![পহেলা বৈশাখের পর ভূমি উন্নয়ন কর অনলাইনে পহেলা বৈশাখের পর ভূমি উন্নয়ন কর অনলাইনে](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2023January/1-2303291722.jpg)
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমিসংক্রান্ত সেবার ডিজিলাইজেশনের কথা তুলে ধরে বলেছেন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমিসংক্রান্ত সেবার ডিজিলাইজেশনের কথা তুলে ধরে বলেছেন, ভূমিসংক্রান্ত সেবা নিতে গিয়ে অনেক সময় অনেক মানুষকে হয়রানির সম্মুখীন হতে হয়েছে। ইনশাল্লাহ, আমরা যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলছি, আর এই কষ্টটা মানুষকে পেতে হবে না। দেশে থাকেন, প্রবাসে থাকেন, যেখানেই থাকেন, আপনার সম্পদ আপনারই থাকবে। সেভাবেই আপনার অধিকার যাতে সুরক্ষিত হয়, সুনিশ্চিত হয় সেই ব্যবস্থাটাই আমরা করেছি। আমরা চাই বাংলাদেশ থেকে সব ধরনের অনিয়ম দূর হোক।
বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দেশের প্রথম তিনদিনব্যাপী ‘জাতীয় ভূমি সম্মেলন-২০২৩’ এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাতটি উদ্যোগের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী জমির মালিকানা সংক্রান্ত সামাজিক ও পারিবারিক সমস্যার অবসান এবং ঝামেলামুক্ত সেবা নিশ্চিত করতে ভূমি ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তর করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা; সব ধরনের সুযোগ সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে যে সমস্যাগুলো বিভিন্ন পারিবারিকভাবে বা নানাভাবে মানুষকে কষ্ট দিত সেগুলো দূর করারও পদক্ষেপ নিয়েছি আমরা। জনগণের কল্যাণ সাধনই আমাদের লক্ষ্য।
ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক এবং আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ভূমি সচিব মোস্তাফিজুর রহমান। রাজবাড়ী সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নূরজাহান আখতার সাথী সহকারী কমিশনারদের পক্ষ থেকে তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে ভূমি মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
অনুষ্ঠান থেকে ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাস্তবায়িত সাতটি উদ্যোগের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এগুলো হলো (১) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্মৃতিস্তম্ভ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব গুচ্ছগ্রাম কমপ্লেক্স, (২) নবনির্মিত ৪০০টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস, (৩) স্মার্ট ভূমি নক্সা, (৪) রেজিস্ট্রেশন-মিউটেশন আন্তঃসংযোগ, (৫) স্মার্ট ভূমি রেকর্ডস, (৬) স্মার্ট ভূমিপিডিয়া এবং (৭) স্মার্ট সেবাকেন্দ্র।
উল্লেখ্য, ভূমি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২৯-৩১ মার্চ এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য একটি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা তুলে ধরা ও ভূমি সেবার ডিজিটালইজেশনের ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জগুলো খুঁজে বের করা।
জাতীয় ভূমি সম্মেলনের অন্য উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে- ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে নাগরিক, সরকারি সংস্থা ও স্টেকহোল্ডারদের অবহিত করা, ভূমি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে তাদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং ভূমিসংক্রান্ত বিদ্যমান আইন ও বিধিবিধান সম্পর্কে ধারণা প্রদান।
অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের সেবক। জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম থেকেই আওয়ামী লীগের জন্ম। জন্মলগ্ন থেকে আওয়ামী লীগ এ দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারে এসে আমরা জনগণের সেবা করার ব্রত নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।
ভূমি বণ্টন ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত জটিলতা বিষয়ে তিনি বলেন, কথায় বলে যে ‘জোর যার মুল্লুক তার’। অনেক সময় ভাই বোনকে বঞ্চিত করে আবার বোন যদি শক্তিশালী হয়ে যায় ভাইকেও বঞ্চিত করে। আবার বোনও বোনকে বঞ্চিত করে। এ রকমও ঘটনা আছে। প্রায়ই এই সমস্যাটা আসে।
বণ্টন ব্যবস্থা ডিজিটালাইজড করে সুনির্দিষ্ট করার ওপর গুরুত্বারোপ করে সরকারপ্রধান বলেন, বণ্টন ব্যবস্থা যদি যথাযথভাবে হয়ে যায়, যার যার অধিকার সে সমানভাবে পাবে, তারপর কেউ যদি মনে করে সেটা সে দান করে দেবে বোনকে বা ভাইকে, তবে সেটা দান করে দেবে। এক্ষেত্রে বোনরা সব থেকে বেশি বঞ্চিত হয়। এটাও বাস্তবতা। বণ্টন ব্যবস্থা ডিজিটালাইজড করে সুনির্দিষ্টভাবে করতে পারলে অনেক পারিবারিক সমস্যাও সমাধান হয়ে যাবে। বণ্টন ব্যবস্থাটা ডিজিটালাইজড করলে এই সমস্যা হবে না।
সম্পদের সঙ্গে মানুষের লোভ-লালসা বাড়ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অধিকাংশ সমস্যা আমরা দেখতে পাচ্ছি, মানুষের যত বেশি অর্থ-সম্পদ হচ্ছে, ততই চাহিদা বাড়ছে এবং তত বেশি লোভ-লালসা বাড়ছে। পারিবারিক সংঘাত, খুন-খারাবি, দ্বন্দ্ব; এগুলোর সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, অধিকাংশ পারিবারিক সমস্যা এই বণ্টনের কারণে হয়। খুন-খারাবিও হয়। এর মধ্য দিয়ে অনেক পারিবারিক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। মানুষ শান্তি পাবে। মানুষের জীবনের শান্তি ও সমৃদ্ধি আমাদের কামনা।
বিএনপির জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্দোলনের নামে আগুন সন্ত্রাসে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারা এটা নাকি আন্দোলন? বিএনপি-জামায়াত জোট মিলে সেটা করেছিল। ৭০টি সরকারি অফিস তারা পুড়িয়ে দিয়েছিল। আমাদের ছয়টি ভূমি অফিসে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল। রেকর্ড পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ভূমি অফিস পোড়ানোর কী লক্ষ্য থাকতে পারে জানি না। তবে তখন একটা নির্দেশ দিতে বাধ্য হয়েছিলাম, যারা এই ভূমি অফিস পুড়িয়েছে, তারা যে জমিতে বাস করে সেখান থেকে তাদের বের করে দিতে হবে। কারণ ভূমি অফিস পুড়িয়ে দিয়েছে, তাদের কাছে আর কোনো ডকুমেন্ট থাকবে না। কাজেই জমির মালিক তারা নন। ওগুলো আমরা একেবারে গৃহহীনদের মাঝে বণ্টন করে দেব। এ কথা বলার পর ভূমি অফিস পোড়ানোটা বন্ধ হয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে সরকার প্রধান আরও বলেন, ভূমি অফিস পোড়ানোর ফলে আমাদের একটা ভালো কাজ করে দিয়েছে। ভূমি অফিসের যে দুর্দশা ছিল সেটা সকলের নজরে এসেছে। এতে আমরা ৪০০টি আধুনিক ভূমি অফিস করে দিয়েছি। প্রত্যেক উপজেলায় এখন উন্নতমানের ভূমি অফিস এবং রেকর্ড সংরক্ষণ করা হচ্ছে। কাজেই ধ্বংসাত্মক কাজের মধ্য দিয়ে একটা শুভ কাজের উদ্বোধন করেছি। আসলে ওরা (বিএনপি) শুধু ধ্বংস করে, আমরা সৃষ্টি করি। আমরা চাই বাংলাদেশ থেকে সব ধরনের অনিয়ম দূর হোক। আমরা আজ সাতটি উদ্যোগ উদ্বোধন করলাম। এর ফলে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন সহজ হবে। প্রতিটি উপজেলায় উন্নত ভূমি অফিস ও রেকর্ড সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভূমিসংক্রান্ত জটিলতা নিরসন এবং দ্রুত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি কর্মকর্তা কর্মচারী আরও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করবেন, সেটাই আশা করি। কারণ আওয়ামী লীগ জনগণের সেবক। জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম থেকেই আওয়ামী লীগের জন্ম। মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার সব ধরনের সুযোগ সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে যে সমস্যাগুলো বিভিন্ন পারিবারিক বা নানাভাবে মানুষকে কষ্ট দিত, সেগুলো দূর করারও পদক্ষেপও সরকার নিচ্ছে।
ভূমি মন্ত্রণালয় সাতটি উদ্যোগের উদ্বোধন করার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সাতটি উদ্যোগের প্রত্যেকটাই উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে যথাযথ ভূমিকা রাখবে। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছি। ভূমি মন্ত্রণালয় তাদের কাজের মধ্য দিয়ে সেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার দ্বার উন্মুক্ত করেছে। আজকে আমরা সাতটি উদ্যোগের শুভ উদ্বোধনে ঘোষণা করেছি। আমি আশা করি এটা যথাযথভাবে কার্যকর হয়ে মানুষের সেবা আরও উন্নত হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী পহেলা বৈশাখ থেকে ভূমি উন্নয়ন কর শতভাগ অনলাইনে আদায় করা হবে। দেশের সাধারণ জনগণের পাশাপাশি ১৯২টি দেশ থেকে কল সেন্টারে বা ভূমি সেবা পোর্টালে আবেদন করলে প্রবাসীদের ঠিকানায়ও প্রেরণ করা হবে খতিয়ান। এরই মধ্যে অনলাইনে ৭৭০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। দিনে গড়ে রাজস্ব আদায় পাঁচ কোটি টাকার বেশি। এসময় প্রধানমন্ত্রী জানান, ১৬১২২ ফোন করে কিংবা ঘরে বসে খধহফ.মড়াঃ.নফ এই পোর্টাল থেকে নামজারি, খতিয়ান নেওয়া এবং ভূমি কর দেওয়া যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ভূমি সেবা ডিজিটালাইজেশনের পাশাপাশি ভূমি ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। ভূমি সংক্রান্ত অপরাধ ঠেকাতেও নেওয়া হয়েছে ব্যবস্থা। ভূমিতে নতুন নিয়োগ বিধিমালার মাধ্যমে নিয়োগের সমস্যারও সমাধান করা হয়েছে। সামনে আর জনবল সংকট থাকবে না। সব উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিয়োগ করা হয়েছে। তাদের যানবাহনও দেওয়া হয়েছে।