ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কানাডা প্রবাসীর সঙ্গে বিয়ের স্বপ্ন পূরণ হলো না

কাভার্ডভ্যান চাপায় প্রাণ গেল বাইক আরোহী ভার্সিটি ছাত্রীর

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:২৪, ২ এপ্রিল ২০২৩

কাভার্ডভ্যান চাপায় প্রাণ গেল বাইক আরোহী ভার্সিটি ছাত্রীর

সানজিদা আক্তার তামান্না

ঈদের পরই কানাডা প্রবাসী এক ছেলের সঙ্গে বিয়ের কথা ছিল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানজিদা আক্তার তামান্নার (২৭)। কিন্তু তার স্বপ্ন পূরণ হলো না। শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর লালবাগ বেড়িবাঁধ এলাকায় কাভার্ডভ্যানের চাপায় প্রাণ হারান তিনি। নিহত তামান্না নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। তার বাবার নাম আবু তাহের। গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ির ওয়াসেকপুরে। রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর নুরবাগ মনির চেয়ারম্যান গলিতে থাকতেন তামান্না। দুর্ঘটনার পর পুলিশ কাভার্ডভ্যান চালক ও পাঠাও চালকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে তামান্না রাজধানীর ধানমণ্ডি আবাহনী মাঠের সামনে থেকে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলযোগে (রাইড শেয়ারিং) কামরাঙ্গীরচরে বাসায় ফিরছিলেন। পথে লালবাগ বেড়িবাঁধ এলাকার শামীম গার্মেন্টসের সামনে দিয়ে যাবার সময় একটি কাভার্ডভ্যান তাদের মোটরসাইকেলকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে সানজিদা রাস্তায় ছিটকে পড়েন। পরে ওই কাভার্ডভ্যান সানজিদার মাথার ওপর দিয়ে চলে যায়।

খুব সাধারণ হেলমেট থাকায় সানজিদার মাথা থেঁতলে যায়। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অবস্থা অবনতি হলে রাত একটার দিকে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে আনা হয়। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 
লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এম মোরশেদ জনকণ্ঠকে জানান, মোটরসাইকেলের চালক মেহেদী হাসান কাভার্ড ভ্যানটি ‘ওভারটেক’ করার সময় দুর্ঘটনাটি ঘটে। দুর্ঘটনায় মেহেদীর শারীরিক কোনো ক্ষতি হয়নি। ওই কাভার্ডভ্যানটি তামান্নার মাথার ওপর দিয়ে চলে যাওয়ায় হেলমেটটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। এতে তার মাথা থেঁতলে যায়। তিনি জানান, বেপরোয়া চালানোর জন্য মোটরসাইকেল চালক মেহেদী ও কাভার্ডভ্যান চালক শামীম আহমেদকে (২৫) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর কাভার্ডভ্যানটি আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় নিহত তামান্নার ভাই মো. সায়েম বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। 
তামান্নার বড়ভাই মো. সায়েম জানান, তামান্না শুক্রবার বিকেলে কলাবাগানে এক আত্মীয়ের বাসায় ইফতারের দাওয়াতে গিয়েছিল। সেখান থেকে বাসায় ফিরছিল। পথিমধ্যে লালবাগে বেড়িবাঁধে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় তার ছোট বোন তামান্নার মৃত্যু হয়। তিনি জানান, কানাডা প্রবাসী এক ছেলের সঙ্গে বিয়ের আলোচনা চলছিল। ঈদের পরে সেই ছেলে দেশে এলে বিয়ের দিন তারিখ ফাইনাল করার কথা ছিল। কিন্তু এখন সে সবই শেষ! এই বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

লালবাগ থানার এসআই আক্তার জানান, কাভার্ড ভ্যানের কোনো রেয়ার ভিউ মিরর ছিল না। কাগজপত্র ঠিক আছে কিনা। তা যাচাই করা হচ্ছে। এসআই আক্তার জানান, শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. ফাহমিদা হক তার লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন। পরে সানজিদা আক্তার তামান্নার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে তার লাশ নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার ওয়াসেকপুর গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হবে বলে নিহতের পরিবার জানায়।

×