ দল। বিশেষ করে উইলিয়ামসন যদি সহজ দুটি ক্যাচ দিয়ে বেঁচে না গেলে সিলেট টেস্টে দারুণ এক অবস্থানেই থাকত স্বাগতিকরা।