দূঘর্টনায় শিকার হয়ে গাড়ি নষ্ট
সরকারি বিলাসবহুল গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার না করতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের। অথচ সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতে গিয়ে গাড়ি নিয়ে দূঘর্টনার কবলে পড়েছেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের এক কর্মকর্তা। এতে দামী গাড়িটি ধুমড়ে মুচড়ে যায়।
ঘটনাটি আড়াল করার জন্য নিজেই সেই গাড়িটি মেরামতের উদ্যোগ নেন। বিষয়টি জানাজানি হলে খোদ পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্ততরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। আলোচিত এই কর্মকর্তার নাম ডাঃ মাহমুদুর রহমান। তিনি পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের পরিচালক (এমসিএইচ) ও লাইন ডিরেক্টর (এমসিআরএএইচ) হিসেবে কর্মরত। সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বেশিরভাগ সময় সরকারী দামী গাড়িগুলো ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার হচ্ছে। অনুমতি ছাড়া অধিদপ্তরের অফিসিয়াল গাড়ি ৪০টি দামী গাড়িসহ কমপক্ষে ৭০টি গাড়ির ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার হচ্ছে। দূঘর্টনায় শিকার হয়ে অনেক গাড়ি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তার ওপর পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কোন বালাই নেই। এতে কোটি কোটি টাকার সরকারী সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া এসব গাড়ির জ্বালানি তেল বেশি যাচ্ছে সরকারি কোষাগার থেকে। এছাড়া জেলা পর্যায়ে উপ-পরিচালক এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট ডাইরেক্টর (সিসি) একটা করে গাড়ি ও এডিসিসিদের জন্য একসাথে ৬৪ টা পাজেরো স্পোর্টস গাড়ি একই হাল। অনেক সময় দূঘর্টনায় শিকার হয়ে অনেক গাড়ির নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়। এতে ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগের।পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত ২৬ সেপ্টেম্বর ডা. মাহমুদুর রহমান স্ত্রীসহ তার অফিসিয়াল গাড়ি (প্রাডো জিপ, ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-৫৯৮১) নিয়ে অফিসের অনুমতি ছাড়াই ব্যক্তিগত কাজে জামালপুরে গ্রামের বাড়িতে যান। এ সময় সরকারি চালক রুহুল তার সঙ্গে ছিলেন। ওই দিন রাত তিনটার দিকে জামালপুর থেকে ঢাকায় ফেরার পথে গাজীপুরের কোনাবাড়িতে গাড়িটি দুর্ঘটনায় পতিত হয়। এতে গাড়িটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। পরে পুলিশ এসে গাড়িটি উদ্ধার করে কোনাবাড়ি থানায় নিয়ে যায়। পরদিন সকালে গাড়িটি নিয়ে আসা হয় ঢাকায়।সূত্রগুলো জানায়, কোনও সরকারি গাড়ি অফিসিয়াল কাজে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়লে সাধারণত অধিদপ্ততরের খরচে সরকারিভাবে মেরামত করা হয়। কিন্তু ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার কারণে দুর্ঘটনার বিষয়টি চেপে যান ডাঃ মাহমুদুর রহমান ও তার গাড়িচালক রুহুল। জানা গেছে, গাড়িটি রাজধানীর মহাখালীতে মামুনের গ্যারেজে নিজ খরচে মেরামত করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে গাড়িচালক রুহুল জানান, গাড়ি নিয়ে জামালপুরে তিনি যাননি। অফিসিয়াল ভিজিটে গাজীপুর গিয়েছিলেন তিনি। সন্ধ্যার দিকে গাজীপুর থেকে ফেরার পথে সড়ক বিভাজকের সঙ্গে ধাক্কা লেগে গাড়ির সামনের বাম্পারসহ সামনে অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ডাঃ মাহমুদুর রহমান জানান, তিনি ব্যক্তিগত কাজে গাড়িটি নিয়ে জামালপুরে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন। অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় তিনি নিজেও আহত হয়েছেন। বিষয়টি তিনি আন অফিসিয়ালি মহাপরিচালককে জানিয়েছেন। নিজের খরচে গাড়িটি মেরামতের ব্যবস্থাও করেছেন। ঘটনাটি দামা চাপা দেওয়ার জন্য তার সহযোগী ডাক্তার জাহাঙ্গীর প্রধান সবাইকে ভীতি প্রদর্শন করছেন।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, কর্মকর্তাদের জন্য বরাদ্দকৃত গাড়ি অফিসিয়াল কাজে ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও বেশিরভাগই ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন। এমনকি অনুমতি ছাড়াই অনেকে ঢাকার বাইরে ব্যক্তিগত ভ্রমণেও অফিসের গাড়ি ব্যবহার করেন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে অধিপ্ততরের পরিচালক (অর্থ) নিয়াজুর রহমান অনুমতি ছাড়াই সরকারি গাড়ি নিয়ে বান্দরবানে বেড়াতে যান। সেখানে গিয়ে গাড়িটি মারাতœক দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে নিয়াজুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যরা প্রাণে রক্ষা পেলেও সরকারি গাড়িটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে অধিপ্ততর থেকে একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। যাতে কেউ সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার না করেন। এছাড়া কোনোভাবেই যেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সরকারি গাড়ি কেউ এক জেলা থেকে আরেক জেলায় নিয়ে না যান। পরবর্তী সময়ে নিয়াজুর রহমানকে পরিচালকের (অর্থ) পদ থেকে সরিয়ে বরিশালে বদলি করা হয়।
লাবু