ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আজ ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট

লক্ষ্য স্মার্ট দেশ

কাওসার রহমান

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ৩১ মে ২০২৩

লক্ষ্য স্মার্ট দেশ

আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট

স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজ গড়ার লক্ষ্যে আজ বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হচ্ছে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট। ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এই বাজেটের স্লোগান হচ্ছে ‘দেড় দশকের উন্নয়নের পর স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রগতি’। বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের আগামী নির্বাচনের স্লোগান হচ্ছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। সেই স্মার্ট বাংলাদেশে যাওয়ার অভিপ্রায়েই অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল তার এবারের পঞ্চম বাজেটকে সাজিয়েছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশের পর ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রূপরেখা স্মার্ট বাংলাদেশ। সেখানে প্রধান চারটি কৌশল হবে- স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি। এছাড়া স্মার্ট শিক্ষা, স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট কৃষি, স্মার্ট বাণিজ্য ও স্মার্ট পরিবহন ব্যবস্থার কথাও থাকবে বলে জানা গেছে।
অর্থমন্ত্রী এবারের বাজেট তার সরকারের পছন্দমতো দিতে পারছেন না। মাথায় রাখতে হচ্ছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংস্থা- আইএমএফের শর্তের কথা। আইএমএফ সাড়ে তিন বছরের বাস্তবায়নের জন্য দিয়েছে মোট ৩৮টি শর্ত, যার প্রায় অর্ধেক শর্তই আগামী অর্থবছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে। নির্বাচনী বছরে জনগণকে দেওয়ার পরিবর্তে জনগণের কাছ থেকে আদায়ে জোর দেওয়া হচ্ছে। এতে কর লাঘবের স্বস্তির বদলে বাড়ছে বাড়তি কর প্রদানের অস্বস্তি। দেশের ডলার সংকট কাটাতে সেই শর্ত পূরণের আলোকেই অর্থমন্ত্রী এবার তার টানা পঞ্চমবারের বাজেট প্রণয়ন করেছেন। 
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের চলমান ৫ বছরের মেয়াদের শেষ বাজেট হবে এবার। এমন এক সময়ে এসে এই বাজেট ঘোষণা করা হচ্ছে যখন খাদ্য থেকে জ্বালানি ও পরিবহন ভাড়া থেকে শুরু করে ইউটিলিটি বিল পর্যন্ত প্রায় সব কিছুরই উচ্চমূল্যের সঙ্গে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এই অবস্থায় জনগণকে স্বস্তি দিতে সম্প্রসারণমূলক বাজেট দেওয়ার ইচ্ছে ছিল সরকারের। পরিকল্পনা ছিল নির্বাচনী বছরে বড় বাজেট তৈরির। কিন্তু রাজস্ব প্রাপ্তির অনিশ্চয়তায় এবং আইএমফের শর্তের কারণে শেষ পর্যন্ত একটি উচ্চাভিলাষী বাজেট প্রণয়নপ্রক্রিয়া থেকে পিছু হটেছে সরকার। প্রথমে মনে করা হয়েছিল আগামী অর্থবছরের জন্য একটি সম্প্রসারণমূলক বাজেট প্রণয়ন করা হবে। যার আকার হবে পৌনে আট লাখ কোটি টাকারও বেশি। কিন্তু অর্থবছরের শেষ দিকে এসে দেখা গেল বড় বাজেট তৈরি করার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন সেই অর্থ সংকুলান করা সম্ভব হবে না। বিশেষ করে নির্বাচনী বছরের বাস্তবতার নিরিখে তা করা সম্ভব হবে না। কারণ এই সময় শুল্ক হার বৃদ্ধি যতটা সম্ভব কম করতে হবে। তাই বাজেটে আকার কিছু কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে।
তাছাড়া বাজেট প্রণয়নের সময় অর্থমন্ত্রীর ওপর ঝুলেছে আইএমএফের শর্তের খড়্গ। ফলে সরকারের শেষ বাজেটকে অর্থমন্ত্রী নির্বাচনী বাজেটে রূপ দিতে পারছেন না। আবার আইএমএফের শর্ত পূরণ করতে গিয়ে বাজস্ব আয় বাড়াতে অর্থমন্ত্রীকে কর আহরণের দিকে সর্বোচ্চ নজর দিতে হচ্ছে। ফলে এই দুইয়ের মাঝখানে থেকে অর্থমন্ত্রী এবার তার এই মেয়াদের শেষ বাজেট দিতে যাচ্ছে। এতে নতুন বাজেট ‘সম্প্রসারণমূলক বা সংকোচনমূলক’ কোনোটাই হচ্ছে না। মাঝামাঝি অবস্থায় একটি বাজেট দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। যেখানে বাজেটের মূল লক্ষ্য হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা ও উচ্চতর জিপিডি প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখা। 
তবে দেশের সাধারণ মানুষের প্রধানশত্রু হয়ে ওঠা আয় বৈষম্য নিরসনে তেমন কোনো পদক্ষেপ থাকছে না। বাজেটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মতো খাতে বরাদ্দের বড় কোনো পরিবর্তন হবে না। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে আগামী অর্থবছরেও কঠোরতা অবলম্বন অব্যাহত রাখবে। মূল্যস্ফীতি কারণে সরকারী কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির আলোচনা বেশ জোড়াল হচ্ছে। তবে এবার বাজেটের মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ানো হচ্ছে না বলেও জানা গেছে। 
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এই বাজেটে সরকারের উন্নয়ন ব্যয় তথা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) আকার নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে স্থানীয় মুদ্রায় থাকবে এক লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা (৬৪.২৬ শতাংশ) এবং বিদেশী প্রকল্প সাহায্য হিসেবে আসবে ৯৪ হাজার কোটি টাকা (৩৫.৭৪ শতাংশ)।
এই বিশাল বাজেটের বিপরীতে আগামী অর্থবছরে জন্য মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে আসবে চার লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব খাত বহির্ভূত (নন-এনবিআর) থেকে আয় হবে ২০ হাজার কোটি টাকা এবং কর ছাড়া প্রাপ্তি ধরা হয়েছে (এনটিআর) ৫০ হাজার কোটি টাকা। ফলে প্রস্তাবিত বাজেটের ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে দুই লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। জিডিপির অংশ হিসেবে ঘাটতি পরিমাণ পাঁচ দশমিক ২ শতাংশ। এই ঘাটতি ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ, বৈদেশিক সাহায্য ও অনুদান এবং সঞ্চয়পত্রের বিক্রির অর্থ দিয়ে মেটানো হবে। 
আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের উচ্চমূল্য এবং টাকার মান কমায় ভর্তুকি ও সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে। বাজেটে ভর্তুকির জন্য বরাদ্দ বাড়িয়ে করা হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি এবং সুদ পরিশোধের জন্য রাখা হচ্ছে ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ ছিল ৮১ হাজার কোটি টাকা এবং সুদ পরিশোধের জন্য ছিল ৮০ হাজার কোটি টাকা। 
বাজেট ঘাটতি মোকাবিলা ॥ আগামী বাজেটে সার্বিক ঘাটতি হবে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ। ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাংকসহ অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা এবং বিদেশী উৎস থেকে ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।
অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে এক লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এই ঋণের মধ্যে অধিকাংশ ঋণ নেওয়া হবে স্বল্পমেয়াদি ঋণ। চলতি অর্থবছরে এ খাত থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ছিল এক লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। ফলে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বাড়বে ২৬ হাজার ৬১ কোটি টাকা। শতকরা হিসেবে যা ২৪ শতাংশ।
এছাড়া সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ঋণপ্রাপ্তির প্রস্তাব করা হয়েছে ২৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে কড়াকড়ি আরোপ করায় এটির বিক্রিতে চলতি বছরে ধস নেমেছে। ফলে সংশোধিত বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকা।
আইএমএফ শর্ত অনুযায়ী বাজেটের প্রাথমিক ঘাটতি জিডিপির ৩ শতাংশের মধ্যে থাকতে হবে। প্রকৃতপক্ষে ঘাটতি আইএমএফ-নির্ধারিত সীমার কাছাকাছিই আছে। কারণ সামগ্রিক ঘাটতি থেকে সুদ প্রদান ও বৈদেশিক অনুদান বাদ দিলে প্রাথমিক ঘাটতি সেটাই দাঁড়বে। 
প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি ॥ সরকার আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশে নিয়ে যেতে চায়। সেই সঙ্গে মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশের কাছাকাছি ধরে রাখতে চায়। চলতি অর্থবছরেও একই প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ছয় দশমিক শূন্য তিন শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। অন্য দিকে, আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৬.৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে সাত দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সরকারের আগামী বাজেটের মূল লক্ষ্য হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। এজন্য জ্বালানি তেলের অগ্রিম শুল্ক প্রত্যাহার করতে চায়। কারণ দেশের মূল্যস্ফীতির মূল কারণ হচ্ছে জ্বালানি তেলের উচ্চ মূল্য। আইএমএফকে খুশি করতে ভর্তুকি কমাতে গিয়ে জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়েছে সরকার। যার কারণে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির আগ্রাসন চলছে। সেই অগ্রাসন বাজেটের কিছু পদক্ষেপে কতটা কমবে তা বাজেটের পরই পরিলক্ষিত হবে। 
জিডিপি ॥ আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির লক্ষ্য ধরা হয়েছে পঞ্চাশ লাখ ছয় হাজার ৬৮২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ৪৪ লাখ ৪৯ কোটি ৯৫৯ কোটি টাকা। পরবর্তীতে সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে আনা হয়েছে।
আগামী বাজেটের আকার বর্তমান বাজেটের চেয়ে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হবে। ফলে বাজেটটি ৫০ লাখ ৬ হাজার ৬৭২ কোটি টাকার প্রাক্কলিত জিডিপির ১৫ দশমিক ২১ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছরে ছিল ১৫ দশমিক ২৭ শতাংশ। 
কর ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন ॥ এবারের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে দেশের কর ব্যবস্থায় আনতে হচ্ছে বড় পরিবর্তন। আইএমএফ থেকে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ পেতে নির্বাচনী বছরের বাজেট সত্ত্বেও কর ব্যবস্থায় আনতে হচ্ছে এই পরিবর্তন। যেতে হচ্ছে কর কাঠামোর সংস্কারে। কারণ আইএমএফ শর্ত দিয়েছে আগামী অর্থবছরে কর জিডিপির অনুপাত অন্তত দশমিক পাঁচ শতাংশ বাড়াতে হবে। অর্থাৎ বাংলাদেশের জিডিপির দশমিক ৫ শতাংশ রাজস্ব আয় আগামী অর্থবছরে বাড়াতে হবে। যা সেপ্টেম্বরের আগে বাস্তবায়ন করে দেখাতে হবে। 
এই কর জিডিপির অনুপাত বাড়াতে গিয়ে কিছু ক্ষেত্রে কর ছাড় থাকছে না এবং কিছু ক্ষেত্রে কর ছাড়ের হার কমে যাবে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে কর ছাড় প্রত্যাহার করা হবে। এছাড়া নতুন করদাতা যুক্ত করা বা করের জাল বাড়াতে বেশ কিছু পদক্ষেপ থাকবে। ভ্যাটের হার ও আওতা বাড়ানো হবে। এতে মূল্যস্ফীতির চাপে থাকা মানুষের একটি বড় অংশের নতুন করে আরও চাপে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। 
বর্তমানে দেশে ব্যক্তি পর্যায়ে ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর বা টিআইএন সনদধারীর সংখ্যা প্রায় ৮৬ লাখ। এরমধ্যে ৩২ লাখ ব্যক্তি আয়কর রিটার্ন জমা দেন। তারমধ্যে আবার আট লাখের করযোগ্য আয় নেই। তাই করযোগ্য আয় না থাকলেও বিভিন্ন সেবা নিতে কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র যারা নেবেন, তাদের ওপর কর আরোপ করা হতে পারে। এক্ষেত্রে প্রমাণপত্র পেতে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা কর আরোপ হতে পারে। বর্তমানে পাঁচ লাখ টাকার বেশি ব্যাংক ঋণ গ্রহণ ও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগসহ ৩৮ ধরনের সেবা পেতে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র লাগে। আগামী অর্থবছরে এর সঙ্গে আরও ছয় ধরনের সেবা যুক্ত হতে পারে।
এনবিআরের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেসব কর অব্যাহতি রয়েছে, তা জিডিপির ২ দশমিক ৩ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। আইএমএফ বলেছে, যেসব ক্ষেত্রে কর অব্যাহতি দিয়ে অর্থনীতির তেমন উপকার হচ্ছে না, সেখান থেকে অব্যাহতি তুলে দিতে হবে।
ইতোমধ্যে কিছু কর অব্যাহতি প্রত্যাহার করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরেও এ বিষয়ে পদক্ষেপ থাকবে। বেশ কিছু অব্যাহতির ক্ষেত্রে মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে। মেয়াদ শেষ হলে সেগুলোর কার্যকারিতা পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বর্তমানে কয়েকটি হারে যেমন- ৫, সাড়ে ৭, ১০ এবং ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা হয়। সরকার আইএমএফকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এই স্তর কমিয়ে আনা হবে। নতুন বাজেটে এ বিষয়ে ঘোষণা থাকবে। নতুন কিছু ক্ষেত্রে নতুন করে ভ্যাট আরোপ হতে পারে আগামী বাজেটে। যেমন মোবাইল ফোন উৎপাদন পর্যায়ে এখন ভ্যাট নেই। এক্ষেত্রে ২ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হতে পারে। এর বাইরে মোবাইল ফোন সংযোজনে ভ্যাট বাড়তে পারে। স্থানীয় এলপিজি সিলিন্ডারের মূল কাঁচামাল আমদানির ওপর শুল্ক বাড়ার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হতে পারে। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে সিলিন্ডার উৎপাদনকারীদের বিদ্যমান ভ্যাট হার ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে সাড়ে ৭ শতাংশ হতে পারে। সিগারেটের ওপর সম্পূরক শুল্কও কিছুটা বাড়তে পারে।
কার্বনেটেড পানীয় শিল্পের (বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রি) ওপর বিদ্যমান টার্নওভার করের হার শূন্য দশমিক ৬০ শতাংশ, যা নতুন বাজেটে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের আওতায় বিনিয়োগকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের মূলধনী যন্ত্রপাতি ১ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ হতে পারে। নির্মাণসামগ্রীর উপকরণ আমদানিতে শুল্ক বাড়তে পারে। শিল্পে যানবাহন আমদানিতে শুল্কছাড় উঠিয়ে দেওয়া হতে পারে। 
বর্তমানে কলম উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি রয়েছে। আগামী বাজেটে এ খাতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হতে পারে। প্লাস্টিকের তৈরি সব ধরনের টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যার, গৃহস্থালিসামগ্রী উৎপাদনে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হতে পারে। একইভাবে অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি গৃহস্থালিসামগ্রী ও  তৈজসপত্রের ভ্যাট হার বাড়ানো হতে পারে। কিচেন টাওয়াল, টয়লেট টিস্যু, ন্যাপকিন টিস্যু, ফেসিয়াল টিস্যু বা পকেট টিস্যু ও পেপার টাওয়াল উৎপাদনেও ভ্যাটের হার বাড়ানো হতে পারে।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের ফি বা সেবা মাসুল আগামী বাজেটে বাড়তে পারে। জমির নামজারি ফি, হাটবাজারের ইজারামূল্য, চিড়িয়াখানার প্রবেশমূল্য, এমনকি রেশনে দেওয়া চাল, ডালের দামও বাড়ানো হতে পারে।
বাড়তে পারে ভ্রমণ অথবা চিকিৎসার জন্য বিদেশ গমনে বিমান টিকিটের ওপর ভ্রমণ কর। অন্যদিকে আকাশপথে দেশের এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যেতে ২০০ টাকা ভ্রমণ কর আরোপ হতে পারে। বর্তমানে স্থলপথে বিদেশ গমনে ৫০০ টাকা ও নৌপথে ৮০০ টাকা কর বহাল রয়েছে, যা বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করা হতে পারে। আকাশপথে সার্কভুক্ত দেশ ভ্রমণে ১ হাজার ২০০ টাকা কর আছে, যা বাড়িয়ে ২ হাজার টাকা করা হতে পারে। আকাশপথে সার্কের বাইরে ভ্রমণেও কর বাড়তে পারে।
এছাড়া ডলার সাশ্রয়ে এবং শুল্ক ফাঁকি রোধে কাজুবাদাম, খেজুরের মতো খাদ্যসামগ্রীর আমদানি শুল্ক বাড়ানো হতে পারে। এসব শুল্ক কর বাড়লে আগামী বাজেট জীবনযাত্রার খরচ বাড়াবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 
মিলবে কিছুটা স্বস্তি ॥ কয়েকটি পদক্ষেপের কারণে কিছুটা স্বস্তি মিলবে বলে আশা করা হচ্ছে। যেমন, জ্বালানি তেলের ওপর থেকে অগ্রিম শুল্ক প্রত্যাহার করা হলে তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে। জ্বালানি তেলের দাম বিভিন্নভাবে মুদ্রাস্ফীতিকে প্রভাবিত করে; তাই তেলের দাম কমলে কিছুটা স্বস্তি মিলতে পারে। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন একাই সুবিধা পাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আসন্ন বাজেটে আরও ওষুধ ও মেডিক্যাল সরঞ্জাম উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক রেয়াত দিতে পারে সরকার। স্থানীয় উৎপাদনের বেলায় শুল্ক মওকুফ বিবেচনা করা হচ্ছে বিধায় ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, যক্ষ¥া, ম্যালেরিয়া, আইভি ক্যানুলার ওষুধের দামও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী হিসেবে স্যানিটারি ন্যাপকিন, ডায়াপার ও টয়লেট্রিজের কাঁচামাল আমদানি পর্যায়ে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদও এক বছর বাড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পদক্ষেপ স্থানীয় শিল্পকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতও তার সুফল পাবে।
আগামী বাজেটে তরল নিকোটিন এবং ট্রান্সডার্মাল নিকোটিন প্যাঁচের ওপর ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। পাশাপাশি ই-সিগারেট, ভেপ এবং এ জাতীয় ডিভাইসগুলির ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করতে ২১২.২০ শতাংশ শুল্কারোপ করা হতে পারে। তাছাড়া, চিনির দাম এখন বেশি হলেও, আগামী অর্থবছরে মিষ্টির দাম কমতে পারে।
করোনায় থাকছে না বরাদ্দ ॥ আগামী অর্থবছরে করোনা খাতে কোনো বরাদ্দ থাকছে না। ইতোমধ্যে এই ভাইরাস সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে বলে মনে করছে অর্থ বিভাগ। এ কারণেই নতুন অর্থবছরে করোনা নির্মূল খাতে কোনো বরাদ্দ থাকছে না। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে করোনা ভাইরাসের আবার ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে।  
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ৩৫ হাজার ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে স্বাস্থ্য খাত। এটি চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের তুলনায় পাঁচ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা বেশি। এ বরাদ্দ অনেকটাই স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে যোগ হচ্ছে। পাশাপাশি সংশোধিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের মূল বরাদ্দ থেকে কমানো হয়েছে ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ফলে চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ দাঁড়ায় ২৯ হাজার ৬২১ কোটি টাকা। 
জানা গেছে, আগামী বাজেটে  স্বাস্থ্য খাতে নিট বরাদ্দ থাকছে ৩৫ হাজার ৫০ কোটি টাকা। এটি মোট বাজেটের ৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ। চলতি সংশোধিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে মোট বরাদ্দ আছে ২৯ হাজার ৬২১ কোটি টাকা। এটি মোট বাজেটের ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ। বরাদ্দ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে নিট বরাদ্দ বাড়ছে পাঁচ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা।
জানা গেছে, পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা, জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার আলোকে স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম আগামী বাজেটে থাকবে। বিশেষ করে চিকিৎসাসেবায় উচ্চ বিনিয়োগ ও উচ্চতর প্রশিক্ষণকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এবারের বাজেটে। এছাড়া চিকিৎসা-শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, চিকিৎসা বিজ্ঞানে মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণার অবকাঠামো তৈরি ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি আগামী বাজেটে শিক্ষার ব্যয় জনগণের নাগালের মধ্যে রাখা, নার্সিং শিক্ষার আধুনিকায়ন, নার্সিং কলেজ উন্নয়ন, মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, নার্সিং ইনস্টিটিউটকে নার্সিং কলেজে রূপান্তর করার কার্যক্রমের ঘোষণাও থাকছে। এছাড়া পরিবার কল্যাণ, মা ও শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নানা উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে বাজেটের বরাদ্দ বাড়ছে। এ খাতে জনগণের সেবা বাড়বে। এ নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।’  
বাড়ছে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ॥ আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নতুন করে আরও ৭ লাখ ৩৫ লাখ বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তার মধ্যে প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা বাড়বে ৫ লাখ ৩৫ হাজার। এছাড়া, বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতার উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়বে এক লাখ করে।  
আওতা বাাড়নোর সঙ্গে সঙ্গে প্রায় এক দশক পর আগামী অর্থবছর বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতার পরিমাণও কিছুটা বাড়ানো হচ্ছে। বয়স্ক ভাতার উপকারভোগীদের মাসিক ভাতার পরিমাণ ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকা করা হচ্ছে। এছাড়া, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতাদের মাসিক ভাতার পরিমাণ ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৫৫০ টাকা নির্ধারণ করা হচ্ছে। ফলে নতুন অর্থবছরে এ খাতে অতিরিক্ত ১,৫২৬ কোটি টাকা ব্যয় হবে। সব মিলিয়ে আগামী অর্থবছর ব্যয় বৃদ্ধি পেত ৩,৪৪৫ কোটি টাকা।
গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি প্রত্যাহারের সুপারিশের সঙ্গে আইএমএফ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী শক্তিশালী করার পরামর্শ দিলেও, আগামী বাজেটে এ খাতে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না বলে জানা গেছে।  
চলতি অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। 
কার্বন নিঃসরণ কমাতে সারচার্জ ॥ কার্বন নিঃসরণ ও বায়ুদূষণ কমাতে সরকার যানবাহনের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এজন্য আগামী অর্থবছর থেকে একাধিক গাড়ির মালিককে কার্বন ট্যাক্সের মুখোমুখি হতে হবে। 
জানা যায়, একাধিক ব্যক্তিগত গাড়ি, জিপ এবং মাইক্রোবাসের মালিকদের তাদের ইঞ্জিনের ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে পরিবেশ সারচার্জ দিতে হতে পারে। তবে, বাস বা অন্য গাড়ি এর আওতায় আসবে না। আগামী ১ জুন জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সারচার্জের প্রস্তাব করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠান, সংস্থাসহ সব গাড়ির মালিকদের কাছ থেকে এই সারচার্জ আদায় করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যদি  কোনো সংস্থার একাধিক গাড়ি থাকে, তবে তা কার্বন ট্যাক্সের আওতায় আসার সম্ভাবনা আছে। কারণ অন্যান্য  দেশেও শিল্প কারখানার ওপর কার্বন ট্যাক্স আছে। তবে বাংলাদেশ আগামী অর্থবছর থেকে জিপ ও গাড়িতে ট্যাক্স আরোপের মাধ্যমে এটি শুরু করতে পারে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের তথ্যে, বাংলাদেশে ৫৭ লাখেরও বেশি নিবন্ধিত যানবাহন রয়েছে, যার মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়ি, জিপ এবং মাইক্রোবাসের সংখ্যা ৬ লাখের বেশি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুসারে, ১৫০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ির মালিকদের প্রথম গাড়ির পরে প্রতিটি গাড়ির জন্য ২৫ হাজার টাকা সারচার্জ দিতে হতে পারে। টাকার এই পরিমাণ অগ্রিম করের সমান, যা একজন গাড়ির মালিককে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে দিতে হয়।
১৫০১ থেকে ২০০০ সিসি পর্যন্ত ইঞ্জিন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন দ্বিতীয় ও পরবর্তী যানবাহনের ক্ষেত্রে সারচার্জ দ্বিগুণ করে ৫০ হাজার টাকা করা হবে। ২০০১ থেকে ২৫০০ সিসি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিটি দ্বিতীয় গাড়ি, জিপ বা মাইক্রোবাসের ওপর ৭৫ হাজার টাকা পরিবেশ সুরক্ষা সারচার্জ হিসেবে বিবেচনা করে কর কর্তৃপক্ষ। যা গাড়ির ফিটনেস পুনর্নবীকরণের সময় গাড়ির মালিককে যে উইথহোল্ডিং ট্যাক্স দিতে হয় তার সমান।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২৫০০ সিসির বেশি ইঞ্জিন ক্ষমতাসম্পন্ন গাড়ির মালিকদের জন্য অর্থের এই পরিমাণ বাড়ানো হয়। উদাহরণস্বরূপ, ৩০০০ সিসির বেশি দ্বিতীয় বা তৃতীয় গাড়ির মালিক কোনো ব্যক্তি, কোম্পানি বা সংস্থাকে কার্বন কর হিসেবে ২ লাখ টাকা দিতে হতে পারে, যা এই ধরনের যানবাহনে আরোপিত অগ্রিম কর  থেকে ৩৩ শতাংশ বেশি। ৩৫০০ সিসি বা তার বেশি ইঞ্জিন ক্ষমতাসম্পন্ন দ্বিতীয় গাড়ি বা জিপের ক্ষেত্রে সারচার্জের পরিমাণ ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা হতে পারে, যা গাড়ির উইথহোল্ডিং ট্যাক্স থেকে ৭৫ শতাংশ বেশি।
গুরুত্ব পাচ্ছে নিরাপত্তা খাত ॥ জাতীয় নির্বাচন সামনে। তাই এবারে বাজেটে ‘জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা’ খাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিট বাজেটের ৫৫ শতাংশই ব্যয় হবে পুলিশবাহিনীতে। বাকি ৪৫ শতাংশ ব্যয় হবে বিজিবি, কোস্ট কার্ড, আনসার এবং সুরক্ষা সেবা বিভাগে। তবে পুলিশের সঙ্গে বরাদ্দ বাড়ছে আনসার বাহিনীতেও। এমন হিসাব ধরে আগামী অর্থবছরের বাজেটে ২৯ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ চূড়ান্ত করা হয়েছে।
চলতি বাজেটে এ খাতে মোট বরাদ্দ আছে ২৯ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা। বরাদ্দের পাশাপাশি আসন্ন বাজেটে সুরক্ষা সেবা বিভাগে অগ্রাধিকার পাচ্ছে অগ্নিনির্বাপণ, প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা বাড়ানোসহ সাতটি খাত। 
আনসার বাহিনীর উন্নয়ন খাতে চলতি অর্থবছরে কোনো বরাদ্দ ছিল না। কিন্তু আগামী অর্থবছরে আনসার বাহিনীর উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ থাকছে। এজন্য এ বাহিনীর মোট বরাদ্দ চলতি অর্থবছরের তুলনায় বেড়েছে। একইভাবে আগামী বছর পুলিশের বরাদ্দও বাড়ছে। পাশাপাশি তাদের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রাও চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী দিনে বাড়ানো হয়েছে।
বাজেট ঘোষণার ঠিক পাঁচ মাস পরই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। স্বাভাবিক নিয়মে যে কোনো নির্বাচনে পুলিশ ও আনসার বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। সেক্ষেত্রে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ দুটি বাহিনীর তৎপরতা ব্যাপক হারে বাড়বে। কারণ, মাঠপর্যায়ে যে কোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখাসহ মোকাবিলা করতে প্রস্তুত থাকতে হবে। পুরো বাহিনীর সক্রিয়তার সঙ্গে নানা ধরনের ব্যয় জড়িত থাকে।

×